avertisements 2

মাধবীর জন্য -১১

মো: আসাদুজ্জামান
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ২৬ মে, বুধবার,২০২১ | আপডেট: ০৯:৫৯ এএম, ১৯ ডিসেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪

Text

মাধবী,
তুমি কি আমার কাছে দেবী, না কি এ্যানজেল ? না তুমি রক্ত মাংসের মোহনীয় মানবী ? এই জটিল প্রশ্নের মীমাংসা করতে না পারায় আমার liver এর fibroscan test করানো হলো না ! হয়তো ভালোই হলো, তোমার মনের আশা পূর্ণতা পাবে !!  সে যাই হোক, তুমি কি অনুভব করতে পেরেছো যে আজ আমার বিসন্নতায় কেটে গেল, অনুভব করলাম তোমাকে ভালোবাসা আমার প্রাপ্তির খাতায় পূর্ণতা দিয়েছে  , বিসন্নতায় তুমি আমার নিরন্তর সঙ্গী, তুমি সুখ , তুমিই প্রেরণা ! আর কোন মোহ নেই, তুমি ছাড়া অতল গভীরের কোন অনুভূতি নেই ! জীবন যেখানে দ্রোহের প্রতিশব্দ মৃত্যুই সেখানে শেষ কথা নয় ! মৃত্যু ছাড়াও সেই ভাবনার মাঝে তুমি, তোমরা, আমার প্রিয়জনেরা, আমার সংগ্রাম, আমার দেশের নিপীড়িত জনগন , সহযোদ্ধা-সহকর্মীদের সুখ-দু:খ বেদনা- হাসি কান্নার চিত্র শেষ কথা হয়ে দাঁড়ায় । গণমুখি মানুষ তুমি, তোমার চেতনার অতলেও হয়তো এমন শ্বেত শুভ্র চিন্তা ভেসে বেড়ায় , আর সে জন্যই তো তুমি আমার গর্বের, অহংকারের, কল্পনার মাধবী । আমার মনের মাধুরী মিশিয়ে তোমার ছবি আঁকি, তোমাকে স্পর্শ করি, তোমাতে হারাই , তোমাতে অবগাহন করি ! তুমি আমার দু:খ রাতের দোসর, আমার সুখর পালক !  তোমাকে এঁকে, দেখে, ছুঁয়ে , বুঝে অনন্ত অতলে স্বপ্ন সারথী হওয়া যায়, হই এবং হারাই ! ঘর অন্ধকার, বাইরে বৃষ্টি , মান্নাদে’র মত গভীর হয়েছে রাত, পৃথিবী ঘুমায়, হয়তো তুমিও গেছো ঘুমিয়ে - শুধু আমার দু’চোখে ঘুম আসে না , কেন ঘুম আসে না , বুঝি ঘুমের সে রাত গেছে ফুরিয়ে গাইতে মন চাইছে । আঁধার রুমে এখন লিখছি, ইউটিউবে ঘুরে ফিরে ইন্দ্রানী সেনের “ কেউ বলে ফাল্গুন কেউ বলে পলাশের মাস”, অদিতি চক্রবর্তীর “ আমি খাতার পাতায় চেয়েছিলাম একটি তোমার সই গো “ , মান্নাদের “ এ তো রাগ নয় গো, এ যে অভিমান “ এবং “ রঙ্গীনি কত মন মন দিতে চায় “ গানগুলো ঘুরে ফিরে শুনছি , কি অপূর্ব মিষ্টি, হৃদয়গ্রাহী ! লেখায় ব্যাঘাত ঘটালেও বিষন্ন, রক্তাক্ত মনে গানগুলি মোহন বাঁশির মত, এ যেন ব্যাথার প্রলেপ ! একবার শুনে দেখো, বারবার শুনতে মন চাইবে , মিথ্যা হলে আমার কল্পনায় এসো না !!!

