রাশেদুল ইসলাম
ঈদের নামাজ
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ১৫ মে,শনিবার,২০২১ | আপডেট: ০৯:৫১ এএম, ১৯ ডিসেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
আজ বেশ দেরীতে ঘুম ভাঙ্গে আমার । অনেকটা তাড়াহুড়া করেই ঈদের জামাত ধরতে মসজিদে হাজির হই আমি । কিন্তু মসজিদে বসে ঘড়ির দিকে তাকাতেই কেমন যেন বেকুব বনে যাই । এক ঘণ্টার বেশী সময় আমাকে অপেক্ষা করতে হবে । আসলে তাড়াহুড়া করে আমি সময়ের অনেক আগেই মসজিদে হাজির হয়েছি । তবে আমি একা নই । অনেকেই আছেন । দেখতে দেখতে মসজিদ ভরে যায় । এখন কেবল জামাতের অপেক্ষা । চারিদিকে ইংরেজীতে যাকে বলে Pin drop silence । মানে এমন নীরবতা যে, একটা পিনও যদি কোথাও পড়ে, তার শব্দ কানে আসবে । কত ধর্মভীরু এবং সহিষ্ণু এই বাঙালি মুসলমান ! রীতিমত অহংকার করার মত । অথচ এই বাঙ্গালী মুসলমান সামান্য কারণেই জ্বালাও পোড়াও আন্দোলনে মেতে ওঠে । তখন মনে হয় কি অসহিষ্ণু এই বাঙালি জাতি !
কথিত আছে বিশ্ববিজয়ী বীর মহান আলেকজেন্ডার খ্রিষ্টপূর্ব ৩২৬ অব্দে রাজা পুরুকে পরাজিত করে ভারত জয় করেন । তিনি যেখানে ঘাটি গাড়েন তার পাশেই ঝিলাম নদী । তিনি দেখেন সঙ্কীর্ণ একটি নদী । কিন্তু পরদিন পানিতে টইটুম্বুর উন্মত্ত ঝিলাম নদীকে দেখে তিনি চমকে ওঠেন । এদেশের নদীর জোয়ারভাটার খেলা তিনি জানতেন না । অবাক বিস্ময়ে তিনি তাঁর পাশে দাঁড়ানো সেনাপতির উদ্দেশে বলে ওঠেন, ‘কি বিচিত্র এই দেশ সেলুকাস’ ! তাঁর মনে হয়, যে দেশের নদীনালার গতিপ্রকৃতি ঠিক নেই, সে দেশের মানুষের মতিগতিও ঠিক থাকার কথা নয় । তাই এধরণের দেশে রাজত্ব করা তার পক্ষে সম্ভব হবে না । হয়ত এ কারণেই তিনি পরাজিত রাজা পুরুকে ক্ষমতা দিয়ে ভারত ত্যাগ করেন ।
এখন দেশ করোনা আতংকে আতংকিত । বিশেষ করে ভারতের ভয়াবহ পরিস্থিতিতে প্রতিবেশী দেশ হিসেবে আমাদের দেশের সরকারও আতংকিত । মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিজে সবাইকে ঈদ উপলক্ষে বাড়িতে না গিয়ে যার যার বর্তমান অবস্থানে থাকার অনুরোধ জানান । জীবনে বেঁচে থাকলে ভবিষ্যতে নিকট আত্মীয়দের সাথে অনেক ঈদ করা যাবে বলে তিনি উল্লেখ করেন । কিন্তু কে শোনে কার কথা ! সবাই ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের সেই দামোদর নদী পার হওয়ার গল্পটি জানেন । মা চিঠি লিখেছেন, ঈশ্বরচন্দ্রকে বাড়ি যেতে হবে । কিন্তু সামনে অশান্ত দামোদর নদী । প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ঘাটে কোন নৌকাও নেই । কিন্তু কি যায় আসে ! মায়ের ডাক ! ঈশ্বরচন্দ্রকে বাড়ি যেতেই হবে । তাই জীবন বাজি রেখে সাঁতার কেটে সেই নদী পার হন তিনি । কিন্তু সবাই তো ঈশ্বরচন্দ্র নন ! তাইতো অনেককেই এবার পদ্মা যমুনা পার হতে গিয়ে জীবন দিতে হয়েছে । অনেকে গণমানুষের পদতলে পিষ্ট হয়ে করুণভাবে জীবন হারিয়েছেন । মহান আল্লাহ্ আমাদের রক্ষা করুন । কিন্তু, তারপরও যেতে হবে । বাঙালী মুসলমান যুক্তিতর্ক বোঝেন না । এসব ক্ষেত্রে তাঁরা সত্যিই বড় বেশী অসহিষ্ণু !
