লজ্জা ভুলে টিসিবির লাইনে ‘নিরুপায়’ মধ্যবিত্ত
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ৭ মার্চ,সোমবার,২০২২ | আপডেট: ০১:০০ এএম, ২৫ ডিসেম্বর,
বুধবার,২০২৪
তেল, ডাল, চাল, চিনি, ডিমসহ সব পণ্যের দাম বাড়ায় ব্যয়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এগোতে পারছে না নিম্ন-মধ্য আয়ের মানুষ। সেজন্য নিরুপায় হয়ে লজ্জা ভুলে গিয়ে পণ্য কিনতে নিম্ন আয়ের মানুষের লাইনে দাঁড়িয়েছেন মধ্যবিত্তরাও। সকলেই ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) ট্রাকে পণ্য কিনতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করছেন। গতবছর এমন চিত্র ছিল না।
রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় সাশ্রয়ী মূল্যে টিসিবির ট্রাকে চিনি, মসুর ডাল, সয়াবিন তেল, পেঁয়াজ এবং ওএমএসের চাল ও আটা বিক্রি শুরু হয়েছে। টিসিবির পণ্য আগামী ২৪ মার্চ পর্যন্ত চলবে। রাজধানীতে প্রথম দিনে টিসিবির পণ্য কিনতে অনেকেই পণ্য না পেয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন।
আর্থিক সংকট থাকায় ঢাকা মোহাম্মদপুর এলাকায় টিসিবির পণ্য কেনার জন্য দীর্ঘ লাইন ধরেন ক্রেতারা। টিসিবির ট্রাক থেকে একজন পণ্য নিচ্ছেন আরেকজন লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষায় হতাশার নিশ্বাস ছাড়ছেন। কারণ লাইনে দাঁড়ালেই যে পণ্য পাওয়া যাবে তেমনটি নয়। লাইনের পেছন থেকে ট্রাকের সামনে যেতেই কখন কখন পণ্য শেষ হয়ে যায়। এতে শত শত মানুষ ফাঁকা হাতে বাড়িতে ফেরেন।
টিসিবির পণ্য কেনাকাটায় ভিড় বাড়ায় এখন আঙুলে অমোচনীয় কালি ব্যবহার করা হচ্ছে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ১২ নম্বর ওয়ার্ডে রোববার শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য ক্রেতাদের হাতে অমোচনীয় কালিতে ক্রমিক নম্বর বসিয়ে দিয়েছেন ডিলারের কর্মী।
শুধু রাজধানী ঢাকায় নয়, জেলা ও উপজেলা শহরে নিম্ন-মধ্যবিত্তরাও আর্থিক সাশ্রয়ে ওএমএসের চাল ও আটা ক্রয়ে ভিড় বেড়েছে। পাবনার বেড়া পৌর এলাকার সিনেমা হল মোড়ে ওএমএসের ডিলার নূর ইসলামের বিক্রয়কেন্দ্র। প্রতিদিন সকাল আটটা থেকে সেখানে স্বল্প মূল্যে ওএমএসের চাল ও আটা বিক্রি শুরু হয়।
রোববার সকাল সাতটায় সেখানে গিয়ে দেখা যায়, লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন দেড় শতাধিক মানুষ। তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন মার্জিত পোশাকের নারী-পুরুষকে মুখ ঢেকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। কথা বলে জানা গেছে, তারা মধ্যবিত্ত পরিবারের। একান্ত নিরুপায় হয়ে লজ্জা ভুলে তারা ওএমএসের দোকানে চাল ও আটা কিনতে এসেছেন।
হাতিগাড়া মহল্লার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ী বলেন, ওএমএসের দোকানে দাঁড়িয়ে পণ্য কিনতে হবে কোনো দিনও ভাবেননি। দোকান থেকে যা আয় হতো, তাতে ভালোভাবেই সংসার চলে যেত। কিন্তু এখন কোনোভাবেই আর সংসার চালাতে পারছেন না। চাল, তেল, গ্যাস (সিলিন্ডার) থেকে শুরু করে প্রতিটি পণ্যের দামই নাগালের বাইরে। তাই লজ্জা লাগলেও লাইনে দাঁড়িয়েছেন।
ডিলার নূর ইসলাম বলেন, নির্ধারিত সংখ্যক মানুষের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ মানুষ এসে লাইনে দাঁড়াচ্ছেন। লাইনে দাঁড়ানো নিয়ে ক্রেতাদের মধ্যে অনেক সময় হাতাহাতিসহ অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটছে।
অর্থ সাশ্রয়ের আশায় টিসিবির পণ্য কিনতে সকাল ৮টায় মোহাম্মদপুর এলাকায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করেন ক্রেতারা। তারা বলেন, সয়াবিন তেলের বাজারে আগুন। তেলের জন্য একজন আরেকজনের সঙ্গে মারামারি পর্যন্ত করেন। একজন মহিলা সারা দিন কাজ করলে ৩শ’ টাকা আয় করতে পারেন। কিন্তু সেই কাজ রেখেই তেলের আশায় ট্রাকের সামনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেন। টিসিবির ট্রাকে তেল নিতে আসলে সেদিন আর বাড়িতে কোনো কাজ করা যায় না।
ক্রেতারা বলেন, সয়াবিন তেল ৯০ টাকা লিটার খেয়েছি, সেখানে ১০০ টাকা হোক কিংবা ১২০ টাকা হোক কিন্তু ২০০ টাকায় তেল আমরা কিভাবে কিনে খাবো। চিনির দাম বেড়েছে, গরীব মানুষের কোনোভাবেই বেচে থাকার উপায় নেই।