যৌন মিলন নিয়ে প্রচলিত কিছু ভুল ধারনা
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ২৮ ফেব্রুয়ারী,সোমবার,২০২২ | আপডেট: ০৬:০০ পিএম, ১৯ ডিসেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
লোকটার সামনে বিয়ে। লজ্জায় কারো কাছে বলতে পারছে না। যৌন বিষয়ক পরামর্শ চায়। দীর্ঘ মেসেজের সারমর্ম হল সে নিজের উপর কনফিডেন্স পাচ্ছে না। তাই, সে এমন ওষুধ চায়, যাতে সে দীর্ঘক্ষণ ধরে ভাল পারফর্ম করতে পারে।
শীতের মৌসুমের আরেক নাম হল বিয়ের মৌসুম। এসময় প্রায় জনই এরকম সমস্যা শেয়ার করে বা পরামর্শ চায়।কিন্তু তারা আসলে যেগুলো সমস্যা হিসেবে উপস্থাপন করে, সেগুলো কোন সমস্যা না।বেশিরভাগ ছেলের ধারণা, দীর্ঘক্ষন শারীরিক সম্পর্ক করতে পারলেই সে আসল পুরুষ ও এতেই নারীদের সন্তুষ্টি। ফলে, ছেলেরা সময় বাড়ানোর দিকেই নজর বেশি দিতে চায়।
অনেকে আবার ক্ষতিকর হারবাল প্রোডাক্টও খেতে চায় এর জন্য। কিন্ত, গবেষণা মতে নারীদের সন্তুষ্টি সময়ে নয়, অর্গাজমে। বেশিক্ষণ যৌন মিলন করলেই অর্গাজম হবে, সেটা একটা ভুল ধারণা। অনেক নারীই ঘণ্টার পর পর সেক্স করলেও তাদের অর্গাজম না হওয়ার কারণে তাদের পরিপূর্ণতা আসে না। অর্গাজম নারী পুরুষ সবারই হয়।
পুরুষদের বীর্যপাত হলে যেমন অর্গাজম হয়, তেমনি নারীদেরও অর্গাজম হয়। এটি তাদের দুজনের শারীরিক সম্পর্কের পূর্ণতা নির্ধারণ করে। অর্গাজম কখনো নারী পুরুষের এক সাথে হতে পারে, আবার আগে পিছেও হতে পারে। তবে, প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী প্রতি তিন জন নারীর মধ্যে দুই জন নারীরই অর্গাজম হতে সমস্যা হয়।
আর ১০-১৫ ভাগ নারী কখনো অর্গাজমের অভিজ্ঞতা লাভ করে না সারা জীবনে। এর পেছনের মূল কারণই হল, তাদের পার্টনারদের তাড়াহুড়া ও শুধু নিজের সন্তুষ্টির জন্য চিন্তা। এমনকি, সার্ভে অনুযায়ী অনেক নারী তাদের সঙ্গীকে খুশি করার জন্য মিথ্যা অর্গাজমের অভিনয় করে, যদিও তারা শারীরিকভাবে সন্তুষ্ট হয় না।
ডাটা অনুযায়ী, শতকরা ৮৫ ভাগ নারীর শুধু সেক্স করলেই অর্গাজম হয় না। অর্গাজম এর জন্য সেক্সের পাশাপাশি তাদের ফোরপ্লের মাধ্যমে এবং বিভিন্নভাবে উদ্দীপ্ত ও উত্তেজিত হতে হয়। তাছাড়া প্রত্যেক নারীর একটা সবচেয়ে সংবেদনশীল স্পট থাকে।
গবেষণা মতে, সে স্পটকে টার্গেট করে শারীরিক সম্পর্ক শুরু করলে, নারীদের ৩-৪ মিনিটের মধ্যেই অর্গাজম হয়ে যেতে পারে। তাই, ওষুধ বা হারবাল প্রোডাক্ট খেয়ে সময় বাড়ানোর চিন্তা না করে, মূল ঘটনার দিকে নজর দেওয়া উচিত। আমার এই ডাক্তারি জীবনে এ পর্যন্ত যতগুলো যৌন সমস্যাজনিত রুগী পেয়েছি, তাদের মধ্যে কিছু কমন জিনিস লক্ষ্য করেছি।
১। বেশিরভাগ সমস্যার পেছনের কারণ হিসেবে দেখা যায় তাদের ধৈর্য কম। অর্থাৎ ফোরপ্লে না করেই সরাসরি পুরুষাঙ্গ প্রবেশ করানোর দিকে ঝোঁক বেশি।
২। সঙ্গীর সন্তুষ্টির চেয়ে নিজের সন্তুষ্টির দিকে মনোযোগ বেশি। অর্থাৎ স্ত্রীর অর্গাজমের কথা চিন্তা না করে, নিজের অর্গাজম হলেই সন্তুষ্ট থাকে।
