avertisements 2

জীবনে বাড়ি-গাড়ি কিছু করতে পারিনি: ডা. সাবরিনা

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ১৩ মে,শুক্রবার,২০২২ | আপডেট: ০৬:৫৯ পিএম, ১১ মে,শনিবার,২০২৪

Text

করোনার ভুয়া রিপোর্ট দেওয়ার মামলায় আত্মপক্ষ সমর্থনে লিখিত বক্তব্যে জেকেজি হেলথকেয়ারের চেয়ারম্যান ডা. সাবরিনা চৌধুরী বলেছেন, আমার কর্মজীবনে যে উপার্জন করেছি সেখান থেকে ১৫-২০ শতাংশ টাকা দরিদ্র মানুষের জন্য ব্যয় করেছি। সে কারণে জীবনে বাড়ি-গাড়ি কোনো কিছু করতে পারিনি। দুদকের জিজ্ঞাসাবাদে এ বিষয়টি প্রমাণ হয়েছে।

বুধবার (১১ মে) ঢাকার অতিরিক্ত মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেনের আদালতে আত্মপক্ষ সমর্থনে নিজেদের নির্দোষ দাবি করে ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করেন ডা. সাবরিনা চৌধুরীসহ আট আসামি। এসময় লিখিত বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এছাড়া প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আরিফুল হক চৌধুরী আত্মপক্ষ সমর্থনে লিখিত বক্তব্যে ন্যায়বিচার চান।

লিখিত বক্তব্যে ডা. সাবরিনা শারমিন বলেন, ‘আমি মামলার অভিযোগপত্রভুক্ত দুই নম্বর আসামি। সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করে আমি ২৪তম বিসিএসের মাধ্যমে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে যোগদান করি। এফসিপিএস পার্ট ওয়ান করে গাইনি প্র্যাকটিস শুরু করি। পরে দেখতে পাই- দেশে নারীদের হার্টের চিকিৎসা প্রদানের জন্য উপযুক্ত ডাক্তারের সংকট রয়েছে। সে কারণে আমি কার্ডিওভাস্কুলার অ্যান্ড থোরাসিক সার্জারির ওপর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএস করি। এরপর রেজিস্ট্রার হিসেবে জাতীয় হৃদরোগ হাসপাতাল কার্ডিওলজি বিভাগে যোগদান করি। আমার কর্মজীবনে যে উপার্জন করতাম সেখান থেকে ১৫-২০ শতাংশ টাকা দরিদ্র মানুষের জন্য ব্যয় করেছি। সে কারণে আমার জীবনে বাড়ি-গাড়ি কোনো কিছু করতে পারিনি। দুদকের জিজ্ঞাসাবাদে এই বিষয়টি প্রমাণ হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হলে অন্যদের মতো চেম্বার বন্ধ করে দেইনি। ঝুঁকি নিয়ে রোগীদের চিকিৎসা এমনকি বস্তিতে গিয়েও চিকিৎসা দিয়ে এসেছি। মামলা হয়েছে জুনের ২৩ তারিখ। মামলার বিষয়ে আমার বিন্দুমাত্র সংশ্লিষ্টতা নেই। সে কারণে আমি হাসপাতালে আমার স্বাভাবিক ডিউটি করেছি। আমাকে যেদিন আটক করা হয় সেদিন হাসপাতাল থেকে ডেকে নিয়ে আসা হয়েছিল। সেদিন দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আমাকে ডিসি অফিস থেকে ফোন করা হয়, সেখানে যাওয়ার জন্য এবং সেখানে গেলে তারা আমাকে আটক করে। সেখানে আমাকে তেমন কোনো কিছু জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়নি। আরিফ চৌধুরীর স্ত্রী হই বলে আমাকে আটক করা হয়। এরপর আমাকে পুলিশ রিমান্ডে নেওয়া হয়। রিমান্ডে নির্যাতন করা হয়। আমাকে জেকেজির চেয়ারম্যান উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু জেকেজি একটি প্রোপাইটরশিপ কোম্পানি এবং এই কোম্পানি চলে শুধু সিটি করপোরেশনের লাইসেন্স নিয়ে। আমি জেকেজির মালিক বা লাইসেন্স হোল্ডার না। জেকেজি আমার স্বামীর দাদির নামে দাতব্য উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছিল। এ বিষয়ে আমার কোনো সংশ্লিষ্টতা ছিল না। কোনো ব্যক্তিকে আমি সার্টিফিকেট দিয়েছি বা কোনো ব্যক্তির নিকট থেকে আমি টাকা নিয়েছি এমনটি নয়। আমি কোনো ব্যাংকের বা কোনো অ্যাকাউন্টে সই করিনি। আমি নির্দোষ, খালাস প্রার্থনা করছি।

