রাশেদুল ইসলাম
হজ্বে যাওয়া নিয়ে কথা
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ১০ জুন,শনিবার,২০২৩ | আপডেট: ১১:৪৯ এএম, ২০ ডিসেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
এবার পবিত্র হজ্বে যাওয়া হচ্ছে আমাদের, ইনশা আল্লাহ্। হজ্বে যাওয়া আমার জন্য বেশ হঠাৎ সিদ্ধান্ত । তবে আমার স্ত্রীর জন্য বিষয়টি সুপরিকল্পিত। সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ । এখন শুধু বিমান যাত্রার জন্য অপেক্ষা ।
মহান আল্লাহ্ যদি কবুল করেন, তাহলে চলতি ২০২৩ সালের ১০ জুন আমরা যাত্রা করব ইনশা আল্লাহ্ । ধর্ম আমার অতিপ্রিয় একটি বিষয় । বলা যায়, সব ধর্ম নিয়েই আমার পড়াশুনা আছে । আমি যখন সপ্তম শ্রেণির ছাত্র, তখন ইমানে মুফাসসলের একটি বাক্য,
‘আমি বিশ্বাস আনলাম সকল কিতাবের উপর, সকল নবী রাসুলের প্রতি ...’ আমাকে অন্য ধর্মগ্রন্থের প্রতি আকৃষ্ট করে । এই বাক্যের সারকথা, মুসলমান হতে গেলে শুধু কোরআন নয়, আমাকে অন্য ধর্মগ্রন্থ এবং অন্যান্য নবী রাসুলগণের প্রতিও বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে । সেই বয়সেই আমার মনে হয়েছে না বুঝে কোন কিছু বিশ্বাস করা সমীচীন নয় । অবশ্য আমরা মুসলমানরা আল্লাহর কিতাব বলতে সাধারণত কোরআন, তাওরাত, যাবুর এবং ইঞ্জিলকে বুঝে থাকি । কোরআন ব্যতীত অন্যান্য সকল ধর্ম গ্রন্থ শুধু মাত্র নিজ নিজ ধর্মীয় সম্প্রদায়ের জন্য প্রযোজ্য হলেও পবিত্র কোরআন পৃথিবীর সকল মানুষের জন্য অনুসরনীয় করা হয়েছে (আয়াত ২, সূরা বাকারা) । কোরআনের মর্ম অনুযায়ী প্রত্যেক আসমানি কিতাব সংশ্লিষ্ট নবী এবং তাঁদের উম্মতদের মাতৃভাষায় অবতীর্ণ হয়েছে (সূরা ইব্রাহীম, আয়াত ৪) । যেমন, নবী করিম (সঃ) নিজের এবং তাঁর জন্মভূমি মক্কাবাসিদের মাতৃভাষা ছিল আরবী, একারণে কোরআন আরবী ভাষায়, হযরত মুসা (রাঃ) এবং হযরত দাউদ (আঃ) এঁর মাতৃভাষা ছিল হিব্রু, একারণে তাওরাত এবং যাবুর হিব্রু ভাষায় এবং হযরত ঈশা (আঃ) তথা যীশু খ্রিষ্টের এঁর মাতৃভাষা ছিল আরামাইক , এ কারণে ইঞ্জিল তথা খ্রিষ্টানদের ধর্মগ্রন্থ বাইবেল আরামাইক ভাষায় অবতীর্ণ হয় ।
তবে পবিত্র কোরআন অন্য কোন ভাষা বিশেষ করে বাংলাভাষায় অনুবাদ করা যাবে না বলে ভুল ব্যাখ্যা প্রচলিত থাকায়, আমার ছেলেবেলা, এমনকি সত্তরের দশকেও বাংলায় কোরআন শরীফের অনুবাদ যোগাড় করা সম্ভব ছিল না । এ বিষয়ে খ্রিষ্টান মিশনারিগণ অনেক এগিয়ে । তাঁরা পৃথিবীর যে কোন দেশে খ্রিষ্ট ধর্ম প্রচারের আগে সে দেশের স্থানীয় ভাষায় বাইবেল অনুবাদ করেছেন এবং স্থানীয় ভাষায় তাঁদের ধর্ম প্রচার করেছেন । আমার ছেলেবেলায় যারা ডাকযোগে বাংলায় অনূদিত বাইবেল সংগ্রহ করেছেন, আমি তাঁদের কাছ থেকে বাংলায় বাইবেল পড়ার সুযোগ পেয়েছি । মাতৃভাষায় ধর্ম শিক্ষা দেওয়ার বিষয়ে ধর্মের বিধান অনুসরণের কারণে পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার ৩১.৭% খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী, যা সর্বাধিক । দ্বিতীয় স্থানে আছে আমাদের মুসলিম সম্প্রদায়, যা পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার ২৫% (সূত্রঃ উইকিপিডিয়া)।
পবিত্র কোরআন দেশের স্থানীয় ভাষায় অনূদিত না হওয়ার কারণে অনেকে ইসলাম ধর্মের মূল বিধান নিজে ঠিকমত না জেনে শুধু কলেমা ও নামাজ পড়া শিখেই মুসলমান হিসেবে ধর্ম চর্চা করেন । এ কারনে দিনরাতের ৫ ওয়াক্ত ফরজ নামাজে ৩৪ বার সূরা ফাতিহা পাঠ করা সত্ত্বেও অনেক নামাজী আছেন, যারা কেন সূরা ফাতিহা বারবার পড়া হয়, বা এই সূরার মাধ্যমে মহান আল্লাহর নিকট কি চাওয়া হয়, তা জানেন না । সাধারণ মানুষ কোরআনের প্রকৃত বিধান না জানার কারণে অনেকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে ইসলাম ধর্মের ভিন্নরূপ ব্যাখ্যা দেওয়ার সুযোগ নিয়ে থাকেন । এ কারণে একই ধর্ম বিষয়ে বিভিন্ন পথ ও মতের সৃষ্টি হয় । বর্তমানে অবশ্য অনেক আলেম ওলেমাগণ এ ধরণের সমস্যা নিরসনের চেষ্টা করছেন । মহান আল্লাহ্ সহায় হউন ।
ধর্ম বিষয়ে আমার পড়াশুনা একজন সাধারণ পাঠক হিসেবে । প্রত্যেক ধর্মগ্রন্থ নবী রাসুলদের মাতৃভাষায় অবতীর্ণ হওয়ার মূল কারণ কোরআনেই বলা হয়েছে । বলা হয়েছে, তাঁরা যেন তাঁদের উপর নাযিলকৃত আল্লাহর বাণী ঠিকমত বুঝতে পারেন এবং বোঝাতে পারেন । কোরআন থেকে জেনেছি, পবিত্র কোরআন নিজের সহজাত বিচারবুদ্ধি দিয়ে বুঝতে হয় । শুধু নিজের ধর্ম নয়, যে কোন বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে নিজের সহজাত বিচারবুদ্ধি প্রয়োগ করতে হয় । অন্যের কথায় বা কান কথা শুনে কোন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া ইসলাম ধর্ম সমর্থন করে না । পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে,
‘নিশ্চয়ই আল্লাহর কাছে সবচেয়ে নিকৃষ্টতম জীব হচ্ছে সে মূক ও বধিররা, যারা তাদেরকে প্রদত্ত বিচারবুদ্ধি ব্যবহার করে না’ (সূরা আনফাল, আয়াত ২২)।
আমাদের নবী হজরত মোহাম্মদ (সঃ) যদি তাঁর নিজের বাপদাদা কি করেছেন এবং সমাজ কি বলে, তাই শুনতেন, তাহলে কখনো তাঁর দ্বারা ইসলাম ধর্ম প্রবর্তন করা সম্ভব হত না । ধর্ম বিষয়ে মহানবী (সঃ) নিজের বিচারবুদ্ধি প্রয়োগ করেছেন বলেই মহান আল্লাহ্ তাঁর মাধ্যমে একটি নতুন ধর্ম মানুষকে উপহার দিয়েছেন ।
আমি বলছিলাম আমার নিজের হজ্বে যাওয়ার কথা । পবিত্র কোরআনে হজ্বে যাওয়ার বিষয়ে আল্লাহ্ বলেন, ‘আর, যাত্রাকালে সাথে পাথেয় নিয়ে যাবে’ (আয়াত ১৯৭, সূরা বাকারা)
ধর্ম আমাদের আবেগের বিষয় । আমি হজ্বের খরচ নিয়ে কথা বলতেই আমার স্ত্রী আমাকে থামিয়ে দেন । তিনি বলেন, ‘আমরা আল্লাহর মেহমান হতে চাই । তুমি খরচ নিয়ে কথা বলবা না’ । আমি একদম চুপ । পারিবারিক শান্তি বলে কথা!
