avertisements 2

আমি একা হয়ে গেলাম, বিয়ের ৬ মাসে আমার সব শেষ : নিহত রনির স্ত্রী

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ৭ জুন,মঙ্গলবার,২০২২ | আপডেট: ০৭:০৫ এএম, ২৫ ডিসেম্বর, বুধবার,২০২৪

Text

নিহত ফায়ার ফাইটার রনি ও তার স্ত্রী রুপা 

‘এই পৃথিবীতে আমি একা হয়ে গেলাম। আমার একটা সন্তান থাকলে তাকে আঁকড়ে ধরে বাঁচতে পারতাম। বিয়ের ছয় মাসে আমার স্বামীর মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে আমার সব শেষ হয়ে গেল।’ এমনই আহাজারি করছিলেন ফায়ার ফাইটার রমজানুল ইসলাম রনির স্ত্রী রুপা আক্তার।

বিয়ের মাত্র ছয় মাসেই বিধবা হয়ে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন রুপা আক্তার। দেড় বছর আগে চাকরি পেয়ে ছয় মাস আগে বিয়ে করেছেন ফায়ার ফাইটার রনি। তিন মাস আগে সীতাকুণ্ড ফায়ার সার্ভিস স্টেশনে যোগদান করে স্ত্রী রুপাকে নিয়ে ফায়ার সার্ভিস কোয়ার্টারেই থাকতেন।

ঘটনার দিন রাতের খাবার খেয়ে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন রনি। রাত দুই টায় ডিউটি থাকলেও রাত ১১টায় স্টেশনের  জরুরি সংকেত (ফায়ার বেল বেজে উঠলে) পেয়ে সাদা গেঞ্জি পড়েই বেরিয়ে আসেন তিনি৷ এরপর দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নিখোঁজ হন।
 
এদিকে শনিবার (৪ জুন) খোঁজ না পেয়ে রনির স্ত্রী প্রথমে ফায়ার সার্ভিস স্টেশনে খোঁজ নিলে রনি আহত হয়েছে বলে জানানো হয়। পরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে এসে রনিকে খুঁজে না পেয়ে মেডিকেল চত্বরেই সারারাত অপেক্ষা করেন তার স্ত্রী রুপা আক্তার। 

পরের রোববার (৫ জুন) সকালে রনির পড়নের গেঞ্জি দেখে মরদেহ সনাক্ত করেন তিনি৷ এ সময় অজ্ঞাতনামা কাটাতেও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ডোমদের টাকা দিতে হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

নিহত রনির স্ত্রী রুপা আক্তার বলেন, বিয়ের মাত্র ছয় মাসেই স্বামীর মৃত্যুতে আমি সর্বশান্ত। আমার ভবিষ্যতের জন্য রনি কিছুই রেখে যেতে পারল না। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার ভবিষ্যৎ ভিক্ষা চাই।
 
মঙ্গলবার (৭ জুন) সকাল সাড়ে ৬টায় রনির মরদেহে এসে পৌঁছায় শেরপুরের হেরুয়া বালুঘাটা এলাকায়। মরদেহ পৌঁছার পর থেকেই স্থানীদের ভিড় বাড়ে তার বাড়িতে। এ সময় শেরপুর ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের কর্মকর্তারা তাকে গার্ড অব অনার ও শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেন। এরপর জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাকে দাফন করা হয়।

জানাজার নামাজের দায়িত্বে ছিলেন রনির চাচা মুফতি নজরুল ইসলাম আজাদী। জানাজায় রনির আত্মীয় স্বজনসহ সহস্রাধিক মানুষ অংশগ্রহণ করে।

রনির চাচা জানান, প্রায় দেড় বছর আগে দমকল বিভাগে চাকরি হয় ভাতিজা রনির। চার ভাইবোনের মধ্যে সবার বড় ছিল রনি। প্রায় তিন মাস আগে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বদলি হয়ে সেখানেই স্ত্রীসহ বসবাস করছিলেন তিনি। তার মৃত্যুতে আমরা হতবিহবল হয়ে পড়েছি।

এদিকে আদরের নাতি রনির মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর থেকেই বিছানায় শয্যাশায়ী দাদি আফরোজা বেগম। নাতি মারা যাওয়ার কথা শুনে মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়েছে ৭৫ বছর বয়সী দাদা ইউনুস আলীর। চিৎকার করে কেঁদে কেঁদে বলে উঠছেন, আমার দাদু ভাই কই গেল, আমার দাদু ভাই কই গেল, ভাইরে তুমি আমারে ফালায়া কই গেলা।

গ্রামের লোকজন জানায়, স্বজনদের কাছে রনি যেমন প্রিয় ছিলেন। একইভাবে নম্র-ভদ্র ও পরোপকারী ছেলে হিসেবে রনি গ্রামে বেশ জনপ্রিয় ছিলেন। ছুটিতে বাড়িতে এলেই তিনি প্রতিবেশীদের খোঁজখবর নিতেন, সাহায্য করতেন। চার ভাইবোনের মধ্যে রনি সবার বড়। তার ছোট ভাই তারিকুল ইসলাম রকিবকে ময়মনসিংহে থেকে পড়াশোনা করাতেন তিনি। এক বোন আশামনি নবম শ্রেণিতে ও আরেক ছোট বোন আঁখিমনি তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। তাদের লেখাপড়ার খরচসহ পরিবারের আয়ের একমাত্র অবলম্বন ছিলেন রনি।

এদিকে বিচারাধীন একটি হত্যা মামলায় জেলহাজতে থাকা নিহত ফায়ার ফাইটার রমজানুল ইসলাম রনির বাবা মো. আক্রাম হোসেন আঙ্গুর মিয়াকে পরবর্তী ৭ দিনের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দেয়া হয়েছে।

শনিবার (৪ জুন) রাত সাড়ে ৯টার দিকে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। আগুন লাগার পর রাসায়নিকের কনটেইনারে একের পর এক বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। বিস্ফোরণে ঘটনাস্থল থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরের এলাকা কেঁপে ওঠে। আশপাশের বাড়ি-ঘরের জানালার কাঁচ ভেঙে পড়ে।

সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৪১ জন হয়েছে। এখন পর্যন্ত ২৫ জনের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ১৬ জনের পরিচয় এখনো মেলেনি। তাদের শনাক্তে ৩৭ জন স্বজনের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ডিপোর অগ্নিকাণ্ডে নিহত পাঁচজনকে নিজ গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয়েছে।

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2