
রাশেদুল ইসলাম
হজ্বে যাওয়া নিয়ে কথা (৪)
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ২১ জুন, বুধবার,২০২৩ | আপডেট: ০৮:৪০ পিএম, ১৩ মার্চ,বৃহস্পতিবার,২০২৫

(চার)
বলা হয়ে থাকে ইসলামের মূল ৫ টি ভিত্তির মধ্যে হজ্ব একটি । কলেমা, নামাজ, রোজা ও যাকাতের মত হজ্ব ইসলামের একটি রোকন বা ভিত্তি- যা প্রত্যেক সামর্থ্যবান ধর্মবিশ্বাসী মানুষের জন্য ফরজ বা অবশ্য পালনীয় । বর্তমানে আর্থিক সামর্থ্যকে হজ্ব করার প্রকৃত সামর্থ্য বিবেচনা করা হলেও, পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে-
“আর পথ অতিক্রমে সামর্থ্যবান মানুষের উপর অবশ্য কর্তব্য হচ্ছে, আল্লাহ্পাকের জন্য পবিত্র বাইতুল্লাহর হজ্ব করা”। (আয়াত ৯৭, সূরা আল ইমরান)।
অর্থাৎ, যারা দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে মক্কার ক্বাবাঘরে পৌঁছাতে সক্ষম, তাঁদের সকলের জন্য হজ্ব ফরয করা হয়েছে । বর্তমানে মক্কা তথা সৌদি আরব গমনের যে সকল বিলাসবহুল ব্যবস্থা রয়েছে, কোরআন অবতীর্ণ হওয়ার সময়কালে এরকম আরামদায়ক ব্যবস্থা ছিল না । রাস্তাঘাটও নিরাপদ ছিল না । ছোট বা বড় কাফেলার সাথে পায়ে হেঁটে বা উটের পিঠে চড়ে অনেকটা জীবনবাজি রেখে সেখানে যেতে হত । তখনকার দিনের কষ্টকর যাত্রার কথা পবিত্র কোরআনেও উল্লেখ করা হয়েছে (আয়াত ২৭, সূরা হজ্ব )।
কোরআন অবতীর্ণ হওয়ার সময়কালে কোন রাষ্ট্রের সীমানা নিয়ে কড়াকড়ি ছিল না । ফলে পাসপোর্ট বা ভিসার প্রয়োজন ছিল না । তবে পথে চলার জন্য খাদ্য, পানীয় এবং উপযুক্ত বাহনের জন্য আর্থিক সামর্থ্যের প্রয়োজন তখনও ছিল । আর প্রকৃতপক্ষে এ ধরণের সামর্থ্যবান মানুষগুলোই নিজ দেশের সমাজকে নেতৃত্ব দিয়ে থাকেন ।
হাদিসে বলা হয়েছে,
“যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তোষটির জন্য হজ্ব আদায় করে এবং হজ্বকালীন সময়ে সব রকম অশ্লীল কথা ও কাজ এবং গুনাহের কাজ থেকে বিরত থাকে, সে ব্যক্তি এমন নিষ্পাপ হয়ে ফিরে যায় - যেন সে আজই মাতৃগর্ভ থেকে জন্মগ্রহন করেছে” (বোখারী, মুসলিম)।
তারমানে ইসলাম ধর্মে সমাজের শারীরিক ও আর্থিক দিক দিয়ে সামর্থ্যবান মানুষের জন্য হজ্ব পালনের মাধ্যমে তাঁদের পাপমোচনের জন্য একটি সহজ সুযোগ রয়েছে ।
এখানে প্রশ্ন হতে পারে, কেন ?
পবিত্র কোরআনে মানুষকে সবকিছু নিজের সহজাত বিচারবুদ্ধি দিয়ে বিচার করার কথা বলা হয়েছে । পুথিপুস্তক বা অন্যের কথায় যা-ই প্রকাশ পাক না কেন, নিজের সহজাত বিচারবুদ্ধি যা বলবে, সেটাই চূড়ান্ত । এই প্রশ্নের উত্তরও আমরা আমাদের সহজাত বিচারবুদ্ধি দিয়ে বিবেচনা করতে পারি ।
কোরআনের একটি আয়াত আগেই উল্লেখ করা হয়েছে,
‘কোন জনপদ ধ্বংস করার আগে আমি সেখানকার বিত্তবান ও প্রভাবশালী লোকদের সৎকর্ম করার নির্দেশ দিই’ (আয়াত ১৬, সূরা বনি ইসরাইল)।
