ইসরাইলিরা আমিরাতে ঢুকে ঘৃণিত যৌনতায় জড়াচ্ছে
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:৪৯ এএম, ৭ জানুয়ারী,বৃহস্পতিবার,২০২১ | আপডেট: ০৯:১৮ এএম, ২১ ডিসেম্বর,শনিবার,২০২৪
বিশ্বাস করা কঠিন হলেও বাস্তবতা হচ্ছে, ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের (নরমালাইজেশন) পর সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে ফিরে আসা ইসরাইলি পর্যটকরা দুবাইকে মধ্যপ্রাচ্যের লাসভেগাস হিসেবে বর্ণনা করেছেন। এটিকে বিশেষভাবে বলা যায়, বেশ্যাবৃত্তির বিস্তার ও যৌন ব্যবসা। একটি আরব মুসলিম দেশের জন্য যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।
ইসরাইলের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নতুন বছর উদযাপনের জন্য প্রায় আট হাজার ইসরাইলি দুবাই ভ্রমণ করেছে। আরব আমিরাতে মাদকের ব্যাপারে কঠোর বিধিনিষেধ থাকা সত্ত্বেও তারা সাথে করে হাশিশ ও গাঁজা নিয়ে গিয়েছিল সেখানে। মাদক কারবারের অভিযোগে দেশটিতে সর্বোচ্চ ২০ বছরের কারাদণ্ড, এমনকি মৃত্যুদণ্ডও হতে পারে।
দুবাইতে মাদক চোরাচালানকারী আত্মস্বীকৃত এক ইসরাইলি দেশটির চ্যানেল ১২-কে বলেন, গ্রেফতার হওয়ার ব্যাপারে শঙ্কিত নন তিনি। ব্যাখ্যায় বলেন, ‘আমরা নববর্ষ উদযাপনের জন্য হাশিশ ও গাঁজা চোরাচালান করেছি এবং ব্যাপক লাভ করেছি’।
‘এটা কোকেন ছিল না, হালকা মদ ছিল। আমি মনে করি না, এটি তাদের সমস্যায় ফেলবে। আমাদের স্যুটকেসের মাত্র কয়েক গ্রামের জন্য মৃত্যদণ্ড? আমরা তো হোটেলের রুমে ধুমপান করেছি মাত্র।’
দুবাইয়ের এক ইসরাইল বাসিন্দা বলেন, আরব আমিরাতে বিশেষ করে দুবাইতে এত সংখ্যক ইসরাইলি একত্রিত হওয়ায় তারা এটাকে মনে করেছিল তাদের বাড়ির মতো এবং যা খুশি তাই করতে পারবে তারা।
‘দুবাইতে অধিকাংশ ইসরাইলি পর্যটক মাস্ক পরিধান করে না, সামাজিক দূরত্ব মেনে চলে না এবং উচ্চ জরিমানা গোনার ঝুঁকিও নেয় তারা।’
সেপ্টেম্বরে স্বাক্ষরিত স্বাভাবিকীকরণ চুক্তির পর থেকে প্রায় ৫০ হাজার ইসরাইলি দুবাই ভ্রমণ করেছে।
নতুন সংযোজন হলো বেশ্যাবৃত্তির প্রবৃত্তি নিয়ে একদল ইসরাইলি পুরুষদের ছুটি কাটানোর নতুন এ গন্তব্যে যাওয়া। দুবাই সম্পর্কিত পর্যটক বিজ্ঞাপন ও পোস্টারগুলো এ অন্ধকার বাস্তবতা গোপন করে। তারা হাজার হাজার মার্কিন ডলার তাদের পকেটে পুরে আরব আমিরাতে কিঞ্চিৎ বা পুরো বিবেক বর্জিতভাবে নারীদের নিয়ে আমোদ ফুর্তিতে তাদের সময় কাটায়।
এখন এটা স্পষ্ট হয়ে গেছে, দুবাইতে যেকোনো ইসরাইলি পর্যটক এক হাজার ডলারের বিনিময়ে হোটেল রুমের পার্টিতে যোগ দিয়ে অপরাধের জগতে হারিয়ে যেতে পারে। এসব কিছু প্রকাশ্যেই হচ্ছে। আমিরাত কর্তৃপক্ষ সপ্তাহব্যাপী দুবাই শহরে যৌনতায় কাটানো এসব পর্যটকদের ব্যাপারে চোখ বন্ধ করে আছে।
দুবাইতে জঘন্য এ ব্যবসার সাথে জড়িত আরেক ব্যক্তি বলেন, তিনি বুখারেস্টে ছয় বার গিয়েছিলেন। তবে তিনি এখন নিশ্চিতভাবে বিশ্বাস করেন, সৈকতের বিশাল আকারের বিলাসবহুল আবাসিক হোটেলগুলো নিয়ে দুবাই শহর পৃথিবীর বৃহত্তম পতিতালয়ে পরিণত হয়েছে।
তিনি উল্লেখ করেন, সন্ধ্যার দিকে কমপ্লেক্সগুলোর আশপাশের রেস্তোঁরা ও বারগুলোর বাইরে রাখা রঙ-বেরঙের চেয়ারগুলোতে কয়েক ডজন নারী বসে থাকে।
