রাশেদুল ইসলাম
আমলনামা
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ২২ মে,শনিবার,২০২১ | আপডেট: ০৯:৫৩ এএম, ১৯ ডিসেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
৩১ বছরের বেশী চাকরি করা হোল । কিন্তু কোথায় কোথায় করেছি, কতদিন ছিলাম, ছুটি নিয়েছি কিনা, ছুটি পাওনা আছে কিনা; আমার কাছে সরকারের কিছু পাওনা আছে কিনা – ইত্যাদি ইত্যাদি হিসাবের আমলনামা এখন ঠিক করতে হচ্ছে । সামনে ফাইলের স্তূপ । অনেক ফাইলে ধুলো জমে আছে । অগোছালো মানুষ । অকাজের অনেক কাগজ ঘেঁটে, একটা কাজের কাগজ বের করা । বেশ ঝামেলার কাজ । তবে কোনটা কাজের, আর কোনটা অকাজের কাগজ তার পার্থক্য করা বেশ কঠিন ।
কয়েকটা মলিন নিউজপ্রিন্টের কাগজ পাওয়া গেল । সেখানে দেখা গেল বাচ্চাদের জন্য ছড়া লেখার চেষ্টা করা হয়েছে । একটা ভুতের ছড়াও আছে । তারমানে ভুত নিয়েও আমার একটা চিন্তা একসময় ছিল ।
যাহোক যা পাওয়া গেল বা যাবে, তা শেয়ার করতে থাকি । এ সংসার বড় বৈচিত্র্যময় ! এখানে কার কি ভালো লাগে তা বলা বেশ মুশকিল । হয়ত এই ভুতের ছড়াটিই কারো কারো ভালো লাগতে পারে !
ভুত
দাদু বলেন, ভুতেরা সব পিছন দিকে হাঁটে;
কান দিয়ে খায় খাবারগুলো, নাক দিয়ে সব কাটে।
নাকি সুরে কথা বলে, নরম সুরে গায়;
চলতে পথে দেখলে কারো, ভয় দেখিয়ে যায় ।
নখগুলো সব বাঁকা বাঁকা, ছুরির মত ধার,
বাঘের মত ছিঁড়তে পারে, বুকের পাজর হাড় ।
হাড়ে ভরা বুকের ছাতি, ঠোঁট নেই তার মুখে;
দেখলে পরে ভুতের হাসি, কাঁপন ধরে বুকে ।
১৬ নভেম্বর, ১৯৮২, সূর্যসেন হল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ।
(দুই)
আর একটি ছড়ার নাম রোবট । রোবট ছড়াটি পড়ে আমি বেশ অবাক হয়েছি । ১৯৮২ সালে রোবট নিয়ে ছড়া লেখা ? আমার নিজের কাছেই কেমন যেন বিস্ময়কর মনে হচ্ছে । রোবট নামক একটি যন্ত্র কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে মানুষের মত কাজ করতে পারে । এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের ফসল । বাংলাদেশ তৃতীয় শিল্প বিপ্লবের শুভ সূচনা করে ২০০৯ সালে । বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার আগেই ২০০৮ সালের ১২ ডিসেম্বর ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রতিশ্রুতি ঘোষণা করে । তারই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশে একটি ডিজিটাল প্লাটফর্ম গড়ে উঠেছে । বলা যায় এই ডিজিটাল প্লাটফর্মের কারনেই শুধু আমাদের মত শিক্ষিত সমাজ নয়; অতিসাধারণ মানুষও এই লকডাউনের মাঝে তাঁদের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড অনেকটা বজায় রাখতে পেরেছেন । লকডাউনের এই গুমোট আবহাওয়ার মধ্যে এই ডিজিটাল সুবিধা না থাকলে সত্যই অনেক মানুষ মানসিক বিকলাঙ্গের শিকার হত ।
আমি বলছিলাম রোবটের কথা । ১৯৮২ সালে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের কথা । তারমানে তখনকার সরকার যদি ডিজিটাল বিপ্লবের সূচনা করত, তাহলে বাংলাদেশ তথ্য প্রযুক্তিতে উন্নতির ক্ষেত্রে ভিন্ন একটা মাত্রা পেত । যাহোক ছড়াটি শেয়ার করা হোল । কারো কারো ভালো লাগতেও পারে ।
রোবট
ওমা শুনেছ কি, রোবট এবার রান্না ঘরে এলো ?
রাঁধবে নাকি তোমার মত, দুঃখ ঘুচে গেলো ?
রোবট নাকি হাত বাড়িয়ে খাবার এনে দেবে ?
ঝাঁটা হাতে ঝাড়ু দিয়ে গান শুনিয়ে যাবে ?
আমি যে মা ভয়েই মরি, ভেবে ভেবে সারা;
চুলার পাশে তুমি নেই, এ যে কেমন ধারা !
খাবার হাতে দাঁড়িয়ে আছো চোখেতে কৌতুক;
গরম ভাতের ধোঁয়া লেগে, ঘামে ভরা মুখ ।
ঘুমের আগে পাশে শুয়ে ঘুম পাড়ানি গান,
রোবট বলো কেমনে দেবে তোমার গায়ের ঘ্রাণ ?
চাইনে আমি রোবট দানব, চাইনে তাহার দান;
তোমার হাতের রান্না খাব, শুনব তোমার গান ।
১৫ নভেম্বর, ১৯৮২, সূর্যসেন হল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ।
(চলবে)