
রাশেদুল ইসলাম
জাতির পিতা স্মরণে
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ২১ আগস্ট,শনিবার,২০২১ | আপডেট: ০৩:৫৮ পিএম, ২৪ এপ্রিল,বৃহস্পতিবার,২০২৫

১৫ আগস্ট । জাতীয় শোক দিবস । আমার নিজের মনে হয়, এ দিনটি শোকের চেয়ে জাতীয়ভাবে অনেক বেশী লজ্জার । কারণ, ১৯৭৫ সালের এই দিনে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী মহান নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে তাঁর স্বজাতি বাঙালীরাই সপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যা করে । যে বাংলা এবং বাঙালিদের জন্য তিনি আজীবন সংগ্রাম করেছেন, জীবনের আরাম আয়েশ, পারিবারিক শান্তি ও মৃত্যুকে তুচ্ছ জ্ঞান করেছেন, সেই বাঙালিরাই তাঁকে হত্যা করে । নোবেল বিজয়ী উইলিবানট বলেন, ‘মুজিব হত্যার পর বাঙালিদের আর বিশ্বাস করা যায় না, যারা মুজিবকে হত্যা করেছে, তারা যেকোন জঘন্য কাজ করতে পারে’ । তাঁর এই উক্তি নিঃসন্দেহে সকল বাঙালির জন্য অনেক লজ্জার ।
এখানে বাংলাভাষা এবং বাঙালি জাতির ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ব্যাখ্যা করা যেতে পারে । সকলে জানেন ইংরেজ ১৭৫৭ থেকে ১৯৪৭ পর্যন্ত প্রায় ১৯০ বছর পরোক্ষ এবং প্রত্যক্ষভাবে ভারত শাসন করে । এই সময়ের মধ্যে ১৭৬৫ সালে দেওয়ানী লাভের পর থেকে ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহ পর্যন্ত প্রায় ৯২ বছর ইংরেজ ব্রিটিশ ইষ্ট ইনডিয়া কোম্পানির মাধ্যমে এবং ১৮৫৮ থেকে ১৯৪৭ সালেরে ১৪ আগস্ট পর্যন্ত অবশিষ্ট সময় ইংল্যান্ডের রানী নিজে ভারত শাসন করেন ।
ব্রিটিশ ইষ্ট ইনডিয়া কোম্পানি শাসনামলে, ১৮০০ সালে, কোম্পানির নবনিযুক্ত তরুণ ইংরেজ অফিসারদের প্রশিক্ষণের জন্য কোলকাতায় ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হয় । এই কলেজে কোম্পানির অফিসারদের ভারতীয় ভাষা ও সংস্কৃতি শিক্ষা দেওয়া হত । সংগত কারণেই বাংলাভাষা ও বাঙালিদের সংস্কৃতি শিক্ষা দেওয়ার জন্য ফোর্ট উইলিয়াম কলেজে বাংলা বিভাগ চালু করা হয় । কিন্তু সে সময় বাংলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান করার মত কোন শিক্ষিত বাঙালী পাওয়া যায়নি । ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের মত উঁচুবর্ণের হিন্দু সম্প্রদায়ের সকল শিক্ষিত ব্যক্তিই তখন সংস্কৃত বা অন্য কোন ভাষায় পণ্ডিত ছিলেন; বাংলা ভাষায় নয় । একইভাবে বাঙালি মুসলমানদের মধ্যে উচ্চশিক্ষিত থাকলে তাঁরাও আরবী বা ফার্সি ভাষায় সুপণ্ডিত ছিলেন; কেউই বাংলা ভাষায় শিক্ষিত ছিলেন না । শেষ পর্যন্ত খ্রিষ্ট ধর্মযাজক ইংরেজ উইলিয়াম কেরিকে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজে বাংলা বিভাগের প্রধান করা হয় (সুত্রঃ উইকিপিডিয়া) ।