 মাধবী, 
বাংলাদেশের গৌরবের , সৌরভের , মর্যাদার স্বাধীনতার সূবর্ণজয়ন্তী’র বছরে এসে মানুষ হিসেবে অনেকের মত নিজেকে পরাধীন , ব্যার্থ , পাংতেয় মনে হচ্ছে । এমন বিবর্ণ জীবন আমি চাইনি । আমরা ভোটাধিকারহীন রাজনৈতিক নিপীড়নের ভয়াবহ শাসনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি , এখানে কেউ নিরাপদ না । সম্প্রতি দৈনিক প্রথম আলোর জৈষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামের ঘটনা অনেকগুলোর মাঝে একটি উদাহরণ মাত্র ।তাঁর  স্বামী পরিক্ষীত আওয়ামীলীগের রাজনৈতিক কর্মী, সে নিজেও আওয়ামী ঘরানার একজন সাংবাদিক, সেও ক্ষমতাসীনদের স্বার্থের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে সেই আশংকায় হয়রানীর শিকার হয়েছে , তাঁর ঘটনার মধ্য দিয়ে অন্যদেরকে সতর্ক করা হলো , অর্থাৎ , ঝি কে মেরে বউকে শেখানো প্রবাদের মত কাজ করা হলো । আমি ইতি মধ্যেই কয়েক জায়গায় বলেছি “ মন্ত্রগুপ্তি  আইন , ১৯২৩” বা The Official Secrets Act, 1923 এর কোন উপাদান তার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত এজাহারে বর্নিত তথ্যে নেই । গতকাল DBC নামক একটি টকশোতে দেখলাম বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকও একই কথা বলেছেন । রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে আনীত এজাহারের মূল বক্তব্য হলো এই যে, রোজিনা ইসলাম স্বাস্হ্য মন্ত্রনালয়ের কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য চুরি করেছে যা জনসক্ষে প্রকাশ করলে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে ! 
  যদি এজাহারের উক্ত অভিযোগ সত্যও ধরে নেই তাহলেও “মন্ত্রগুপ্তি আইন , ১৯২৩” এর ধারা ৩ কিংবা ৫ এর বিধান মতে অপরাধ হবে না । কারণ, ধারা ৩ এবং ৫ এর অধীন অপরাধ হতে হলে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে এজাহারে এই মর্মে অভিযোগ থাকতে হবে যে , তার কৃত কাজটি রাষ্ট্রের নিরাপত্তা এবং / অথবা স্বার্থের জন্য ক্ষতিকর এবং এই কাজটি সে করেছে সরকার কর্তৃক গেজেটে প্রকাশিত কোন নিষিদ্ধ এলাকায় ঢুকে এবং / অথবা সে কাজটি করেছে রাষ্ট্রের কোন শত্রু পক্ষকে সহায়তা করার জন্য ! রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে উল্লেখিতভাবে কোন অভিযোগই দায়ের হয় নি । ফলে, মামলার কি ফল হবে সেটা অন্য কথা , সময় বলে দেবে । 
মাধবী , 
রোজিনা’র উপর নির্যাতন নি:সন্দেহে রাষ্ট্র যন্ত্রের কুৎসিত রুপ ! কিন্ত এই রাষ্ট্রযন্ত্র , এই প্রশাসন এর চেয়েও ভয়াবহ অপরাধ করেছে এই দেশে, গনতন্ত্র হত্যা করেছে, সংবিধান পদদলিত করেছে, ভোটাধিকার হরণ করেছে , আইনের শাসনের কবর রচনা করেছে, বিচারবিভাগের উপর অদৃশ্য নিয়ন্ত্রণ করেছে, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা কালো আইনের ভয়ে সংকুচিত , শৃংখলিত, দুর্নীতি সর্বগ্রাসী রুপ ধারন করেছে ! এসবের বিরুদ্ধে প্রতিকারের জন্য মানুষকে পথে নামাতে রাজনৈতিক দলগুলো ব্যার্থ । পেশাজীবি, শ্রমজীবি, বুদ্ধিজীবিরা আজ মূক ও বধির ! এই অবস্থায় আমরা কেমন থাকতে পারি বলো ? আমাদের বিপ্লব করার বয়স এবং সক্ষমতা নেই । তরুন, যুবক, ছাত্ররা বিপ্লবের ভ্যানগার্ড হওয়ার কথা, অথচ তাদের অধিকাংশই আজ নির্বাক, নিষক্রিয়, প্রতিক্রিয়াশীল আর ক্ষমতার মরিচিকার পিছনে দৌঁড়ায় । এরা বিপ্লবের, পরিবর্তনের, সৃষ্টিশীলতার স্বপ্ন দেখে না, দেখায় না - ওরা স্বপ্নবাজ না, ওরা নিন্দুকদের ভাষায় ধান্দাবাজ । 
মাধবী, 
 নিশ্চয়ই শুনেছো যে, রোজিনার জামিনের পর সরকারের এক মন্ত্রি বলেছেন রোজিনার জামিনে সরকার কোন হস্তক্ষেপ করে নাই, তাই আদালত স্বাধীন ভাবে জামিন দিয়েছেন । তাহলে কি খালেদা জিয়া সহ অগনিত বিরোধী রাজনৈতিক নেতা-কর্মী , অসংখ্য ভিন্ন মতের মানুষের দীর্ঘদিন জামিন হয়না  উক্ত মন্ত্রিদের হস্তক্ষেপের কারনে ?  সাংবাদিক রুহুল আমিন গাজী, নিপুন রায়, ইশহাক সরকাররা জামিন পায় না এই ধরনের হস্তক্ষেপের কারনে ? আমার নিরীহ, সাদা , হাবা - গোবা মনে তো এই উত্তরই খুঁজে পাই ! এই জামিনের পর আরও দেখলাম, একদল সাংবাদিক নেত্রীবৃন্দ সরকার এবং প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন !! এই ধন্যবাদের অর্থ দাঁড়ায় সরকার এবং প্রধানমন্ত্রী আদালত নিয়ন্ত্রন করেন, তাঁরাই জামিন দেওয়ার মালিক, আদালত নয় !! এটা আদালতকে ছোট করা, অসন্মান করা , আদালতের উপর নির্বাহী বিভাগের নিয়ন্ত্রণের তথ্য চিত্র প্রকাশ করা । এই ধরনের বক্তব্য , কর্মকান্ড জনমনে বিচারবিভাগ সম্পর্কে নেতিবাচক ধারনা তৈরী করে , এটা নিশ্চিতভাবেই আদালত অবমাননা । দেশে নৈরাজ্যবাদী শাসন না থেকে গনতন্ত্রিক /আইনের শাসন থাকলে আদালত নিশ্চয়ই সুয়োমটো কনটেম্পট রুল ইস্যু করতেন !!
        মাধু , প্রিয়তমা আমার, আজ আর নয় , অন্য কোনদিন, অন্য কোন রাতে তোমার জন্য কল্পনার ডানা মেলে আরও লিখবো । এখন রবীন্দ্রসঙ্গীত শুনবো— রাঙিয়ে দিয়ে যাও , যাবার আগে - কিংবা, কেন যামিনী না যেতে জাগালে না .......! ইচ্ছে হলে তুমিও শুনো , আমার মত একাকীত্বের সুখ, নীল বেদনা, কষ্টের দহন অনুভব করো, দেখবে বিপ্লব অথবা মৃত্যুর পথ খুঁজে পাবে, দুটোতেই শান্তি , দুটোতেই মুক্তি ..........!

বিষয়: মাধবী
avertisements 2