প্রবাদে বলা হয়ে থাকে, ‘মাছের মাথা আগে পচে’ । মাছের মাথা যদি ঠিক থাকে, তাহলে গোটা মাছটাই ঠিক আছে ধরে নেওয়া হয় । সমাজও অনেকটা মাছের মত পচনশীল । সমাজের বিত্তবান ও প্রভাবশালী মানুষগুলো যদি বিবেকবান না হয়, স্বার্থপর ও আত্মকেন্দ্রিক হয়, তাহলে সমাজে পচন ধরে । অন্যদিকে তাঁরা যদি বিবেকবান হয়, ধর্মীয় ও নৈতিক মূল্যবোধ দ্বারা পরিচালিত হয়, তাহলে সমাজ ঠিক থাকে । এ কারণে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় হজ্বের শিক্ষা মূলত সমাজের সামর্থ্যবান মানুষের জন্য একটি অত্যাবশ্যকীয় বিষয়। আমরা যদি হজ্বের ফরয ও ওয়াজিবগুলো বিশ্লেষণ করি তাহলে এ প্রশ্নের জবাব আরও পরিস্কার হতে পারে।
এখানে বলে রাখা ভালো যে, হজ্বে করণীয় বা পালনীয় প্রতিটি বিষয় প্রতীকী অর্থে ব্যবহৃত । প্রকৃত পক্ষে হজ্বের ৫ দিনের কর্মকান্ডে পবিত্র কোরআন তথা ইসলাম ধর্মের সারকথা প্রতিফলিত হয়েছে । এই সারকথার সঠিক অনুধাবন এবং হজ্ব থেকে ফিরে এসে তার যথাযথ প্রতিফলনের মধ্যেই হজ্বের সার্থকতা নিহিত ।
এখানে হজ্বের ফরয ও ওয়াজিবগুলো বিশ্লেষণ করা যেতে পারে ।
আগেই বলা হয়েছে, হজ্বের ফরয ৩ টিঃ
১। ইহরাম বাঁধাঃ
ইহরাম বাঁধা হজ্বের এক নম্বর ফরয বা হজ্ব কবুল হওয়ার প্রথম অবশ্য পালনীয় শর্ত । হজ্বের নিয়ত করে হজ্বের জন্য নির্ধারিত পোশাক পরিধান করাকে ইহরাম বাঁধা বলে । একটি হিসেব অনুযায়ী ২০০৯ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর বিভিন্ন দেশ থেকে গড়ে ২৩ লক্ষ ধর্ম বিশ্বাসী মানুষ হজ্বব্রত পালন করেছেন । তারমানে হজ্বের শর্ত অনুযায়ী তাঁরা সবাই একই পোশাকে একইভাবে ইহরাম বেঁধেছেন । একজন পুরুষের ইহরাম বাঁধতে কাফনের কাপড়ের মত সাদা সেলাইবিহীন দুটি চাদর প্রয়োজন হয় । একটি অনেকটা লুঙ্গির মত পরে, অন্যটি গায়ে চাদরের মত জড়িয়ে নিতে হয় ।
এখন প্রশ্ন, সকল হজ্বযাত্রীর জন্য একই রঙের সেলাইবিহীন কাপড় কেন ?
পবিত্র কোরআনের মর্ম অনুযায়ী আল্লাহ্ মানুষ সৃষ্টি করেছেন এবং মানুষকে তাঁর প্রতিনিধি করে দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন । আপাতদৃষ্টিতে মানুষের মধ্যে ধর্ম, বর্ণ, ভাষা বা বিভিন্নভাবে পার্থক্য পরিলক্ষিত হলেও আল্লাহ্পাক মানুষের মধ্যে কোন ভেদাভেদ করেন নি ।
পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে,‘আল্লাহ্ ইচ্ছা করলে তোমাদের এক জাতি করতে পারতেন (আয়াত ৯৩, সূরা আন-নহল) ।
তারমানে মানুষের মধ্যে ধর্ম, বর্ণ বা ভাষার পার্থক্য কোন মৌলিক ভেদাভেদ নয় । আল্লাহ্ নিজেই এই পার্থক্য রেখেছেন । এই পার্থক্য বজায় রেখেই, সকলে নিজ নিজ দায়িত্ব সচেতন হলে, সবাইকে নিয়েই পৃথিবীতে শান্তির সমাজ গড়ে তোলা সম্ভব । কিন্তু বাস্তবে মানুষের পদপদবী, ক্ষমতার দম্ভ বা কৌশলগত অবস্থানের অপব্যবহারজনিত কারণে যে বৈষম্য সৃষ্টি হয়েছে, তা আল্লাহর সৃষ্টি নয় । আল্লাহর প্রকৃত সৃষ্টির উদাহরণ এই ইহরাম বাঁধা মানুষের মধ্যে