বলা যায় ফোর্ট উইলিয়াম কলেজে উইলিয়াম কেরির তত্ত্বাবধানে বাংলাভাষা ও বাঙালি সংস্কৃতি চর্চা একদিকে ভারতীয়দের মধ্যে জাতীয় চেতনাবোধ জন্ম নেয়; অন্যদিকে তা বাংলার রেনেসাঁর শুভ সূচনা করে । কিন্তু সেই জাতীয় চেতনাবোধ ছিল সর্বভারতীয় জাতীয় চেতনাবোধ । এই চেতনাবোধ এমন তীব্র ছিল যে, ১৯০৫ সালে যখন বঙ্গভঙ্গ আদেশ জারি করা হয়; তখন সকল ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন বঙ্গভঙ্গ রদ করার একটি দাবিতে পরিণত হয় । বঙ্গভঙ্গ আদেশের মাধ্যমে পূর্ববাংলা এবং আসামকে নিয়ে একটি নতুন প্রদেশ গঠন করা হয় এবং ঢাকাকে প্রাদেশিক রাজধানী ঘোষণা দেওয়া হয় । পূর্ববঙ্গের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের জন্য এই আদেশ সময়োপযোগী ও এ অঞ্চলের মানুষের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ ছিল । কিন্তু সর্বভারতীয় চেতনাবোধের কারণেই পূর্ববঙ্গের সূর্যসন্তান মাস্টারদা সূর্যসেনসহ সকলেই তখন ‘বঙ্গভঙ্গ রদ’ আন্দোলনে শরীক হন ।
অন্যদিকে বাংলার রেনেসাঁ বা নবজাগরণের যে শুভ সূচনার কথা বলে হয়েছে, তা ছিল কোলকাতা কেন্দ্রিক । সে সময় বাংলার মানুষের ভাষা, সাহিত্য, ধর্ম, দর্শন ও সংস্কৃতি আলোচনার যে নবদিগন্ত উন্মোচিত হয়, তা মূলত কোলকাতা কেন্দ্রিক উঁচুবর্ণের শিক্ষিত হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে সীমিত ছিল। তখনকার ঢাকার চিত্র কিন্তু ভিন্ন ।
ঢাকার জনজীবনে প্রচণ্ডভাবে আধিপত্য বিস্তারকারী একটি পরিবার ঢাকার নবাব পরিবার । ঢাকার নবাব পরিবারের পূর্বপুরুষ কাশ্মীরের খাজা আব্দুল ওহাব এবং খাজা আবদুল্লাহ ১৮৩০ সালে বানিজ্য করতে ঢাকায় বসতি স্থাপন করেন । খাজা আবদুল্লাহর জ্যেষ্ঠ পুত্র খাজা আহসানুল্লাহ এবং দ্বিতীয় পুত্র খাজা হাফিযুল্লাহ । এই ধনাঢ্য ব্যবসায়ী খাজা পরিবার ব্রিটিশ রাজের সূর্যাস্ত আইনের আওতায় নিলাম হওয়া পূর্ববাংলার অনেক জমিদারি ক্রয় করতে সক্ষম হন । খাজা আহসানুল্লাহর পুত্র নবাব খাজা আলিমুল্লাহ ঢাকা নবাব পরিবারের প্রতিষ্ঠা করেন ১৮৪৩ সালে । ১৯৩৪ সালের এক হিসাব অনুযায়ী ঢাকা নবাব পরিবারের ঢাকাসহ পূর্ববাংলায় মোট ভূসম্পত্তির পরিমাণ ২ লক্ষ একর । ১৮৫৭ সালে সিপাহী বিদ্রোহের সময় যখন ভারতে ইংরেজ শাসনের অবস্থা অনেকটা টালটলায়মান, তখন পূর্ববাংলায় ইংরেজ শাসন সুসংহত রাখতে ঢাকার নবাব পরিবার উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে । এ কারণে দক্ষিন এশিয়ায় ইংল্যান্ডের রাণী ভিক্টোরিয়ার সরাসরি আশীর্বাদপুষ্ট একটি ক্ষমতাশালী মুসলিম পরিবারের নাম ঢাকার নবাব পরিবার (সুত্রঃ উইকিপিডিয়া) ।
