মোঃ শফিকুল আলম
অস্ট্রেলিয়া করোনা ভাইরাসকে প্রায় পুরোপুরি নিয়ন্ত্রন করতে সমর্থ্য হয়েছে
প্রকাশ: ১০:৫০ এএম, ৯ নভেম্বর,সোমবার,২০২০ | আপডেট: ০৯:৪২ পিএম, ২১ ডিসেম্বর,শনিবার,২০২৪
ওয়াশিংটন পোষ্টের প্রতিবেদন অনুযায়ী বিজ্ঞানীদের ওপর বিশ্বস্ত থেকে অস্ট্রেলিয়া করোনাভাইরাসকে প্রায় পুরোপুরি নিয়ন্ত্রন করতে সমর্থ্য হয়েছে।
সিডনি অপেরা হাউজ দর্শনার্থীদের জন্য খুলে দেয়া হয়েছে। রাগবিলীগের গ্রান্ডফাইনালে ৪০,০০০ দর্শক উপস্থিত থেকে খেলা দেখেছে। অফিস ওয়ারকার্দের কর্মস্থলে ফেরার আবেদন জানানো হয়েছে। ১৬ অক্টোবর থেকে নিউজিল্যান্ডের সাথে বর্ডার ওপেন রয়েছে। ওয়াশিংটন পোষ্টের প্রতিবেদন অনুযায়ী করোনাভাইরাস প্যানডেমিক মোকাবেলায় অস্ট্রেলিয়া সাকসেস স্টোরি তৈরী করেছে।
২ কোটি ৬০ লক্ষ মানুষের দেশ অস্ট্রেলিয়া কমিউনিটি ট্রান্সমিশন দূর করতে সমর্থ্য হয়েছে। এমনকি দ্বিতীয় ঢেউও প্রতিহত করেছে। যখন ইউরোপ এবং আমেরিকা দ্বিতীয় ঢেউ-এ সংক্রমিত। এমনকি ক্রাইসিস মোকাবেলায় ব্যর্থ হওয়াতে ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর প্রেসিডেন্সি হারাচ্ছেন!
এই দ্বীপ মহাদেশটিতে নতুন কোনো সংক্রমনের খবর নেই। গত শনিবার পর্যন্ত পুরো দেশে ৭ জনের সংক্রমনের পর নতুন কোনো কেইস নেই। সমগ্র দেশে এখন মাত্র ১৮ জন কোভিড রোগী হাসপাতালে রয়েছে। পুরো দেশে ১ জন মাত্র আইসিইউ-তে রয়েছে। অস্ট্রেলিয়ায় মেলবোর্ন কোভিড-১৯ সংক্রমনের হটবেড ছিলো। মেলবোর্ন সবেমাত্র লকডাউন থেকে বেরিয়ে আসলো। ৩০ অক্টোবর থেকে নতুন কোনো সংক্রমন নেই।
অপর দিকে কোভিড ট্রাকিং প্রজেক্ট (স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন) এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী আমেরিকায় ৫২,০৪৯ জন নতুন করে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে এবং ১০,৪৪৫ জন আইসিইউ-তে রয়েছে। আমেরিকায় প্রতিদিন নতুন সংক্রমনের সংখ্যা ((বুধবার পর্যন্ত) ১০০,০০০ ছাড়িয়েছে। মৃতের সংখ্যা ২৩৪,০০০ ছাড়িয়েছে।
মেলবোর্নবেইজড পিটার ডোহার্টি ইনস্টিটিউট ফর ইনফেকশন এন্ড ইমিউনিটি’র পরিচালক শ্যারন লেউইন বলেন যে তিনি কখনো ভাবতেই পারেননি যে মেলবোর্নে সংক্রমন জিরোতে নামিয়ে আনা যাবে। যদিও ফেব্রুয়ারীতে নেয়া পরিকল্পনানুযায়ী এগোনেতে এবং ফেডারেল গভর্নমেন্টের যথাযথ রেসপন্স থাকায় সম্ভব হয়েছে। শ্যারন নিজেই এতোটা আনন্দিত যে ননস্টপ বাইরে যাচ্ছেন, রেস্টুরেন্ট বুকিং দিচ্ছেন, চুল কাটাতে হেয়ার সেলুনে যাচ্ছেন। যখন উত্তর আমেরিকা, ইউরোপ, ইন্ডিয়া, ব্রাজিল, অন্যান্য অন্চল এবং দেশ প্রতিদিন হাজার হাজার নতুন সংক্রমন রোধে হিমশিম খাচ্ছে। ওয়াশিংটন পোষ্টের ধারনা অস্ট্রেলিয়ার রিয়াল টাইম রোড ম্যাপ ফর ডেমোক্র্যাসি প্যানডেমিক মোকাবেলায় সাকসেস স্টোরি তৈরী করতে সহায়তা করেছে।
বিশেষজ্ঞগের মতে বেশ কয়েকটি বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহন ভাইরাস নিরোধে অস্ট্রেলিয়াকে কৃতকার্য করেছে। অস্ট্রেলিয়া অতি দ্রুত এর বর্ডার টাইটলি সীল করে দিয়েছে। বিভিন্ন দেশ বিশেষ করে ইউরোপের দেশগুলো তাদের বর্ডার সীলড রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার স্বাস্থ্যব্যবস্থাপকগন দ্রুত প্রয়োজনীয় সংখ্যক উপযুক্ত জনশক্তি তৈরী করে মহামারী সংক্রমন ট্রাক ডাউন এবং সংক্রমিতদেরকে আইসোলেট করতে সক্ষম হয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার স্টেট বর্ডারগুলো দ্রুত বন্ধ করে দেয়া হয় এবং প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে একেবারে লিমিটেড মুভমেন্ট ছিলো।
সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিলো সব মতাদর্শের রাজনীতিকগন অস্ট্রেলিয়ার জনগনকে প্যানডেমিক সিরিয়াসলি নিতে সফলভাবে উৎসাহিত করতে পেরেছেন। জনগন এ-ও বুঝতে সক্ষম হয়েছে যে দেশের বৃহত্তর স্বার্থে তাদের সিভিল রাইট (স্বাভাবিক চলাচল) লিমিটেড করা হয়েছে। যদিও দু’টি বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সময়েও অস্ট্রেলিয়ার জনগনের সিভিল রাইট সীমিত করা হয়নি।
বিশ্ব স্বস্থ্যসংস্থার উপদেষ্টা, সিডনিবেইজড নিউ সাউথ ওয়েলস্ ইউনিভার্সিটির এপিডেমিওলোজিস্ট মেরিলুইস ম্যাকলস বলেন, “আমরা জনগনকে বলেছি করোনাভাইরাস মারাত্মক প্রাণঘাতি এবং তা’ নিয়ন্ত্রণে তাদের সহযোগিতা চেয়েছি। এবং জনগনকে প্রভাবিত করতে কোনো দলীয় বিভেদ ছিলোনা।”
কনজার্ভেটিভ প্রাইমিনিস্টার স্কট মরিসন স্টেট প্রিমিয়ারদের নিয়ে ন্যাশনাল কেবিনেট গঠন (পক্ষ-বিপক্ষ রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে) করে সিদ্ধান্ত গ্রহন প্রক্রিয়াকে সমন্বয় করেছেন। পলিটিকাল কনফ্লিক্ট বা মতদ্বৈদতা স্থগিত ছিলো। জনগন দেখেছে তাদের রাজনৈতিক নেতৃত্ব সম্মিলিতভাবে জনগনের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় কাজ করছে।
ম্যাকলস বলেন, “কে কাকে ভোট দিয়েছে সে বিবেচনায় নয়; সকল অস্ট্রেলিয়ান দেখেছে যে তাদের রাজনৈতিক নেতৃত্ব দলীয় দৃষ্টি ভঙ্গির উর্ধ্বে উঠে প্রকৃতপক্ষেই জনগনের জন্য এবং বৈজ্ঞানিকগনের উপদেশ অনুসরন করে কাজ করেছেন। এবং তা’ নাটকীয়ভাবে প্যানডেমিক মোকাবেলায় কার্যকর ভূমিকা রেখেছে।”
অস্ট্রেলিয়ার ন্যাশনাল রেসপন্স টীমের নেতৃত্ব দিচ্ছেন হেলথ মিনিস্টার গ্রেগ হান্ট যিনি এক সময়ে ম্যাককিনসি এন্ড কোং লিমিটেডের ম্যানেজমেন্ট কনসালট্যান্ট ছিলেন। হান্ট এবং মরিসন প্যানডেমিক মোকাবেলায় কমন এ্যাপ্রোচ গ্রহন করে স্টেট প্রিমিয়ারদের সাথে কাজ করেছেন। গনতন্ত্র এবং দেশপ্রেম তাঁদেরকে একত্র রাখতে এবং সাকসেস স্টোরি তৈরী করতে সহযোগিতা করেছে।