avertisements 2

খুলনা রেল স্টেশন মাস্টার মানিক প্রশ্নবাণে জর্জরিত, দিতে পারেনি অনেক প্রশ্নের জবাব

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ২৩ মে,সোমবার,২০২২ | আপডেট: ০৭:১২ পিএম, ১১ মে,শনিবার,২০২৪

Text

খুলনা রেল স্টেশন মাস্টার মানিক চন্দ্র সরকার।

খুলনা: সম্প্রতি খুলনা রেলওয়ে স্টেশনে টিকিট কালোবাজারির বিষয়ে ৫ কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে স্টেশন মাস্টারের সাধারণ ডায়েরী (জিডি), বদলি ও শোকজের ঘটনায় গণমাধ্যম কর্মীদের মুখোমুখি হন খুলনা স্টেশন মাস্টার মানিক চন্দ্র সরকার। এ সময় গণমাধ্যমকর্মীদের একের পর এক প্রশ্নে জর্জরিত হন তিনি। গণমাধ্যম কর্মীদের অনেক প্রশ্নের জবাব দিতে পারেননি তিনি।  

রোববার (২২ মে) রাতে খুলনা রেল স্টেশনে সাংবাদিকদের সঙ্গে তিনি প্রেস ব্রিফিং করেন।

মানিক বলেন, ‘আমাদের স্টেশনে সম্প্রতি একটি কালোবাজারি চক্র ধরা পড়েছে। আপনারা অবগত আছেন। অনেকদিন থেকে কিছুটা নলেজে আসছিল। কিন্তু ঈদের আগে থেকে ওরা এতো বেপরোয়া হয়ে গেছিল, সেই বিষয়টা প্রশাসন ও আমাদের রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। কিন্তু তেমন একটা সুবিধা হয়নি। শেষপর্যন্ত ওরা যখন আমাকে শারীরিকভাবে নির্যাতনের চেষ্টা করল। বিষয়টি আমি বুঝতে পারলাম যে ওরা আমাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করবে। ওরা কাউন্টারে আমার কাছ থেকে জোর করে টিকিট দেওয়া লাগবে বলে চাপ প্রয়োগ করে। ওদের বেআইনি দাবি, কথা মানতে পারিনি। তখন আমার উপর শারীরিক নির্যাতনের পরিকল্পনা করে। বুঝতে পেরে আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানালাম। মৌখিকভাবে জানানোর পর কর্মকর্তা বললো ঠিক আছে, আপনি একটা জিডি করে রাখেন। আমি জিডি করার ভিত্তিতে পরবর্তীতে পুলিশ প্রশাসন, ম্যাজিস্ট্রেট জেনেছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে। তারা বদলি হয়ে যাওয়ার পরে বিভিন্ন মিডিয়াতে অনেক সময় ভুল বক্তব্য দিচ্ছে। এতে খুলনা গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনের স্টাফদের দুর্নাম হয়। তারা বলছে, যে মাস্টারের কালো বিড়াল থলে থেকে বের হয়ে যাবে। ’

তিনি বলেন, ‘২০১৭ সালে একটি টিকিট নিয়ে মিথ্যা প্রচার করা হয়েছিল। সেটি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) পর্যন্ত গড়ায়। দুদক ৩১ বার তদন্ত করে দেখে মানিক চন্দ্র সরকারের বিলের পৌনে ২ কাঠা জমি ছাড়া কোনো জমি নেই। ’

স্টেশন মাস্টার মানিক চন্দ্র আরও বলেন, ‘স্টেশনে একটা তেলের এরেজমেন্ট থাকে। শুধু খুলনা নয়, সারা দেশে এই তেলের জ্বালানোর বিভিন্ন কার্যক্রম থাকে। কালোবাজারির বিষয়টি ভিন্ন দিকে নিতে তেল চুরির বিষয়টি বলছে। আমি স্টেশনে কালোবাজারি ও দুর্নীতি নিজেও করি না, কাউকে করতেও দিই না। ’

রেলওয়ের টিকিটের জন্য কোনো কোটা নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, শুধু কর্মচারীদের ২ শতাংশ টিকিট রয়েছে। টিকিট থাকলে কাউন্টার থেকে দেওয়া হয়।

রেলওয়ের তেলের টাকার বিষয়ে স্টেশন মাস্টার বলেন, কেরোসিন তেলের জন্য আমাদের একটি বাজেট রয়েছে। আগে ৯ হাজারের কিছু বেশি বাজেট ছিল, এখন ১১ হাজারের বেশি বাজেট রয়েছে। এই তেলের টাকা অফিসের কাজের জন্য ব্যয় করা হয়।

তিনি বলেন, আমি নিজেও কালোবাজারি করি না, করতেও দেই না। খুলনা স্টেশনের সুনাম আছে। টিকিট সবসময় কালোবাজারি হয় না, তবে এই ঈদের সময়ে এমনটা দেখা গেছে।    

রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া নিজ অফিসেই সংবাদ সম্মেলন কতটা যৌক্তিক জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার ও অভিযোগ এসেছে তাই আমি অবহিত করার জন্য সাংবাদিকদের আমার অফিসে আমন্ত্রণ জানিয়েছি।

চলতি মাসের ১৫ মে স্টেশন মাস্টারের স্বাক্ষরিত ২৫টি টিকিট ভিআইপিদের নামে বরাদ্দ দেওয়া হয় এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে ১৭টি টিকিট দেওয়ার জন্য সুপারিশ করি। অতিরিক্ত টিকিট বরাদ্দের বিষয়ে আমার জানা নেই।

স্টেশনের মাস্টার হিসেবে দায়িত্ব পালন করলেও তাকে সবসময় অফিসে ও ফোনে না পাওয়ার বিষয়ে তিনি জানান, তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে আমাকে সম্পূর্ণ স্টেশনের দেখভাল করতে হয়। সে কারণে আমি সবসময় অফিসে বসতে পারি না এবং ফোনও রিসিভ করা সম্ভব হয় না। তবে এজন্য তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন।

উল্লেখ্য, গত ১৬ মে খুলনা রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার মানিক চন্দ্র সরকার ট্রেনের টিকেট কালোবাজারে বিক্রির অভিযোগে খুলনা রেল স্টেশনের ৫ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে খুলনা রেলওয়ে থানায় জিডি করেন। যাদের বিরুদ্ধে টিকিট কালোবাজারি করার অভিযোগ রয়েছে তাদের মধ্যে চারজনসহ মোট ৫ জনকে বৃহস্পতিবার (১৯ মে) বিকেলে বিভিন্ন জেলায় বদলি করা হয়েছে। এর মধ্যে খুলনা রেলওয়ে স্টেশনের ট্রেন এক্সামিনার (টিএক্সআর) বায়তুল ইসলামকে চিলাহাটি, সহকারী স্টেশন মাস্টার মো. আশিক আহম্মেদকে রোহানপুর স্টেশন, সহকারী স্টেশন মাস্টার মো. জাকির হোসেনকে মহেড়া স্টেশন, খালাসি মোল্লা পপিদুর রহমানকে পাবর্তীপুর ও খালাসি জাফর ইকবালকে যশোরে বদলি করা হয়েছে। এ ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়।

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2