বলা যায়, পূর্ববাংলার পিছিয়ে পড়া মুসলমানদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের জন্যই ঢাকার নবাব স্যার সলিমুল্লাহ সরাসরি রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন । ১৯০৪ সালের ১১ জানুয়ারি তিনি আহসান মঞ্জিলে পূর্ববাংলার হিন্দু মুসলিম নেতৃবৃন্দের সমন্বয়ে একটি সভা আহবান করেন । সভায় তিনি পূর্ববাংলাকে ভাগ করার প্রস্তাব উত্থাপন করেন । কিন্তু কংগ্রেসপন্থী কোন নেতা তাঁর প্রস্তাব সমর্থন করেননি । একই বছর ব্রিটিশ ভারতের ভাইসরয় লর্ড কার্জন পূর্ববাংলা সফরে এসে নবাবের আতিথেয়তা গ্রহন করেন । সংগত কারণেই ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গ আইন পাশের ক্ষেত্রে নবাব সলিমুল্লাহ এঁর উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে । আরও দুটি কারণে নবাব স্যার সলিমুল্লাহ পূর্ববাংলার ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন । তার একটি ১৯০৬ সালে ঢাকায় অল ইনডিয়া মুসলিম লীগ গঠন । যে মুসলিম লীগ সফলভাবে ইংরেজ শাসন মুক্ত হয়ে ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট পাকিস্তান নামক একটি নতুন রাষ্ট্র গঠন করতে সক্ষম হয় । অন্যটি হোল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা । ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় স্যার সলিমুল্লাহর অবদান বাঙালি জাতি চিরদিন স্মরণ করবে । ঢাকার নবাব পরিবারের সমালোচনার একটাই দিক থাকতে পারে । তাহল, নবাব পরিবারের মাতৃভাষা । ঢাকার নবাব পরিবারের মাতৃভাষা ছিল ফার্সি ও উর্দু (সুত্রঃ উইকিপিডিয়া)। বাংলা নয়। এর অবশ্য ঐতিহাসিক ভিন্ন পটভূমি রয়েছে ।
হিন্দু ধর্মের মত ইসলাম ধর্মে শ্রেণিবৈষম্য নেই সত্য; কিন্তু বাস্তবে ভারতের অন্যান্য অঞ্চলের ন্যায় পূর্ববাংলার মুসলমানদের মধ্যে সুস্পষ্ট শ্রেণিবৈষম্য বিদ্যমান ছিল । বর্তমানেও যে একেবারে নেই, তাও নয় । নবাব পরিবারের মত যারা কাশ্মির, মধ্যপ্রাচ্য বা অন্য কোন অঞ্চল থেকে আগত মুসলমান, তাঁরা স্থানীয় বাসিন্দাদের নিম্নজাতের মনে করতেন এবং নিজেদের আশরাফ বা উচ্চবংশীয় দাবী করতেন। তাঁদের পারিবারিক ভাষা ছিল মূলত ফার্সি এবং উর্দু । স্থানীয় ভাষা বাংলাকে তাঁরা অস্পৃশ্যদের ভাষা জ্ঞান করতেন । এই ভাষাগত বিভাজনের কারণেই নবাব পরিবারের মুসলিম লীগ নেতা খাজা নাজিমুদ্দিন কখনো আমজনতার নেতা হতে পারেননি । বলা যায়, এই ভাষাগত বিভাজনের কারণেই পটুয়াখালীর নির্বাচনে খাজা নাজিমুদ্দিন আমজনতার নেতা শেরেবাংলা একে ফজলুল হকের কাছে ১৯৩৭ সালের নির্বাচনে পরাজয় বরণ করেন । এই ভাষাগত বিভাজনের কারণেই মুসলিম লীগ কখনই বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার যোগ্য মনে করেনি। মুসলিম লীগ বাংলা ভাষাকে অস্বীকার করার কারণেই ১৯৪৮ সালে পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ গঠন করা হয়, যেখানে তৎকালীন ছাত্রনেতা শেখ মুজিবুর রহমান মুখ্য ভূমিকা পালন করেন ।
(চলবে )
১৫ আগস্ট, ২০২১ । ইস্কাটন, ঢাকা ।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবসহ যারা শহীদ হয়েছেন, তাঁদের সকলের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করছি এবং তাঁদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি । মহান আল্লাহ তাঁদের সকলকে বেহেশত নসিব করুন । আমিন ।

