avertisements 2

এক লাখ টাকা ঘুষে ৬ লাখের বিদ্যুৎ বিল মাফ

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ৩০ অক্টোবর,শনিবার,২০২১ | আপডেট: ০৯:৪৬ এএম, ১৯ সেপ্টেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪

Text

প্রায় ৬ লাখ টাকার বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ হয়েছে মাত্র ১ লাখ ১৮ হাজার টাকায়। চাঞ্চল্যকর এ অনিয়ম হয়েছে টাঙ্গাইল বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের গ্রাহক বিলে। এ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শামীম আহম্মেদকে

ঘুষ দিয়ে এভাবেই নিজ বাসভবনের বকেয়া বিদ্যুৎ বিল মাফ করিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে টাঙ্গাইল মেডিনোভা মেডিকেল সার্ভিসেস লিমিটেডের ভবন মালিক তাশফিক আলমের বিরুদ্ধে। এত বড় অনিয়মে অবলম্বন করা হয়েছে ভবনের সচল মিটার নষ্ট দেখিয়ে ও নতুন মিটার স্থাপন করার মতো অভিনব কৌশল। এছাড়া নির্বাহী প্রকৌশলী শামীম আহম্মেদের বিরুদ্ধে রয়েছে গ্রাহকদের আবাসিক ও বাণিজ্যিক মিটার নষ্ট দেখিয়ে গড় বিলে হয়রানি করাসহ অসামঞ্জস্য বিদ্যুৎ বিল বানানোর অভিযোগ। যোগদানের শুরু থেকেই নির্বাহী প্রকৌশলী এমন অনিয়মে লিপ্ত বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র। সূত্রটি জানায়, ২০১৯ সালের ৫ সেপ্টেম্বর টাঙ্গাইল বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-২ এর

নির্বাহী প্রকৌশলীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন প্রকৌশলী শামীম আহম্মেদ। এই দফতরের অধীনে রয়েছে প্রায় ৪৫ হাজার গ্রাহক। আরো জানা গেছে, ২০১২ সাল থেকে টাঙ্গাইল বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-২ এর সংযোগ ব্যবহার করছেন টাঙ্গাইল পৌর শহরের থানাপাড়া মেইন রোডের ১১ তলা শামছুদ্দোহা-রিজিয়া ভবনের মালিক তাশফিক আলম। ২০১৭ সালের অক্টোবরে ওই ভবনের সামনের অংশে ৬টি ফ্লোর ভাড়া নেয় মেডিনোভা মেডিকেল সার্ভিসেস লিমিটেড। এ সময় মেডিনোভার জন্য ভবনে একটি বাণিজ্যিক মিটার স্থাপন করা হয়। বাকি ফ্লোরগুলোতে স্থাপন করা হয় আবাসিক মিটার। অনুসন্ধানে পাওয়া তথ্য, ২০১২ সাল থেকে ২০২০ সালের এপ্রিল পর্যন্ত তাশফিক আলমের মালিকানাধীন ভবনের আবাসিক অংশে মিটারে রিডিং আসে ৫৯২৯২.৯৩ ইউনিট। 

১০ টাকা দরে যার বিল হয় ৫ লাখ ৯২ হাজার ৯২৯.৩ টাকা। তবে ২০২০ সালের এপ্রিল পর্যন্ত ঐ মিটারের ১৪৩৬৯ ইউনিটের বিল বাবদ আদায় দেখানো হয়েছে ১ লাখ ১৮ হাজার ২০৪ টাকা। ২০১২ সাল থেকে ঐ ভবনে ব্যবহৃত একক মিটারটি ২০১৭ সালের অক্টোবরে চাইল্ড মিটারে স্থানান্তরিত হয়। বিষয়টি জেনেই ব্যবহৃত বিদ্যুৎ বিলের বিশাল অংকের টাকা আত্মসাত করতে মিটারটি নষ্ট দেখিয়ে নতুন মিটার স্থাপনের কৌশল অবলম্বন করেন নির্বাহী প্রকৌশলী শামীম আহম্মেদ। ফলে গায়েব হয়ে যায় ৪৪ হাজার ৯২৩ ইউনিট বিদ্যুতের ৪ লাখ ৪৯ হাজার ২৩০ টাকা বিল। 

