avertisements 2

৯ মাসে ২ নক্ষত্র হারালো সিরাজগঞ্জ বাসি

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১১:৩৭ পিএম, ৪ মার্চ,বৃহস্পতিবার,২০২১ | আপডেট: ১০:৩৮ পিএম, ২১ ডিসেম্বর,শনিবার,২০২৪

Text

সিরাজগঞ্জের দুই কৃতি সন্তান মোহাম্মদ নাসিম ও এইচটি ইমাম। দীর্ঘদিন ধরে তারা জাতীয় রাজনীতি এবং সরকারে নেতৃত্ব দিয়ে আসছিলেন।

বুধবার (৩ মার্চ) রাত সোয়া একটার দিকে ঢাকার সিএমএইচ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন লাইফ সাপোর্ট থাকা অবস্থায় মারা যান এইচটি ইমাম। এর ঠিক ৮ মাস ২০ দিন আগে ২০২০ সালের ১৩ জুন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ঢাকার শ্যামলী স্পেশালাইজড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান মোহাম্মদ নাসিম।  

সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার কুড়িপাড়ায় জন্ম নেওয়া মোহাম্মদ নাসিম বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর সাবেক প্রধানমন্ত্রী জাতীয় নেতা শহীদ এম মনসুর আলীর দ্বিতীয় সন্তান। আশির দশকের শেষভাগ থেকে মোহাম্মদ নাসিম জাতীয় রাজনীতিতে নেতৃত্ব দিয়ে এসেছেন। স্বৈরাচারবিরোধী সব গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নেতৃত্বে দিয়ে জেল-জুলুম এমনকি রাজপথে পুলিশের লাঠিপেটাও সহ্য করতে হয়েছে নাসিমকে। টানা ৪ বারসহ মোট ৬ বারের সংসদ সদস্য নাসিম ১৯৯১ সালে বিরোধী দলীয় চিফ হুইপের দায়িত্ব পালন করেন। ৯৬ সালে দল ক্ষমতায় এলে প্রথমে ডাক ও টেলিযোগাযোগ এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত পরবর্তীকালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৪ সাল থেকে তিনি ৫ বছর স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। মোহাম্মদ নাসিম আশির দশকের শেষভাগ থেকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক, পরবর্তীকালে সাংগঠনিক সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১২ সাল থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যের পাশাপাশি ১৪ দলের মুখপাত্রের দায়িত্বে ছিলেন নাসিম।  

মোহাম্মদ নাসিমের স্ত্রী লায়লা আনজুমান আরা বিথি ঢাকার শহীদ এম মনসুর আলী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চেয়ারম্যান পদে রয়েছেন। তাদের তিন ছেলের মধ্যে বড় ছেলে সিরাজগঞ্জ-১ আসনের নির্বাচিত সংসদ সদস্য এবং আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবকলীগের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। মেঝ ছেলে তমাল মনসুর ব্যবসায়ী এবং কনিষ্ঠ ছেলে তন্ময় মনসুর আমেরিকায় পড়াশোনা করছেন। নাসিমের বড় ভাই ড. মোহাম্মদ সেলিম বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ছিলেন। তিনি ১৯৯৬ সালের উপ-নির্বাচনে সিরাজগঞ্জ-১ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি পদে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৫ সালেল ২২ জানুয়ারি তিনি মৃত্যুবরণ করেন।  

অপরদিকে, উল্লাপাড়া উপজেলার সোনতলা গ্রামের সন্তান এইচটি ইমামের জন্ম ১৯৩৯ সালের ১৫ জানুয়ারি। তিনি ঢাকা কলিজিয়েট হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাসের পর পাবনা এডওয়ার্ড কলেজ থেকে আইএ, রাজশাহী কলেজ থেকে অর্থনীতিতে অনার্সসহ বিএ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এমএ পাস করেন। এইচটি ইমাম পরবর্তীকালে পাকিস্তানে সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ১৯৬১ ব্যাচের সিএসপিদের মধ্যে চতুর্থ স্থান লাভ করেন। এরপর পূর্ব পাকিস্তানের বিভিন্ন জেলায় সিভিল প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদে চাকরি করেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালীন অস্থায়ী মুজিবনগর সরকারের ক্যাবিনেট সচিবের দায়িত্ব পালন করেন। স্বাধীনতার পরেও সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ বিভিন্ন প্রকল্পের পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০০৮ সালের নির্বাচন থেকে তিনি আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো- চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে এইচটি ইমামকে পূর্ণমন্ত্রীর মর্যাদায় জনপ্রশাসন বিষয়ক উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ পান। ২০১৪ সালে তাকে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা নিয়োগ করা হয়। তিনি ২০০৯ থেকে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা হিসেবেও নিযুক্ত রয়েছেন। এছাড়া এইচটি ইমাম আমৃত্যু আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন।  