পলাতক, লুটেরাদের নির্লজ্জ জীবন!

এটি কি ভারতের ‘ফলস ফ্ল্যাগ’ নাটক?

দুবাইয়ে অর্থপাচারকারী ৭০ ব্যক্তি শনাক্ত, কর নথি তলব

বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৩.৩ শতাংশে নেমে আসবে

কাশ্মীরে ঘটনায় মোদিকে ড. ইউনূসের বার্তা

পদ পেতে ‘স্ত্রীকে তালাক’, ছাত্রনেতাকে অব্যাহতি

হঠাৎ সরিয়ে দেয়া হলো দুই উপদেষ্টার এপিএসকে

টিকটকে পরিচয় থেকে বিয়ে, নববধূকে ফেলে স্বামী লাপাত্তা

দেশের বাজারে বাড়ল স্বর্ণের দাম, ফের রেকর্ড

ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার ‘র’ এর ঢাকার স্টেশন চিফের নাম প্রকাশ

হঠাৎ কেন আওয়ামী লীগের মিছিল বড় হচ্ছে , ভয়াবহ পরিকল্পনা ফাঁস!

ছোটবেলার ক্রাশ, এখনো কত সুন্দর আপনি

এমন শাসক আর শাসনই আমাদের স্বপ্নময় ছিল!

ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে দ্বিতীয় দফা আলোচনায় বিএনপি

শিশুসন্তান বিক্রি করে অলংকার, মোবাইল কিনলেন নিষ্ঠুর মা!

দুনিয়ার সবচেয়ে আজব সেতু বাংলাদেশে!

গাছের সঙ্গে বাঁধা সাত শিশু কাওছারের জীবন!

কারাগারে পরিকল্পনা, তিন মাসেই কোটিপতি ২ যুবক

সিডনিতে দুই বাংলাদেশীর আকস্মিক মৃত্যু

সিডনিতে বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত তরুনী খুন

অক্সফোর্ডের করোনার ভ্যাকসিন বিরোধীতায় অস্ট্রেলিয়ার ইমাম ও আর্চবিশপ

অস্ট্রেলিয়ার কারাগারেই আরেক বন্দিকে কোপালেন সেই বাংলাদেশি ছাত্রী সোমা

কিশোরীর সাথে যৌন সম্পর্কের চেষ্টাঃ সিডনিতে বাংলাদেশী ছাত্র গ্রেপ্তার

মাস্টারশেফ অস্ট্রেলিয়ার সেরা ৪-এ বাংলাদেশি-অস্ট্রেলিয়ান কিশোয়ার

হুইপপুত্রের গোপন ব্যবসার বলি তরুণ ব্যাংকার

খোলা চুলে সিগারেট হাতে এবার নতুন বার্তা দিলেন পরীমণি

কুইন্সল্যান্ডে বারবিকিউ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষককের আকস্মিক মৃত্যু

মাছ ধরতে গিয়ে পানিতে পড়ে সিডনির দুই বাংলাদেশীর মৃত্যু

হাটে কচুর লতি বিক্রি নিয়ে মুখ খুললেন বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক
