avertisements 2

বরিশালে অন্যরকম একটি প্রেম ও বিয়ের গল্প

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ৪ ডিসেম্বর,শনিবার,২০২১ | আপডেট: ০১:২৪ পিএম, ১৯ সেপ্টেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪

Text

বিয়ের সাজে সুব্রত মিত্র এবং ফাল্গুনী সাহা। ছবি : সংগৃহীত

ছোটবেলা থেকেই পরিচয়, তবে প্রেমের সম্পর্ক বছর পাঁচেকের। যাঁর সঙ্গে সাত পাকে বাঁধা পড়লেন, শিশুকালে তাঁর দুহাতই এক বৈদ্যুতিক দুর্ঘটনায় বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

সব কিছু জেনে-শুনেই প্রেমের সম্পর্কে জড়ান পটুয়াখালী জেলার গলাচিপা সদরের বাসিন্দা সুব্রত মিত্র। এর পর সম্প্রতি বরযাত্রী সঙ্গে নিয়ে বেশ জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজনে সুব্রত বসেন বিয়ের পিড়িতে, সাত পাকে বাঁধা পড়েন প্রেয়সী ফাল্গুনী সাহার সঙ্গে।

বেশ ছোটবেলায় নিজের দুহাত হারিয়েছেন ফাল্গুনী। তবে, নিজেকে কখনোই দুর্বল মনে করেনি। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় জীবন পার করে এখন কাজ করছেন একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থায়।

দুই পরিবারের সম্মতিতেই গত বুধবার রাতে বরিশাল নগরীর ঐতিহ্যবাহী শ্রী শ্রী শংকর মঠ মন্দির প্রাঙ্গণে বিয়ে হয় সুব্রত-ফাল্গুনির। স্থানীয়রাও জড়ো হন এ বিয়ের অনুষ্ঠান দেখতে। বর সুব্রত মিত্রর মহানুভবতা ও দৃষ্টিভঙ্গির উচ্চকিত প্রশংসা করেন উপস্থিত ব্যক্তিরা।

সুব্রত মিত্র পটুয়াখালীতে বেসরকারি সংস্থায় ফিল্ড অফিসার হিসেবে কর্মরত। পাশাপাশি ফাল্গুনীও পিছিয়ে নেই। তিনি বরিশালে একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থায় সহকারী মানবসম্পদ কর্মকর্তা পদে কর্মরত। দুজনের বাড়ি গলাচিপায় হলেও, ফাল্গুনী নগরীর ব্রজমোহন কলেজসংলগ্ন এলাকায় পরিবার নিয়ে ভাড়া বাসায় থাকেন।

ফাল্গুনী সাহা বলেন, ‘২০০২ সালে গলাচিপায় আমাদের পাশের বাড়ির ছাদে বৈদ্যুতিক তারে দুর্ঘটনার কারণে আমার দুহাত বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। কিন্তু, আমি নিজেকে কখনও দুর্বল মনে করিনি। দুহাতের যতটুকু অংশ ছিল, ততটুকু অংশ দিয়েই আমি আমার পড়াশোনা শেষ করেছি এবং এখন চাকরিও করছি।’

‘আমি ২০১১ সালে মাধ্যমিক পাস করেছি গলাচিপা মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এবং ২০১৩ সালে উত্তরা ট্রাস্ট কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাস করি। এরপর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জিওলোজি ও এনভায়রনমেন্টে ২০১৮ সালে অনার্স ও মাস্টার্স শেষ করি। তারপর চাকরি জীবনে প্রবেশ করি।’

ফাল্গুনী আরও বলেন, ‘আমাদের সমাজ ব্যবস্থা সম্পর্কে আপনারা সবাই অবগত। দৃষ্টিভঙ্গি আর মানসিকতা ঠিক থাকলে প্রতিবন্ধকতা কোনো সাবজেক্ট নয়। আমাদের বিয়েটা দৃষ্টিভঙ্গি বদলানোর উদাহরণ হয়ে থাকবে বলে মনে করি। এ পর্যন্ত পৌঁছাতে আমাকে প্রতিকূলতা পেরোতে হয়নি। সবারই আন্তরিকতা পেয়েছি। আমার স্কুলজীবন থেকে কর্মজীবনে যারা আমার সঙ্গে রিলেটেড, তারা কেউ আমাকে বুঝতে দেয়নি আমার সমস্যার বিষয়ে। আসলে কার মেন্টালিটি কেমন, সেটা তার তার ওপর ডিপেন্ড করে। যার মেন্টালিটি ভালো, সে এগিয়ে আসবে। যার পক্ষে এমন বিয়ে সম্ভব নয়, তার দূরে থাকাই ভালো। কারও ওপর কোনো কিছু চাপিয়ে দেওয়া ঠিক নয়। আপনারা সবাই আমাদের জন্য আশীর্বাদ ও দোয়া করবেন, যাতে সামনের দিনগুলোতে আমরা ভালো থাকতে পারি, ভালো কিছু করতে পারি।’

বর সুব্রত মিত্র বলেন, ‘ফাল্গুনীকে আমি ছোটবেলা থেকে চিনি। ও যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তো, তখন ওর সঙ্গে আমার ফেসবুকে কথা হতো। একটা সময় বুঝতে পারি—ও পড়াশুনায় অনেক ভালো করছে, তবে ওর ফ্যামিলি লাইফ বা সামনের দিকে এগানোর কোনো চিন্তা-চেতনা ছিল না। ওর হাত নেই, এটা আমার কাছে কোনো সমস্যা মনে হয়নি। একটা মানুষের হাত নেই, তাই সে বিয়ে করতে পারবে না, তার ফ্যামিলি হবে না—এমনটা হতে পারে না এবং এমন চিন্তা-চেতনা আমারও নাই। আমি ওকে স্বপ্ন দেখাই, আমি ওকে ভালোবাসা শেখাই এবং ওকে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত জানাই। অবশেষে আমরা বিয়েও করেছি। আমরা সামনের দিনে যেন ভালো থাকতে পারি, এর জন্য আমাদের জন্য সবাই আশীর্বাদ করবেন।’

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2