৩। পুরুষাঙ্গের সাইজ নিয়ে উদ্বিগ্নতা।
৪। শারীরিক মিলনের সময়কাল নিয়ে চিন্তিত থাকা। শারীরিক সম্পর্কের আগে ফোর প্লে (Foreplay) অনেক জরুরী একটা বিষয়।
পর্যাপ্ত ফোর প্লে না হলে নারীদেহ শারীরিক সম্পর্কের জন্য প্রস্তুত হয় না। তখন ভ্যাজাইনা শুষ্কই থাকে। ফলে এ অবস্থায় শারীরিক সম্পর্ক করলে নারীরা স্বাভাবিকভাবেই ব্যাথা পায়। পুরুষাঙ্গের সাইজের ক্ষেত্রে বেশিরভাগ স্বাভাবিক পুরুষাঙ্গ ৪ থেকে ৭ ইঞ্চির ভেতর হয় এবং গড় ৫.১ ইঞ্চি।
এই রেঞ্জের ভেতর সবই স্বাভাবিক সাইজ। Journal of Urology মতে তিন ইঞ্চির কম হলে সেটা অস্বাভাবিক ছোট। তাই বেশিরভাগ পুরুষের পুরুষাঙ্গ একদম ঠিক রয়েছে। তাই চটি বই বা হারবাল ব্যবসায়ীদের দশ ইঞ্চি পেনিসের কথা ভুলে যান। বরং বেশি বড় পুরুষাঙ্গ নারীদের জন্য পেইনফুল হতে পারে। হাতের বাইসেপ মাংসপেশী হল মাসকুলার টিস্যু।
তাই ব্যায়াম করে বডির মাংসপেশী বাড়ানো যায়। কিন্তু মানুষের পেনিস স্পঞ্জি টিস্যু দিয়ে তৈরি। এটি বাড়ানোর উপায় নেই। সুতরাং এটা ন্যাচরালি যা হবে, সেটাই থাকবে। অন্য কোনভাবে বাড়ানো যাবে না। তাই তেল, মালিশ করে বড় করা, এক ফাইলই যথেষ্ট এগুলো সব ভুয়া কথা।
যৌনমিলনের সময়কাল নিয়ে Penn State Erie-র গবেষকরা বের করেছেন স্বাভাবিক যৌন মিলনের সময়কাল গড়ে ৩-১৩ মিনিট। এই মিনিটের সময়টা হবে পুরষাঙ্গ যোনিতে প্রবেশ করানোর পর থেকে একটানা বিরতিহীন যৌনমিলন। সাধারণত ঠিকমত সবকিছু করতে পারলে এই সময়ের মধ্যে নারী-পুরুষ উভয়রই অর্গাজম হয়ে যাবে।
তবে, এটার সময়কাল অনেকের ক্ষেত্রে বেশিও হতে পারে। কিন্তু নিয়মিতভাবে ২ মিনিটের কম হলে সেটা একটা সমস্যা যাকে premature ejaculation বা অকাল বীর্যপাত বলে। তাই পুরুষাঙ্গ অনেক বড় হতে হবে কিংবা যৌনমিলন ঘণ্টার পর ঘণ্টা করতে হবে এটা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। এগুলো শারীরিক মিলনে কোন প্রভাব ফেলেনা।
সবচেয়ে বড় কথা, সেক্সের ক্ষেত্রে ছেলেদের জন্য কনফিডেন্স বা আত্মবিশ্বাস অনেক জরুরী বিষয়। কিন্তু হারবাল কোম্পানিগুলো মানুষের এই কনফিডেন্স কমিয়ে দিয়ে সুস্থ মানুষকেও অসুস্থ করে তুলে। বিভিন্ন বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে তারা মানুষকে বোঝায় যে তোমার যা আছে তা ঠিক নেই। বিভিন্ন কু অভ্যাসে সব শেষ হয়ে গেছে।
এভাবে মানুষ আত্মবিশ্বাস আরো হারিয়ে ফেলে ও হারবালের ব্যবসা চাঙা করে তুলে। একবার এক লোক এসেছিল সমস্যা নিয়ে। কিন্তু তাকে কিছু করা লাগেনি। কাউন্সেলিং করে জাস্ট তাকে এমনি এমনি একটা ভিটামিন ওষুধ লিখে দিয়েছিলাম।
বলেছিলাম, এটি খান, দেখেন কাজ হবে। ক’দিন পর লোকটি ঠিকই এসে বলল, কাজ হচ্ছে। আসলে প্রাকৃতিকভাবে মানুষের যা আছে বা যা হবে সেটাই স্বাভাবিক। সবসময় মনে রাখবেন, আল্লাহ পাক আপনাকে একদম পরিপূর্ণ করেই তৈরি করেছেন।
লেখকঃ ড. তারেকি হাসান মেহেদী