অনুসন্ধানে আরো জানা গেছে, টাঙ্গাইল বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী শামীম আহম্মেদ ও উপ-সহকারী প্রকৌশলী আশরাফুল ইসলামের যোগসাজশেই এত বড় অনিয়ম হয়েছে। অর্থ আত্মসাতের পাশাপাশি বাইরে থেকে মিটার কেনা ও স্থাপনে বিধি অমান্য করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন সংশ্লিষ্টরা। থানাপাড়ার আবু কাউসারের অভিযোগ, আমি প্রতি মাসে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করে আসছি। এরপরও হঠাৎ বিদ্যুৎ অফিসের লোকজন এসে বলে- আমার মিটার নষ্ট হয়েছে এবং বিল বকেয়া রয়েছে ১২০০ ইউনিট। তারা আমার বাড়িতে নতুন মিটার লাগিয়ে দিয়ে বলে- একবারে বকেয়া পরিশোধ করা আমার পক্ষে কষ্টকর হবে। তাই তারা প্রতি মাসের বিলে বকেয়া বিল গড় করে পরিশোধের সুযোগ করে দেবে। 

এরপর অক্টোবর মাসে গড় বিল এসেছে ১২ হাজার ৮০০ টাকা। এভাবে একেক মাসে একেক ধরনের বিদ্যুৎ বিল হয়রানি ছাড়া আর কিছু না। টাঙ্গাইল মেডিনোভা মেডিকেল সার্ভিসেস লিমিটেডের মার্কেটিং ম্যানেজার মো. গোলাম হায়দার আলী বলেন, আমরা প্রতি মাসে নির্দিষ্ট এস.টি মিটার অনুসারে বিল পরিশোধ করছি। আমাদের মিটারের সঙ্গে ভবন মালিকের আবাসিক মিটারের কোনো সম্পর্ক নেই। মালিকপক্ষ তাদের ব্যবহৃত বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করেছে কিনা আমরা জানি না।

 শামছুদ্দোহা-রিজিয়া ভবনের একাংশের মালিক ফখরুল ইসলাম ফারুক বলেন, আমাদের ভবনের মিটারে একটু সমস্যা হয়েছিল। সেটি সমাধান করেছেন ভবনের মূল মালিক অধ্যাপক ডা. মো. শাহ আলম। অনিয়ম ও দুর্নীতির কথা স্বীকার করে টাঙ্গাইল বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-২ এর ম্যানেজার মামুন বলেন, আমি গ্রাহক তাশফিক আলমের ব্যবহৃত ৫৯২৯২.৯৩ ইউনিটের বিদ্যুৎ বিলটি ওপেন করতে চেয়েছিলাম। 

তবে নির্বাহী প্রকৌশলীর চাপের মুখে সেটি করতে পারিনি। এর বিপরীতে আর্থিক সুবিধা নিয়ে ওই মিটার রিডিং স্কিপ করেছেন নির্বাহী প্রকৌশলী শামীম আহমেদ ও উপ-সহকারী প্রকৌশলী আশরাফুল ইসলাম। বিদ্যুৎ বিলের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ অস্বীকার করে টাঙ্গাইল বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী শামীম আহমেদ বলেন, তাশফিক আলমের ২০২০ সালের এপ্রিল পর্যন্ত ব্যবহৃত মিটারটি নষ্ট হওয়ায় আমি সেটি পরিবর্তনের নির্দেশ দেই। 

সরকারি মিটার পেতে ঝামেলা থাকায় বাইরে থেকে নতুন মিটার কিনে সেখানে স্থাপন করা হয়। টাঙ্গাইল বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (পরিচালন ও সংরক্ষণ) মো. তোফাজ্জল হোসেন প্রামাণিক বলেন, এ বিষয়ে কোনো অভিযোগ পাইনি। লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2