অস্ট্রেলিয়ান পার্লামেন্টে যথাযোগ্য মর্যাদায় জুলাই গণবিপ্লব পালিত

সিডনি, অস্ট্রেলিয়া

অস্ট্রেলিয়ার দুজন প্রভাবশালী সিনেটর ডেভিড শোবারিজ এবং এবিগেইল বয়েডের আমান্ত্রণে দেশটির সবচেয়ে ঐতিহ্যবাহী এবং পুরনো নিউ সাউথ ওয়েলস পার্লামেন্টে যথাযোগ্য মর্যাদায় বাংলাদেশের জুলাই গণবিপ্লব পালিত হয়েছে। গত ৫ আগস্ট পার্লামেন্টের লেজিসলেটিভ কাউন্সিল চেম্বারে বাংলাদেশের মনসুন বিপ্লবের প্রথম বর্ষপূর্তি আয়োজন হয়। বাংলাদেশি কিমিউনিটির স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে অনুষ্ঠান প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে।

অস্ট্রেলিয়ার প্রথমসারির রাজনৈতিক দলগুলোর আগ্রহে এবং অস্ট্রেলিয়ার ফেডারেল পার্লামেন্টের সিনেটর ডেভিড শোবারিজ ও নিউ সাউথ ওয়েলস পার্লামেন্টর সিনেটর এবিগেইল বয়েডে আয়োজনে বাংলাদেশের মনসুন বিপ্লবের বর্ষপূর্তি পালিত হয়। সেখানে বাংলাদেশি কমিউনিটির নেতৃবিন্দ ও শিক্ষাবিদ ও এক্টিভিস্টদের আমন্ত্রণ জানানো হয়।  

অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন সিনেটর ডেভিড শোবারিজ। শেখ হাসিনার ফেসিজমের পতনে সকল রাজনৈতিক দলের অবদানের জন্য তিনি প্রশংসা করেন। 

বাংলাদেশের মানবাদিধকার, গণতন্ত্র ও সাবেক তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসার ব্যপারে সবচেয়ে বেশি সোচ্ছ্বার ছিলেন অস্ট্রেলিয়ার সিনিটর এবিগেইল বয়েড। ওনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের জুলাই বীর শহীদদের সম্মানে  এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।

শুধু তাই নয়, বাংলাদেশের ৫ আগস্টকে মনসুন বিপ্লব হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন এবিগেইল বয়েড। কয়েকঘণ্টা পর পার্লামেন্ট অধিবেশনে একটি লিখিত বিজ্ঞপ্তি তুলে ধরেন তিনি। ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনার ফেসিজমের পতনের প্রথম বার্ষিকীতে এমন পদক্ষেপ নিল অস্ট্রেলিয়া সরকার। 

সংসেদে এবিগেইল বয়েড বলেন, ‘বাংলাদেশ সহ বিশ্ববাসি মনে করে ১৯৭১ সালে পাকিস্তান থেকে স্বাধিনতা লাভের পর জুলাই বিপ্লব বাংলাদেশের দ্বিতীয় স্বাধীনতা।‘ 

২০২৬ সালের রমজানের আগে পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের জন্য বাংলাদেশের প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে চিঠি দেন এবিগেইল বয়েড। তিনি জানান, বাংলাদেশের অর্ন্তবর্তী সরকারের তিনটি মূল দায়িত্ব হলো, সংস্কার, ন্যায় বিচার ও জাতীয় নির্বাচন আয়োজন। ইউনূস সরকার ২৮ দফার জুলাই ঘোষণাপত্র প্রকাশ করেছে। যেখানে তিনি শিক্ষার্থীদের অবদানকে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিয়েছেন। ২০২৪ সালের জুলাই-হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের শাস্তির প্রত্যায়ের কথা জানিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। এটা ভালো দিক।   

‘৩৬ জুলাই: বাংলাদেশের গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে মিলিত হয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ার রাজনীতিবিদ, বাংলাদেশি অভিবাসী সম্প্রদায়, ছাত্রনেতা ও মানবাধিকারকর্মীরা।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের রক্তঝরা দিনগুলোর স্মৃতি তুলে ধরা হয়। শেখ হাসিনার ফেসিবাদী শাসন ব্যবস্থা ও মাফিয়াতন্ত্রের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতা যেভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল, তা উঠে আসে অতিথিদের কথায় ।

মনসুন বিপ্লব বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। এই আন্দোলন যুব সমাজের রাজনৈতিক সচেতনতা এবং তাদের অধিকার আদায়ের সংগ্রামের প্রমাণ দেয়। এটি শুধুমাত্র একটি আন্দোলন ছিল না, বরং একটি নতুন ধারার সূচনা করেছে, যেখানে সাধারণ মানুষ নিজেদের কণ্ঠস্বর তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছে।

মূল বক্তাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন :

ওয়েস্টার্স সিডনি উইনিভার্সিটির শিক্ষক ও গবেষক ও এস্টিভিস্ট ড. মুবাশ্বের হাসান,  অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশি কমিউনিটির জনপ্রীয় নেতা ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী  দল (বিএনপির) আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মোহাম্মদ রাশেদুল হক। অস্ট্রেলিয়া প্রবাসি বাংলাদেশি এক্টিভিস্ট নিবার্চিতা পাল ও বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের একাংশের নেতা  কবিতা চাকমা।

জাতীয়তাবাদী  দল (বিএনপির) অস্ট্রেলিয়া সাখার সভাপতি এম তাওহিদুল ইসলাম অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন।