avertisements 2

বরগুনায় সিনেমা হলগুলো পণ্যের গুদাম

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ১৩ জানুয়ারী,বৃহস্পতিবার,২০২২ | আপডেট: ০৫:৫২ পিএম, ২২ ডিসেম্বর,রবিবার,২০২৪

Text

দর্শক হারিয়ে বরগুনার সাতটি সিনেমা হল ২০ বছর ধরে বন্ধ হয়ে আছে। মালিকেরা বলছেন, লোকসানের ভার বহন করতে না পেরে মালামাল বিক্রি করে দেনা পরিশোধ করছেন। আর ভবন বিক্রির পর ব্যবসায়ীরা পণ্যের গুদামঘর করেছেন। ১৯৮৪ সালে বরগুনায় কলেজ রোড এলাকার সিনেমা হল শ্যামলী প্রথম দর্শকদের বড় পর্দায় চলচ্চিত্র দেখার সুযোগ করে দেয়।

দর্শকদের উপচে পড়া ভিড় দেখে ১৯৯০ সালে পশ্চিম বরগুনার কাঠপট্টি এলাকায় সোনিয়া সিনেমা হল চালু করেন আরেকজন ব্যবসায়ী। টানা ১০ বছর সিনেমা হল দুটিতে অনেক দর্শক থাকলেও তাতে ভাটা পড়ে ২০০০ সালে। বছর তিনেক ধরে লোকসানের ঘানি টেনেও যখন কূল পাচ্ছিলেন না মালিকেরা, তখন সাময়িক সময়ের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল এই হল দুটো। এরপর আর আলো জ্বলেনি।

একই কারণে আমতলী উপজেলার একমাত্র লাভলু সিনে কমপ্লেক্স, পাথরঘাটা উপজেলার টিটু, সনি, রুপা ও মিতু সিনেমা হল বন্ধ হয়ে যায় ২০০২ থেকে ২০০৫ সালের মধ্যে। শ্যামলী সিনেমা হলের মালিক মো. শাহিন বলেন, ‘সিনেমা হল শুরু করার পর থেকে দর্শকেরা মাতিয়ে রাখতেন হল। দিনরাত মিলিয়ে ছয়টি শো চলত। টিকিট কেনার হিড়িক পড়ে যেত। কিন্তু বছর দশেক যেতে না যেতেই দর্শক হারাতে শুরু করলাম।

ব্যবসা তো দূরের কথা, কর্মচারীদের বেতনই দিতে পারতাম না ঠিকভাবে। প্রথমে বেশির ভাগ মানুষ পরিবারসহ এলেও একপর্যায়ে কমে গেল। ২০০১ সালের শেষের দিকে অবস্থা এমন হলো যে একজন দর্শকও আসতেন না। বাধ্য হয়ে বন্ধ করে দিলাম।’ সোনিয়া সিনেমা হলের তৎকালীন ম্যানেজার বাবুল মীর বলেন, ‘প্রথমে আমি সোনিয়া হলে ম্যানেজারের দায়িত্বে ছিলাম। সোনিয়া চালু হবার পর এখানে এলাম। ভরপুর দর্শক ছিল। কিন্তু হঠাৎ দর্শক কমতে শুরু করল।

মালিক বেতন দিতে পারতেন না। আমরা ভেবেছি, এই মনে হয় দর্শকেরা ফিরবেন হলে, কিন্তু দুই বছর অপেক্ষা করেও দর্শক না পেয়ে মালিক হল বন্ধ করে দিতে বাধ্য হন।’ পাথরঘাটার সনি সিনেমা হলের তৎকালীন ম্যানেজার সাগর কর্মকার বলেন, পাথরঘাটায় বেশি সিনেমা হল ছিল। সব বন্ধ হয়ে গেছে দর্শকের অভাবে। তাই বেছে নিতে হয়েছে ভিন্ন পেশা। একই উপজেলার টিটু সিনেমা হল বিক্রি হয়েছে। হারেছ নামের এক প্রবাসী কিনে নিয়েছেন।

পাথরঘাটার সনি, বরগুনার সনিয়া, সনি, কাকচিড়ার লাভলুসহ সব সিনেমা হলের ভবন এখন পণ্যগুদাম হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। খেলাঘর বরগুনার সভাপতি চিত্ত রঞ্জন শীল বলেন, ২০০১-২০০৫ সালে ছায়াছবিতে নোংরামি বেড়ে গিয়েছিল। তাই মানুষ পরিবারসহ হলে যেতে পারতেন না। এ ছাড়া ভালো চলচ্চিত্র না থাকার কারণে দর্শকেরা হলবিমুখ হন। পরে ছায়াছবিতে দর্শকদের রুচি ফেরাতে কেউ আর উদ্যোগ নেননি।

জনপ্রিয় অভিনেতা মীর সাব্বির বলেন, ‘একটি জেলা শহরে কোনো সিনেমা হল নেই। আমি বরগুনার সন্তান, এটা অত্যন্ত লজ্জাজনক। টাউন হলটা পর্যন্ত চালু হয়নি। বরগুনায় দুটি আসনে দুজন সাংসদ রয়েছেন। এ ছাড়া অনেক জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতা ও প্রশাসনের কর্তারা রয়েছেন। কিন্তু কেউ সিনেমা হল চালুর উদ্যোগটা নেননি।

এর দায় তাঁরা এড়াতে পারেন না। আমি একজন সংস্কৃতিকর্মী হয়েও দায় এড়াতে পারি না।’ বরগুনার শিল্পকলা একাডেমির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মো. হাবিবুর রহমান বলেন, স্থানীয় সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে আলোচনা করে হল চালুর বিষয়ে ব্যবস্থা নেবেন।

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2