‘করোনা বেড়ে গেলে সিদ্ধান্তের পরিবর্তন হতে পারে’
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ২৪ মে,সোমবার,২০২১ | আপডেট: ০৮:১৯ পিএম, ১৪ ডিসেম্বর,শনিবার,২০২৪
জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলছেন, মানুষের জীবন-জীবিকা এবং চলাচলে অসুবিধার কথা মাথায় রেখে গণপরিবহন এবং খাবার হোটেল খুলে দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, করোনাসংক্রমণ বেড়ে গেলে যে কোনো সময় চলাচল সংক্রান্ত সিদ্ধান্তের পরিবর্তন হতে পারে। আজ রবিবার (২৩ মে) চলমান বিধিনিষেধ ৩০ মে পর্যন্ত বাড়ানো নিয়ে প্রজ্ঞাপন জারির পর ফরহাদ হোসেন সাংবাদিকদের এতথ্য জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, নিজেদের মৃত্যুঝুঁকি থেকে বাঁচানোর জন্য, সুরক্ষার জন্য। যদি স্বাভাবিক থাকে, তাহলে সামনের সপ্তাহে সব খুলে দিতে পারি। এটা নির্মূল করা কঠিন। যারা ভ্যাকসিন নেননি, তারা ঝুঁকির মধ্যে আছেন। এজন্য মাস্ক পরতে হবে।
এর আগে রবিবার (২৩ মে) মধ্যরাত থেকে চলমান বিধিনিষেধ আরও সাত দিনের জন্য বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চলমান ‘লকডাউন’ বা বিধিনিষেধ আগামী ৩০ মে মধ্যরাত পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। তবে বিধিনিষেধের মধ্যে আগামীকাল সোমবার (২৪ মে) থেকে দূরপাল্লার বাস, লঞ্চ, ট্রেন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাচল করতে পারবে। আজ নতুন করে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের উপ-সচিব মো. রেজাউল করিম স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়েছে, ‘করোনাভাইরাস জনিত রোগ কোভিড-১৯ সংক্রমণের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে পূর্বের সব বিধিনিষেধ ও কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায় ২৩ মে মধ্যরাত থেকে আগামী ৩০ মে মধ্যরাত পর্যন্ত এ বিধিনিষেধ আরোপের সময়সীমা বাড়ানো হলো।’
আন্তঃজেলাসহ সব ধরনের গণপরিবহন আসন সংখ্যার অর্ধেক যাত্রী নিয়ে চলাচল করতে পারবে। তবে অবশ্যই যাত্রীসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে মাস্ক পরিধান এবং সবধরনের স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়, হোটেল, রেস্তোরাঁ স্বাস্থ্যবিধি মেনে (দুই আসনে একজন) খুলে দেওয়া হবে আগামীকাল (২৪ মে) থেকে। তবে সরকারি ও বেসরকারি অফিস-আদালতের ক্ষেত্রে পূর্বের নিয়ম বহাল থাকবে।
এর আগে শনিবার (২২ মে ) জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী মো. ফরহাদ হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, ঈদ পরবর্তী সপ্তাহটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সমস্ত কিছু বিবেচনায় নিয়েই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের নির্দেশনা দেবেন। আমরা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার অপেক্ষায় আছি। এর আগে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ সামাল দিতে সারা দেশে রাখা ‘লকডাউন’ বা কঠোর বিধি-নিষেধ আরও সাতদিন বাড়িয়ে ৩১ মে পর্যন্ত বহাল রাখার সুপারিশ করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, বিধিনিষেধ বাড়বে কি না- এ রকম কিছুই বলা যাবে না। আমরা কিছুই বলতে পারছি না। বিষয়গুলো পর্যালোচনা চলছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সিদ্ধান্ত দেবেন। এখন সবগুলো বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে।
করোনা বাড়ছে কিনা এ প্রসঙ্গে ফরহাদ হোসেন বলেন, সবকিছু আমাদের পর্যালোচনায় আছে। প্রধানমন্ত্রী সিদ্ধান্ত নেবেন কী করলে ভালো হবে। আমরা তো আগেই বলেছি ঈদের পরে করোনা বেড়ে যাওয়ার প্রবণতা থাকবে। সেটা নিয়ে আমরা শঙ্কিত এখনো। তবে আমরা অনেক দিন ধরে বিধিনিষেধ চালিয়ে আসছি। সবকিছু চিন্তাভাবনা করেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
দূরপাল্লার গণপরিবহন চালু নিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, সবকিছু বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত আসবে। তবে অবশ্যই বড় রকমের ঝুঁকি থেকে নিজেদের রক্ষা করতে হবে।
প্রসঙ্গত, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হওয়ার পর গত ১৪ এপ্রিল ভোর ৬টা থেকে দেশে লকডাউন ঘোষণা করে সরকার। প্রথমে ঢিলেঢালাভাবে চললেও পরে কঠোর বিধি-নিষেধ আরোপ করে দেশজুড়ে ‘সর্বাত্মক লকডাউন’ দেওয়া হয়। পরে ৪ দফা লকডাউনের মেয়াদ বাড়ানো হয়, যা আগামী ২৩ মে মধ্যরাত পর্যন্ত থাকবে।
চলমান এই লকডাউনে বন্ধ করে দেওয়া হয় বাস সার্ভিস, লঞ্চ, বিমান ও রেল যোগাযোগ। তবে পরবর্তীতে অর্ধেক আসন খালি রেখে সিটি করপোরেশন এলাকায় বাস ও অভ্যন্তরীণ রুটে ফ্লাইট চালু করা হয়, যা এখনো চলমান রয়েছে। এ ছাড়া কয়েকটি আন্তর্জাতিক রুটেও ফ্লাইট চালু করা হয়েছে।
দেশে গত বছরের ৮ মার্চ প্রথম করোনা রোগী শনাক্তের ঘোষণা দেয় সরকার। করোনায় মৃত্যুর প্রথম ঘোষণা আসে ১০ দিন পর ১৮ মার্চ। এরপর আতঙ্কে থাকা দেশবাসীকে সংক্রমণ মুক্ত রাখতে গত বছর ২৬ মার্চ প্রথম সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছিল, যা কয়েক দফা বাড়িয়ে টানা ৬৬ দিন চলে। এরপর ধীরে ধীরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসতে শুরু করলে প্রায় সব কিছু স্বাভাবিক হয়ে ওঠে। কিন্তু চলতি বছরের মার্চ থেকে আবারও করোনা সংক্রমণ বাড়তে শুরু করে।