আত্মপক্ষ সমর্থনে লিখিত বক্তব্যে আরিফুল চৌধুরী বলেন, ‘আমি জেকেজি হেলথকেয়ারের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার। জেকেজি হেলথকেয়ার সেন্টারটি আর্তমানবতায় নিয়োজিত সেবামূলক প্রতিষ্ঠান এবং সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে নিবন্ধিত। বিশ্বব্যাপী করোনা প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়ে অত্যন্ত স্বচ্ছতার সঙ্গে তার দায়িত্ব পালন করেছি। জেকেজি হেলথকেয়ার তার ওয়েবসাইটে কোভিড-১৯ সম্পর্কিত তথ্যাদি প্রদান করে। সরকারের নির্দেশনা মেনে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে দেশের জনগণকে করোনাকালীন সেবা প্রদান করেছি। এসব তথ্য জেকেজি ওয়েবসাইটে রয়েছে এবং তা হটলাইনে নম্বরও উল্লেখ রয়েছে।’

তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী হুমায়ুন কবির ওরফে হিমু কর্মরত থাকাকালীন প্রতিষ্ঠানের দায়দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন না করার কারণে ২০২০ সালের ৯ জুন তাকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হয়। হুমায়ুন কবির ওরফে হিমু জেকেজির কেউ নন। তার কোনো কার্যকলাপের কারণে জেকেজি বা তার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দায়ী নন। এমন বক্তব্যও জেকেজির ওয়েবসাইটে উল্লেখ রয়েছে। এ মামলার এজহারে আমার নাম নেই, বাদী আমাকে সন্দেহ করেনি। যেসব সাক্ষী আদালতে উপস্থিত হয়ে সাক্ষ্য দিয়েছে তারা কেউ আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে বা আমার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে কিংবা আমার প্রতিষ্ঠানকে টাকা দিয়েছে এ রকম কোনো স্বাক্ষ্য আদালতে উপস্থাপন করতে পারেননি। এই আবেদন গ্রহণ করে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে আদালতে মর্জি হয়।

তাদের লিখত বক্তব্য গ্রহণ করে আদালত রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তি উপস্থাপনের জন্য আগামী ২৫ মে দিন ধার্য করেন। গত ২০ এপ্রিল একই আদালতে সাক্ষ্য দেন মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোর্শেদ আল মামুন ভুইয়া। এরপর রাষ্ট্রপক্ষ সাক্ষ্যগ্রহণ সমাপ্ত ঘোষণা করেন। মামলাটিতে ৪০ জন সাক্ষীর মধ্যে ২৬ জন বিভিন্ন সময় সাক্ষ্য দেন।

মামলা সূত্রে জানা যায়, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় করোনা শনাক্তের জন্য নমুনা সংগ্রহ করে তা পরীক্ষা না করেই জেকেজি হেলথকেয়ার ২৭ হাজার মানুষকে রিপোর্ট দেয়। এর বেশিরভাগই ভুয়া বলে ধরা পড়ে। এ অভিযোগে ২০২০ সালের ২৩ জুন অভিযান চালিয়ে প্রতিষ্ঠানটি সিলগালা করে দেওয়া হয়। পরে তাদের বিরুদ্ধে তেজগাঁও থানায় মামলা দায়ের করা হয় এবং দুজনকে গ্রেফতার করা হয়।

২০২০ সালের ৫ আগস্ট ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে সাবরিনা ও আরিফসহ আটজনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন ডিবি পুলিশের পরিদর্শক লিয়াকত আলী। চার্জশিটভুক্ত অন্য আসামিরা হলেন- আবু সাঈদ চৌধুরী, হুমায়ূন কবির হিমু, তানজিলা পাটোয়ারী, বিপ্লব দাস, শফিকুল ইসলাম রোমিও ও জেবুন্নেসা। চার্জশিটে সাবরিনা ও আরিফকে প্রতারণার মূলহোতা বলে উল্লেখ করা হয়। বাকিরা প্রতারণা ও জালিয়াতি করতে তাদের সহযোগিতা করেছেন।

একই বছরের ২০ আগস্ট ঢাকা মহানগর হাকিম সরাফুজ্জামান আনছারী আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। এ সময় তারা নিজেদের নির্দোষ দাবি করে ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করেন।

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2