নৌকার ৪৭ শতাংশ প্রার্থী হেরেছেন
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ৩০ নভেম্বর,মঙ্গলবার,২০২১ | আপডেট: ০৬:১০ পিএম, ২৬ ডিসেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) তৃতীয় ধাপের নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীদের প্রায় ৪৭ শতাংশ হেরে গেছে। নির্বাচন কমিশনের বেসরকারি ফলাফলে এ তথ্য উঠে এসেছে।
গত রবিবার ভোট হওয়া এক হাজার ইউপির মধ্যে ইসি ৯৯২টির ফলাফল ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী জিতেছেন ৫২৫টি ইউপিতে। শতকরা হিসাবে যা ৫২.৯২ শতাংশ ইউপিতে। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে শুধু চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হয়।
ফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ৪৪.৯৫ শতাংশ ইউপিতে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জিতেছেন। এ ছাড়া জাতীয় পার্টি ১৭টি এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, জমিয়াতে উলামায়ে ইসলাম, ওয়ার্কার্স পার্টি ও জাসদ একটি করে ইউপিতে জয়ী হয়েছে।
নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো ৯৮১ ইউপির ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী জিতেছেন ২৪৯টি ইউপিতে। এটি মোট ইউপির ২৫.৩৮ শতাংশ। বিএনপির স্থানীয় নেতারা স্বতন্ত্র হিসেবে জয়ী হয়েছেন ১০৮টি ইউপিতে, যা মোট ইউপির প্রায় ১১ শতাংশ।
তৃতীয় ধাপের নির্বাচনে ভোটের আগেই ক্ষমতাসীন দলের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী ১০০ ইউপিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। এ ছাড়া নারীদের সংরক্ষিত ওয়ার্ডের সদস্য পদে ১৩২ এবং সাধারণ ওয়ার্ডের সদস্য পদে ৩৩৭ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। চট্টগ্রামের রাউজানের ১৪টি ইউপিতে চেয়ারম্যান, সাধারণ সদস্য ও সংরক্ষিত ওয়ার্ডের নারী সদস্য—সব কটি পদেই আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। একইভাবে রাঙ্গুনিয়ায় ছয়টি ও ভোলার চরফ্যাশনে পাঁচটি ইউপিতে বিনা ভোটে চেয়ারম্যান হন।
গত রবিবার তৃতীয় ধাপে চেয়ারম্যান পদে ৯০০ ইউপিতে ভোট হয়। তবে এই ফলাফল বিশ্লেষণ করা হয় বিনা প্রতদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ১০০ ইউপি ধরে। এর মধ্যে মাদারীপুর সদর উপজেলার ১৪টিতে আওয়ামী লীগ কোনো প্রার্থীকে নৌকা প্রতীক দেয়নি। এসব ইউপি সবার জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়। সে কারণে ১৪ ইউপিতে এবার সবাই স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জিতেছেন। এ ছাড়া দিনাজপুরের বিরামপুরের বিনাইল ইউপিতে নৌকা প্রতীকের কোনো প্রার্থী ছিল না।
এর আগে গত ১১ নভেম্বর অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীদের ৫৮.২৭ শতাংশ জয়ী হয়। স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়ী হয় ৩৯.৫৬ শতাংশে। দ্বিতীয় ধাপে ৮৩৪টি ইউপির মধ্যে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীরা জয়ী হন ৪৮৬টিতে। এর মধ্যে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ৮১ জনও রয়েছেন। স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জিতেন ৩৩০টিতে। আওয়ামী লীগের বিদ্রোহীরা ছাড়াও ৬৪ ইউপিতে বিএনপির প্রার্থীরা স্বতন্ত্র প্রতীক নিয়ে জেতেন। এ ছাড়া দ্বিতীয় ধাপে জাতীয় পার্টি ১০টি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ চারটি এবং জাতীয় পার্টি (জেপি), খেলাফত মজলিশ, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) ও বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা একটি করে ইউপিতে জয়ী হন।
প্রথম ধাপে দুই দফায় গত ২১ জুন ও ২০ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীরা ৭৩.৪৮ শতাংশ ইউপিতে জয়ী হন। অন্যদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয়ী হন ২৪.২২ শতাংশ ইউপিতে। ওই নির্বাচনে ৩৬৫টি ইউপির মধ্যে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীরা ২৬৯টিতে জয়ী হন। এর মধ্যে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ৭২টিতে জয়ী হন। স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয়ী হন ৮৮টিতে। এ ছাড়া জাতীয় পার্টি তিনটি, জাতীয় পার্টি (জেপি) তিনটি এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থীরা একটি করে ইউপিতে জেতেন।
স্থানীয় সরকার বিভাগের সাবেক সচিব আবু আলম মো. শহীদ খান বলেন, যে পরিস্থিতিতে নির্বাচন হচ্ছে, তাতে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীদের জয়ী হওয়ার সুযোগ বেশি। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, দলের বিদ্রোহীরা অনেক ইউপিতে জয়ী হচ্ছেন। এতে প্রমাণ হয়, দল থেকে অনেক ক্ষেত্রে এলাকায় যোগ্য প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে না। মনোনয়ন বাণিজ্য এ ক্ষেত্রে কাজ করতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে তৃণমূলের মূল্যায়নকে বিবেচনায় না নিয়ে সংসদ সদস্যরা তাঁদের পছন্দের প্রার্থীকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন।
যেসব ইউপিতে নৌকার প্রার্থীরা হেরেছেন
নোয়াখালীর সেনবাগে চার ইউপির সব কটি, সাতক্ষীরায় ১৭ ইউপির ১১টি, কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে ১৪ ইউপির মধ্যে ৯টিতে, গাজীপুরের কালিয়াকৈরে সাতটির মধ্যে ছয়টিতে, মেহেরপুরের গাংনীতে তিনটির একটিতে, দিনাজপুরের তিন উপজেলার ২৩টির মধ্যে ১৬টিতে, ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরে পাঁচটির মধ্যে চারটিতে, কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীতে ১৩টির মধ্যে ১০টিতে, নবীগঞ্জের ১৩টির মধ্যে ৯টিতে, বগুড়ার তিনটি উপজেলার ২৭টির মধ্যে ১৫টিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা হেরেছেন।
রংপুরের তারাগঞ্জ, সদর ও কাউনিয়া উপজেলার ১৩ ইউপির মধ্যে ৯টিতে ভরাডুবি হয়েছে নৌকার। পিরোজপুরের কাউখালীতে দুটিতে হেরেছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা। চিরাপাড়া পারসাতুরিয়া ইউপিতে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী জামানত হারিয়েছেন।
নেত্রকোনার কলমাকান্দা, দুর্গাপুর ও পূর্বধলা উপজেলার ২৪টির বেসরকারি ফলাফলে ১৫টি, পঞ্চগড় সদর ও আটোয়ারী উপজেলার ১৫টি ইউপির মধ্যে ৯টিতে, টাঙ্গাইলের কালিহাতী, নাগরপুর ও মধুপুর উপজেলার ২৪টি ইউপির আটটিতে, গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ ও পলাশবাড়ী উপজেলার ১৭টির মধ্যে ১৩টিতে নৌকার প্রার্থীরা পরাজিত হন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার ১৩ ইউপির পাঁচটিতে, সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার ৯টিতেই, সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার ছয়টির মধ্যে চারটিতে, মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার ১৩ ইউপির ছয়টিতে, কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার ১২টি ইউপির মধ্যে ছয়টিতে নৌকার প্রার্থীরা হেরে যান।