avertisements 2

অতিরিক্ত আইজি হলেন বনজ কুমার মজুমদার

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ২৮ জানুয়ারী,শুক্রবার,২০২২ | আপডেট: ০১:১২ এএম, ২২ জানুয়ারী, বুধবার,২০২৫

Text

ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার বিভিন্ন আলোচিত ও ক্লুলেস হত্যাকাণ্ডের ক্লু উদ্ধার করে সাম্প্রতিক সময়ে আলোচনায় আসেন  এসব মামলার তদন্তেও নিয়ে আসেন নতুন ধারা। একইসঙ্গে ভুক্তভোগী মানুষের আস্থায় নিয়ে আসেন পুলিশের অন্যতম তদন্ত সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই)।সম্প্রতি তিনি সহ  সাত কর্মকর্তা পুলিশের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) থেকে পদোন্নতি পেয়ে বাহিনীটির অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (এআইজিপি) হয়েছেন । এর আগে বনজ কুমার মজুমদারকে ২০২০ সালে বাংলাদেশ পুলিশ পদক-সেবা (বিপিএম) দেওয়া হয়েছিল।

তিনি পিবিআইর জন্য আলাদা একটি অত্যাধুনিক ফরেনসিক ল্যাব স্থাপন করেন। পর্যায়ক্রমে এই ফরেনসিক ল্যাবকে যুগোপযোগী করে আদালতে এর প্রতিবেদনগুলোকে গ্রহণযোগ্য করার জন্য বিশেষ পদক্ষেপ নেন। বর্তমানে এই ল্যাবের প্রতিবেদনগুলো আদালতে গ্রহণযোগ্যতার সুবিধাটি পিবিআইসহ জেলা ও মেট্রোপলিটন পুলিশও সমানভাবে ভোগ করছে।

 পিবিআই’র মামলা তদন্তে গতিশীলতা আনা এবং আসামি ও ভিকটিম শনাক্তের জন্য বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের নিকট থেকে এনআইডির ডাটা ব্যাংকে প্রবেশের অনুমতি গ্রহণে ভূমিকা নেন। ফলে পিবিআই’র সকল ইউনিট তাৎক্ষণিকভাবে এনআইডি ডাটাবেজ থেকে তথ্য যাচাইয়ের সুবিধা পাচ্ছে। এতে অপরাধ ও অপরাধী শনাক্তে কার্যকর ভূমিকা রাখা সম্ভব হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় এনআইডি ডাটাবেজের সুবিধা নিচ্ছে পুলিশের অন্যান্য ইউনিট।

দেশের ফিঙ্গার প্রিন্ট আইডেন্টিফিকেশন অ্যান্ড ভেরিফিকেশন সিস্টেম চালু করে পিবিআই। বর্তমানে পিবিআই’র সব ইউনিট এই পদ্ধতির সফল ব্যবহার করছে। এ সুবিধার মাধ্যমে খুলনা মহানগরের চাঞ্চল্যকর মস্তকবিহীন ছড়ানো ছিটানো ১১ টুকরা লাশের পরিচয় উদ্ধারসহ ও বেশ কয়েকটি চাঞ্চল্যকর ক্লুলেস হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন সম্ভব হয়েছে। সড়ক দুর্ঘটনা, খুন ও অন্য কোনও কারণে নিহত বেওয়ারিশ হিসেবে মর্গে রক্ষিত মৃত ব্যক্তিদের পরিচয় শনাক্ত করে তাদের পরিবারের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে। এছাড়াও এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে দেশের বিভিন্ন স্থানে ১১০ পুরুষ ও ২৪ নারীর মৃতদেহ শনাক্ত করা হয়েছে। জেলা ও মেট্রোপলিটন এলাকায় পাওয়া অজ্ঞাত মৃতদেহ শনাক্তে পিবিআইর অন্যান্য ইউনিটগুলোকে এই প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে সহযোগিতা করায় অতি দ্রুত অজ্ঞাত মৃতদেহের পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে। ফলে অনেক জেলাতেই অজ্ঞাত মৃতদেহ পাওয়ার সংখ্যা উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় কমে এসেছে।

দেশের বিভিন্ন জেলা ও মহানগরগুলোতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ঘটনায় ময়নাতদন্তে আত্মহত্যা হিসেবে প্রতিবেদন পাওয়া গেলেও পরবর্তীতে পিবিআই’র তদন্তে সেগুলো হত্যা বলে প্রমাণিত হয়। এ বিষয়ে পিবিআই নিজ উদ্যোগে নানা তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করে বিষয়টির কারণ, সমস্যা ও সমাধান চিহ্নিত করে। পরে এ বিষয়ে একটি বই প্রকাশ করে এবং সেই বই পিবিআই’র প্রশিক্ষণ সূচিতে অন্তর্ভূক্ত করে। গুরুত্বপূর্ণ জেলা ও মহানগরগুলোর বিভিন্ন আদালত থেকে হত্যা ডাকাতি ও ধর্ষণ মামলায় আসামি খালাস পাওয়ার কারণ উদঘাটন, তদন্তে ত্রুটি বিচ্যুতি শনাক্তে সংশ্লিষ্ট আদালত থেকে রায়ের অনুলিপি উঠানো হয়। সেসব অনুলিপি বিশ্লেষণ করে বই আকারে প্রকাশ ও সেটাও পিবিআই’র প্রশিক্ষণ সূচিতে সংযুক্ত করেন তিনি।

বনজ কুমার মজুমদারের প্রত্যক্ষ তদারকিতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ মামলার সাক্ষ্য প্রমাণ সংগৃহীত ও আসামি গ্রেফতার এবং মামলাগুলোর সুষ্ঠু তদন্ত নিশ্চিত করা হয়। এরমধ্যে ফেনীর আলোচিত ও চাঞ্চল্যকর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনা অন্যতম। এছাড়াও ৩১ বছর পর রাজধানীর সগিরা মোর্শেদ হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন করা হয়। যিনি ছিনতাইকারীর হাতে নিহত হয়েছিলেন বলে এত বছর ধারণা ছিল। কর্ণফুলিতে ডাকাতিসহ চার নারী গণধর্ষণের ঘটনা, চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সহকারী সাধারণ সম্পাদক সুদীপ্ত হত্যাকাণ্ডের ঘটনা, ময়মনসিংহের ত্রিশালের সাহেরা আক্তার মিতুকে (২৫) গণধর্ষণসহ হত্যার রহস্য উদঘাটন এবং একই জেলার কোতয়ালী থানা এলাকার সাইফুল ইসলাম (২৮) হত্যাকাণ্ডের ঘটনার রহস্য উদঘাটন করা হয়। সাইফুল ইসলাম হত্যাকাণ্ডে পুলিশের দেওয়া অভিযোগপত্রে যে পাঁচজনকে অভিযুক্ত করা হয়েছিল তারা নির্দোষ হিসেবে চিহ্নিত হন। অন্যদিকে প্রকৃত হত্যাকারীর সন্ধানও পায় পিবিআই।

গত ২৩ জানুয়ারী রবিবার পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের হল অব প্রাইডে  আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ বিপিএম (বার) এবং অতিরিক্ত আইজি (এঅ্যান্ডআই) ড. মো. মইনুর রহমান চৌধুরী পদোন্নতিপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের র‍্যাংক ব্যাজ পরিয়ে দেন। আইজিপি পদোন্নতিপ্রাপ্ত কর্মকর্তাগণ এবং তাঁদের পরিবারের সদস্যদের আন্তরিক অভিনন্দন জানান। বাংলাদেশ পুলিশের ইতিহাসে এবারই প্রথম র‍্যাংক ব্যাজ পরিধান অনুষ্ঠানে পদোন্নতিপ্রাপ্ত কর্মকর্তাগণের সঙ্গে তাঁদের স্ত্রীগণ উপস্থিত ছিলেন। 

পদোন্নতিপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা হলেন, পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের ডিআইজি আবু হাসান মুহম্মদ তারিক, বিপিএম-সেবা; পিবিআইয়ের ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার, বিপিএম (বার), পিপিএম-সেবা; কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালের পরিচালক (ডিআইজি) ড. হাসান উল হায়দার, বিপিএম-সেবা; স্পেশাল ব্রাঞ্চের অতিরিক্ত আইজি (চলতি দায়িত্ব) মো. মনিরুল ইসলাম, বিপিএম (বার), পিপিম (বার); বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মো. শাহাবুদ্দিন খান, বিপিএম (বার); শিল্পাঞ্চল পুলিশের ডিআইজি মো. মাহাবুবর রহমান, বিপিএম, পিপিএম-সেবা ও ময়মনসিংহ রেঞ্জের ডিআইজি ব্যারিস্টার মো. হারুন অর রশিদ বিপিএম-সেবা।  

পদোন্নতিপ্রাপ্ত কর্মকর্তাগণ দেশ ও জনগণের কল্যাণে যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
প্রসঙ্গত অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক  বনজ কুমার মজুমদার বাংলাকথার একজন অতিথি লেখক।

বিষয়: পিবিআই

আরও পড়ুন

avertisements 2