সরকারি কর্মকর্তার কোটিপতি স্ত্রী
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ১২ জুন,রবিবার,২০২২ | আপডেট: ০৭:২৫ পিএম, ২৯ ডিসেম্বর,রবিবার,২০২৪
কামরুন নাহার পলি, পেশা গৃহিণী। তাঁর তিন ব্যাংকে ছয়টি হিসাব রয়েছে। শুধু তাই নয়, এসব হিসাবে রয়েছে প্রায় পৌনে ২ কোটি টাকা। পলিকে কোটিপতি গৃহিণী বললে একদম অত্যুক্তি হবে না। নিজের উপার্জনের বিষয়ে এক্কেবারে সাচ্চা, হিসাব খোলার সময়ই আয়ের উৎস হিসেবে স্বামীকে দেখিয়েছেন তিনি। স্বামীও যেনতেন কেউ নন, সরকারি চাকরিজীবী আনিছ উদ্দিন আহমেদ ওরফে শামীম। তিনি কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (কেজিডিএসএল) সাবেক উপমহাব্যবস্থাপক।
তবে শেষ রক্ষা হয়নি পলির। দুদকের আবেদনে সম্প্রতি তাঁর ছয়টি ব্যাংক হিসাবের ১ কোটি ৭৫ লাখ ৮৪ হাজার ৯৪৪ টাকা মানি লন্ডারিং আইনের আওতায় ফ্রিজের আদেশ দিয়েছেন চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ শেখ আশফাকুর রহমান।
এ বিষয়ে দুদক প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক ও অনুসন্ধান কর্মকর্তা মো. জাহিদ কামাল সমকালকে বলেছেন, দুর্নীতির মাধ্যমে আয় করা অর্থ এই দম্পতি মানি লন্ডারিং করেন। এ বিষয়ে তদন্ত চলছে। অভিযোগের বিষয়ে কামরুন নাহার পলির মোবাইল ফোন নম্বরে একাধিকবার কল দিলেও বন্ধ পাওয়া যায়।
আনিছ-পলি দম্পতির বাড়ি চট্টগ্রামের চাঁদপুর নতুনপাড়া হাজী মহসিন রোডের 'আশ্রয়' ভবন। এ ছাড়া তাঁদের ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার এ ব্লকের ১১ নম্বর রোডের ২৮৩ নম্বর বাড়িতে একটি ফ্ল্যাট রয়েছে। দুদকের আরেক মামলায় এ দম্পতি বর্তমানে পলাতক।
পলির ফ্রিজ হিসাবগুলো হলো- বেসিক ব্যাংক লিমিটেড ষোলশহর শাখায় ২০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র (নিবন্ধন নং-২০১৭০০৪৩), ঢাকা ব্যাংক সিডিএ অ্যাভিনিউ শাখায় ৪০ লাখ, ৪৫ লাখ ও ৩৪ লাখ ৭৬ হাজার টাকার তিনটি এফডিআর (নং-০২০৩৩১১১৬৭, ০২০৩১০১১১৪৫ ও ০২০৩১৮৪৮৩), একই ব্যাংকের সঞ্চয়ী হিসাবে (নং-০২০২০০৩৮৩৯২) ৭১ হাজার ৮০০ টাকা এবং এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক আগ্রাবাদ শাখায় রয়েছে ৩৫ লাখ ৩৭ হাজার ১৪৪ টাকার এফডিআর (নং-০১০৫৪৭৩০০০০০৪৯)। ২০১৭ সালের ২০ জুন থেকে ২০১৯ সালের ৯ সেপ্টেম্বর তাঁর হিসাবে এসব অর্থ জমা হয়।
দুদক সূত্র জানায়, ২০১১ সালের ২১ আগস্ট কর্ণফুলী গ্যাসের তৎকালীন ব্যবস্থাপক থাকা অবস্থায় আনিছ উদ্দিন সরকারি চাকরিবিধি লঙ্ঘন করে কর্ণফুলী গ্যাসের নিবন্ধিত ঠিকাদার নিয়ে 'রক প্রপার্টিজ' নামে একটি ডেভেলপার কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। এই প্রতিষ্ঠান মেসার্স নুর সিন্ডিকেটের সঙ্গে দরপত্র পরিচালনা ও নির্মাণকাজের চুক্তি করে। চুক্তিতে উল্লেখ ছিল, কর্ণফুলী গ্যাসের চাঁদগাঁও অফিসার্স আবাসিক এলাকায় একটি ১০ তলা ভবনের দরপত্রে অংশগ্রহণ ও নির্মাণকাজের বিল বাবদ প্রাপ্ত অর্থ থেকে নুর সিন্ডিকেটকে দেড় শতাংশ কমিশন দেওয়া হবে। কাজ শেষে চুক্তি মতো নিজের দেড় শতাংশ হারে কমিশন রেখে বাকি টাকা আনিছ আহমেদের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান রক প্রপার্টিজের ব্যাংক হিসাবে হস্তান্তর করা হয়। ২০১২ সালের ১৮ ডিসেম্বর কূটকৌশল করে দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির বৈঠকে সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে মেসার্স নুর সিন্ডিকেটকে নির্বাচন করে কার্যাদেশ প্রদানের সুপারিশ করা হয়। ৩০ ডিসেম্বর কার্য সম্পাদনের জন্য নুর সিন্ডিকেটের পক্ষে নুর মোহাম্মদ ও মেসার্স রক প্রপার্টিজের পক্ষে পরিচালক নেছার আহমদ চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করেন।
দুদক জানায়, আনিছ উদ্দিনের স্ত্রী কামরুন নাহার ব্যাংকে যেসব হিসাব খুলেছেন, সেখানে তিনি আয়ের উৎস হিসেবে স্বামীর উপার্জন এবং পেশা গৃহিণী উল্লেখ করেন। ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত কামরুন নাহারের স্বামী আনিছ উদ্দিনের একটি যৌথ হিসাবে ৯ লাখ ৩৫ হাজার টাকা জমা করে উত্তোলন করা হয়। সব মিলিয়ে তাঁদের সর্বমোট ৯ কোটি ৯৩ লাখ ১৬ হাজার ৮৭৭ টাকা সন্দেহজনক লেনদেনের বিষয়টি দুদকের প্রাথমিক তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে। মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে 'দুর্নীতি ও ঘুষের' মাধ্যমে অপরাধলব্ধ অর্থ সন্দেহজনক লেনদেন করে তাঁরা শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। এ জন্য আবেদন জানালে আদালত তাঁদের অর্থ ফ্রিজের আদেশ দেন।