avertisements 2

কোভিড রোগী কত দিন অন্যের জন্য বিপজ্জনক

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ২৬ জানুয়ারী, বুধবার,২০২২ | আপডেট: ০৯:৩৩ এএম, ১৯ ডিসেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪

Text

বিশ্বজুড়ে যে দ্রুত গতিতে কোাভিডের ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ছে, তাতে নতুন করে বিপদে পড়েছে বিভিন্ন দেশের সরকার। বিভিন্ন দেশে নতুন করে নানা বিধিনিষেধ চাপানো হচ্ছে।

এ যাবত করোনাভাইরাসের যেসব ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে, ওমিক্রন তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংক্রামক। ভ্যাকসিনও একে আটকাতে পারছে না। ফলে অনেক মানুষ পুনরায় আক্রান্ত হচ্ছে।

তবে কিছুটা স্বস্তি যে রোগীর সংখ্যা বেড়ে গেলেও, হাসপাতালে চাপ বাড়ছে না। প্রমাণিত হয়েছে যে যাদের কমপক্ষে দুই ডোজ ভ্যাকসিন নেয়া আছে তাদেরকে ওমিক্রনে আক্রান্ত হলেও গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়তে হচ্ছে না বা তাদের মৃত্যু ঝুঁকির মুখে পড়তে হচ্ছে না।

এ কারণে যুক্তরাষ্ট্র এবং ব্রিটেনসহ বেশ কিছু দেশে আক্রান্ত রোগীর বাধ্যতামূলক আইসোলেশন বা ঘরে আলাদা হয়ে থাকার সময়সীমা পাঁচ দিনে নামিয়ে আনা হয়েছে।

কিন্তু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বিভিন্ন দেশের সরকারকে সতর্ক করেছে যে ওমিক্রনকে কোনোভাবেই হেলাফেলা করা উচিৎ হবে না, এবং বিশেষ করে যাদের এখনো ভ্যাকসিন হয়নি তারা এই ভাইরাসে মারা যেতে পারে।

কত দিনে উপসর্গ?
কিন্তু ঠিক কিসের ভিত্তিতে, কোন ভরসায় বিভিন্ন দেশ ওমিক্রনে আক্রান্ত রোগীদের আইসোলেশনের সময় কমিয়ে দিয়েছে? এই ভ্যারিয়েন্ট সম্পর্কে আমরা কতটা জানি? আক্রান্ত হওয়ার কত দিনের মধ্যে এর উপসর্গ শুরু হয়?

যদিও ওমিক্রন নিয়ে এখনো পরীক্ষা নিরীক্ষা চলছে, কিন্তু এখন পর্যন্ত পাওয়া গবেষণার ফলাফলে দেখা গেছে আগের ভ্যরিয়েন্টগুলোর চেয়ে ওমিক্রন অপেক্ষাকৃত দুর্বল এবং এই ভাইরাস শরীরে ঢোকার পর দ্রুততর সময়ে রোগীর ভেতর উপসর্গ দেখা দেয়।

করোনাভাইরাসের আগের ভ্যারিয়েন্টগুলোর ক্ষেত্রে আক্রান্ত হওয়ার পাঁচ থেকে ছয় দিন পর রোগীর শরীরে উপসর্গ দেখা দিয়েছে। ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের ক্ষেত্রে এই সময় ছিল চার দিনের মতো। কিন্তু ওমিক্রনে আক্রান্ত রোগীর উপসর্গ দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে ফুটে উঠতে শুরু করে।

যুক্তরাষ্ট্রে ডিসেম্বরে প্রকাশিত এক গবেষণার ফলাফলে দেখা যায়, ওমিক্রনের উপসর্গ তিন দিনের মধ্যে স্পষ্ট হয়ে পড়ছে। অন্যান্য ভ্যারিয়েন্টের ক্ষেত্রে এই সময়সীমা গড়ে পাঁচ দিন।

স্পেনের লা রিওহা ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. ভিসেন্তে সোরিয়ানো বিবিসিকে বলেন, ওমিক্রন শরীরে ঢোকার একদিনের মধ্যে তা কাজ করতে শুরু করে দিতে পারে। আর, দুদিনের মধ্যে রোগী শনাক্ত করা যায়।

আক্রান্ত ব্যক্তি কত দিন ধরে অন্যকে আক্রান্ত করতে পারে?
বিজ্ঞানীরা ইতিমধ্যেই জানতে পেরেছেন যে করোনাভাইরাসের রোগীরা আক্রান্ত হওয়ার শুরুর দিকে সবচেয়ে বেশি সংক্রামক হন।

ওমিক্রনের ক্ষেত্রে, আক্রান্ত রোগীর শরীরে উপসর্গ দেখা দেয়ার এক দিন বা দুদিন আগেই সে অন্যকে আক্রান্ত করতে পারে। এরপর, উপসর্গ দেখা দেয়ার পর দুই থেকে তিনদিন পর্যন্ত সে অন্যের জন্য ঝুঁকি থাকবে।

ড সোরিয়ানো বলেন, 'আমাদের বিশ্বাস অমিক্রন ভাইরাস মাত্র পাঁচ দিনের জন্য সংক্রামক থাকে। অর্থাৎ কেউ এই ভাইরাসে আক্রান্ত বলে নিশ্চিত হওয়ার পর তিন থেকে পাঁচ দিন সে অন্য যে কাউকে সংক্রামিত করতে পারে।'

ওই বিজ্ঞানী বলেন, অমিক্রন ভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে সাত দিনের মতো থাকে। ফলে, শরীরে উপসর্গ দেখা দেয়ার পর বড়জোর সাত দিন কোনো রোগী অন্যের শরীরে সংক্রমণ ঘটাতে পারে।

'এটি মেডিসিন, গণিত নয়, সুতরাং দু্-চার দিন কম-বেশি হওয়ার সম্ভাবনা থেকেই যায়,' বলেন ড. সোরিয়ানো। তিনি বলেন, 'কারো কারো শরীরে এই ভাইরাস তিন থেকে চার দিন কর্মক্ষম থাকতে পারে, কারো শরীরে সাত দিন। তবে একটি বিষয় নিশ্চিত যে অমিক্রন আগের যেকোনো ভ্যারিয়েন্টের চেয়ে দ্রুত সংক্রমিত করছে।'

শরীরে এখনো সংক্রমণ রয়েছে কিনা সেই অনিশ্চয়তা কাটানোর সবচেয়ে ভালো পন্থা হচ্ছে অ্যান্টিজেন পরীক্ষা যেটি র‌্যাপিড ল্যাটারাল টেস্টিং নামেও পরিচিত। 'এই পরীক্ষা সস্তা এবং এটি দিয়ে সংক্রমণ শনাক্ত করা যায়,' বলেন ড. সোরিয়ানো।

কোভিডের উপসর্গ ছিল এমন কারো সাথে আমি কখন দেখা করতে পারব?
যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) তাদের সর্বশেষ প্রকাশিত গাইডলাইনে বলেছে, কোনো কোভিড পজিটিভ রোগী পাঁচ দিন ঘরে একা থাকার পর অন্যের সাথে মিশতে পারবে। তবে কিছু শর্তজুড়ে দেয়া হয়েছে :

* কোভিড টেস্টে পজিটিভ হলে কমপক্ষে পাঁচ দিন আইসোলেশনে থাকতে হবে। যেদিন শরীরে উপসর্গ দেখা দেবে, সেই দিনকে শূন্য ধরে ঐ পাঁচ দিন গণনা করতে হবে।

* পাঁচ দিন পর যদি শরীরে আর কোনো উপসর্গ না থাকে বা উপসর্গ কমতে থাকে, তাহলে বাড়ির বাইরে যাওয়া যেতে পারে।

* অন্যের সাথে দেখা করার সময় আরো কমপক্ষে পাঁচ দিন মুখে মাস্ক পরতে হবে।

* উপসর্গ দেখা দেয়ার পর কমপক্ষে ১০ দিন ভ্রমণ এড়িয়ে চলতে হবে। ষষ্ঠ এবং ১০ম দিনের মধ্যে যদি অন্যদের সঙ্গে কোনো ভ্রমণ করতেই হয়, তাহলে মুখে আঁটসাঁট মাস্ক পরতে হবে।

* শরীরে জ্বর থাকলে তা না যাওয়া পর্যন্ত আইসোলেশনে থাকতে হবে।

কোনো উপসর্গ না থকলেও কত দিন অন্যকে সংক্রামিত করতে পারি?

কোভিডে সংক্রামিত বহু মানুষের শরীরে কোনো উপসর্গ থাকে না।

ড. সোরিয়ানো বলেন, উপসর্গ না থাকলেও তাদের দেহে সংক্রমণের সময়কাল একই। ‌তিনি বলেন, 'কেন কারো কারো শরীরে কোনো উপসর্গ থাকে না, তা এখনো রহস্য, তবে, উপসর্গসহ রোগীদের মতোই তাদের দেহে একই সময় ধরে সংক্রমণ থাকে।

'শিশুদের ভেতর কোভিড নিয়ে গবেষণা হয়েছে যাদের দেহে কোনো উপসর্গ ছিলনা। কিন্তু এসব গবেষণায় দেখা গেছে উপসর্গ না থাকলেও তার দেহে ভাইরাসের পরিমাণ একজন প্রাপ্তবয়স্ক রোগীর মতোই।'

উপসর্গহীন কেউ কি অন্যকে সংক্রামিত করতে পারে?
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, কোভিডে আক্রান্ত কারো শরীরে কোনো উপসর্গ না থাকলেও তারা অন্যদের দেহে ভাইরাস সংক্রামিত করতে পারে।

উপসর্গবিহীন রোগীদের কাছ থেকে সংক্রামিত হওয়ার ঝুঁকি অপেক্ষাকৃত বেশি কারণ এরা সাধারণত আইসোলেশনে থাকে না বা সাবধানী হয় না।

আমেরিকান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের জার্নালে প্রকাশিত গবেষণায় বলা হয়েছে, প্রতি চারটি সংক্রমণের একটি হচ্ছে এমন রোগীর মাধ্যমে যাদের কোনো উপসর্গ নেই। ধারণা করা হচ্ছে ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের বেলায় এই ঘটনা বেশি করে ঘটছে।

এ কারণে, কর্তৃপক্ষ ঘরের ভেতরও ফেস মাস্ক ব্যবহারের পরামর্শ দিচ্ছে, যাতে অজান্তে কেউ অন্যের দ্বারা সংক্রামিত না হয়ে পড়ে।

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2