avertisements 2

অনৈতিক সম্পর্কের শৈল্পিক উপস্থাপনা আর বানে ভাসা জীবন!

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ৯ নভেম্বর,মঙ্গলবার,২০২১ | আপডেট: ০৪:৫৬ পিএম, ২৭ ডিসেম্বর,শুক্রবার,২০২৪

Text

১. যেমনটি ভাবা হচ্ছিল তাই ঘটেছে। বাংলাদেশের বেসরকারি টিভি চ্যানেল ৭১ টিভির বার্তা বিভাগের প্রধান সাংবাদিক শাকিল আহমেদ উচ্চ আদালত থেকে গতকাল (০৮.১১.২১) জামিন পেয়েছেন। জামিনের মাধ্যমে যে বার্তাটি দেয়া হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে তা হচ্ছে যে, ডা: তৃণা ইসলামের আনীত মামলাটির ভিত্তি দুর্বল। এটি একটি জামিনযোগ্য 'অপরাধ'। ভিকটিমের মেডিকেল পরীক্ষা প্রয়োজন হলেও অভিযুক্তের প্রয়োজন নেই!  শাকিলের  বিরুদ্ধে আনা ধর্ষণ এবং ভ্রুণ হত্যার অভিযোগ বাজার পাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে না। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ থেকে পাস করা সরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করা ডা: তৃণা ইসলাম কি এই ব্যাপারটি আগেই জানতেন? আর জানতেন বলেই কি তিনি নিজেই সংবাদ সম্মেলন করে ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন?
 
২. তৃণা, আপনি ৭১ টিভির বার্তা বিভাগের প্রধান সাংবাদিক শাকিল আহমেদের  বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন।  মামলায় আনীত অভিযোগ হচ্ছে যে, শাকিল আহমেদ আপনাকে ধর্ষণ করেছেন এবং আপনার গর্ভের ভ্রূণ হত্যা করতে বাধ্য করেছেন। আপনি ঢাকার একটি হোটেলে এ নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন। পরবর্তীতে সাংবাদিক শাকিলের সাথে কথোপকথনের একটি অডিও ক্লিপ সোশ্যাল মিডিয়ায় রিলিজ করেছেন।

জীবনে অনেক ন্যাপি পাল্টিয়েছি, বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী স্বীকার করলেন তিনি ছয় সন্তানের বাবা
সংবাদ সম্মেলনে দেওয়া আপনার 'সাহসী বক্তব্য' এবং দু’জনের ‌অডিও ক্লিপের বক্তব্য শুনে যা মনে হয়েছে যে, আপনি বাংলাদেশের ধর্ম, সমাজ ও সংস্কৃতিকে বুড়ো আংগুল দেখিয়ে আবার সেই সমাজের কাছে বিচার চাইছেন। বিচার করবে তো আদালত। আসামি ধরবে পুলিশ। বাংলাদেশের পুলিশ এবং আদালতের উপর কি আপনার আস্থা নেই? যদি আস্থা না থাকে তাহলে আপনি পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করার আগে সংবাদ সম্মেলন করেছেন কেন? সাধারণ মানুষকে বিনোদন দেওয়ার জন্য? ৭ মাস ধরে চলে আসা একজন বিবাহিত পুরুষের সঙ্গে আপনার প্রেম এবং শারীরিক সম্পর্কের যে বর্ণনা দিয়েছেন তা বাংলাদেশের অনেক মানুষ শুনতে বা পড়তে অভ্যস্ত নয়। পশ্চিমা বিশ্বেও এ ধরনের সম্পর্ককে বৈধতা দেওয়া হয় না। একজন বিবাহিত পুরুষের  অন্য নারীর সাথে এ ধরনের শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হওয়াকে অপরাধ হিসেবে দেখা হয়। এই অপরাধটি হচ্ছে adultery. আপনি জেনে শুনেই  এ অপরাধ করেছেন।
 
