মার্কিন গণমাধ্যমে মুগ্ধর মৃত্যুর বর্ণনা দিয়ে সংবাদ
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ১৩ আগস্ট,মঙ্গলবার,২০২৪ | আপডেট: ০৩:৪৮ এএম, ২৩ ডিসেম্বর,সোমবার,২০২৪
নিহত মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধ। ছবি: সংগৃহীত
শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলনে টিয়ার গ্যাসের কারণে চোখ জ্বলা থেকে রক্ষা করতে বিক্ষোভকারীদের হাতে পানির বোতল তুলে দিচ্ছিলেন নিহত মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধ। এর ঠিক পনের মিনিট পরেই আন্দোলনে বুলেটে বিদ্ধ হয়ে শহীদ হন মুগ্ধ। নিহত মুগ্ধকে নিয়ে গতকাল সোমবার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে মার্কিন গণমাধ্যম সিএনএন।
‘বিক্ষোভকারীদের হাতে পানির বোতল তুলে দিচ্ছিলেন এই ছাত্র, কয়েক মিনিট পরই তিনি মারা যান’ শিরোনামের এই প্রতিবেদনে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস (বিইউপি) ও ফ্রিল্যান্সার মুগ্ধর পরিবারের স্বজনদের কথাও তুলে ধরা হয়েছে।
মুগ্ধকে নিয়ে সিএনএনের এ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, টি–শার্টের হাতা ব্যবহার করে জ্বালাপোড়া করা চোখ থেকে কাঁদানে গ্যাস মুছতে মুছতে ২৫ বছর বয়সী তরুণ মুগ্ধ ভিড়ের মধ্যে চিৎকার করছেন, বিক্ষোভ করা তরুণদের হাতে পানির বোতল তুলে দিচ্ছেন।
১৫ মিনিট পর, বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষার্থী আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হন। রাজধানী ঢাকায় দুপুরের উত্তাপে বিশ্রাম নেওয়ার সময় একটি বুলেট তার কপালে বিদ্ধ হয়েছিল।
মুগ্ধর পুরো নাম মীর মাহফুজুর রহমান। বন্ধু ও বিক্ষোভকারীরা তাকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলেন। ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে যায়। তার যমজ ভাই স্নিগ্ধ—মীর মাহবুবুর রহমান—সিএনএনকে এসব জানিয়েছেন। তিনি জানান, ‘আমি শুধু তাকে জড়িয়ে ধরেছিলাম, আর আমি কেঁদেছিলাম।’
১৮ জুলাই মৃত্যুর আগে মুগ্ধর পানি দেওয়ার ভিডিওটি সারা বাংলাদেশের লাখ লাখ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীর মনে আঘাত করে। নিহতদের জন্য ন্যায়বিচার চাইতে আরও বেশি মানুষ রাস্তায় নামতে উৎসাহিত হয়।
আন্দোলনের পরে এখন এক শান্ত পরিবেশ বিরাজ করছে। অনেক পরিবার এখন তাদের প্রিয়জনের মৃত্যুর জন্য জবাবদিহি চাইছে। যমজ মুগ্ধ ও স্নিগ্ধ জন্ম থেকেই একসঙ্গে ছিলেন—খাওয়া, ঘুম আর একসঙ্গে পড়াশোনা, পোশাক ভাগাভাগি করার পাশাপাশি সব গোপনীয়তাও ভাগাভাগি করতেন তারা।
স্নিগ্ধ বলেন, ‘সে শুধু আমার ভাই ছিল না, আমার সবচেয়ে ভালো বন্ধু ছিল। আমার শরীরের একটি অঙ্গ ছিল। আমরা একসঙ্গে সবকিছু করতাম।’ মুগ্ধ গণিতে স্নাতক ছিলেন। এরপর ব্যবসায় প্রশাসনে স্নাতকোত্তর (এমবিএ) শ্রেণিতে পড়ছিলেন, আর তার যমজ স্নিগ্ধ আইনে স্নাতক।
এই দুই যমজ ইতালিতে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন। মোটরবাইকে ইউরোপ ঘুরে বেড়ানোর ইচ্ছা ছিল তাদের। ভ্রমণের জন্য টাকা জমাতেন তারা। দুই ভাই অনলাইন ফ্রিল্যান্সার হাব ফাইভআরে সোশ্যাল মিডিয়া বিপণনের কাজ করতেন।
সিএনএন বলছে, বাংলাদেশের শান্তিপূর্ণ কোটা সংস্কার আন্দোলন একসময় দীর্ঘকাল ক্ষমতা ধরে রাখা শেখ হাসিনা সরকারের পতনের আন্দোলনে রূপ নিয়েছিল। এ সময় হত্যাকাণ্ড ও ভয়ানক ধড়পাকড় শুরু হলে কমপক্ষে ৩০০ জন নিহত হন। গণ আন্দোলনের মুখে দেশ ছেড়ে যান শেখ হাসিনা।