অবশেষে কি ক্ষমা চাইবে পাকিস্তান?
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০১:৩৪ পিএম, ৬ ডিসেম্বর,রবিবার,২০২০ | আপডেট: ১০:৫৩ পিএম, ২০ ডিসেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
আগামী ১৭ ডিসেম্বর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভার্চুয়াল বৈঠক অনুষ্ঠিত হবার কথা। বৈঠকটিকে নানা দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। এ বৈঠককে কম গুরুত্বপূর্ণ করার জন্য এবং এ বৈঠকের আকর্ষণ সরিয়ে নেওয়ার জন্য চীন ও পাকিস্তান নতুন কৌশল গ্রহণ করেছে বলে রাজনৈতিক অঙ্গনে গুঞ্জন শুরু হয়েছে।
এ গুঞ্জনের সূত্রপাত হয় গত বৃহস্পতিবার। ঐ দিন বাংলাদেশে নিযুক্ত পাকিস্তানের হাইকমিশনার গণভবনে এসে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সাক্ষাতে দুই দেশের সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। এই সাক্ষাতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী সুস্পষ্টভাবে একাত্তরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর গণহত্যা এবং অন্যান্য বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলেন। একাধিক কূটনৈতিক সূত্র মনে করছেন যে বাংলাদেশ পাকিস্তান সম্পর্কের নতুন মেরুকরণ ঘটতে চাইছে। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান একাধিক বাস্তবতা বিবেচনা করে একাত্তরের ভূমিকার জন্য ক্ষমা চাইতে পারেন এমন গুঞ্জন কূটনৈতিক অঙ্গনে শোনা যাচ্ছে।
পাকিস্তানের অন্তত দুইটি গণমাধ্যমে বাংলাদেশের কাছে ক্ষমা চাওয়ার বিষয়টি আলোচনায় এসেছে। জিও নিউজের একটি টকশোতে প্রভাবশালী রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলেছেন যে এখনই পাকিস্তানের ক্ষমা চাওয়ার সর্বোত্তম সময়। ইমরান খান অনেকগুলো বিষয়ে নমনীয়। সেই নমনীয়তার সূত্র ধরে তিনি হয়তো বাংলাদেশের কাছে বিজয় দিবসের আগে ক্ষমা চাইতে পারেন। তবে বিভিন্ন কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে এই ক্ষমা চাওয়ার বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশের চেয়ে উৎসাহ বেশি চীনের। কারণ বাংলাদেশে ভারতের আধিপত্য ও রাজনৈতিক প্রভাব ক্ষুন্ন করার জন্য চীন যে কৌশল নিয়েছে সেই কৌশলের পাকিস্তান অন্যতম অংশীদার।
গত এক বছর ধরে বাংলাদেশের সঙ্গে পাকিস্তানের মেরুকরণ ঘটছে। সম্পর্কের যে টানাপোড়ন সে টানাপোড়েনগুলো কমিয়ে ফেলা হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে দুবার টেলিফোন করেছেন। এই টেলিফোনে তারা দু`দেশের সম্পর্ককে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেছেন। বিজয়ের মাসে পাকিস্তানের হাইকমিশনার যখন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন তখন এই সম্পর্কের নতুন মেরুকরণের মাত্রা পেয়েছে বলেও কূটনৈতিক মহল মনে করেন। এই প্রেক্ষিতে আলোচনায় এসেছে যে, পাকিস্তান কি বাংলাদেশের কাছে ক্ষমা চাইবে? বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্কের সবচেয়ে স্পর্শকাতর জায়গা হল ১৯৭১।
১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চ থেকে ডিসেম্বরের বিজয় দিবস পর্যন্ত পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাংলাদেশের যে বর্বরতা ও নিপীড়ন চালিয়েছে তা ইতিহাসে নজিরবিহীন। এটিকে অনেকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সবচেয়ে ভয়াবহ নারকীয় হত্যাযজ্ঞ এবং গণহত্যা হিসেবে চিহ্নিত করেন। কিন্তু পাকিস্তান তাদের এই অপকর্মের জন্য কখনো ক্ষমা চায়নি। পাকিস্তানকে ক্ষমা চাওয়ার জন্য বাংলাদেশের পক্ষ থেকে অনেকবার অনুরোধ করা হয়েছিল। বাংলাদেশে তারা যে অগ্নিসংযোগ, লুটতরাজ ও ধর্ষণতা করেছে তার জন্য পাকিস্তান যেন ক্ষমা প্রার্থনা করে। এখন একাত্তরে পাকিস্তানের ভূমিকার চেয়েও বাংলাদেশের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক এবং বাংলাদেশকে ভারতের সাথে ঘনিষ্ঠতার বৃত্ত থেকে সরিয়ে নেওয়াটা পাকিস্তানের জন্য একটি বড় কৌশল।
পাকিস্তান মনে করছে যে যদি এই অমীমাংসিত `ছোট্ট` বিষয়টি যদি সমাধান করা যায় তাহলে বাংলাদেশের সঙ্গে পাকিস্তানের সুসম্পর্ক তৈরি করা সম্ভব হয়। পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য বাংলাদেশ অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি ইস্যু। তাছাড়া বাংলাদেশ-ভারতের কর্তৃত্ব খর্ব করার জন্য চীনের যে চিন্তা এবং নীলনকশা পাকিস্তান ইস্যুতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । কারণ চীনের কূটনৈতিকরা মনে করেন যদি বাংলাদেশ পাকিস্তানের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য ইত্যাদি বেশি করে। স্বাভাবিকভাবে ভারতের সঙ্গে তাতে দূরত্ব তৈরি হবে। আর এই বিবেচনা থেকেই চীন শুধু নিজেরাই বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক বৃদ্ধিতে আগ্রহী নয় বরং পাকিস্তানকেও বাংলাদেশের সঙ্গে সু-সম্পর্ক করার প্ররোচিত করছে বলে অনেকে মনে করছেন। আর এ কারণেই সম্পর্কের স্বাভাবিককরনের সবচেয়ে বড় বাধা একাত্তর। তাহলে একাত্তরের ভূমিকার জন্য পাকিস্তান ক্ষমা চাইতে পারে।
অনেক কূটনৈতিক মনে করছেন যদি ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের বিজয় দিবসের দিনে ক্ষমা প্রার্থনার আনুষ্ঠানিক ঘোষণাটা আসে তাহলে শেখ হাসিনা মোদি বৈঠকের ম্লান হয়ে যাবে বরং এই ক্ষমা প্রার্থনার ইস্যুটি সামনে আসবে।
গতকাল জিও নিউজের এক আলোচনায় একজন প্রভাবশালী রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলেছেন যে, পাকিস্তান ক্ষমা চাইলে তারা ছোট হবে না তারা বরং বড় হবে। এর ফলে সবচেয়ে যারা লাভবান হবে তারা হলো পাকিস্তান। এই ধারায় শেষ পর্যন্ত কি পাকিস্তান আগামী ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের কাছে ক্ষমা চাইবে? ভারত ঠেকাতে চীন-পাকিস্তান জোট কতটুকু সফল হবে বাংলাদেশে? সে প্রশ্ন উত্তর উত্তরের জন্য আমাদের আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে।
উৎসঃ বাংলা ইনসাইডার