মাধবীর জন্য - ১৪
মো: আসাদুজ্জামান
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ৩ আগস্ট,মঙ্গলবার,২০২১ | আপডেট: ০৮:৩৫ এএম, ২১ ডিসেম্বর,শনিবার,২০২৪
মাধবী,
চিত্রা সিং এর কন্ঠে গাওয়া
“ মনে করো যদি সব ছেড়ে হায় , চলে যেতে হয়, কখনো আমায় , মনে রবে কি রজনী ভরে নয়নও দুটি ঘুমে জড়াতে ……“
গানটি আজ বৃষ্টিস্নাত ঢাকার রাজপথে ঘুরতে ঘুরতে কয়েকবার শুনলাম । তোমাকে মনে পড়ছে, তোমার অবজ্ঞা, উপেক্ষায় বিভোর হয়ে গানটি শুনছি !! ঘুরে ফিরে শুনছি, বারে বারে শুনছি, হৃদয়ে দোলা লাগা এই গানের সুর তাল লয়ে চোখ ভিজে যায় চোখের জলে ! মৃত্যুকে আলিঙ্গন করার দু:স্বপ্ন মাথায় আসছে । ফেইসবুকের পাতায় দেখছি করোনার ভয়াল থাবায় মৃত্যুর মিছিলে আজ আরো ২৩৯ জন সংযুক্ত হয়ে বিশ সহস্রাধিক মানুষের মৃতু উপত্যকা হয়েছে আমার তোমার আমাদের সকলের প্রিয় মাতৃভূমি । অতি সম্প্রতি করোনার নিষ্ঠুর থাবায় আমি হারিয়েছি আমার বেশ কয়েকজন সহযোদ্ধা, সজ্জন, সতীর্থকে । যার মধ্যে আছেন আমার এলাকার প্রবীন জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক ব্যাক্তিত্ব , আমার হৃদয়ের প্রতিবেশী জনাব বদিউজ্জামন হেকমত সাহেব, গোলাম রসুল, ইসরাইল হোসেন জোয়ার্দার প্রমুখ প্রিয়জনেরা । আজ হারালাম ঝিনাইদহের রাজনৈতিক সহকর্মী আব্দুল আজিজ, পেশাগত সহকর্মী এডভোকেট বাচ্চু মিয়াকে । ইতিমধ্যে হারিয়েছি এড. এস এম মশিউর রহমানের সহধর্মীনিকে ! এই সব মৃত্যুই বেদনাদায়ক, সব মৃত্যুই থাই পাহাড়ের মতো ভারী, পাখির পালকের মত হালকা নয় ! তাই মৃত্যু চিন্তা মস্তিস্কের নিউরনে ঢুকে গেছে, স্বজন প্রিয়জন হারানোর আতংকে দিন কাটে, সে কারনেই হয়তো চিত্রা সিং এর ঐ গানটির সূরের মূর্ছনা , হৃদয়গ্রাহী শব্দমালা মনের অতল অতলে ছুঁয়ে যায় মাধবী !
মাধবী,
এত কিছুর মধ্যেও সাম্প্রতিক কয়েকটি ঘটনার ঘনঘটায় হৃদয় ব্যাথিত, মনে হয় জন্মই আমাদের আজন্ম পাপ । ইট কাঠ পাথরের ঢাকা শহরে একবিংশ শতাব্দীর এই প্রান্তে দাঁড়িয়ে দেখছি এখানে মানুষের শোকের আয়ু বড়জোর এক পক্ষ , আবেগগুলো কচু পাতার উপর জমে থাকা পানির মত, ক্ষণস্থায়ী, দেখতে স্বচ্ছ কিন্ত দমকা হাওয়ায় সবটুকু গড়ে পড়ে , স্মৃতিটুকু কোন রকম রেখে দেয় । উদাহরণ চাও ? নিযুত উদাহরণের মাঝে ইলিয়াস আলী, সাগর রুনি, তনু, মুনিয়াদের হত্যাকাণ্ড, মানুষের আবেগী প্রতিক্রিয়া এবং সেগুলির স্মৃতিহীন পরিসমাপ্তি আমাদের বেদনাকে নীলাভ করে, কষ্টের দহনে ছাই হয়ে যায় । মুনিয়া মৃত্যু রহস্যের তদন্ত রিপোর্টে প্রধান সন্দেহভাজন ব্যাক্তির অব্যাহতি দেওয়াকে কেন্দ্র করে জনমনে তদন্তের স্বচ্ছতা কিংবা নিরপেক্ষতা নিয়ে মৃদু - চাপা অসন্তোষ থাকলেও আবেগের সেই প্রতিবাদী উচ্ছাস নেই । ক্ষমতার প্রদর্শন এখানে কি হয়েছে, কতটুকু হয়েছে বা আদৌ হয়েছে কি না সে বিচার আদালত কতটুকু বিবেচনা করবেন সেটা ভিন্ন প্রশ্ন । তবে আমার সাদা চোখে দেখা, হাদা মনে আসা কয়েকটি প্রশ্ন ক্ষমতার প্রয়োগ কিংবা ক্ষমতার ক্ষমতাকে দেখিয়ে দিচ্ছে । এই যেমন ধরো এরকম সন্দিগ্ধ আসামী অন্য কেউ হলে, বিশেষ করে ক্ষমতাহীন বিরোধী মতের কোন মানুষ কিংবা আম জনতার কেউ হলে নিশ্চিতভাবেই পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিয়ে আসতো এবং/অত:পর/ তারপর / যারপরনাই কি হতো একবার ভাবতো দেখি ! সোস্যাল মিডিয়ায় দেখলাম মামলা করার অপরাধে বাদীর চাকরি গেছে, এই বিষয়ে সন্দিগ্ধ আসামীর বিরুদ্ধে রিপোর্ট করায় সম্পাদক পরিষদে ভাঙনের সূর বেঁজে উঠেছে ! ক্ষমতার ক্ষমতা কত বিচিত্র তা কি দেখেছো তুমি ?
