অভাবের তাড়নায় ঘর না থাকায় গোয়াল ঘরে জীবনযাপন বৃদ্ধার!
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১০:৩৮ পিএম, ১৯ জানুয়ারী,মঙ্গলবার,২০২১ | আপডেট: ০৭:০৯ এএম, ১৯ ডিসেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
চরম দরিদ্রতায় ঘর না থাকায় বাধ্য হয়ে গরুর সঙ্গে গোয়াল ঘরেই বসবাস করতে হচ্ছে আশিরও বেশি বয়স্ক এই বৃদ্ধাকে। অভাবের তাড়নায় অন্য ছেলেরা আলাদা করে দিয়েছেন তার বৃদ্ধা মাকে। কাঠমিস্ত্রি ছোট ছেলের কাজ জুটলে পেটে খাবার পড়ে, অন্যথায় নয়! এমন পুরিস্থিতিতে কখনো কখনো তাকে উপবাস বা একবেলা খাবার খেয়ে দিন কাটাতে হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বৃদ্ধার স্বামী সুধীর চন্দ্র সরকার অসুস্থতা জনিত কারণে প্রায় ৩০ বছর আগে মারা গিয়েছিলেন। নিজের থাকার ঘরের একদিকে বিছানা অন্যদিকে খড় বিছানো গরুর থাকার জায়গা। এভাবেই শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষা পার করছেন তিনি। তার ৩ ছেলে ও ১ মেয়ে রয়েছে। সবার বিয়ে হলেও শুধুমাত্র ছোট ছেলে এখনও অবিবাহিত। নিজের কোন জায়গা জমি নেই বললেই চলে। মাত্র তিন শতক জমিতে ভিটেমাটি। তাও অর্ধেকে থাকেন তার বড় ছেলে বাকি অংশে থাকেন শান্তি রাণী।
অন্যদিকে এই বৃদ্ধার ঘরের সাথেই কোন এক কোনে থাকেন ছোট ছেলে। স্বামী মারা যাওয়ার পর একটা সময়ে মানুষের বাড়িতে কাজ করলেও এখন বয়সের ভারে আর কুলিয়ে উঠতে পারছেন না তিনি। ফলে তার সন্তান এবং প্রতিবেশিদের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন। চলাফেরা করতে পারলেও পরিশ্রম করতে পারেন না।
গরু পালন করে দেওয়ার শর্তে মানুষের কাছ থেকে ১টি গরু পেয়েছিলেন তিনি। এখন ওই গরুটিই তার একমাত্র সম্বল। জরাজীর্ণ ঘরে পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় গরুর গোয়াল তৈরি করতে পারেননি। ফলে বাধ্য হয়ে নিজ ঘরেই গরুসহ দিন পার করছেন শান্তি রাণী।
শুক্রবার (১৫ জানুয়ারি) সরেজমিনে কথা হলে কান্না জড়িত কন্ঠে শান্তি রাণী বলেন, ‘এই মতন করি গরু নিয়াই থাকি। খাওয়া দাওয়া এই মতন। ছেলে দিনমজুরি খাটে, দিন যায় আনে খাই, না আনলে না খাই। থাকি ওই মতনে। কাইও (কেউ) যদি একমুট দেয় তাইলে খাই আর না দিলে অমনে (না খেয়ে) থাকি। ১টা গরু আদি নিছনু সেটা থাকি বাছুর হইছে। গাই কোনা ঘোরত দিছং। আর বাছুরটাকে এমন করি বড় করবাইছি (পালন করছেন)। ছইল পৈলকে বিয়া দিতে সউগ শ্যাষ হইছে। এলা বেটারা যুদা (আলাদা) খায়। এলা হামরা মা-ছোট বেটা মিলে খায়া না খায়া দিন কাটাই। কুড়িগ্রামের রাজারহাটে উপজেলার চাকিরপশার ইউনিয়নের মালিরপাড় গ্রামের বাসিন্দা তিনি।
এই বৃদ্ধার প্রতিবেশী গীতা রাণী বলেন, বৃষ্টি আসলে শান্তি রাণীর খুবই কষ্ট হয়। আমরা তাকে অনেক কষ্ট করতে দেখি। কয়েকদিন আগে বর্ষায় উল্টে পড়ে তার হাত ভেঙ্গে যায়। টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারেননি।
এ বিষয়ে রাজারহাট চাকিরপশার ইউপি সদস্য সন্তোষ চন্দ্র মোহন্ত বলেন, সরকারি বিধি মোতাবেক একই পরিবারকে অন্যদের সুযোগ দেয়ার নিয়ম নেই। তবু তার কষ্টের কথা স্থানীয় প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। রাজারহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নূরে তাসনিম শান্তি রানীর ব্যাপারে বলেন, আপনার মাধ্যমে জানতে পারলাম। খোঁজ খবর নিয়ে তাকে সরকারি সুযোগ সুবিধা দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে।