রাশেদুল ইসলাম
একটি মামুলী বিষয়
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ১৩ মে,বৃহস্পতিবার,২০২১ | আপডেট: ০৮:০১ পিএম, ২১ ডিসেম্বর,শনিবার,২০২৪
আমি অনেক ধরনের টেলিফোন পাই । বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ আমার সাথে কথা বলেন । আমার মোবাইল নম্বর কে, কোত্থেকে পান- জানিনে । তবে আমি টেলিফোন পাই ।
কিছুদিন আগে বাগেরহাট থেকে একজন রিক্সাওয়ালা আমাকে টেলিফোন করেন । জানান তিনি একটা ব্যাটারি চালিত রিক্সা চালান । কিন্তু ব্যাটারি শেষ হয়ে গেছে । ব্যাটারির দাম বিশ হাজার টাকা । তাঁর তিন ছেলেমেয়ে । বড় মেয়ে আমার মেয়ের মত কলেজে পড়ে । ছোট মেয়ে এসএসসি পরীক্ষা দেবে । ছেলেটা ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র । রিক্সা বন্ধ থাকায় তিনি মহাসংকটে আছেন ।
একজন রিক্সাওয়ালার মুখে আমার নিজের মেয়ের নাম শুনে আমি বেশ অবাক হই । তিনি জানান ফেসবুকের ওয়েবসাইট থেকে তিনি আমার এবং আমার পরিবার সম্বন্ধে সব জানেন । তিনি অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন । তিনি তাঁর মোবাইলে ইন্টারনেট চেক করতে পারেন ।
বাংলাদেশে একেবারে তৃণমূল পর্যায়ে ইন্টারনেট সুবিধা পৌঁছে দেওয়ার মূল কৃতিত্ব এক কথায় জনাব সজীব ওয়াজেদ জয়ের । তিনি আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি বিষয়ক মাননীয় উপদেষ্টা । মূলত তাঁর পরামর্শেই ২০১০ সালে স্থানীয় উদ্যোক্তা সৃষ্টির মাধ্যমে ইউনিয়ন পর্যায়ে ডিজিটাল সেন্টারগুলো কাজ শুরু করে । এ কারণে স্থানীয় পর্যায়ের অফিসগুলোতে যে ভাবে ইন্টারনেট ব্যবহার করা হয়, রাজধানী ঢাকার অনেক অফিস আছে এখনও তার থেকে অনেক পিছিয়ে । এই কথাটিই আমি একটা সভায় অনেকটা দুঃখ করেই বলি । যেখানে একজন রিকশাওয়ালা ওয়েবসাইট ঘেঁটে আমার সবকিছু জেনে ফোনে আমার সাহায্য চায়; সেখানে অনেক স্মার্ট কর্মকর্তা/ কর্মচারী রাজধানী ঢাকায় থেকেও এখনও অনলাইনে ঠিকমত কাজ করতে পারেন না ।
আজকাল কথা বলা মুশকিল । যে কোন কথা অনেক সময় দেশের সীমানা পার হয়ে যায় । আমার কথাটিও তাই হয় । একজন আমেরিকা প্রবাসী বাঙালি সেই রিকশাওয়ালাকে ব্যাটারি কিনে দিতে চান । তিনি ঢাকার একজনকে দায়িত্ব দেন । দায়িত্বপ্রাপ্ত ভদ্রলোক আমার কাছ থেকে রিক্সাওয়ালার টেলিফোন নম্বর নিয়ে বাগেরহাট যান ।
ভদ্রলোক রিক্সাওয়ালার পুরানো ব্যাটারি ৭ হাজার টাকায় বিক্রয় করেন । নতুন ব্যাটারি কিনতে ১৭ হাজার টাকা লাগে । তিনি রিক্সাওয়ালার নামে একটা ব্যাংক হিসাব খুলে সেখানে ১০ হাজার টাকা জমা দেন এবং রিক্সাওয়ালাকে প্রত্যেক দিন সেই হিসেবে ১০০ টাকা জমা দেওয়ার জন্য বলেন । তিনি তাঁকে বুঝিয়ে দেন যে, এ ভাবে চললে তাঁর সংসার খরচ চলার পাশাপাশি ভবিষ্যতে ব্যাটারি কেনার জন্য তাঁকে আর কারো কাছে হাত পাততে হবে না ।
আমেরিকা প্রবাসী ভদ্রলোক এবং যাকে তিনি দায়িত্ব দেন তাঁদের দুজনকেই আমি আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই । যে পদ্ধতিতে তাঁরা দান করেছেন, সব দিকে দিয়ে সেটাই আদর্শ । ইসলাম ধর্মেও ঠিক এ রকম দানের কথাই বলা হয়েছে ।
একজন ভিখারি মহানবী (সঃ) এঁর কাছে ভিক্ষা চাইলে, তিনি তাঁকে ভিক্ষা না দিয়ে তাঁর বাড়িতে বিক্রয় করার মত কি আছে জানতে চান । ভিক্ষুক জানান, তাঁর বাড়িতে একটা কম্বল ছাড়া কিছু নেই । মহানবী (সঃ) তাঁকে সেই কম্বলটিই আনতে বলেন । সেটি বিক্রয় করে তিনি ভিখারিকে একটা কুড়াল কিনে দেন এবং ভিক্ষা না করে কাঠ কেটে উপার্জন করার পরামর্শ দেন । অর্থাৎ দান এমন হবে যে, একটা দান দিয়েই যেন একজন ব্যক্তি উপার্জনক্ষম হতে পারেন । অন্যের কাছে যেন, তাঁকে আর হাত পাততে না হয় ।
আমেরিকা প্রবাসী ভদ্রলোকের ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে । কিন্তু এর থেকে অনেক কম খরচেও আমাদের সমাজে অনেক মানুষকে পুনর্বাসন করা যায় । অনেকে বাদাম বিক্রয় করেন, ঝালমুড়ি বিক্রয় করেন । বাজার থেকে তরিতরকারি কিনে, সেই একই বাজারে তা বিক্রয় করে থাকেন । এসব শ্রমজীবী মানুষকে অনেক কম খরচে স্বাবলম্বী করা যায় ।
আমরা আমাদের কপাল্গুণেই সমাজে অনেকের চেয়ে ভালো অবস্থানে আছি । আমাদের আশেপাশে যারা অভাবী আছেন, একটু আন্তরিক হলে আমরা তাঁদের জন্য অনেক কিছু করতে পারি । শুধু চাই আন্তরিকতা ও মানবিক দৃষ্টি ।
মহান আল্লাহ্ আমাদের সহায় হউন ।
ইস্কাটন, ঢাকা । ১০ মে, ২০২১ ।