সংবাদে জানা গেলো বাংলাদেশের অনেক জেলায় গতকালই পবিত্র ঈদুল ফিতরের জামাত হয়ে গেছে । তাঁদের অনেকে দীর্ঘ ৫০ বছর যাবত সৌদি আরবের মানুষের সাথে মিল রেখে এভাবেই ঈদুল ফিতরের নামাজ পড়ে আসছেন । এর কারণ কি ? নিশ্চয়ই তাঁরা মনে করেন সৌদি আরব মহানবী (সঃ) এর জন্মস্থান । সেখানকার নিয়ম মানাই উত্তম । কিন্তু ধর্ম কি কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠী মানুষের মনে করার বিষয় ? ইসলাম ধর্ম বিশ্বাসীদের জন্য হলেও, অন্ধ বিশ্বাসীদের জন্য নয় ।
পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে,
“নিশ্চয়ই আল্লাহর কাছে নিকৃষ্টতম জীব হচ্ছে সেই মূক ও বধিররা,
যারা তাদেরকে প্রদত্ত বিচারবুদ্ধি ব্যবহার করে না” (সূরা আনফাল, আয়াত ২২)।
ঈদ অনুষ্ঠানের সাথে চাঁদ দেখার একটা সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে । কিন্তু এই চাঁদ কোথাকার চাঁদ । এটা কি স্ব স্ব দেশের আকাশের চাঁদ ? না সৌদি আরবের আকাশের চাঁদ ? যদি সৌদি আরবের আকাশের চাঁদ হয়, তাহলে আমরা কেন তাঁদের অনুসরণ করছি নে । আর যদি নিজের দেশের আকাশের চাঁদ হয়, তাহলে তাঁরা কেন আমাদের অনুসরণ করছে না । এ ব্যাপারে আমাদের কি কোন অভিভাবক নেই ? যদি সৌদি আরবের চাঁদ দেখে ঈদ পালন করা ইসলাম সম্মত না হয়, তাহলে এই ধর্ম পরিপন্থী কাজের জন্য সংশ্লিষ্ট সকলেই কি পাপের ভাগী হচ্ছেন না ?
আমি ধর্ম বিষয়ে কোন বিশেষজ্ঞ ব্যক্তি নই । এ প্রশ্ন একজন সাধারণ ধর্মভীরু মুসলমানের ।
পবিত্র কোরআনে মানুষকে মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সঃ) কে অনুসরণ করার জন্য সুস্পষ্ট নির্দেশ দেওয়া হয়েছে । মহানবী (সঃ) নিজে কখনো অন্ধবিশ্বাসী ছিলেন না । নিজে যুক্তিতর্ক দিয়ে, বিচারবুদ্ধি দিয়ে যা বিশ্বাস করেছেন; তিনি তাই করেছেন । নিজের বাপ দাদা বা চৌদ্দ পুরুষ কি করেছেন, তা তিনি দেখেন নি । বিশ্বাসযোগ্য ও যুক্তিপূর্ণ কাজ তিনি করেছেন । এ কারণেই তিনি ইসলাম ধর্ম নামে নতুন একটি ধর্ম প্রবর্তন করতে পেরেছেন । তাঁর উম্মত হিসেবে আমরা কি পারিনে আমাদের নিজেদের বিচারবুদ্ধি প্রয়োগ করে তাঁর দেখানো সঠিক পথ অনুসরণ করতে ?
মহান আল্লাহ্ আমাদের হেদায়েত করুন ।
ঈদ মোবারক ।
ইস্কাটন, ঢাকা । ১৪ মে, ২০২১ ।