১৪৯ যাত্রীকে বাঁচানো ক্যাপ্টেন নওশাদ এখন কোমায়, অবস্থা গুরুতর
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ২৯ আগস্ট,রবিবার,২০২১ | আপডেট: ০৪:৪৭ পিএম, ২০ ডিসেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
মধ্য আকাশে বড় ধরনের হার্ট অ্যাটাকের শিকার হওয়া বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের পাইলট ক্যাপ্টেন নওশাদ কাইয়ুম এখন ভারতের নাগপুরের কিংসওয়ে হাসপাতালের সার্জিকেল ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (এসআইসিইউ) কোমায় আছেন।
হার্ট অ্যাটাকের পর তার মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়। বর্তমানে তাকে ভেন্টিলেশনে রাখা হয়েছে।
ভারতের নাগপুরের কিংসওয়ে হাসপাতালের হাসপাতালের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) রোশান ফুলবান্ধে বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘ক্যাপ্টেন নওশাদ কোমায় আছেন। তার অবস্থা গুরুতর।’
শুক্রবার সকালে ১২৪ জন যাত্রী নিয়ে ভারতের নাগপুরে জরুরি অবতরণ করে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিজি-০২২ ফ্লাইটটি। পরে রাত ১২টা ৫১ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছে এই ফ্লাইট। এ সময় বিমানবন্দর থেকে নিজ গন্তব্যে ফেরেন যাত্রীরা।
শুক্রবার মাস্কাট থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে আসা বিমানের এ উড়োজাহাজ ভারতের আকাশ সীমানায় থাকাকালে ক্যাপ্টেন নওশাদ আতাউল কাইয়ুম অসুস্থবোধ করেন। এ সময় কোনো ঝুঁকি না নিয়ে দক্ষতার সঙ্গে নাগপুরের বিমানবন্দরে জরুরি অবতরণ করেন তিনি।
এর আগে শনিবার বিকেলে বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স পাইলটস অ্যাসোসিয়েশনের (বাপা) সভাপতি ক্যাপ্টেন মাহবুবুর রহমান বলেন, নওশাদের হার্টের অবস্থা ভালো আছে। তবে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হওয়ায় তাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। ৪৮ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণের পর চিকিৎসকরা সিদ্ধান্ত নেবেন সার্জারি করা হবে কিনা।
ভারতে সার্বিক সহায়তার জন্য আন্তর্জাতিক পাইলট অ্যাসোসিয়েশনের সহায়তা নেওয়া হচ্ছে বলেও জানান বাপা সভাপতি।
ক্যাপ্টেন মাহবুব বলেন, আন্তর্জাতিক পাইলট অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ করেছি, তারা আমাদের সহায়তা করছেন। বিমানের দিল্লি স্টেশন সার্বিক পরিস্থিতি দেখাশোনা করছে।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের অসুস্থ পাইলট ক্যাপ্টেন নওশাদ আতাউল কাইউমের উন্নত চিকিৎসা নিশ্চিতকরণে প্রয়োজনীয় সকল সহযোগিতা প্রদান করার আশ্বাস দিয়েছেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী। শনিবার বিমানের অসুস্থ পাইলট ক্যাপ্টেন নওশাদের খোঁজ নেন প্রতিমন্ত্রী।
বাংলাদেশ পাইলট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ক্যাপ্টেন মাহবুবুর রহমানের সঙ্গে টেলিফোন আলাপে সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
প্রসঙ্গত,ক্যাপ্টেন নওশাদ আতাউল কাইয়ুম ১৯৭৭ সালের ১৭ অক্টোবর ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ২০০২ সালের ২০ সেপ্টেম্বর বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে পাইলট হিসেবে যোগদান করেন।
৫ বছর আগে ক্যাপ্টেন নওশাদ তার বুদ্ধি ও কৌশল প্রয়োগ করে আরও ১৪৯ যাত্রী, দুই পাইলট আর ৭ ক্রু’র জীবন বাঁচিয়েছিলেন। পেয়েছেন আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। বিমান সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালের ২২ ডিসেম্বর বাংলাদেশ বিমানের বিজি-১২২ ফ্লাইটে ক্যাপ্টেনের দায়িত্বে ছিলেন নওশাদ।
সেই ফ্লাইটটি মাস্কাট বিমানবন্দর থেকে বোয়িং ৭৩৭-৮০০ উড়োজাহাজ নিয়ে চট্টগ্রামের উদ্দেশে রওনা করেছিল। টেক-অফ করার পর মাস্কাট বিমানবন্দরের কন্ট্রোল টাওয়ার থেকে ক্যাপ্টেন নওশাদকে জানানো হয়, রানওয়েতে টায়ারের কিছু অংশ পাওয়া গেছে, যা সম্ভবত বিমান এয়ার ক্রাফটের হতে পারে। যাত্রীদের নিরাপত্তার কথা ভেবে নওশাদ বিমানটি চট্টগ্রাম অবতরণ না করে ঢাকা বিমানবন্দরে জরুরি অবতরণের সিদ্ধান্ত নেন।
অবতরণের আগে ক্যাপ্টেন ফ্লাইটটি নিয়ে রানওয়ের উপরে দুইবার লো-লেভেলে ফ্লাই করেন। তখন দেখা যায়, উড়োজাহাজের পেছনের দুই নম্বর টায়ারটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পরে ক্যাপ্টেন নওশাদ দক্ষতার সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত টায়ার ও ল্যান্ডিং গিয়ারসহই নিরাপদে ফ্লাইটটি ঢাকায় অবতরণ করাতে সক্ষম হন।
এই ঘটনার পর ২০১৭ সালে আন্তর্জাতিক পাইলট অ্যাসোসিয়েশনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ক্যাপ্টেন রন অ্যাবেল ক্যাপ্টেন নওশাদকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে প্রশংসাপত্র পাঠায়।