পথশিশুদের বিস্কুট খাইয়ে খালে নেমে নিখোঁজ মহিলা
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৬:৫৯ পিএম, ১৪ জানুয়ারী,বৃহস্পতিবার,২০২১ | আপডেট: ০৬:২২ পিএম, ২২ ডিসেম্বর,রবিবার,২০২৪
খালপাড়ে খেলায় ব্যস্ত, ঝুপড়িবাসী কয়েকটি শিশুর সঙ্গে প্রথমে দাঁড়িয়ে কথা বলছিলেন এক মহিলা। সঙ্গে আনা কয়েকটি বিস্কুটের প্যাকেট খুলে তাদের খেতেও দিলেন। এর পরে কড়া সুরে ওই শিশুদের বেশি করে জল খাওয়ার নির্দেশ দিয়ে সোজা হেঁটে নেমে গেলেন খালের জলে!
উত্তর কলকাতার ক্যানাল ইস্ট রোডের খালের ধারে, মঙ্গলবার বিকেলে এই দৃশ্য দেখে চমকে গিয়েছিলেন অনেকেই। কিন্তু খালের দিকে যিনি নেমে যাচ্ছেন, তাঁকে আটকাতে পারেননি। তার পরে কেটে গিয়েছে ২৪ ঘণ্টারও বেশি সময়। কিন্তু খোঁজ মেলেনি ওই মহিলার।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর চৌত্রিশের ওই মহিলার নাম সুলেখা ঘোষ কর্মকার। স্বামী দিলীপ ঘোষ পেশায় গাড়িচালক। নিঃসন্তান ওই দম্পতি ১ নম্বর মুন্সিপাড়া লেনে থাকেন। দিলীপ পুলিশকে জানিয়েছেন, মঙ্গলবার দুপুরে তাঁর স্ত্রী মুরারিপুকুরে মা-বাবার কাছে যাচ্ছেন বলে মুন্সিপাড়ার বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন। কিন্তু তার পর থেকেই তাঁর আর খোঁজ নেই। একটি নিখোঁজ ডায়েরি করে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।
ক্যানাল ইস্ট রোড মানিকতলা থানার অন্তর্গত। মঙ্গলবার বিকেলে থানায় খবর যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই লালবাজারে জানানো হয়। সেখান থেকে আসে কলকাতা পুলিশের বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। ডেকে পাঠানো হয় ডুবুরিও। বিকেলে খালে ডুবুরি নামিয়ে এক দফা খোঁজাখুঁজি হলেও ওই মহিলার খোঁজ পাওয়া যায়নি। এর পরে খোঁজার সুবিধার জন্য যে জায়গা দিয়ে মহিলা খালে নেমে গিয়েছেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছিলেন, সেখানে একটি লোহার সেতুর গায়ে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন আলো লাগানো হয়। কিন্তু তার পরেও অন্ধকার হয়ে আসায় বেশি রাত পর্যন্ত ডুবুরি নামিয়ে কাজ চালানো যায়নি। বুধবার ভোর থেকে ফের নতুন করে খোঁজাখুঁজি শুরু হয়। ডুবুরি এবং বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর পাশাপাশি নামানো হয় নৌকাও।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত এক তদন্তকারী আধিকারিক বলেন, ‘‘খোঁজার কাজে সব চেয়ে সমস্যা তৈরি করছে পাঁক। খালের পাঁক তোলার জন্য এক ধরনের যন্ত্রও আনানো হয়েছে পুরসভার থেকে। যদিও রাত পর্যন্ত মহিলার খোঁজ পাওয়া যায়নি।’’
এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, যে জায়গা দিয়ে মহিলা খালে নেমে গিয়েছিলেন বলে অনুমান, সেখানকার একটি সেতুর উপরে অস্থায়ী ভাবে থাকতে শুরু করেছেন সুলেখার আত্মীয়েরা। তাঁর এক ভগিনীপতি সমীর মিস্ত্রি জানান, তাঁর স্ত্রীরা সাত বোন। তাঁর শ্বশুরমশাই অর্থাৎ সুলেখার বাবা শ্যামাপদ কর্মকার বছর দু’য়েক আগে মারা গিয়েছেন। মা শোভারানির মৃত্যু হয়েছে মাস তিনেক আগে। সমীরের কথায়, ‘‘মায়ের কাছেই মেয়েটা আসত। মায়ের মৃত্যুর পরে সেই জায়গাটাও বন্ধ হয়ে যায়।’’ সুলেখার আর এক ভগিনীপতি অনুপম ঘোষের দাবি, ‘‘মঙ্গলবার সন্ধ্যায় খবর পাওয়ার পর থেকেই আমরা এখানে আছি। কিন্তু ওর স্বামী বা শ্বশুরবাড়ির কারও দেখা নেই। স্বামীর অত্যাচারেই মেয়েটা এ রকম করেছে।’’
এ দিন এ নিয়ে কথা বলতে সুলেখার স্বামী দিলীপকে ফোন করা হলে তিনি গোটা বিষয়টি শুনে ফোন কেটে দেন। তার পর থেকেই তাঁর ফোন বন্ধ। মানিকতলা থানার তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, নিখোঁজ মহিলাকে খুঁজে পাওয়ার পরে যথোপযুক্ত আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।