পবিত্র কোরআনে আরও বলা হয়েছে,
‘‘তবে হজ্বের সময় আল্লাহর অনুগ্রহ-সম্পদ অনুসন্ধানে কোন দোষ নেই” (আয়াত ১৯৮, সূরা বাকারা) । আল্লাহর অনুগ্রহ-সম্পদ অনুসন্ধান মূলত মানুষের কল্যানেই হওয়ার কথা । কিন্তু বাস্তবে অনেকেই শতভাগ ব্যবসায়িক কারণে আল্লাহর অনুগ্রহ-সম্পদ অনুসন্ধান করে থাকেন । এই আয়াতের সুযোগ সৌদি আরব সরকারও ব্যবসায়িক স্বার্থে নিয়ে থাকেন বলে প্রতীয়মান হয় । সৌদি রাজ পরিবারে যে পরিমাণ অর্থ তাঁদের বিলাসিতার কারণে অপচয় হয়, তার সামান্য কিছু অংশ হজ্বযাত্রীদের জন্য বরাদ্দ রাখা হলে, এবারে রাশিয়া- ইউক্রেন যুদ্ধ এবং করোনা মহামারি পরবর্তী দুর্মূল্যের বিশ্ববাজারে সকল দেশের হজ্বকোটা পূরণ হওয়া ছাড়াও, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের অনেক বেশি সংখ্যক ধর্মভীরু মুসলমান প্রতিবছর সুলভে পবিত্র হজ্ব করার সুযোগ পেতেন ।
আমরা অতি সাধারণ হাজিদের কাতারে পড়ি । হজ্ব সম্পাদন বিষয়ে ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট বেসরকারি এজেন্সি আমাদের ব্রিফ করেছেন । এজেন্সির ১০৫ জন হজ্ব কাফেলার মধ্যে আমরা নিজেরা দলে ৫ জন আছি । আমাদের ভাগ্নে, যিনি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, তিনি নিজে আগে একবার হজ্ব করেছেন । ফলে তাঁকে আমাদের পারিবারিক দলের গাইডও বলা যায় । তাঁর প্রথম কথা ছিল, সরকারি কোটায় হজ্বে যাওয়া যাবে না । কারণ, হজ্বে পদ-পদবী বা সামাজিক মর্যাদা পরিচয়ে কারো কোন ধরণের সহযোগিতা নেওয়া সমীচীন নয় । আমি নিজে একজন সাধারণ ধর্মভীরু মুসলমান হজ্বযাত্রী মাত্র । তাই এসব বিষয়ে আমার নিজের কোন মতামত নেই । তবে, হজ্ব ব্রিফিং এ বলা হয়েছে মুজদালিফায় হজ্ব পালনরত সকলের সকল প্রকার দোয়া আল্লাহ্ কবুল করেন । এমনকি বান্দার হক নষ্ট করার মত অপরাধও যদি হয়- তাও সেখানে কবুল করা হয় । কিন্তু, আমার সাধারণ জ্ঞানে মনে হয়েছে, বিষয়টি পবিত্র কোরআনে বর্ণিত বিধানের পরীপন্থী ।
যেমন, পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে,
“যারা এতিমের সম্পত্তি অন্যায়ভাবে গ্রাস করে ... তারা জাহান্নামের আগুনে জ্বলবে চিরকাল (সূরা নিসা, আয়াত ১০)। এই আয়াতটি সমাজে যারা এতিমের হক নষ্ট করেন, তাঁদের বিষয়ে পবিত্র কোরআনের সুস্পষ্ট ফয়সালা বা মহান আল্লাহর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত । তাই, এ ধরণের পাপ থেকে মুজদালিফার মাঠে আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি করে মাফ পেয়ে যাওয়ার ব্যাখ্যা কোরআনের এই বিধানের সাথে সংগতিপূর্ণ মনে হয় না । যারা হজ্বকে ব্যবসা হিসেবে গ্রহন করেছেন, তাঁরা উদ্দেশ্যমূলকভাবে হাদিসটি উল্লেখ করে থাকতে পারেন, যাতে অবৈধভাবে অর্থ -সম্পদ উপার্জনকারি ব্যক্তিগণ লাখ লাখ টাকা খরচ করে হজ্বে যেতে অনেক বেশি উৎসাহিত হন । আমার এ ব্যাখ্যার সঠিকতা বিষয়ে আমি নিশ্চিত নই । কারো সঠিক ব্যাখ্যা জানা থাকলে, অনুগ্রহ করে জানাতে পারেন- আমরা কৃতজ্ঞ থাকব ।
(দুই)
৫ জুন, ২০২৩ । দাপ্তরিক হিসেব মতে ১৯৬২ সালের এই দিনে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে আমার জন্ম । সেই হিসেবে আমার বয়স ৬১ বছর পূর্ণ হয়েছে । ৬২ বছর বয়সের শুরু । স্বাধীনতা যুদ্ধের বছর ১৯৭১ সালের হিসেব অনুযায়ী ৪৭ বছর বয়সে আমার মারা যাওয়ার কথা ছিল । কারণ, তখন এদেশের মানুষের গড় আয়ু ছিল ৪৭ বছর । সেই হিসেব মতে এর মধ্যে অতিরিক্ত ১৪ বছর আমার বাঁচা হয়ে গেছে । অতিরিক্ত বাঁচলে অনেকের অনেক ধরণের সমস্যা হয় । কিন্তু আমার ক্ষেত্রে সে রকম কিছু হয়নি । আমি একটা সফল শিক্ষা জীবন পেয়েছি । পেশার ক্ষেত্রে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করাসহ সরকারি অনেক বড় বড় পদে সম্মানের সাথে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি । অবসর জীবনে বোনাস হিসেবে এই ৬১ বছর বয়স শুরুর মাসেই হজ্বে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছি, ইনশা আল্লাহ্ । যে দেশের জনসংখ্যার এখনো একটি উল্লেখযোগ্য অংশ নিজেদের দেহের অপরিহার্য পুষ্টি চাহিদা ঠিকমত পূরণ করতে পারে না, সারাজীবনে নিজ উপজেলার বাইরে যাওয়ার সুযোগ পায়না- সে রকম একটি দেশে জন্ম নিয়ে যে সব বিলাসবহুল সুযোগ সুবিধা আমার ভোগ করা হয়েছে - তার জন্য মহান আল্লাহর কাছে আমার কৃতজ্ঞতার শেষ নেই ।
আমাদের দলের ৫ জনের মধ্যে ৪ জনের এবার প্রথম হজ্বযাত্রা । তাই, হজ্ব পালন বিষয়ে আমরা এখন মোটামুটি একটি কোচিং ক্লাসে অংশ নিচ্ছি বলা যায় । আমরা ৪ জন বয়স্ক শিক্ষার্থী এবং প্রফেসর ডঃ সৈকত আমাদের প্রশিক্ষক । ডঃ সৈকত আপাদমস্তক একজন ধার্মিক মুসলমান। মীর মশাররফ হোসেনের ‘বিষাদ সিন্ধু’ গ্রন্থে বলা হয়েছে, ‘ধার্মিকের হৃদয় এক’ । তারমানে যে কোন ধর্মবিশ্বাসী প্রকৃত একজন ধার্মিক মানুষের চিন্তা ও কাজের সাথে, ভিন্ন ধর্মে বিশ্বাসী অন্য একজন প্রকৃত ধার্মিকের চিন্তা ও কাজের কোন পার্থক্য নেই । আমি নিজে এই কথা শতভাগ বিশ্বাস করি । এই কারণে যে কোন ধর্ম অবলম্বী প্রকৃত ধার্মিক ব্যক্তিকে আমি শ্রদ্ধা করি । একই কারণে, সম্পর্কে ডঃ সৈকত আমার ছেলের মত হলেও আমি তাঁকে তাঁর গভীর ধর্মবিশ্বাসের কারণে শ্রদ্ধা করি এবং এবার হজ্ব পালনের ক্ষেত্রে তাঁর দেওয়া গাইডলাইন আমরা যথাসাধ্য অনুসরণের চেষ্টা করার জন্য মনস্থির করেছি ।
দেশ বা বিদেশ যেখানেই হোক প্রাতঃভ্রমন আমার অবশ্য করণীয় একটি বিষয় এবং ২০১৫ সাল থেকে লেখালেখির কারণে একটি ল্যাপটপ আমার নিত্যসঙ্গী । কিন্তু এবার এই দুটি বিষয় ডঃ সৈকতের নিষেধাজ্ঞার মধ্যে পড়ে গেছে । তাঁর ব্যাখ্যা অনুযায়ী, হজ্ব হালকা কোন বিষয় নয় । হজ্ব নিজের ঘর থেকে শুরু, বিমানবন্দর থেকে সেলাইবিহীন কাফনের কাপড় পড়ে যাত্রা, হজ্বের ফরজ- ওয়াজিব শতভাগ মানা, গোটা সময়টা মহান আল্লাহ্ এবং তাঁর রসুলকে স্মরণ, নিজের কৃতকর্মের সুনির্দিষ্ট ত্রুটি খুঁজে বের করা, তার জন্য আল্লাহর করুণা ও ক্ষমা ভিক্ষা করা, নিজের ও অন্যের মঙ্গলের জন্য দোয়া করা – এর বাইরে একটা কাজও হজ্বের মধ্যে করা যাবে না, অন্য কোন চিন্তাও মাথায় আনা যাবে না । বিষয়টি কঠিন । তারপরও তাঁর দেওয়া গাইডলাইন মানা এবং বোঝার চেষ্টা করছি আমরা ।
ধার্মিক মানুষের ব্যাখ্যা অনেক সরল হয় । ডঃ সৈকতের ব্যাখ্যাও সরল । তাঁর হাদিস থেকে নেওয়া ব্যাখ্যা অনুযায়ী, হজ্বযাত্রী হিসেবে আমরা এখন মহাবিশ্বের সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহর মেহমান । একজন মানুষের কোটি কোটি টাকা থাকলেও, আল্লাহর মেহমান হওয়ার সুযোগ সবার হয় না । আমরা সেই বিরল সৌভাগ্যের অধিকারি । পৃথিবীর সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ হিসেবে স্বীকৃত আল্লাহর রসুল (সঃ) হযরত মোহাম্মদ (সঃ) শান্তির নগরি হিসেবে খ্যাত মদিনায় শুয়ে আছেন । এই সর্বজন শ্রদ্ধেয় প্রিয় নবী (সঃ) এঁর জন্মভূমি মক্কায় রয়েছে পৃথিবীর পবিত্রতম ঘর ক্বাবা, যা বায়তুল্লাহ বা আল্লাহর ঘর নামে পরিচিত । পৃথিবীর সকল মুসলমান এই ক্বাবাঘরের দিকে মুখ করে বা কেবলামুখী হয়ে নামাজ আদায় করেন । এই ক্বাবাঘরের সাথে রয়েছে মুসলমানদের জন্য নির্মিত প্রথম, বৃহত্তম এবং পবিত্রতম মসজিদ- মসজিদ আল হারাম । মুসলমানগণ বিশ্বাস করেন হযরত ইব্রাহিম (আঃ) এই ক্বাবাঘর এবং তৎসংলগ্ন মসজিদ আল হারাম সর্ব প্রথম নির্মাণ করেন । হজ্ব উপলক্ষে আল্লাহর ঘর ক্বাবাঘর প্রদক্ষিনসহ হজ্বের ফরয ও ওয়াজিবগুলো আদায় করার সুযোগ পাওয়া এবং মহানবী (সঃ) এঁর কর্মভূমি মদিনায় তাঁর রওজা শরিফসহ নবী করিম (সঃ) এঁর স্মৃতি বিজড়িত স্থান বিনম্র শ্রদ্ধার চোখে দেখা ও ইসলাম ধর্মের বিশালতাকে অনুভব করাসহ নিজেদের কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা প্রার্থনার যে বিরল সুযোগ আমাদের হচ্ছে, তাঁর শতভাগ সুযোগ কাজে লাগানো আমাদের একমাত্র দায়িত্ব । এ বিষয়ের একটি হাদিসও উল্লেখ করেন তিনি, যার সারকথা- যে ব্যক্তি হজ্ব করার সুযোগ পেল, কিন্তু নিজের পাপমোচন করার সুযোগ নিলোনা, সে সত্যই দুর্ভাগা । হজ্ব কবুল করার বিষয়টি স্বয়ং আল্লাহর । তবে, আমরা যথানিয়মে, যথাযথভাবে হজ্বব্রত পালন করার চেষ্টা করছি ।
মহান আল্লাহ্ আমাদের জন্য হজ্ব সহজ করে দিন এবং তা কবুল করুন ।
দোয়া চাই সকলের ।
(চলমান )
৫ জুন, ২০২৩ । ইস্কাটন গার্ডেন, ঢাকা ।