গরু কেনা হলো না সাদমানের, হদিস মেলেনি ৩৫ লাখ টাকার
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ২৮ জুন,সোমবার,২০২১ | আপডেট: ১০:০৩ পিএম, ২২ ডিসেম্বর,রবিবার,২০২৪
কোরবানির গরু কিনতে যাওয়ার পথে যশোরে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতদের একজন চট্টগ্রামের রাসাম চৌধুরী সাদমান। রবিবার (২৭ জুন) দুপুরে যশোর সদর উপজেলায় সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান সাদমানসহ চার জন। তবে দুর্ঘটনায় নিহত সাদমান ও গুরুতর আহত তার ফুফাতো ভাই সাহাব উদ্দিনের সঙ্গে থাকা গরু কেনার ৩৫ লাখ টাকার হদিস মেলেনি বলে জানিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা।
সাদমানের বড় চাচা রফিক চৌধুরী বলেন, কোরবানির গরু কেনার জন্য তারা ৩৫ লাখ টাকা নিয়ে গিয়েছিল। দুর্ঘটনার পর ওই টাকার কোনও হদিস মেলেনি। পুলিশ বলেছে তারা ঘটনাস্থলে একটি মোবাইলফোন ছাড়া আর কোনও কিছু পায়নি। ঘটনার পর স্থানীয়রা হতাহতদের উদ্ধার করে, এরপর পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়েছিল বলে জানিয়েছেন তারা।
এদিকে সোমবার (২৮ জুন) দুপুরে দিকে মিরসরাই পৌঁছেছে সাদমানের লাশ। বাদ মাগরিব জানাজার পর স্থানীয় কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে। সাদমানের বাবা ইকবাল চৌধুরী বলেন, আইনি প্রক্রিয়া শেষ করে রাত ২টায় সাদমানের মরদেহ নিয়ে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছি। মিরসরাই পৌঁছেছি। বাদ মাগরিব স্থানীয় জামে মসজিদ মাঠে তার জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হবে।
তবে বড়ভাইয়ের অকাল মৃত্যু কোনোভাবে মেনে নিতে পারছেন না ছোটভাই আহনাফ।বাকরুদ্ধ আহনাফ বার বার একটা কথাই বলছেন, ‘ভাই তুই কেন চলে গেলি। ভাই তুই কেন চলে গেলি।’
বড়ভাই সাদমান সর্ম্পকে জানতে চাইলে আহনাফ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সাধারণত পরিবারে দুই ভাই থাকলে অনেক সময় পারিবারিক কাজ ভাগাভাগি করে করা হয়। কিন্তু আমাদের মধ্যে এটি কখনও ছিল না। সবকাজ সে একা করতো। পরিবারের কোনও চাপ সে আমাকে বুঝতে দেয়নি। এমনও হতো, সকাল ৮টায় আমার একটা কাজ করার কথা ছিল, কিন্তু আমি ঘুম থেকে দেরিতে উঠেছি। দুপুর ১২টায় ঘুম থেকে উঠে দেখি কাজটি সে করে ফেলেছে। ছোট ভাই হিসেবে সে সব সময় আমাকে যথেষ্ট আদর-স্নেহ করতো। আমার ক্যারিয়ার নিয়েও সে খুব চিহ্নিত ছিল।’
অপর এক প্রশ্নের জবাবে আহনাফ বলেন, আমার ফুফাতো ভাই সাহাব উদ্দিনের সঙ্গে গরু কিনতে সাতক্ষীরা যাচ্ছিলো বড়ভাই। দুপুর ১২টার দিকে যশোর সদর এলাকায় তাদের বহনকারী প্রাইভেটকারটি দুর্ঘটনার শিকার হয়। এতে ঘটনাস্থলে আমার ভাইসহ চার জন মারা যান। ঘটনার পরপরই একজন মোবাইলফোনে কল করে আমাদের সড়ক দুর্ঘটনার বিষয়টি জানান। পরে আমরা কল করে খবর নিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত হই।
তিন ভাই-বোনের মধ্যে সাদমান সবার বড় ছিলেন। তার ছোট ভাই ইসমাম চৌধুরী আহনাফ নগরীর প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে এমবিএ পড়ছেন। সবার ছোট বোন, সেও একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছেন। সাদমান ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড স্কুল থেকে এসএসসি, পাবলিক কলেজ থেকে এইচএসসি এবং প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি এবং এলএলএম পাশ করেন। ২০১৮ সাল থেকে শিক্ষানবিস আইনজীবী হিসেবে চট্টগ্রাম আদালতে কাজ করছেন।
রবিবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় সাদমানের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে আত্মীয় স্বজন, এলাকাবাসী জড়ো হয়েছেন। সাদমানের মরদেহের অপেক্ষায় ঘরের সামনে রাখা চেয়ারে বসে তারা সাদমানের স্মৃতি রোমন্থন করছেন। সাদমানের বাসার সামনে দাঁড়িয়ে একে অপরের সঙ্গে কথা বলছেন বড় আব্বু রফিক চৌধুরী, প্রতিবেশী চাচা হাজী আনোয়ার হোসেন, মেহেদি হাসান। তাদের আলোচনার ইস্যুও সাদমান।
ঘরের সামনের ভিড় ঠেলে বাসায় ঢুকতে শোনা যায় সাদমানের মায়ের আহাজারি। সন্তান হারা এই মা, কিছুক্ষণ পর পর ডুকরে কেঁদে উঠেন। প্রতিবেশী মহিলারা এলেই তাদের জড়িয়ে ছেলের শোকে হাউ মাউ করে কাঁদছিলেন তিনি।