avertisements 2

সিগারেট কিনতে যাওয়াই কাল হলো

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১১:৪৫ এএম, ২৯ সেপ্টেম্বর,মঙ্গলবার,২০২০ | আপডেট: ০৮:১৪ পিএম, ২৫ এপ্রিল,বৃহস্পতিবার,২০২৪

Text

প্রায় ৩ মাস পূর্বে বিয়ে হয়েছে তাদের। খুব সুখেই দিন যাচ্ছে। শুক্রবার ছুটির দিন হওয়ায় স্ত্রীকে নিয়ে নিজেদের প্রাইভেট কারে করে ঘুরতে বের হন। শাহপরাণ (রহ.) এর মাজার জিয়ারত করার পর দক্ষিণ সুরমার বাড়ি ফিরছেন তারা। এমসি কলেজের গেটের সামনে কার রেখে সিগারেট কিনতে যাওয়া তাদের জীবনে কাল হয়ে দাঁড়ায় বলে মন্তব্য করেন ধর্ষিত ওই গৃহবধূর স্বামী।

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, ‘ছাত্রাবাসের ভেতরে ৫ম তলার একটি ভবনের সামনে নিয়ে যায় কয়েকজন ছাত্রলীগ কর্মী। আমি তাদের কোনো সময়ই দেখিনি। আমাকে অন্যত্র নিয়ে গিয়ে তারা আমার স্ত্রীকে ধর্ষণ করে। এসময় কয়েকজন পাহারা দিচ্ছিলো। তখন ওই ভবনের ২য় তলা থেকে এক যুবক বারান্দায় বের হলে তাকে ধমক দিয়ে চলে যেতে ছাত্রলীগের কর্মীরা। দূর থেকে আমি বিষয়টি দেখতে পাই। এরপর তারা আমার প্রাইভেট কার রেখে আধঘণ্টার মধ্যে ৪৪ হাজার টাকা নিয়ে আসতে বলে। তখন আমি বিধ্বস্ত অবস্থায় আমার স্ত্রীকে নিয়ে পায়ে হেঁটে এমসি কলেজের ছাত্রাবাসের সামনে এসে সিএনজি অটোরিকশা করে টিলাগড়ে যাই। আর পেছন থেকে উল্লাস করে ছাত্রলীগের কর্মীরা। সেখান থেকে পুলিশকে খবর দিলে পুলিশকে নিয়ে ছাত্রাবাসে এসে কার উদ্ধার করলেও ছাত্রলীগের কর্মীরা পালিয়ে যায়।’

এই ঘটনায় প্রধান আসামি সাইফুর রহমানসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। রোববার ভোররাতে সুনামগঞ্জের ছাতক থেকে পুলিশ ছাত্রলীগ কর্মী সাইফুর রহামনকে গ্রেপ্তার করে। এছাড়া সকালে হবিগঞ্জের মাধবপুর সীমান্ত এলাকা থেকে মামলার চার নম্বর আসামি অর্জুন লস্করকে গ্রেপ্তার করা হয়।

ধর্ষণ মামলায় এজহার নামীয় আসামিরা হচ্ছে, বালাগঞ্জের চান্দাইপাড়া গ্রামের তাহিদ মিয়ার ছেলে সাইফুর রহমান (২৮), সুনামগঞ্জ সদর থানার উমেদনগর গ্রামের তারেকুল ইসলাম তারেক (২৮), বর্তমানে তারেক মেজরটিলা এলাকার দিপীকা আ/এ ৫নং বাসায় বসবাস করছে। এছাড়া হবিগঞ্জ সদর থানার বাগুনীপাড়ার শাহ মো. জাহাঙ্গীর মিয়ার ছেলে শাহ মো. মাহবুবুর রহমান রনি (২৫), জকিগঞ্জের আটগ্রামের কানু লস্করের ছেলে অর্জুন লস্কর, সুনামগঞ্জ জেলার দিরাই থানাধীন বড়নগদীপুর (জাগদল) গ্রামের রবিউল ইসলাম (২৫), কানাইঘাটের গাছবাড়ি গ্রামের মাহফুজুর রহমান মাসুম (২৫)।

মামলা সূত্র জানায়, শুক্রবার বিকালে প্রাইভেট কার নিয়ে শাহপরাণ (রহ.) মাজার জিয়ারত করতে যান স্বামী-স্ত্রী। জিয়ারত করে বাড়ি ফেরার পথে এমসি কলেজের সামনে প্রাইভেট কার রেখে সিগারেট কিনতে যান ওই যুবক। এসময় গৃহবধূকে উত্ত্যক্ত করে ছাত্রলীগের কর্মীরা। বিষয়টি দেখে এগিয়ে আসেন গৃহবধূর স্বামী। ঘটনার প্রতিবাদ জানালে ছাত্রলীগ কর্মী সাইফুর রহমান ও অর্জুন লস্কর তাকে মারধর করে। এসময় মাহবুবুর রহমান রনি চালকের পাশের সিটে বসে প্রাইভেট কার চালিয়ে গৃহবধূ ও তার স্বামীকে এমসি কলেজের ছাত্রাবাসের ৭নং ব্লকের ৫ তলা ভবনের সামনের খালি জায়গায় কারটি দাঁড় করায়। পরে ওই স্থানে মোটরসাইকেলে করে আরও কয়েকজন আসে। এসময় মামলার ২নং আসামি তারেক ওই যুবকের মানিব্যাগ থেকে ২ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়। এছাড়া অপর আসামি অর্জুন লস্কর গৃহবধূর গলা থেকে একটি স্বর্ণের চেইন ছিনিয়ে নেয়। এরপর গৃহবধূর স্বামীকে গাড়ি থেকে নামিয়ে মামলার এজহার নামীয় আসামি সাইফুর, তারেক, রনি ও অর্জুন ওই ভবনের পশ্চিম পাশে নিয়ে যায়। তারপর রাত ৮টার দিকে প্রাইভেট কারের ভেতরে সাইফুর, রনি, তারেক, অর্জুন গৃহবধূকে ধর্ষণ করে। পরে ধর্ষণকারীরা গৃহবধূর স্বামীকে জানায়, প্রাইভেট কার নিতে হলে আরও ৪০ হাজার টাকা আধঘণ্টার মধ্যে তাদের দিতে হবে। অসুস্থ অবস্থায় স্বামী তার স্ত্রীকে নিয়ে পায়ে হেঁটে এমসি কলেজের ছাত্রাবাসের গেট থেকে একটি সিএনজি অটোরিকশা করে টিলাগড় পয়েন্টে গিয়ে শাহপরাণ থানা পুলিশকে অবগত করেন। এরপর পুলিশকে নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রাইভেট কার উদ্ধার করার পাশাপাশি একটি মোটরসাইকেল উদ্ধার করে পুলিশ। ঘটনার একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী এক যুবক ধর্ষণের সঙ্গে কারা জড়িত সে বিষয়ে পুলিশকে তথ্য দেয়।

সিলেট মহানগর পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশার (গণমাধ্যম) জ্যোর্তিময় সরকার বলেন, পুলিশ ঘটনার পর থেকেই আসামিদের গ্রেপ্তার করার জন্য অভিযান অব্যাহত রেখেছে। এখন পর্যন্ত দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এছাড়া অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে এমসি কলেজ ও ছাত্রাবাসে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2