সমুদ্র ছুঁয়ে উড়বে বিমান, বঙ্গোপসাগর ভরাট করে যেভাবে তৈরি হবে রানওয়ে
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ২৯ আগস্ট,রবিবার,২০২১ | আপডেট: ০৬:৫৬ এএম, ২০ ডিসেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
দেশি-বিদেশি পর্যটকদের সুবিধার কথা ভেবে কক্সবাজারে চালু হতে যাচ্ছে বাংলাদেশে সবচেয়ে দীর্ঘ রানওয়েধারী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কক্সবাজার বিমানবন্দর। রানওয়ের একটি অংশ তৈরি করা হচ্ছে সমুদ্র ভরাট করে। ফলে এক প্রকার সমুদ্র ছুঁয়ে এখানে রানওয়েতে বিমান ওঠানামা করবে। এজন্য বিমানবন্দরে নতুন টার্মিনাল ভবন নির্মাণ, রানওয়ে সম্প্রসারণ ও শক্তি বৃদ্ধি, এয়ারফিল্ড গ্রাউন্ড লাইটিং সিস্টেম স্থাপনসহ অন্যান্য কাজ শিগগিরই শুরু হতে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার লক্ষ্যে একটি প্রকল্পের অংশ হিসেবে আগামীকাল রোববার (২৯ আগস্ট) অনলাইনে বিমানবন্দরটির রানওয়ে সম্প্রসারণের কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করবেন।
এদিকে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বিবিসি বাংলার একটি প্রতিবেদনে উঠে এসেছে বিমানবন্দরটির রানওয়ে তৈরির পরিকল্পনা। প্রকল্পটির পরিচালক ইউসুফ ভূঁইয়া বিবিসিকে বলেন, ‘করোনাভাইরাস মহামারি ও চলতি বর্ষার অধিকাংশ সময়ই বৈরী আবহাওয়া সত্বেও রানওয়ের কাজ থেমে নেই। পুরো বিমানবন্দর এলাকার ময়লা আবর্জনা সরানো থেকে মাটি কাটা ও ঢালাইয়ের কাজ সমানে চলছে।’
প্রতিবেদনে জানা যায়, মহেশখালী চ্যানেলে দিকে ভূমি অধিগ্রহণ করে মাধ্যমে রানওয়ে সম্প্রসারিত করা হবে। সম্প্রসারিত অংশ সমুদ্রের যেটুকু জুড়ে হবে সেখানে পানিতে ব্লক, জিওটিউব ইত্যাদি ব্যবহার করে শুরুতেই একটি বাঁধের মত তৈরি করা হবে। পরে বাঁধের ভেতরকার পানি সেচ করে ফেলা হবে এবং গভীর সমুদ্র থেকে ড্রেজিং করে ভেতরে এনে ফেলা হবে বালি। বালি দিয়ে ভরাটের মাধ্যমে সমুদ্রের ওই অংশটি ভরাট হলে সেখানে ‘স্যান্ড পাইলিং’-এর মাধ্যমে রানওয়ের ভিত তৈরি করা হবে। কক্সবাজার বিমানবন্দরের সম্প্রসারিত রানওয়ের নকশা
সেখানে আরও জানা যায়, সবশেষে পাথরের স্তর বসিয়ে পুরো রানওয়ে সিল করে দেয়া হবে। তার ওপর হবে পিচ ঢালাইয়ের কাজ। এরপর হবে রানওয়ের শোভাবর্ধন ও নির্দেশক বাতি স্থাপনের বাকি কাজ। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বাংলাদেশে এই প্রথমবারের মতো এই প্রক্রিয়ায় কোন বিমানবন্দরের রানওয়ে তৈরি হচ্ছে। শুরুতে পরিকল্পনা করা ছিল শহরের দিকে বিমানবন্দর সম্প্রসারণ করা যায় কিনা। কিন্তু দেখা যায় এতে শহরের একটি বড় অংশ বিমানবন্দরের দখলে চলে যাবে। যার মধ্যে বিলাসবহুল কয়েকটি হোটেল, আবাসিক ভবন, লাবনি বিচ ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ স্থান ও স্থাপনা রয়েছে। এ কারণে বিমানবন্দরের উল্টো পাশে মহেশখালী চ্যানেলের দিকে সমুদ্রের ওপরেই রানওয়ে নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
বিমানবন্দর প্রকল্পের প্রকৌশলী এনামুল হক জানান, ‘সোনাদিয়া দ্বীপের বুক চিরে মহেশখালী চ্যানেলের কিয়দংশ ভরাটের মাধ্যমে যখন কক্সবাজার বিমানবন্দরটির রানওয়ের পূর্ণাঙ্গ রূপ পাবে তখন দেখা যাবে সৌন্দর্য্যের আরেক ভিন্ন জগৎ।’ সব মিলে রানওয়ে সম্প্রসারণের কাজ শেষ হতে তিন বছরের কিছু কম সময় লাগবে জানা যায়। কক্সবাজার বিমানবন্দরের রানওয়ে সম্প্রসারণের কাজ দুটি চীনা প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হয়েছে। চলতি বছরের ৯ই ফেব্রুয়ারি ওই দুটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সরকারের চুক্তি স্বাক্ষর হয়।
এদিকে প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, বর্তমানে কক্সবাজারের রানওয়ে ও অবকাঠামো সব ধরনের বিমান চলাচলের জন্য উপযোগী না। রানওয়ে সম্প্রসারণ হলে এই বিমানবন্দরে বিশ্বের সবচেয়ে সুপরিসর উড়োজাহাজ বোয়িং ৭৭৭ ও বোয়িং ৭৪৭ এর মডেলের যাত্রী বোঝাই বিমানও এখান থেকে উড্ডয়ন ও অবতরণ করতে পারবে। এছাড়া এখানে রিফুয়েলিংয়েরও ব্যবস্থা থাকবে। সব মিলিয়ে বিমানবন্দরটিতে দেশি-বিদেশি সরাসরি ফ্লাইট সংখ্যা বাড়ার পাশাপাশি যাত্রী পরিবহনের সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে এবং কক্সবাজারে দেশি-বিদেশি পর্যটকের আনাগোনা আরো বাড়বে বলে আশা করছেন কর্মকর্তারা।