আমিরাত-ফেরা কিছু ইসরাইলি পর্যটকের দেয়া তথ্য থেকে জানা যায়, তাদেরকে ১৮ শ’ থেকে দুই হাজার দিরহাম (ছয় শ’ মার্কিন ডলার) খরচ করতে হয়েছে। তারা আমিরাতে নির্বিঘ্নে চলা একটি নতুন ‘গোশতের বাজার’ আবিষ্কার করেছে। যেন তারা বুখারেস্ট, বুরগাস বা ব্যাংককে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
দুবাইগামী এক তরুণের সাথে সাক্ষাত হয়েছিল একজন ইসরাইলি সাংবাদিকের। তিনি জানান, তার কথাবার্তা এমন লজ্জাজনক যৌন বক্তব্যে ভরপুর ছিল, যা সহজে হজম করার মতো না। তবে বর্তমানে আমিরাতে কী হচ্ছে এটি তার প্রতিফলন করে। তারা ঘৃণিত যৌন ক্রিয়াকলাপ দেখতে দেখতে সুইমিং পুলের পাশে বসে খেতে পারেন।
‘এটি হলো অ্যালকোহল, নারী ও যৌন পার্টির মিশ্রণ। আইপ্যাড বা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে তারা তাদের পছন্দ ঠিক করে নিতে পারে,’ ব্যাখ্যা করেন এক ইসরাইলি।
‘পিৎজা টপিংয়ের মেনুবারের মতো সবকিছু উন্মুক্ত। বিশেষ করে পূর্ব ইউরোপীয় বংশোদ্ভূত পতিতাদের নিয়ে দুবাইতে কার্ড সেবাদানকারী গাড়ি পতিতাবৃত্তিও রয়েছে, যাতে এক হাজার দিরহাম বা প্রায় তিন শ’ ডলার খরচ হয়।’
তিনি আরো বলেন, দুবাইতে ইসরাইলিরা নাইটক্লাবে যায়। সবার সাথেই পতিতারা জুড়ে থাকে। ‘তাদের দেখতে সাঁতারের পোশাক পরা ইনস্টাগ্রামের মেয়েদের মতো মডেল মনে হয়। তারা সবাই দুবাইয়ের ‘গোশতের বাজারে’ কাজ করা এক থেকে দেড় শ’ নারীতে ঠাসা হোটেলের লবিতে দেখা করে, আমেরিকার মতো। সপ্তাহে একেকজন ৫০ হাজার শেকেল (প্রায় ১৫ হাজার মার্কিন ডলার) খরচ করে। এটা অনেক টাকা।’
তিনি জানান, ‘কোনো কোনো দিন আমি পাঁচটি মেয়েকেও আমার হোটেল কক্ষে নিয়ে গেছি।’
ইসরাইলি যৌন পর্যটকরা জানিয়েছেন, দুবাইয়ের হোটেলগুলোতে ব্রাজিল, রাশিয়া, পেরু ও বলিভিয়াসহ প্রায় সারা বিশ্বের পতিতারা রয়েছে। রাতপ্রতি খরচ পড়ে সাত শ’ মার্কিন ডলারেরও বেশি।
‘এটা একটি ব্যয়বহুল ভ্রমণ। শুধু পয়সাওয়ালা ইসরাইলিরাই দুবাই যায়। এক সপ্তাহের দুবাই ভ্রমণে খরচ পড়ে ৩০ হাজার মার্কিন ডলার। সবকিছুই ব্যয়বহুল। ক্লাবে ঢুকতে জনপ্রতি এক হাজার শেকেল খরচ করতে হয়। তারপর আপনি বোতল কিনলেন, তারপর খেলেন, তারপর একজন নারী এলো, তার সাথে পুরো রাত কাটানো- সবমিলিয়ে একরাতে মোট খরচ পাঁচ হাজার থেকে ছয় হাজার মার্কিন ডলার।’
এটা অবিশ্বাস্য যে, দুবাইয়ে এমন জঘন্য পতিতাবৃত্তি মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। তবে এটাই সত্য। ইসরাইলিরা দুবাই যাচ্ছে বুখারেস্ট বা থাইল্যান্ডের মতো। দুবাইয়েই সবথেকে বেশি খরচ এবং সবখানেই পতিতাদের পাওয়া যায়। ইসরাইলি যৌন পর্যটকদের একটি এলোমেলো নমুনা অনুসারে, দুবাই এখন তাদের প্রধান গন্তব্যে পরিণত হয়েছে, তাদের যৌনতার প্রথম শহর। অপেক্ষাকৃত ব্যয়বহুল হলেও রোমানিয়া যাওয়ার চেয়ে তাদের জন্য দুবাই যাওয়া অনেক বেশি সহজ।
দুবাইয়ে যা ঘটছে তা হলো ইসরাইলের যৌন শিল্পের একটি বর্ধিতাংশ। আর এটা সংঘটিত হচ্ছে দুবাইয়ে পরিচালিত পতিতাবৃত্তি অ্যাপসগুলোর বিজ্ঞাপনের নারীদের মাধ্যমে। সংযুক্ত আরব আমিরাত এখন উপসাগরীয় পাপের শহর ও বিশ্বের যৌন পর্যটনের অন্যতম রাজধানী। সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের ফল হলো, ইসরাইলিরা পুরো এই লজ্জাজনক ব্যবসার সাথে ভয়ঙ্করভাবে জড়িয়ে গেছে।
উৎসঃ dailynayadiganta