'বাত্তির নিচেই অন্ধকার'
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ২৮ মে,শনিবার,২০২২ | আপডেট: ০৮:১৭ এএম, ৪ জানুয়ারী,শনিবার,২০২৫
বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলায় কোটি কোটি টাকার নানামুখী উন্নয়ন কাজ হলেও উপজেলা সদর থেকে প্রায় এক কিলোমিটার এলাকার মধ্যে অবহেলায় পড়ে আছে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক। মাটির সড়কগুলো পাকাকরণের কোনো উদ্যোগ আজও নেওয়া হয়নি। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানান, ওই মাটির সড়কসহ ৩১টি সড়ক যাতায়াতের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। সেখানে দীর্ঘদিন লাগেনি উন্নয়নের ছোঁয়া।
শিক্ষার্থী, কৃষিজীবী থেকে শুরু করে নানা পেশার মানুষ দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। রাস্তাগুলো পাকাকরণ ও সংস্কারের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন জনপ্রতিনিধিসহ ভুক্তভোগী এলাকাবাসী।
আজ শনিবার (২৮ মে) সরেজমিন পরিদর্শনকালে দেখা যায়, চরকুড়ালতলা, স্বপ্নপুরসহ একাধিক গ্রামের মাটির রাস্তা দিয়ে শিক্ষার্থী, কৃষক, শ্রমজীবী ও নারীরা যাতায়াত করছেন। একটু বৃষ্টি হলেই রাস্তাগুলো কাদাপূর্ণ হয়ে ওঠে। স্বপ্নপুর গ্রাম থেকে শিবপুর সিরাজনগর কওমি মাদরাসায় হেঁটে যাচ্ছিল ষষ্ঠ শ্রেণির নাঈম শেখ, সপ্তম শ্রেণির আউয়াল শেখ ও অষ্টম শ্রেণির সামিউল শেখ। তারা জানায়, কখনো বৃষ্টিতে, কখনো ঘের-খালের পানি সেচের কারণে রাস্তা কর্দমাক্ত থাকে। এই পথ মাড়িয়ে যাতায়াতে অনেক কষ্ট হয়। অনেক সময় আছাড়ও খেতে হয়। তবু এই পথে যাতায়াত করতে হয়। রাস্তাটা পাকা হলে অনেক ভালো হতো। তখন ভ্যানে চড়ে মাদরাসায় যাতায়াত করতে পারতাম।
হিজলা ইউনিয়নের কুড়ালতলা গাজীপাড়া কমলেশ বিশ্বাসের বাড়ি থেকে গণেশ কীর্তনীয়ার বাড়ি পর্যন্ত কাঁচা রাস্তা এলাকার বাসিন্দারা চরম দুর্ভোগে যাতায়াত করতে বাধ্য হচ্ছেন (বাঁয়ের ছবি), একই ইউনিয়নের চিতলমারী-শৈলদাহ প্রধান সড়কের বোয়ালিয়া থেকে আল আমীনের বাড়ি পর্যন্ত কাঁচা রাস্তায় দুর্ভোগের শেষ নেই (ডানে)
হিজলা ইউনিয়নের কুড়ালতলা স্বপ্নপুর গ্রামের মো. খলিল খান (৬৪) আরো জানান, যখন চারদিকে উন্নয়নের জোয়ার বইছে, তখন উপজেলা সদর থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরেই গুরুত্বপূর্ণ তিনটি রাস্তা কাঁচা রয়েছে। রাস্তাগুলো হচ্ছে- কুড়ালতলা এসডিএফ অফিস থেকে স্বপ্নপুর শহীদুল হকের বাড়ি পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার, চিতলমারী-শৈলদাহ প্রধান সড়কের বোয়ালিয়া থেকে আল আমীনের বাড়ি পর্যন্ত এক কিলোমিটার, কুড়ালতলা গাজীপাড়া কমলেশ বিশ্বাসের বাড়ি থেকে গণেশ কীর্তনীয়ার বাড়ি পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার কাঁচা রাস্তায় এলাকার বাসিন্দারা চরম দুর্ভোগে যাতায়াত করতে বাধ্য হচ্ছেন। রাস্তাগুলো পাকা করা জরুরি।
একই গ্রামের মৎস্যচাষি লিটন সরদার (৩৫) জানান, উৎপাদিত শাকসবজি, ঘেরের মাছ নিয়ে এই কাঁচা রাস্তা দিয়ে চিতলমারী উপজেলা সদর বাজারে যাতায়াত করতে খুব কষ্ট হয়। মেম্বার-চেয়ারম্যানরা ভোটের সময় হলে উন্নয়নের নানা কথা বলেন। কিন্তু বছরের পর বছর তাদের গ্রামের এক কিলোমিটার রাস্তা কাঁচা পড়ে আছে।
চিতলমারীর হিজলা ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মেহেদী হাসান সবুজ মুন্সী ওই তিনটি রাস্তার দুর্ভোগের কথা উল্লেখ করে বলেন, চিতলমারী উপজেলায় চারদিকে উন্নয়নের জোয়ার বইছে। উপজেলা সদর থেকে এক কিলোমিটার এলাকার মধ্যে প্রায় তিন কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের গুরুত্বপূর্ণ তিনটি রাস্তা আজও কাঁচা রয়েছে। এটা দেখলে মনে হয়, বাত্তির নিচেই অন্ধকার! ওই রাস্তার আশপাশের এলাকায় প্রায় ১৫০০ মানুষ বসবাস করে। তারা সকাল-বিকাল উপজেলা সদর বাজারে দুর্ভোগের মধ্যে যাতায়াত করে। অথচ এই রাস্তাগুলো উন্নয়নের জন্য কোনো অর্থ বরাদ্দ হয় না, এটা দুঃখজনক। রাস্তাগুলো পাকাকরণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
হিজলা ইউপি চেয়ারম্যান কাজী আবু শাহীন জানান, এই ইউনিয়নে যাতায়াতের প্রধান সড়কসহ (কুড়ালতলা জীবনের দোকান থেকে বোয়ালিয়া ফরিদ গাজীর বাড়ি পর্যন্ত) ৬, ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের রাস্তাগুলোর অবস্থা মারাত্মক খারাপ। জনগণের যাতায়াতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। রাস্তা পাকাকরণ ও সংস্কারের জন্য চিতলমারী উপজেলা এলজিইডি কার্যালয়ে সম্প্রতি ৩১টি রাস্তার তালিকা দেওয়া হয়েছে। রাস্তাগুলোর জন্য বরাদ্দ এবং যথাযথভাবে কাজ হলে এই দুর্ভোগ কেটে যাবে।