এইচটি ইমামের একমাত্র ছেলে তানভীর ইমাম সিরাজগঞ্জ-৪ আসন থেকে টানা দ্বিতীয়বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব পালন করছেন। তার তিন মেয়ের দুইজন আমেরিকা প্রবাসী অপরজন ঢাকাতেই থাকেন।  

এদিকে, এইচ ইমামকে হারিয়ে শোকে বিহবল সিরাজগঞ্জের আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন। নয় মাসের ব্যবধানে জেলার উন্নয়ন ও রাজনীতির আশা ভরসার স্থল দুই নেতাকে হারিয়ে অনেকটাই শোকস্তব্ধ ও আশাহত জেলার বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ।  

কলেজ শিক্ষক আতাউর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, মোহাম্মদ নাসিম ও এইচটি ইমাম জাতীয় রাজনীতিতে বিশেষ ভূমিকা রাখার পাশাপাশি সিরাজগঞ্জের উন্নয়নে অবদান রেখেছেন। আমরা পর্যায়ক্রমে জেলার কৃতি সন্তানদের হারিয়ে ফেলছি। এতে আমাদের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।  

ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, গত বছর আমরা মোহাম্মদ নাসিমকে হারিয়েছি, এবার হারালাম এইচটি ইমামকে। এ দুই কীর্তিমান পুরুষের চলে যাওয়ায় সিরাজগঞ্জের অপূরণীয় ক্ষতি হলো।

সিরাজগঞ্জ স্বার্থরক্ষা সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক ডা. জহুরুল হক রাজা বাংলানিউজকে বলেন, মোহাম্মদ নাসিম সিরাজগঞ্জের উন্নয়নে অসামান্য অবদান রেখে গেছেন, আর এইচটি ইমাম প্রশাসনিক দক্ষতায় কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন। প্রায় ৯ মাসের ব্যবধানে বাংলাদেশের রাজনীতির দুই মহানায়ককে হারিয়ে আমরা অভিভাবকশূন্য হয়ে পড়লাম। সিরাজগঞ্জ শুধু নয়, জাতীয় রাজনীতিতেও এ শূন্যতা পূরণ হওয়ার নয়।  

উল্লাপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফয়সাল কাদির রুমি বাংলানিউজকে বলেন, আমরা উল্লাপাড়াবাসী শোকাহত। এইচটি ইমাম স্যার ছিলেন আমাদের মুরুব্বী। তার মৃত্যু আমাদের গভীর শূন্যতায় ফেলে দিল।  

সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট কে এম হোসেন আলী হাসান বাংলানিউজকে বলেন, স্বাধীনতার পর শহীদ পর সিরাজগঞ্জের কৃতি সন্তান শহীদ এম মনসুর আলী জাতীয় রাজনীতিতে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তার মৃত্যুতে সৃষ্ট শূন্যতা তার ছেলে মোহাম্মদ নাসিম পূরণ করেন। একই সঙ্গে এইচটি ইমাম জাতীয় রাজনীতিতে অনন্য ভূমিকা রাখেন। একে একে আমরা সবাইকে হারিয়ে ফেলে অভিভাবকশূন্য হয়ে পড়ছি।

তিনি বলেন, মোহাম্মদ নাসিম ছিলেন দক্ষ সংগঠক ও জনপ্রিয় নেতা। তার নেতৃত্বে সিরাজগঞ্জে যতো উন্নয়ন হয়েছে যেটা বলে শেষ করা যাবে না। অপরদিকে, এইচটি ইমাম ছিলেন সুদক্ষ প্রশাসক। তিনি স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেশগঠনে কাজ করেছেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদ অলঙ্কৃত করে দেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে গেছেন। এ দুই মহান ব্যক্তিত্বের মৃত্যুতে আমাদের সিরাজগঞ্জের অপূরণীয় ক্ষতি হলো।  

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2