avertisements 2

সাংগঠনিক সম্পাদক পদ থেকে বহিষ্কার

গাজীপুরের ‘ইয়াবা ডন’ ছাত্রলীগ নেতা জাহাঙ্গীর 

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ২০ ডিসেম্বর,সোমবার,২০২১ | আপডেট: ০৮:২৪ পিএম, ২৫ ডিসেম্বর, বুধবার,২০২৪

Text

জাহাঙ্গীর সরকার ছবি সংগৃহীত

গাজীপুর জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জাহাঙ্গীর সরকারের বিরুদ্ধে কয়েক বছর ধরে ইয়াবা কারবারে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে। পুলিশ বলছে, রাজনৈতিক পরিচয় ও প্রভাব কাজে লাগিয়ে শ্রীপুরসহ আশপাশের এলাকায় তিনি একটি শক্তিশালী ইয়াবা সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন। গত শনিবার রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থেকে ২৫ হাজার ইয়াবাসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। ঢাকার গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা জাহাঙ্গীরের কথা জানায়।

তদন্ত কর্মকর্তারা বলছেন, গ্রেপ্তার চারজান স্বীকার করেছেন, কক্সবাজার থেকে আরো চার-পাঁচটি চালানে দুই লাখ ইয়াবা এনেছেন তাঁরা। জাহাঙ্গীর তাঁদেরসহ অন্য সহযোগীদের দিয়েও ইয়াবা বিক্রি করান। তদন্তে জাহাঙ্গীর ছাড়াও ফিরোজ নামে তাঁর এক সহযোগী জড়িত থাকার তথ্য মিলেছে। গ্রেপ্তার চারজনকে আদালতের মাধ্যমে তিন দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। পালিয়ে থাকা বাকিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

এদিকে জাহাঙ্গীর সরকারের ইয়াবার কারবারের খবরে ছাত্রলীগের মধ্যে তোলপাড় শুরু হয়েছে। গতকাল রবিবার বিকেলে গাজীপুর জেলা ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটিকে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করে। সন্ধ্যায় ‘নীতি-আদর্শ ও শৃঙ্খলা পরিপন্থী কার্যকলাপে জড়িত থাকায়’ জাহাঙ্গীরকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেয় কেন্দ্রীয় কমিটি। 

গাজীপুর জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল আলম রবিন বলেন, ‘জাহাঙ্গীর ইয়াবা কারবারে জড়িত; এই বিষয়টি আগে কেউ কখনো আমাদের জানায়নি। আমরা বুঝতেও পারিনি। বিষয়টি জানার পর রবিবার তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আমরা কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কাছে সুপারিশ করছি।’

ঢাকা মহানগর পুলিশের ডিবির যুগ্ম কমিশনার হারুন অর রশীদ বলেন, ‘তদন্ত অনেকেরই নাম এবং সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। মাদক কারবারি যেই হোক তাকে আইনের আওতায় আনা হবে। সে যত বড় রাঘব বোয়াল হোক ছাড় দেওয়া হবে না। আমাদের তদন্তে যাদের নাম আসবে তাদেরকে আইনের আওতায় নিয়ে আসব।’ 

ডিবি সূত্র জানায়, গত শনিবার রাতে যাত্রাবাড়ীর গোলাপবাগ বিশ্বরোড এলাকায় অভিযান চালিয়ে ডিবির গুলশান বিভাগ একটি প্রাইভেটকারে ২৫ হাজার ইয়াবাসহ রুবেল ইসলাম, রাকিবুল হাসান, সূর্য বর্মন শান্ত ও রনি আহম্মেদ নামে চারজনকে গ্রেপ্তার করে। অভিযানের সময় গাড়ির পেছনের দরজা খুলে পালিয়ে যায় ফিরোজ। গ্রেপ্তার চারজনকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে উঠে আসে জাহাঙ্গীরের নাম। তারা কক্সবাজারের টেকনাফের সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে ইয়াবা এনে গাজীপুর ও ঢাকা মহানগরসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করতেন। 

বনভোজনের নামে কখনো বিমানে আবার কখনো প্রাইভেটকারে কক্সবাজারে যায় জাহাঙ্গীরের সহযোগীরা। এরপর গাড়ির বিশেষ একটি চেম্বারে লুকিয়ে ইয়াবা নিয়ে আসে। জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা ডিবিকে জানিয়েছে, গাজীপুর, শ্রীপুরসহ ঢাকার উত্তর অংশের ইয়াবার একটি সিন্ডিকেটের হোতা এই জাহাঙ্গীর। তারা ইয়াবা এনে তাঁর কাছে দেয়। পরে জাহাঙ্গীর তার লোক দিয়ে পুরো গাজীপুরে বিক্রি করে।

ডিবির গুলশান বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মশিউর রহমান বলেন, ‘যারা ধরা পড়েছে এবং তাদের সহযোগীরা আরো কয়েকবার চালান নিয়ে এসেছে। মহাজনের কাছ থেকে প্রতি পিস ইয়াবা ৭০ টাকায় কেনে তারা। পরে তা ঢাকা হয়ে চলে যায় গাজীপুরে। প্রতি পিস ইয়াবা ৭০ টাকায় কিনে বিক্রি করত ২৫০ টাকা করে।’

জাহাঙ্গীর সরকারের বাড়ি গাজীপুরের শ্রীপুরের তেলিহাটী ইউনিয়নের গোদারচালা গ্রামে। তাঁর বাবার নাম ইকবাল সরকার। দুই ভাইয়ের মধ্যে জাহাঙ্গীর ছোট। তাঁর বড় ভাই আলমগীর সরকার ডেকোরেটর ব্যবসায়ী। সূত্র জানায়, প্রায় দেড় বছর ধরে ইয়াবা কারবারে জড়িত জাহাঙ্গীর। এলাকায় এ নিয়ে কানাঘোষা হলেও কেউ তার প্রভাবের ভয়ে মুখ খোলেননি। এরই মধ্যে অনেক টাকার মালিক বনে যান জাহাঙ্গীর। প্রায় ৩০ লাখ টাকা দিয়ে কেনেন প্রাইভেটকার। শ্রীপুরের এমসি বাজার ইজারা নেন প্রায় ৮৪ লাখ টাকায়। পুরো জেলায় তার ইয়াবা সিন্ডিকেট আছে। এর আগে তার কয়েকজন সহযোগী গ্রেপ্তার হলেও আড়ালে ছিলেন জাহাঙ্গীর।

শ্রীপুর থানার ওসি খোন্দকার ইমাম হোসেন বলেন, ‘মাদকসহ জাহাঙ্গীর কখনো গ্রেপ্তার হয়নি। আমরা তাকে ছাত্রলীগের একজন নেতা ও বাজার ইজারাদারই জানতাম। তবে তাঁর খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে।’ ওসি আরো বলেন, ‘তার নামে মাদকের মামলা নেই। তবে মারামারির মামলা আছে।’


 

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2