৩. ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ থেকে পাস করার সুবাদে আপনার নামের আগে মেধাবী শব্দ যুক্ত হয়েছে। সরকারি রোগ গবেষণা ইনস্টিটিউট আইইডিসিআর-এ চাকুরী করার সুবাদে আপনার সামাজিক অবস্থান আরেকটু উপরে উঠেছে। কিন্তু তাতে আপনি থেমে যাননি। আপনার মনে হয়েছে, ডাক্তারি বিদ্যার পাশাপাশি মিডিয়ায় আসা জরুরি। গ্ল্যামারকে পুঁজি করে আরেকটু উপরে আসা দরকার। তাই বেসরকারি টিভি চ্যানেলে নাম লেখাতে গিয়ে শাকিল সাহেবের সাথে আপনার ভাষায়- রোমান্টিক শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করেছেন। সে সম্পর্ক মাসের-পর-মাস অব্যাহত ছিল। তারপর এক সময় গর্ভবতী হয়ে পড়েছেন। লন্ডনে এসেছিলেন পড়াশোনা করতে কিন্তু প্রেমের টানে বাংলাদেশে ফিরে যান। শাকিল সাহেবের প্রতি আপনার ভালোবাসা সত্যিই অতুলনীয়। কিন্তু সেই ভালোবাসা হঠাৎ করে ধর্ষণ হয়ে গেল কীভাবে? আপনি কি ধর্ষণের সংজ্ঞা জানেন না?  Forensic Medicine-এ ধর্ষণের সংজ্ঞা মুখস্ত করেননি? আপনার অবশ্যই জানা থাকার কথা যে, বাংলাদেশের আইনে দু'জন প্রাপ্তবয়স্ক যুবক-যুবতী পরস্পরের সম্মতিতে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হলে সেটাকে ধর্ষণ বলা যায় না। বড়জোর 'সামাজিক অপরাধ' বলে সংজ্ঞায়িত করা যায়। এই সংজ্ঞা পশ্চিমা বিশ্বে প্রচলিত। কিন্তু বাংলাদেশ সেই সংজ্ঞাকে পরিবর্তন করেনি। সজ্ঞানে, স্বইচ্ছায় তথাকথিত মিডিয়ায় একটু স্থান পাওয়ার আশায় আপনি আপনার চরিত্রকে জলাঞ্জলি দিয়েছেন। এখন বলছেন ধর্ষণ?  হিসাবে একটু গোলমাল হয়ে গেলেই ধর্ষণ? Forensic medicine তো আপনার কথায় তার সংজ্ঞা পরিবর্তন করবে না। আপনার এই অভিযোগটি আদালতে টিকবে তো? টিকার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।

 ৪  যদি বাস্তবিক ধর্ষণ সংঘঠিত হয়েও থাকে তাহলে ভিকটিম এবং অভিযুক্তের শারীরিক পরীক্ষা এবং intimate sample নেওয়ার সময় হচ্ছে ঘটনা সংঘটিত হওয়ার পর থেকে ৭২  ঘণ্টা। এই সময়ের পর আসামি অথবা ভিকটিমকে মেডিকেল কলেজে নিয়ে পরীক্ষা করে কিছু পাওয়া যাবে?  মূল যে সূত্রটা তা হচ্ছে, আসামির শরীরে অভিযুক্তের ডিএনএ। ৭২ ঘণ্টার পর ভিকটিমের শরীরে অভিযুক্তের কোনো ডিএনএ পাওয়ার সম্ভাবনা আছে? ডিএনএ পাওয়া গেলেও এই ডিএনএ কীভাবে ধর্ষণ প্রমাণ করবে? আপনি তো নিজেই বলেছেন যে, তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক ছিল। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেপ ভিক্টিমদের জন্য স্থাপিত ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে আপনার কিসের পরীক্ষা হচ্ছে?  এগুলোর কোনো মেডিকেল এবং পুলিশি ভিত্তি আছে?

৫. সংবাদ সম্মেলনে দেওয়া বক্তব্যে আপনার কোনো জড়তা  ছিল না। বুঝাই যাচ্ছে, ব্যাপারটি আপনার কাছে কিছুই মনে হচ্ছে না। একটি রক্ষণশীল সমাজে আপনি কীভাবে অবলীলায় এ ধরনের একটি অনৈতিক সম্পর্কের কথা সংবাদ সম্মেলন করে দেশবাসীকে জানাতে পারলেন? একটিবারও আপনার মনে হলো না যে, আপনি যে কথাগুলো বলছেন তা ধারণ করার জন্য বাংলাদেশ প্রস্তুত নয়? শাকিল আহমেদ যদি কোনো ক্রাইম করে থাকেন তাহলে থাক, পুলিশের কাছে আপনি অভিযোগ আকারে দেবেন। সংবাদ সম্মেলন করে দেশবাসীকে আপনার এই অনৈতিক সম্পর্কের গপ্পো বলে আপনি কী অর্জন করতে চাইলেন? তার মানে কি পুলিশের উপর আপনার আস্থা নেই? বিচার বিভাগের ওপর আস্থা রাখতে পারছেন না? তাই বুঝি 'জনগণের আদালতে' আপনি অভিযোগ পেশ করলেন?

