ভালোবাসার টানে কারাগার থেকে সঙ্গে এলো কবুতর
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ১৮ জুন,শনিবার,২০২২ | আপডেট: ০১:৫৮ পিএম, ৩১ ডিসেম্বর,মঙ্গলবার,২০২৪
ছবি : সংগৃহীত
‘রাজা’ ও ‘যাদব’ দুটি কবুতরের নাম। তাদের জন্ম হয়েছে যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের অভ্যন্তরে। ওই কারাগারে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আসামি মিজানুর রহমান (৪৭) দীর্ঘ সময় ছিলেন। কারাবন্দি জীবনে মিজানুরের সঙ্গী ছিল কারাগারের একঝাঁক কবুতর। তবে এর মধ্যে রাজা আর যাদবের সঙ্গে যেন মিজানুরের বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। মিজানুর যখন মুক্তি পেয়ে বাড়ি ফিরলেন, তখন তার সঙ্গে রাজা আর যাদবও চলে এলো মিজানুরের বাড়িতে।
মিজানুর রহমানের বাড়ি ঝিনাইদহ সদর উপজেলার বাকড়ি গ্রামে। একটি হত্যা মামলায় আসামি হয়েছিলেন মিজানুর। মামলার রায়ে তার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়। রায় হওয়ার সময় তার বয়স ছিল ২৫ বছর। এরপর দীর্ঘ ২২ বছর ১০ মাস পর ২ জুন তিনি মুক্তি পেয়েছেন। কারাজীবনে তিনি ঝিনাইদহ, যশোর ও ঢাকা কারাগারে থেকেছেন। সর্বশেষ তিনি ছিলেন যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে।
এরপর থেকে দুই কবুতর নিয়ে মিজানুর নতুন জীবন শুরু করেছিলেন। মিজানুর রহমান যে ঘরে ঘুমান, সেই ঘরেই কবুতরগুলো থাকত। তবে ৭ জুন যাদব ঘরের ফ্যানের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে কবুতরটি মারা যায়। এ মৃত্যুতে মিজানুর খুব কষ্ট পেয়েছেন। সঙ্গীর মৃত্যুতে রাজাও দুই দিন কিছু খায়নি।
দেশীয় প্রজাতির কবুতর রাজা। তাকে মগে করে খাওয়াতে হয় পানি। এমনকি সে নিজে খায় না। তাকে মুখে তুলে খাওয়াতে হয়। বাড়িতে দেশীয় প্রজাতির আরও প্রায় ৫০-এর অধিক কবুতর থাকলেও সে আলাদা থাকে। সারাদিনই সে কারও না কারও ঘাড়ে, কোলে, হাতের ওপর এমনকি মাথায় চড়ে দিন পার করে।
প্রতিবেশী রফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা খুবই অবাক হয়েছি। এমন ঘটনা আসলেই বিরল। এর আগে কখনো দেখিনি, আবার শুনিওনি। কবুতর মিজানুরের কথা শোনে। ডাকলে কাছে চলে আসে। কবুতর রাজাবাবু কখনও তার পিঠে, কখনও মাথায়, কখনও মোটরসাইকেলের ওপর বসে থাকে। এমন সম্পর্ক বিস্ময়কর। মানুষের সঙ্গে পাখির এমন বোঝাপড়া সত্যিই ব্যতিক্রম। রাজাবাবুকে একনজর দেখার জন্য মিজানুরের বাড়িতে লোকজন ভিড় করছে।
মিজানুর রহমান আরটিভি নিউজকে বলেন, দীর্ঘ সময় যখন যশোর কারাগারে ছিলাম, তখন ভীষণ একাকিত্ব জীবন কাটাতাম। তখন কারাগারের কবুতরগুলোর সঙ্গে সময় কাটাতে শুরু করি। নিজে কম খেয়ে কবুতরগুলোকে খাওয়াই। কারাগারেই নতুন করে একটি দেশি কবুতরের একজোড়া ডিম থেকে বাচ্চা ফোটে। তাদের নাম রাখি রাজা আর যাদব। সেই ছোট থেকেই আমি ওদের খাওয়াতাম। কবুতরগুলোও সারাক্ষণ আমার আশপাশে ঘুরে বেড়াত। একপর্যায়ে কবুতর দুটি কাঁধে উঠতে শুরু করে। আমি যেখানে ঘুমাতাম সেই বালিশের কোলে গিয়ে ওরা ঘুমাত। নামাজ পড়তে গেলেও আমার সঙ্গে নামাজের স্থানে বসে থাকত। এভাবেই ওদের সঙ্গে আমার ভালোবাসা তৈরি হয়ে যায়। গম ছাড়া সে কিছু খায় না। প্রতিদিন তাকে গোসল করাতে হয়। অন্য কবুতর তাদের জন্য বানানো ঘরে থাকলেও রাজা বাবু আমার শোবার ঘরে থাকে।
মিজানুর রহমান আরও বলেন, আমি যখন বাড়িতে থাকি তখন রাজাবাবু সবসময় আমার কাছেই থাকে। ওকে কোলে করে পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে বেড়াই। আমাদের বাড়িতে আরও অনেক কবুতর আছে, কিন্তু সেগুলো আমার কাছে আসেও না, আবার ডাকলেও শোনে না। রাজা বাবু আমার কাছে যখন থাকে তখন আমার খুব ভালো লাগে।
মিজানুর জানালেন, কখনো নিজে কম খেয়ে কবুতরকে খাবার দিয়েছেন। তবে রাজা আর যাদব নামের কবুতরের প্রতি আলাদা মায়া ছিল তার। কবুতরগুলোও সারাক্ষণ তার আশপাশে ঘুরে বেড়াত। একপর্যায়ে কবুতর দুটি কাঁধে উঠতে শুরু করে।
২ জুন মিজানুরের মুক্তির দিন ধার্য ছিল। তবে এর আগে থেকেই ওই দুই কবুতরের জন্য মিজানুরের চিন্তা শুরু হয়। মিজানুর বলেন, জেলে দুই কবুতরকে কার কাছে রেখে যাব ভাবছিলাম। তবে কোনো উপায় না পেয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলি। অবশেষে ২ জুন সন্ধ্যা ছয়টায় যখন কারাগার থেকে বের হলাম তখন রাজা আর যাদবও আমার সঙ্গে চলে এসেছে।