সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল দেশে না বিদেশে?
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ৩০ জুন,সোমবার,২০২৫ | আপডেট: ০১:১৪ এএম, ১ জুলাই,মঙ্গলবার,২০২৫

দেশের বিচারব্যবস্থা ও গণতন্ত্র ধ্বংসের অন্যতম কারিগর সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক। আগস্টের পটপরিবর্তনের পর থেকে লাপাত্তা রয়েছে তিনি। পরিবার থেকে কিছু বলা হচ্ছে না। সাবেক এ বিচারপতির অবস্থান নিয়ে ধোঁয়াশা যেন কাটছেই না।
কেউ বলছেন, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর অবৈধভাবে ভারতে গেছেন। সেখানেই নিরাপদে আছেন তিনি। আবার কেউ বলছেন, ভারত থেকে তিনি ব্রিটিশ পাসপোর্ট ব্যবহার করে ইংল্যান্ডে গেছেন। সেখানে মেয়ের কাছে অবস্থান করছেন।
আবার অনেকে বলছেন, স্বাস্থ্যগত কারণে তিনি কোথাও ট্রাভেল করছেন না। দেশেই অবস্থান করছেন তিনি। আর সাবেক প্রধান বিচারপতির ছেলে আশিক উল হক জানিয়েছেন, ‘তার বাবা যেখানে থাকার, সেখানেই আছেন।’
এ বিষয়ে একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, ‘খায়রুল হকের অবস্থানের বিষয়ে বেশ কয়েক ধরণের তথ্য রয়েছে। এর মধ্যে আমরা দুই ধরণেরর তথ্যকে প্রাধান্য দিয়ে কাজ করছি।’
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মোহাম্মদ নাসিরুল ইসলাম বলেন, এবিএম খায়রুল হক দেশে আছেন নাকি বিদেশে অবস্থান করছেন এ বিষয়টি আমরা সুনিশ্চিত করে বলতে পারছি না। কারণ গত বছরের ৫ আগস্টের পর তার বৈধভাবে বিদেশ যাওয়ার কোনো তথ্য নেই। জুলাই আন্দোলনে সরকারের পতন অনুমান করে আওয়ামী লীগের কোনো কোনো নেতা ৫ আগস্টের আগেই ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করে দেশ ছেড়েছেন। মহীউদ্দীন খান আলমগীর দেশ ছেড়েছেন ১ আগস্ট। তার মতো অনেকেই ৫ আগস্টের আগে দেশে ছেড়েছেন। কিন্তু খায়রুল হকের ক্ষেত্রে ৫ আগস্টের আগমুহূর্ত বা এর পরে দেশে ছাড়ার কোনো তথ্য নেই।
গোয়েন্দা কর্মকর্তা নাসিরুল ইসলাম জানান, খায়রুল হকের আছে একাধিক পাসপোর্ট। বাংলাদেশি পাসপোর্ট ছাড়াও তার ব্রিটিশ পাসপোর্ট আছে। তিনি ওই পাসপোর্ট ব্যবহার করে কোথাও গেছেন, এমন তথ্যও পাওয়া যায়নি। তিনি বলেন, খায়রুল হক আমাদের কাছে মোস্ট ওয়ান্টেড। অনেকদিন ধরেই আমরা তাকে খুঁজছি। সাম্প্রতিক সময় তাকে ধরতে তৎপরতা জোরদার করেছি। আমাদের বেশ কয়েকটি টিম এ নিয়ে কাজ করছে। তাকে পেলেই আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।
আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ সময়ে খায়রুল হক ছিলেন আইন কমিশনের চেয়ারম্যান। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের পতন ঘটলে ১৩ আগস্ট তিনি আইন কমিশন থেকে পদত্যাগ করেন। এরপর তাকে আর প্রকাশ্যে দেখা যায়নি।
বিচারাঙ্গনে তুমুলভাবে আলোচিত-সমালোচিত এ বিচারপতির বেশ কয়েকটি রায় চরম বিতর্ক সৃষ্টি করেছিল। তিনি নিজে আওয়ামী আমলে নানাভাবে সুবিধাপ্রাপ্ত হয়েছেন। তাকে প্রধান বিচারপতি করা হয়েছিল কয়েকজন জ্যেষ্ঠ বিচারপতিকে ডিঙিয়ে। প্রধান বিচারপতি থাকাকালে ত্রাণ তহবিলের টাকায় নিজের চিকিৎসা করে সমালোচিত হয়েছিলেন তিনি। অবসর নেওয়ার কয়েকদিন আগে তিনি ত্রয়োদশ সংশোধনী মামলায় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করেন। এতে দেশে রাজনৈতিক সংঘাতের পথ উন্মুক্ত হয়। পাশাপাশি শেখ হাসিনার ভোট ডাকাতির চূড়ান্ত সুযোগ তৈরি হয়।
রাজনৈতিক একটি বিষয়কে আদালতের আওতাধীন করে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষক নন বলে রায় দিয়েছিলেন এবিএম খায়রুল হক। এছাড়া বিতর্কিত একাধিক বিচারপতিকে শপথ পড়ানো, আগাম জামিনের এখতিয়ার কেড়ে নেওয়া, খালেদা জিয়াকে ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করা এবং ক্ষমতার অপব্যবহারসহ নানা অভিযোগ তার বিরুদ্ধে।
খায়রুল হকের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যেই বেশ কয়েকটি মামলা হয়েছে। শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর গত ১৮ আগস্ট ঢাকা আইনজীবী সমিতির সদস্য ইমরুল হাসান বাদী হয়ে তার বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলায় খায়রুল হকের বিরুদ্ধে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের রায় পরিবর্তন ও জালিয়াতির অভিযোগ আনা হয়।
গত ২৮ আগস্ট দুর্নীতি ও রায় জালিয়াতির অভিযোগে তার বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় মামলা করেন আরেক আইনজীবী। এর আগে ২৫ আগস্ট খায়রুল হকের বিরুদ্ধে একই বিষয়ে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানায় আরেকটি মামলা হয়।