প্রকাশ পায় । ইহরাম একজন হজ্বযাত্রীকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করে, ‘তুমি আল্লাহর সৃষ্টি একজন সাধারণ মানুষ মাত্র । তোমার অহংকার করার কিছু নেই । তুমি চলেছ তোমার সৃষ্টিকর্তা মহাপ্রভুর মুখোমুখি হতে । তিনি যেভাবে চান, সেভাবেই বিনীত মস্তকে তাঁর সামনে যেতে হবে । এখানে তোমার ইচ্ছা বা ক্ষমতার কোন মূল্য নেই । সকল হজ্বযাত্রীই এক একজন সাধারণ মানুষ মাত্র’ ।
২। উকুফে আরাফা বা আরাফার ময়দানে অবস্থান করা
আরাফার ময়দানে অবস্থান করা হজ্বের দ্বিতীয় ফরয বা আবশ্যকীয় শর্ত ।
হজ্বে আরাফার ময়দানে একটি নির্দিষ্ট সময় অবস্থান করা ফরয হওয়ার বিষয়টি অনেক তাৎপর্যপূর্ণ । পবিত্র কোরআনে কিয়ামতের পর সকল পুনরুজ্জীবিত মানুষকে বিচারের জন্য হাশরের ময়দানে সমবেত হওয়ার যে চিত্র বর্ণনা করা হয়েছে, তার সাথে হজ্বে আরাফা ময়দানে হাজীদের সমবেত হওয়ার মধ্যে একটা তুলনা করা যেতে পারে ।
এক- হাশরের ময়দানে সকল পুনরুজ্জীবিত মানুষের হাজির হওয়া বাধ্যতামূলক; কিন্তু হজ্ব পালনের উদ্দেশ্যে আরাফার ময়দানে হাজির হওয়া বাধ্যতামূলক নয় । হজ্ব পালনের উদ্দেশ্যে সমাজের সামর্থ্যবান মানুষের আরাফার ময়দানে সমবেত হওয়া ঐচ্ছিক বিষয় । আরাফার ময়দানে মানুষের সেলাই বিহীন পোশাক ব্যবহারের সুযোগ থাকলেও হাশরের ময়দানে সে সুযোগ রাখা হয়নি ।
দুই- হাশরের ময়দানে হাজির হওয়া বিষয়ে কোরআনে বলা হয়েছে,
‘সেদিন সকল মানুষ এক এক করে আলাদাভাবে উপস্থিত হবে এবং পৃথিবীতে সে যা করেছে, তার প্রতিটি কাজ তাকে দেখানো হবে (আয়াত ৬, সূরা জিলজাল) । অর্থাৎ, হাশরের মাঠ এক পাক্ষিক । মানুষের নিজের দিক থেকে করার কিছু নেই । সেদিন সকল পুনুরুজ্জিবিত মানুষকে বিচারে হাজির থাকতে বাধ্য করা হবে এবং তার পৃথিবীর কৃতকর্ম, তার সামনে তুলে ধরা হবে । বিচারে কেউ জান্নাতবাসি এবং কেউ দোযখবাসি হবে (আয়াত ৬-৯, সুরা কারিয়াহ)। কারো কিছু বলার থাকবে না । কিন্তু আরাফার ময়দানে সমবেত হওয়া এক পাক্ষিক নয় । এখানে হাজির প্রত্যেক মানুষ নিজে নিজে তার কৃতকর্মের ফলাফল হিসেব করার সুযোগ পেতে পারেন । কৃতকর্ম বিচারে নিজেকে অপরাধী মনে হলে, তার জন্য আল্লাহর দরবারে ক্ষমা চাওয়া এবং সে অনুযায়ী পৃথিবীতে নতুনভাবে জীবন শুরু করার সুযোগ হজ্ব থেকে একজন পেতে পারেন ।
৯ জিলহজ্ব তারিখে যোহরের নামাজের পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত আরাফার ময়দানে অবস্থান হজ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফরয কাজ । এ সময়ে হজ্বের নির্ধারিত নিয়ম পালনসহ বেশি বেশি দোয়া করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে ।
এখানে প্রশ্ন, আরাফার ময়দানে মানুষ কিসের দোয়া করবে এবং কেন দোয়া করবে ?
(চলমান)
মহান আল্লাহ্ আমাদের হজ্বকে সহজ করে দিন এবং আমাদের হজ্ব কবুল করুন ।
দোয়া চাই সকলের ।

তরুণীকে ধর্ষণচেষ্টায় খুন হন কলেজ উপাধ্যক্ষ সাইফুর রহমান

মাগুরায় ধর্ষণের শিকার সেই শিশুটি আর নেই

সবাই এখন আমাকে ‘হেনা আপা’ বলে ডাকে: অভিনেত্রী শাবনাজ

নারীর সঙ্গে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর কর্মকর্তার মাদক সেবনের ছবি ভাইরাল

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানালেন মাহমুদউল্লাহ

১ লাখ রোহিঙ্গার সঙ্গে ইফতার করবেন প্রধান উপদেষ্টা ও জাতিসংঘ মহাসচিব

অস্ট্রেলিয়ার একটি স্কুলে মিলল ডাইনোসরের পায়ের ছাপ

সাগর-রুনি হত্যা মামলায় ফারজানা রুপাকে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি

‘মানসিক ভারসাম্যহীন’ বেশে নারীবিদ্বেষী কাণ্ড, যুবক আটক

পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূতকে বিমানবন্দর থেকেই ফেরত পাঠাল যুক্তরাষ্ট্র

রিজার্ভ বেড়ে এখন ২১.৪০ বিলিয়ন ডলার

ধর্ষণ-নিপীড়নের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছে সারাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো

নিজ বাড়িতেই পুলিশ ট্রেনিং সেন্টার, ঘুষের মাধ্যমে নিয়োগ

হুমকি দিয়ে ইরানকে আলোচনার টেবিলে আনা যাবে না

সাবেক এমপির বাড়ি দখল করা সেই নারী সমন্বয়ক গ্রেপ্তার

দুনিয়ার সবচেয়ে আজব সেতু বাংলাদেশে!

গাছের সঙ্গে বাঁধা সাত শিশু কাওছারের জীবন!

কারাগারে পরিকল্পনা, তিন মাসেই কোটিপতি ২ যুবক

সিডনিতে দুই বাংলাদেশীর আকস্মিক মৃত্যু

সিডনিতে বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত তরুনী খুন

অক্সফোর্ডের করোনার ভ্যাকসিন বিরোধীতায় অস্ট্রেলিয়ার ইমাম ও আর্চবিশপ

অস্ট্রেলিয়ার কারাগারেই আরেক বন্দিকে কোপালেন সেই বাংলাদেশি ছাত্রী সোমা

কিশোরীর সাথে যৌন সম্পর্কের চেষ্টাঃ সিডনিতে বাংলাদেশী ছাত্র গ্রেপ্তার

মাস্টারশেফ অস্ট্রেলিয়ার সেরা ৪-এ বাংলাদেশি-অস্ট্রেলিয়ান কিশোয়ার

হুইপপুত্রের গোপন ব্যবসার বলি তরুণ ব্যাংকার

খোলা চুলে সিগারেট হাতে এবার নতুন বার্তা দিলেন পরীমণি

কুইন্সল্যান্ডে বারবিকিউ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষককের আকস্মিক মৃত্যু

মাছ ধরতে গিয়ে পানিতে পড়ে সিডনির দুই বাংলাদেশীর মৃত্যু

হাটে কচুর লতি বিক্রি নিয়ে মুখ খুললেন বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক
