আড়াই বছর একটা মরা গাছে পানি দিয়ে গেছি : শবনম ফারিয়া
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ২১ ডিসেম্বর,মঙ্গলবার,২০২১ | আপডেট: ০৭:২০ এএম, ২৩ ডিসেম্বর,সোমবার,২০২৪
ছোটপর্দার জনপ্রিয় অভিনেত্রী শবনম ফারিয়াকে নিয়ে আলোচনা যেন থামছেই না। একের পর এক খবরের শিরোনামে আসছেন তিনি। সম্প্রতি প্রকাশ্যে এসেছে তার বিবাহবিচ্ছেদের কারণ। যা সামাজিক মাধ্যমে অভিনেত্রী নিজেই জানিয়েছেন। তবে এ সবকিছু নিয়েই ‘জল ঘোলা’র মতো
অবস্থা দাঁড়িয়েছে। এ কারণে ফারিয়া বেশ কিছুদিন তার ফোন বন্ধ রেখেছেন। তবে শেষ পর্যন্ত ফেসবুকে সকল জল্পনার অবসান ঘটালেন তিনি। যেখানে তিনি পাঁচটি প্রশ্নের উত্তরের মাধ্যমে সবার কাছে পেছনের অনেক কিছুই তুলে ধরেন। যা হুবহু নিচে তুলে ধরা হলো।
এতোদিন পর এই বিষয়টা নিয়ে কথা বলা আমার জন্য বিব্রতকর। কিন্তু এতো সংবাদকর্মী ভাইদের কল কয়দিন ফোন বন্ধ করে রাখবো? তাই অনিচ্ছার সত্বেও কিছু কথা বলতে হচ্ছে…
প্রথমত আমি একটা পোস্ট শেয়ার করেছিলাম যেখানে আমি কিছুটা আবেগের বসে ব্যক্তিগত একটা অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছিলাম। শেয়ার করাটা সমস্যা না, সমস্যা হলো আমার পর্দার বাইরের জীবন এতো সাধারণ কিংবা আমার পরিবার এবং চারপাশের মানুষ আমাকে এতোই সাধারণভাবে ট্রিট করে আমি হয়তো বুঝি না যে আমিও সম্ভবত “তারকা তালিকায়” পড়ি এবং আমার একটা কথা নিয়ে আলোচনা হয়! সম্ভবত সেজন্যেই প্রায়ই কিছুটা ব্যক্তিগত কথা লিখে ফেলি।
মূল কথায় আসি – আমি আমার সেই পোষ্টে কোনোভাবেই কোন ব্যক্তিকে নিয়ে অভিযোগ করিনি। সম্পূর্ণ অভিযোগ ছিল আমাদের সমাজের দৃষ্টিভঙ্গির দিকে! ডিভোর্স জিনিসটা এতো নোংরা ভাবে না দেখলে হয়তো অনেক গুলো মেয়ের এভাবে জীবন দিতে হতো না! আমার পয়েন্ট ছিল যেদিন হাতের আঙুল ভাঙে সেদিনই আমি বুঝতে পেরেছিলাম এই বিয়ে অলরেডি টক্সিক হয়ে গেছে! কিন্তু আমরা আমাদের জীবনের প্রায় আড়াই বছর একটা মরা গাছে পানি দিয়ে গেছি শুধু মাত্র “মানুষ কি বলবে” এটা ভেবে!
দ্বিতীয়ত আমি বিবাহ্ বিচ্ছেদের পরে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি আমার জীবনে যিনি ছিলেন তাকে সম্মান দেখাতে। যদিও ওনার প্রতি আমার অভিযোগ রাগ ক্ষোভ কোনটারই অভাব নেই। আমি শিওর ওনারও একই অনূভুতি! আমার বিশ্বাস তবুও উনিও সর্বোচ্চ সম্মান দেখাতেই চেষ্টা করেছেন!
এখন আঙুল ভাঙার বিষয়টা , এটা অবশ্যই সত্যি, কিন্তু এমন না যে বিষয়টা ও ইচ্ছে করেই করেছে! রাগারাগীর এক পর্যায় হাতাহাতি হয়, তারপর আমার আঙুল ভেঙে যায়। তাহলে এখন উনি অস্বীকার কেন করছেন? হটাৎ এমন পাবলিক প্রতিক্রিয়া হলে আপনি কি করবেন? আপনিও ডিনাই করবেন! তৃতীয়ত, নিউজে আমার নামের সাথে যার নাম বারবার আসছে তিনি বিষয়টা অস্বীকার করছেন; আর এতো বছর পর যেহেতু কথা উঠছে তখন বিষয়টা প্রমাণ করা যথেষ্ট কষ্টসাধ্য। কিন্তু হাসপাতালের সিসি ক্যামেরা ফুটেজ কিংবা বিল কার কার্ড থেকে পরিশোধ হয়েছে সেগুলো বের করার সুযোগ এখনো আছে। কিন্তু যেহেতু সেই ব্যক্তির মা কল করলে আমি তাকে এখনও “মা” ছাড়া অন্য কিছু ডাকতে পারি না, তাই মা এবং আমার নিজের সন্মান রক্ষার্থে বিষয়টা এখানেই শেষ করতে চাই!
পুরোনো বিষয় ঘেটে কিচ্ছু পাবো না আমরা দুজন। এই বিষয় নিয়ে আলোচনা করার ইচ্ছা থাকলে বিচ্ছেদের সময়ই আমি এতো প্রেম না দেখিয়ে এসবই বলতাম। হয়তো তখন আমি যেসব সমালোচনা হজম করেছি তা করতে হতো না। লাভটা আমারই হতো। চতুর্থত, কোথায় যেন সংবাদ দেখলাম এতোদিন পর জানা গেল কি কারনে বিচ্ছেদ হয়েছে আমাদের, এই ঘটনাই নাকি কারন। বুঝলাম এখনও সবার খুব জানার আগ্রহ আমাদের বিচ্ছেদের কারণ কি!
আমাদের আসলে সে অর্থে কখনো সংসারই করা হয়নি। কারণ আমাদের নিজেদের কখনো কোন বাসা ছিল না! ওদের তিন বেডের বাসায় ওর মা, ওরা চার ভাই, ভাবি, ভাতিজি এবং দুইজন বুয়া থাকতো! সেখানে আমার থাকার জন্য যে ঘর বরাদ্দ ছিল সেটার সাথে এটাচড কোন ওয়াশরুম ছিল না। ওর মায়ের বেডরুমে ৭ জনের সাথের ওয়াশ রুম শেয়ার করতে হতো। তাই আমি খুব বেশিদিন সেই বাসায় থাকিনি। আমরা তিন বোন, এতো ছেলেদের ঘরে এডযাস্ট করতে সমস্যা হতো।
তাছাড়া আমার শুটিংয়ের জন্য অনেক কস্টিউম/প্রপ্স অনেক কিছু থাকে। আলাদা একটা কস্টিউম রুমই লাগে! তাছাড়া আমার মায়ের বাসা আর তাদের বাসা কাছাকাছি হওয়ায় এবং দুজনেরই বাবা না থাকায় আমরা দুজন দুজনের মার সাথে থাকতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতাম! এর ফলে স্বাভাবিক ম্যারিড কাপলের মধ্যে যেসব ইন্টিমেসি থাকে তা আমাদের মধ্যে ছিল না! মূলত এই কারণেই আমরা আলাদা হওয়ার সিদ্ধান্তে আসি। অবশ্যই এর বাইরে আরও হাজারটা কারনতো আছেই! সেগুলোও পাবলিক প্লাটফর্মে লিখে আরও আলোচনা চাই না।
পঞ্চমত এতোদিন পরে এ কথা উঠলো কেন? উত্তর “আমার দোষ”! আমি অতি আবেগি হয়ে ঘরের কথা পরকে জানিয়েছি। এভাবে একটা পাবলিক প্ল্যাটফর্মে লেখার আগে এইটার ফলাফলগুলো আমার ভাবার দরকার ছিল! কিন্তু একটা বিষয় না বললেই নয়, অনেকের মন্তব্য আমার সেই বিচারপতির মতো লাগছে যিনি বলেছিলেন রেপ হওয়ার তিনদিন পর কেন কেইস করেছে? আরও আগে করা উচিত ছিল। তবে এ বিষয়টা নিয়ে তখনও আমি আমার ব্যক্তিগত ফেসবুকে লিখেছিলাম যেখানে আমাদের দুই পরিবারের সদস্যরাই ছিল। কিন্তু পাবলিক প্রোফাইলে এসব লিখলে কি হয় তা তো এবার দেখলামই! জোর করে একজন ভিলেন বানাতে হবেই! অথচ এখান থেকে শিক্ষনীয় হতে পারতো, আমাদের মতো যেন কেউ জীবনের মুল্যবান সময় এভাবে নষ্ট না করে।
এবার আশা করি সবাই সবার সকল প্রশ্নের উত্তর পেয়েছেন। যেহেতু শুরুটা আমাকে দিয়ে শেষটাও আমি টানতে চাই। সবার দোয়া চাই। আমাদের প্রতি একটু সহনশীল হোন। আমরা দুইজনই আমাদের জীবনে অনেকখানি এগিয়ে নিয়েছি। দুজনই নতুন করে জীবন শুরু করার মানসিকতার মধ্য যাচ্ছি! আমার কোন বিষয়ে দয়া করে ওই ভদ্রলোককে টানবেন না! শুনেছি উনি এখন ভাল আছেন। শান্তিমতো ঘুমাচ্ছেন। ওনাকে শান্তিমতো ঘুমাতে দেন।
প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালে ফেসবুকের মাধ্যমে হারুন অর রশিদ অপুর সঙ্গে বন্ধুত্ব হয় শবনম ফারিয়ার। এরপর ফেসবুকে কথা বলতে বলতে তাদের দুজনের মধ্যে বন্ধুত্বের বন্ধন মজবুত হয়। এরপর দুই পরিবারের সম্মতিতে ২০১৮ সালে আংটি বদল হয় তাদের। গাঁটছড়া বাঁধেন ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে। তবে এই বিয়ে বেশি দিন টিকেনি। বিয়ের দুই বছর পার হওয়ার আগেই ছাড়াছাড়ি হয় তাদের।