মাধবী,
তুমি গালি দিতে পারো ? কখনো তো ভালোবাসনি আমাকে , তাহলে গালি শিখবে কিভাবে আর দিবেই বা কিভাবে ? নিদেন পক্ষে রাজনীতি কিংবা বিশেষ কোন রাজনৈতিক দলের ভালোবাসার স্পর্শ পেলে তুমি নিশ্চয়ই গালি দিতে পারতে , শিখতে , শেখাতে পারতে । সম্প্রতি দেশের অন্যতম বিদ্যাপীঠ ভিকারুননেসা নুন স্কুল ও কলেজের অধ্যক্ষ মিসেস কামরুন নাহার মুকুল প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজিং কমিটির একজন সদস্যের সাথে কথপোকথনের সময় গালির যে শব্দভান্ডার ব্যাবহার করেছে তা শুনলে বুঝা যায় তার আদর্শের প্রতি কতটা প্রেম থাকলে হৃদয়গ্রাহী এতগুলো শব্দ অবলীলায় আওড়ানো যায়, মনের রাগ অনুরাগ বিরাগ প্রকাশ করা যায়, ক্ষমতাসীনদলের প্রশিক্ষনপ্রাপ্তি থাকলে এতটা দম্ভ দেখানো যায় ! ফেইসবুক বন্ধু মোজতবা খন্দকারের ওয়াল থেকে দেখলাম দল প্রেমিক এই শিক্ষিকা,
কামরুন নাহার মুকুল, ৪ মিনিট ৩৯ সেকেন্ডের কথোপকথনে তার সাংস্কৃতিক দক্ষতার স্বাক্ষর রেখেছেন । সে শুয়ারের বাচ্চা বলেছেন ৯ বার, খানকির পোলা- ৩ বার, মাগির বাচ্চা- ২ বার, খানকি মাগি- ১ বার, কুত্তার বাচ্চা- ৯ বার , কোপাবো- ২ বার, মায়ের ভাতার- ১ বার, কাপড় খুইলা রাস্তার মধ্যে রাইখা পেটাবো-১ বার, ল্যাংটা করে পেটাবো-১ বার এবং চুল দাড়ি প্যান্ট খুইলা নামাই দিবো -১ বার, সর্বমোট=৩০ বার বলেছেন । অস্ত্র নিয়ে ঘুমানো এবং ব্যাগে অস্ত্র রাখার কথা নাই বা বললাম তোমাকে । আরও বেশী বললে তুমি দ্বিধান্বিত হবে, আমার প্রেম না কি কামরুন নাহার মুকুলের ট্রেনিং সেন্টারের প্রেম, এই দ্বিধায় পড়বে । এই দ্বিধা তোমাকে দিতে চাই না, চাই তুমি সহস্রবার শুধু আমার প্রেমে পড়ো, অন্য কারও না, অন্য কোথাও না ।
মাধবী , আমরা দীর্ঘদিন বলে আসছি বেগম খালেদা জিয়া কার্যত: গৃহবন্দী , তিনি ন্যায় বিচার বন্চিত, দেশ গনতন্ত্রহীন ! আমাদের কথা, দাবী জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমল্ডলে যৌক্তিকতা পাচ্ছে । সম্প্রতি ব্রিটিশ পার্লামেন্টে সে দেশের সরকার বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির উপর একটি সচিত্র প্রতিবেদন দাখিল করেছে যার শিরোনাম -
“ Human Rights & Democracy :
The 2020 Foreign, Commonwealth & Development Office Report
Presented to Parliament by the Secretary of State for Foreign, Commonwealth & Development Affairs by Command of Her Majesty.”
উক্ত রিপার্টের একাংশে উল্লেখ করা হয়েছে , “ In March, opposition leader Khaleda Zia was released from prison following a government decision
to suspend her sentence for six months on the condition that she received medical treatment at
home and did not travel abroad. She remained under house arrest in Dhaka throughout 2020, following an extension to her suspension in September. “
রিপোর্টের উক্ত অংশ স্বব্যাখ্যায়িত, মন্তব্য নিস্প্রয়োজন ।
মাধু, প্রিয়তমা আমার,
কোথায় যেন পড়েছিলাম , সব মোমবাতি নৈশভোজের টেবিল সাজানোর জন্য তৈরি হয় না, কিছু মোমবাতি প্রতিবাদ মিছিলেও প্রয়োজন হয় ! মনে করো তোমার জীবনে আমি ছিলাম প্রতিবাদ মিছিলের মোমবাতি …….🥲 !
পাশে গান বাঁজছে, বেদনা মধুর হয়ে যায়, তুমি যদি দাও ; ভালবেসে সখি নিভৃত যতনে আমার নামটি লিখো; যাবার আগে কিছু বলে গেলে না ….. আরো কত বেদনা বিধুর গান শুনছি , শুনছি আর শুনছি তোমার শূন্যতার অনুভবে ……! শুভ রাত্রি