avertisements 2

ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের প্রথম দিন, উন্নয়ন সংস্থার নিন্দা

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০২:৫২ পিএম, ৮ ডিসেম্বর,মঙ্গলবার,২০২০ | আপডেট: ০৭:০৬ এএম, ১৫ ডিসেম্বর,রবিবার,২০২৪

Text

বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে দুই দশক আগে জেগে ওঠা দ্বীপ ভাসানচরে একটি দিন পার করেছে সেখানে স্থানান্তরিত রোহিঙ্গা শরণার্থীরা। সেখানকার পরিবেশ দেখে বেশিরভাগ রোহিঙ্গা তাদের সন্তুষ্টির কথা জানিয়েছেন।

তবে মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলছে, আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সমন্বয়ে কারিগরি মূল্যায়ন ছাড়াই সরকারের রোহিঙ্গাদের এভাবে স্থানান্তর করা উচিত হয়নি।

কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরের ওপর চাপ কমাতে শুক্রবার নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ডের তত্ত্বাবধানে ১৬৪২ জন রোহিঙ্গাকে ৭টি জাহাজে করে ভাসান চরে নিয়ে যাওয়া হয়।

সেখানে পৌঁছানোর পরই প্রত্যেকের শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষা ও হাত ধোয়ানো শেষে তাদের ক্যাম্পে থাকার নিয়মকানুন সম্পর্কে ব্রিফ করে নৌবাহিনীর কর্মকর্তারা।

এরপর প্রতিটি পরিবার যার যার ঘর ও মালপত্র বুঝে নেন। জানা গেছে ২২টি আন্তর্জাতিক সংস্থা তাদের মানবিক সহায়তা দিতে ভাসানচরেই অবস্থান করছে।

প্রথম কয়েকদিন নৌবাহিনীর তত্ত্বাবধানেই রোহিঙ্গাদের খাবার সরবরাহ করা হবে।

ভাসানচরে থাকার জন্য মানসম্মত নতুন পাকা ঘর এবং বসবাসের মতো স্বাস্থ্যসম্মত এলাকা পেয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন রোহিঙ্গারা।

কুতুপালং ১৭ নম্বর ক্যাম্প থেকে আসা আরোপা বেগম বলেন, "জাগা দেকি, বাসা দেকি ভালা লাগসে। ওহানে পাহাড়, বাচ্চাকাচ্চা খেলাইতো পারে না। গরু চরতে পারে না। এখানে তো সব সমান। ভালো লাগসে।"

লালু বেগম বলেন, "ওহানে তো দুযোখো ছিলাম। এহানে জাগা বড়, সমান। এখানে নিরাপত্তা আছে। পানি আছে, বাথরুম আছে। আমাদের কষ্ট করতে হবে না।"

জাহাজে করে রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে নিয়ে যাওয়া হয়।
জাহাজে করে রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে নিয়ে যাওয়া হয়।

রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তর করতে ২০১৭ সাল থেকেই দ্বীপটিতে এই আশ্রয়ণ প্রকল্প হাতে নেয় বাংলাদেশ সরকার।

তখন থেকেই জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ আন্তর্জাতিক অর্থায়নে পরিচালিত উন্নয়ন সংস্থাগুলো এর বিরোধিতা করে আসছে।

সবশেষ জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিভেন দুজারিচ এই স্থানান্তরকে অনুচিত বলে মন্তব্য করেছেন।

এর আগে ভাসানচরে স্থানান্তর অবিলম্বে বন্ধ করতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি তাদের বিবৃতিতে আহ্বান জানায় আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ও অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।

ভাসানচরে স্থানান্তরের আগে সব আন্তর্জাতিক সংস্থার সমন্বয়ে একটি স্বাধীন কারিগরি ও সুরক্ষাগত মূল্যায়নের আহ্বান জানিয়ে আসছিল জাতিসংঘ।

সেটা ছাড়াই রোহিঙ্গাদের স্থানান্তর করা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের দক্ষিণ এশিয়া বিভাগের পরিচালক মীনাক্ষী গাঙ্গুলি।

"আমাদের প্রশ্ন হল, এতো তাড়া কেন? কোন টেকনিক্যাল অ্যাসেসমেন্ট ছাড়া তাদের এতো তাড়াতাড়ি শিফট করা উচিত হয়নি। এটা তো একটা চর। এখানে প্রায়ই ঘূর্ণিঝড় হয়, এখানে মানুষের থাকা সবসময়ই ঝুঁকিপূর্ণ। বাংলাদেশ সরকার এই ঝুঁকি কেন নিল? তাদের উচিত ছিল আরও সময় নিয়ে সঠিক নিয়মে আগানো।"

প্রতিটি বাড়ির সামনে প্রশস্ত রাস্তা।

ভাসানচর নিয়ে শুরু থেকেই জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বিরোধিতা থাকায় সরেজমিনে পরিস্থিতি দেখতে রোহিঙ্গাদের একটি প্রতিনিধিদলকে গত সেপ্টেম্বরে সেখানে পাঠানো হয়।

এর উদ্দেশ্য ছিল সরেজমিনে ভাসানচর ঘুরে এসে তারা যেন কক্সবাজারে থাকা রোহিঙ্গাদের সেখানকার পরিবেশ-পরিস্থিতি জানায় এবং স্থানান্তরের ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করে।

এখানে স্থানান্তর প্রক্রিয়া শুরুর পর থেকেই আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো নানা প্রশ্ন তোলে। স্থানান্তরের প্রক্রিয়ায় জাতিসংঘকে যুক্ত করা হয়নি বলে বুধবার একটি বিবৃতি দেয় সংস্থাটি।

এর প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে আহ্বান জানায়, এই আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো যেন ভুল ব্যাখ্যা না দেন।

ভাসানচরে স্থানান্তর রোহিঙ্গাদের জীবনমানের উন্নয়নের লক্ষ্যে সরকারের ''আন্তরিক প্রচেষ্টা'' বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওই বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।

এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে ভাসানচর প্রকল্প সরেজমিনে পর্যবেক্ষণে আসার আহ্বান জানিয়েছেন অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ সামসুদ্দৌজা।

তিনি বলেন, "আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর উচিত বিবৃতি না দিয়ে, রোহিঙ্গারা এখানে কীভাবে আছে, খাওয়া পাচ্ছে কিনা, স্বেচ্ছায় গিয়েছে কিনা, ভাসানচরে কি কি ফেসিলিটি আছে, সেগুলো সরেজমিনে এসে দেখা। তাদের সাথে কথা বলা।"

"যারা আশ্রয় দিয়েছে তাদেরকে এতো কিছু বলেন, আর যেই দেশ এই মানুষগুলোকে তাড়িয়ে দিল তাদেরকে কেউ কিছু বলে না। তারা জাতিসংঘকে চাপ দিক যেন মিয়ানমার তার নাগরিকদের ফিরিয়ে নিয়ে যায়।" বলেন, মোহাম্মদ সামসুদ্দৌজা।

তবে রোহিঙ্গাদের যেখানেই রাখা হোক না কেন তারা যেন নিজ দেশ মিয়ানমারে দ্রুত ফিরে যেতে পারে সে বিষয়ে কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে যাওয়ার কথা জানিয়ে আসছে সরকার।

বলা হচ্ছে, রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনের চেয়ে প্রত্যাবাসনের ওপরেই তারা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে।

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2