কিশোর গ্যাংয়ের হত্যাকাণ্ড
মায়ের আজাহারি ‘আমার পোলারে না গো মারছে আমারে’
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ৫ সেপ্টেম্বর,রবিবার,২০২১ | আপডেট: ০১:৩৬ এএম, ২৫ ডিসেম্বর,
বুধবার,২০২৪
‘বাবা গো, রাইতে যহন আমার পোলারে মারছিল, তহন আমার মনে জানা হইছে গো! আমার পোলারে না গো, তারা মারছে আমারে। তাগো ফাঁসি চাই, তাগো ফাঁসি চাই...।’ গতকাল শনিবার বিকেলে ছেলে হাফিজের (১৩) লাশ সামনে রেখে পাগলপ্রায় অবস্থায় কথাগুলো বলতে বলতে জ্ঞান হারাচ্ছিলেন মা ডালিম বেগম। জ্ঞান ফিরলেই আবারও বিলাপ করতে করতে বেহুঁশ হচ্ছিলেন। হাফিজের মা লালবাগ থানায় কান্নারত অবস্থায় ইরফান, হৃদয়, রিফাতসহ বারবার পাঁচ-ছয়জনের নাম বলছিলেন। ছেলেকে ডেকে নিয়ে তারা হত্যা করেছে বলছিলেন তিনি। গত শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে ৪৭/১ ডুরি আঙ্গুলি লেনের পাঁচতলা একটি ভবনের ছাদ থেকে হাফিজের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
পরিবার জানায়, হাফিজ মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার দক্ষিণ বাড়ির খাল এলাকার হারুন শেখের ছেলে। সে পরিবারের সঙ্গে লালবাগ ডুরি আঙ্গুরি লেনের সেলিম মিয়ার বাড়িতে ভাড়া থেকে নিউ মার্কেট এলাকায় হকারি করত। শুক্রবার মার্কেটে গেলেও পরিবার আর খোঁজ পাচ্ছিল না। পরে ৪৭/১ নম্বর বাসার ছাদে তার লাশ পাওয়া যায়। উদ্ধারের সময় হাফিজের গলা, ঘাড় ও পেটে ধারালো অস্ত্রের আঘাত ছিল। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা লালবাগ থানার এসআই শেখ ফিরোজ আলম গণমাধ্যমকে জানান, ঘটনাস্থল থেকে পাটের রশি ও রক্তমাখা বস্তা, চিপসের প্যাকেটসহ বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে।
লালবাগ থানার ওসি কে এম আশরাফ উদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের ধরতে অভিযান চলছে। ছেলের বাবা বাদী হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারের স্বার্থে নাম বলতে পারছি না। সবাইকে ধরতে পারলে আসল ঘটনা বলতে পারব।’ সূত্র জানায়, এ ঘটনায় জড়িত অন্তত চারজনকে আটক করেছে লালবাগ থানার পুলিশ।
গতকাল সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ডুরি আঙ্গুলি লেনের সেই বাসার ছাদের বাথরুমে এখনো হাফিজের রক্ত লেগে আছে। জানা যায়, ৪৬ নম্বর বাসার ছাদে তাকে হত্যা করা হয়। এরপর বস্তায় ভরে লাশ নির্মাণাধীন এই পাঁচতলা ভবনের চিলেকোঠার বাথরুমে রেখে যায় ঘাতকরা। ৪৭/১-এর চিলেকোঠায় থাকা পরিবারের একজন নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ‘আমি কাজ শেষে রাতে বাসায় ফিরে এমনটা দেখে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। পরে আশপাশের মানুষ ডাকলে পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। কিভাবে কী হয়েছে কিছুই জানি না। তবে একটা বাড়ির ছাদের সঙ্গে অন্য বাড়ির ছাদ এত লাগানো যে কোন ছাদে উঠে কে যে কোথায় যায় বোঝা যায় না। একই ভবনের তিনতলার এক বাসিন্দা বলেন, কিছু পোলাপান রাতে আশপাশের ছাদে নেশা করত। কিছু বলা যেত না। বললেই হুমকি-ধমকি দিত।
বিকেল ৪টার দিকে লালবাগ থানায় মামলা করতে যান হাফিজের বাবা মো. হারুন। এই প্রতিবেদকের কাছে তিনি বলেন, ‘ইমরানের পোলা অন্য পোলাপান নিয়া আমার পোলাটারে মাইরা ফালাইছে। ছোট্ট পোলাটারে বহুত কষ্ট দিছে।’ কেন মেরেছে—এই প্রশ্নের জবাবে হারুন বলেন, ‘প্রায় সময় হাফিজরে দিয়া এটা-সেটা আনাইত। গতকাল নাকি ওরে সিগারেট আনতে কইছিল। ও (হাফিজ) না করছে। এই জন্যে মারন লাগে?’ সাইফুল ইসলাম নামে হাফিজের এক বন্ধু কালের কণ্ঠকে বলে, ‘ওরা সব সময় আমাগোরে দিয়া এইটা-সেইটা নেওয়ায়। কালকেও হাফিজরে সিগারেট নিয়া দিতে কইছিল। না করনে তারে মাইরা ফালাইছে হইতে পারে।’