৬. সংবাদ সম্মেলন করে অভিযোগ করার পর থানায় মামলা হয়েছে ৫ দিন হয়ে গেল। অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়নি। গ্রেফতারের আশা করতে করতে গতকাল আসামীর জামিনটাই হয়ে গেল। আপনার 'সিরিয়াস' অভিযোগের পর আসামীকে গ্রেফতার করা হয়নি কেন? ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে আপনার ডাক্তারি পরীক্ষা হতে পারলে অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে কেন ডাক্তারি পরীক্ষা করা হবে না? অভিযুক্তের  Intimate sample নেবে কে?  পুলিশের কাছে এর কোনো ব্যাখ্যা আছে? আপাতত নিচের  দুটো ব্যাখ্যার একটি সত্য হতে পারে- পুলিশের কাছে মনে হয়েছে যে, অভিযোগ সঠিক নয়। অথবা তাদের নিজস্ব তদন্তে বেরিয়ে এসেছে যে, ঘটনা সত্য নয়। ঢাকার পুলিশের এক বড়কর্তা তো কয়েকদিন আগেই বলেছেন দু'জন প্রাপ্তবয়স্ক তরুণ-তরুণী নিজের ইচ্ছায় কোনো শারীরিক সম্পর্কে জড়ালে পুলিশের করার তেমন কিছু থাকে না। তবে মাঝে মধ্যে পরিস্কার কিছু করার থাকে। সে কার্যক্রম নিয়ে মানুষের মনে প্রশ্ন আছে।

৭. পুলিশের এই ব্যাখ্যা থেকে মাওলানা মামুনুল হক এবং তার দ্বিতীয় স্ত্রী বাদ পড়লেন কীভাবে? ওই মামলার ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে যে, মাওলানা মামুনুল হককে প্রথমে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং কয়েকদিন পর তার  দ্বিতীয় স্ত্রী তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছেন! ব্যতিক্রম বটে, চমৎকার ব্যতিক্রম!

৮.  প্রখ্যাত আইনজীবী, সাংবাদিক এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের পুলিশি গ্রেফতার নিয়ে একটি প্রশ্ন আছে। একটি টক শোতে অংশ নিয়ে সাংবাদিক মাসুদা ভাট্টির  এক রাজনৈতিক প্রশ্নের জবাবে এ বর্ষীয়ান আইনজীবী নাকি তাকে চরিত্রহীন বলেছিলেন। আর যায় কোথায়। টকশো প্রচারিত হবার ২ দিনের ভেতরে প্রখ্যাত এ আইনজীবীর বিরুদ্ধে সারা দেশে ৬ টি মামলা দায়ের করা হয়। গ্রেফতার হন প্রখ্যাত এই আইনজীবী। 

৯. আমি একটু হিসেব মেলানোর চেষ্টা করছি। ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের বিরুদ্ধে মামলাকারী রংপুরের মানবাধিকারকর্মী মোসাম্মৎ মিলি মায়ার শক্তি কি ডাক্তার তৃণা ইসলামের এর চেয়ে বেশি? 

১০. ডা: তৃণা ইসলাম, একটু থামুন। সাংবাদিক শাকিল আহমেদ, একটু বিশ্রাম নিন। আপনারা আপনাদের অনৈতিক এবং অবৈধ সম্পর্ককে মিডিয়ার সামনে শৈল্পিকভাবে উপস্থাপন করে বাংলাদেশকে কি বার্তা দিতে চাইছেন?  বাংলাদেশ আপনাদের এ ধরনের সম্পর্ককে ধারণ করার জন্য প্রস্তুত নয়। তাতে অবশ্য আপনাদের কিছু যায় আসে না। কারণ আপনারা যে খুঁটির জোরে নৃত্য করছেন, সে খুঁটি অনেক শক্ত!

১১. ক্ষমতার পাশাপাশি থাকার কারণে আপনাদের হয়তো কিছুই হবে না। কিন্তু আপনাদের এই অনৈতিক সম্পর্কের শৈল্পিক উপস্থাপনা অনেক যুবক যুবতীর চরিত্রকে ধ্বংস করবে। অনেক পরিবার ভেঙ্গে পড়বে। বিবাহ বহির্ভূত অনৈতিক সম্পর্কের শৈল্পিক উপস্থাপনা দেখে মুনিয়া বা আনুশকা যখন হত্যা বা আত্মহত্যার শিকার হবে তখন তাদেরকে নিয়ে আবার টকশো করতে যাবেন না। কারণ তাদেরকে ঐ পথে যাবার জন্য আপনারাই উৎসাহিত করেছেন।  আর যারা হত্যা বা আত্মহত্যা শিকার হয়নি তাদের জীবন বানে ভাসতে-ভাসতে কোথায় গিয়ে যে থামবে তা কেউ জানে না! 

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2