আলজাজিরার অনুসন্ধান
শেখ হাসিনার শাসনের শেষ মুহূর্তের ভয়ংকর চিত্র ফাঁস
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ২৪ জুলাই,বৃহস্পতিবার,২০২৫ | আপডেট: ০৬:১১ এএম, ২৬ জুলাই,শনিবার,২০২৫

আলজাজিরার ইনভেস্টিগেটিভ ইউনিট নতুন গোপন কল রেকর্ড প্রকাশ করেছে। যেখানে পাওয়া গেছে, কীভাবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০২৪ সালের জুলাই অভ্যুত্থানের সময় বিক্ষোভকারীদের ওপর প্রাণঘাতী শক্তি প্রয়োগের নির্দেশ দিয়েছিলেন।
আলজাজিরার দাবি, তাদের হাতে এসেছে গোপনে রেকর্ড করা একাধিক ফোনালাপ, যেখানে শেখ হাসিনা নিজেই ছাত্রদের ওপর গুলি চালানোর ‘ওপেন অর্ডার’ দেওয়ার কথা বলেছেন। শুধু তাই নয়, হেলিকপ্টার থেকে গুলি চালানোর ঘটনাও উঠে এসেছে রেকর্ডিংয়ে। প্রামাণ্যচিত্রটিতে ২০২৪ সালের ওই আন্দোলনের সময় শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ মহলের ভেতরের আলোচনা, সিদ্ধান্ত ও দমননীতির বিস্তৃত বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে।
১৫০০ নিহত, গুলি ছোড়া হয়েছে ৩০ লাখের বেশি
তিন সপ্তাহব্যাপী চলা আন্দোলনে ১৫০০ জন নিহত হয়েছেন, ২৫ হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়েছেন এবং সরকার দলীয় নিরাপত্তা বাহিনী ৩০ লাখেরও বেশি রাউন্ড গুলি ছোড়ে বলে দাবি করেছে আলজাজিরা।
প্রকাশিত একটি ফোনালাপে, ১৮ জুলাই ২০২৪ তারিখে শেখ হাসিনা ঢাকার দক্ষিণের সাবেক মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপশকে বলেন- ‘আমার নির্দেশ তো আগেই দেওয়া হয়ে গেছে। আমি তো পুরোপুরি ওপেন অর্ডার দিয়ে দিয়েছি। এখন ওরা মারবে, যেখানে পাবে সেখানে গুলি করবে... আমি তো এতদিন থামিয়ে রেখেছিলাম। আমি ছাত্রদের নিরাপত্তা নিয়ে ভাবছিলাম।’
অন্য এক রেকর্ডিংয়ে তিনি বলেন- ‘যেখানে তারা কোনো জটলা দেখছে, সেটি ওপর থেকে- এখন তো ওপর থেকেই হচ্ছে এরই মধ্যে কয়েক জায়গায় শুরু হয়ে গেছে। শুরু হয়ে গেছে। কিছু সরেছে।’
প্রামাণ্যচিত্রে একজন চিকিৎসক নিশ্চিত করেন, বহু আন্দোলনকারী হেলিকপ্টার থেকে চালানো গুলিতে নিহত ও আহত হয়েছেন।
আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ড: ৫ বার বদলানো হয় পোস্টমর্টেম
আন্দোলনের মুখ হয়ে ওঠা ছাত্র আবু সাঈদের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। প্রামাণ্যচিত্রে দাবি করা হয়, সরকার হুমকি ও ঘুষের মাধ্যমে ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে চেয়েছিল। শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ফোনে আবু সাঈদের ময়নাতদন্ত রিপোর্ট সংগ্রহে তৎপর ছিলেন।
তদন্তে জানা গেছে, রিপোর্টটি পাঁচবার পরিবর্তন করে গুলির কোনো উল্লেখ মুছে ফেলা হয়। পরে আতঙ্কে থাকা আবু সাঈদের পরিবারকে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করানো হয়।
ইন্টারনেট বন্ধে ‘কৌশল’
আলজাজিরার দাবি, তারা ফাঁস হওয়া গোপন নথিপত্রে দেখেছে কীভাবে শেখ হাসিনার সরকার ইন্টারনেট বন্ধ করে সহিংসতার ছবি বিশ্ববাসীর কাছ থেকে গোপন রেখেছিল।
আওয়ামী লীগের বক্তব্য: রেকর্ডিং অস্বীকার
আল জাজিরাকে পাঠানো বিবৃতিতে আওয়ামী লীগ বলেছে, শেখ হাসিনা কখনও ‘প্রাণঘাতী অস্ত্র’ ব্যবহারের নির্দেশ দেননি এবং ১৮ জুলাইয়ের রেকর্ডিংকে ভুয়া বলেছে তারা। একইসঙ্গে, আবু সাঈদের পরিবারের আতঙ্ক নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করলেও, সরকার বাহিনীর অসদাচরণ তদন্তে শেখ হাসিনার আগ্রহ ছিল বলেও দাবি করেছে।
তারা আরও জানায়, ইন্টারনেট বন্ধের কারণ ছিল আন্দোলনকারীদের ‘ভাঙচুরে’ ইন্টারনেট অবকাঠামোর ক্ষতি।