সেনাপ্রধান-কর্মকর্তাদের অপসারণের বিষয়ে ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদনটি ভুয়া
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ৩০ অক্টোবর,
বুধবার,২০২৪ | আপডেট: ১১:০৬ পিএম, ২০ ডিসেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস-সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। ছবি: সংগৃহীত
শেখ হাসিনার পতন ও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূস শপথ নেয়ার পর থেকে বিভিন্ন সময় নানান বিষয় নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ছড়িয়ে পড়ছে। সম্প্রতি মার্কিন পত্রিকা দ্য ওয়াশিংটন পোস্টের নাম ও লোগো ব্যবহার করে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে একটি সংবাদের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। তবে ভাইরাল হওয়া এই ছবিটি ভুয়া বলে জানিয়েছে দেশের অন্যতম ফ্যাক্ট চেকিং প্রতিষ্ঠান রিউমর স্ক্যানার। বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) রিউমর স্ক্যানারের প্রতিবেদন এই তথ্য জানানো হয়।
প্রতিষ্ঠানটি ফ্যাক্ট চেকিং করে জানায়, সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানসহ ৬৭ জন সিনিয়র সেনা কর্মকর্তা এবং ৩ হাজার ৮৭২ জন সামরিক কর্মীকে বরখাস্তের তালিকা চূড়ান্ত করেছে বলে দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট কোনো প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি। বরং পত্রিকাটির নাম ও লোগো ব্যবহার করে ছড়িয়ে পড়া ছবিটি সম্পূর্ণ ভুয়া। দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট-এর দক্ষিণ এশিয়া ব্যুরো প্রধান গেরি শিহ রিউমর স্ক্যানারকে নিশ্চিত করেছেন।
রিউমর স্ক্যানারের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ছড়িয়ে পড়া সংবাদের ছবিটি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, এতে লেখক হিসেবে আমেরিকান সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক জ্যাকলিন আলেমানির নাম ব্যবহার করা হয়েছে এবং প্রতিবেদনের তারিখ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে ২১ অক্টোবর। বিষয়টির সত্যতা যাচাই করতে গিয়ে জ্যাকলিন আলেমানির এক্স (সাবেক টুইটার) অ্যাকাউন্ট এবং দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট-এর ওয়েবসাইটে তার লেখক প্রোফাইল খতিয়ে দেখা হয়। তবে সেখানে এমন কোনো প্রতিবেদনের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। এছাড়া দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট-এর ওয়েবসাইট ও সামাজিক মাধ্যমের প্রোফাইলগুলোতেও (১,২) এমন কোনো প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে ওয়াশিংটন পোস্ট-এর দক্ষিণ এশিয়া ব্যুরো প্রধান গেরি শিহের জানান, “এটি ভুয়া।” পাশাপাশি তিনি পত্রিকাটির মুখপাত্রের সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন।
প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, প দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট-এর মুখপাত্রের কাছে ইমেইলের মাধ্যমে এই বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাওেয়া হয়। তবে প্রতিবেদন প্রকাশের সময় পর্যন্ত তাদের পক্ষ থেকে কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি। মুখপাত্রের প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেলে তা পরে সংযুক্ত করা হবে।
সুতরাং অন্তবর্তীকালীন সরকার সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানসহ ৬৭ জন সিনিয়র সেনা কর্মকর্তা এবং ৩৮৭২ জন সামরিক কর্মীকে বরখাস্তের তালিকা চূড়ান্ত করেছে দাবিতে দ্য ওয়াশিংটন পোস্টের নাম ও লোগো সম্বলিত প্রতিবেদনের ছবিটি সম্পূর্ণ ভুয়া ও বানোয়াট।
প্রসঙ্গত, সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া কথিত ওই প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপ অনুযায়ী, ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশত্যাগে বাধ্য হন এবং ১০ আগস্ট প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান পদত্যাগ করেন।
এরপর সেনাবাহিনীতে বড় ধরনের পুনর্গঠন শুরু করে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। এতে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানসহ ৬৭ জন সিনিয়র সেনা কর্মকর্তা এবং ৩৮৭২ জন সামরিক কর্মীকে বরখাস্তের তালিকা চূড়ান্ত করা হয়। এই পদক্ষেপকে সামরিক বাহিনীতে বড় পরিবর্তন এবং বেসামরিক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে। তবে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন যে, এই পুনর্গঠন সামরিক বাহিনীর মধ্যে অসন্তোষ এবং দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা আরও বৃদ্ধি করতে পারে।
এদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব প্রতিরোধে একটি ফ্যাক্ট চেকিং ফেসবুক পেজ চালু করেছে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং। এতে প্রধান উপদেষ্টাকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়ানো বিভিন্ন তথ্যের সত্যতা তুলে ধরা হবে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার ভেরিফায়েড পেজে এক পোস্টে জানানো হয়েছে এ তথ্য।
পোস্টে বলা হয়েছে, ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব প্রতিরোধে একটি ফ্যাক্ট চেকিং ফেসবুক পেজ চালু করেছে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং। সবাইকে পেজটির সঙ্গে যুক্ত থাকার আহ্বান।’
পেজটি পরিদর্শন করে দেখা গেছে, ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া দুটি তথ্যের ফ্যাক্ট চেক করা হয়েছে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে ‘ওয়াশিংটন পোস্ট’-এ একটি ভুয়া প্রতিবেদন।
প্রতিবেদনটি ভুয়া জানিয়ে বলা হয়েছে, ‘সম্প্রতি জনসাধারণকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টায় একটি কুচক্রী মহল ওয়াশিংটন পোস্টের নামে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে নিয়ে একটি ভুয়া প্রতিবেদন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়েছে।’
‘ওয়াশিংটন পোস্ট প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংকে নিশ্চিত করেছে যে, প্রতিবেদনটি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। সবাইকে কোনো ধরনের গুজবে বিভ্রান্ত না হওয়ার আহ্বান জানানো হচ্ছে।’