‘ভ্রান্ত’ আতঙ্কে বাড়ছে না মোবাইল টাওয়ার, সেবাবঞ্চিত গ্রাহকরা
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ৫ মে,রবিবার,২০২৪ | আপডেট: ০২:৫৬ পিএম, ২৫ ডিসেম্বর,
বুধবার,২০২৪
মোবাইল নেটওয়ার্ক টাওয়ার থেকে মানবদেহ এবং পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর রেডিয়েশন নির্গত হয়, এমন ধারণা বেশ প্রচলিত। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও), জাতিসংঘের ইন্টারন্যাশনাল টেলিযোগাযোগ ইউনিয়ন (আইটিইউ) এবং ইন্টারন্যাশনাল কমিশন অন নন-আয়োনাইজিং রেডিয়েশন প্রটেকশনের (আইসিএনআইআরপি) মতো আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো বলছে, মানব শরীর বা পরিবেশে মোবাইল টাওয়ারের রেডিয়েশনের ক্ষতিকর প্রভাব নেই বললেই চলে। পাশাপাশি ক্ষতি প্রমাণ করে এমন কোনো প্রমিত গবেষণাও নেই। তবু ভ্রান্ত আতঙ্কে দেশজুড়ে চাহিদা অনুযায়ী বাড়ছে না মোবাইল টাওয়ারের সংখ্যা। ফলে একদিকে মোবাইল টেলিকম অপারেটরগুলো যেমন ব্যবসায়িকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তেমনি মানসম্মত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন গ্রাহকরা। বাংলাদেশের টেলিকম খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বছরে ৫০০ নতুন টাওয়ার প্রয়োজন হলেও স্থাপন করা যাচ্ছে মাত্র ৩০টি।
টাওয়ারের রেডিয়েশন থেকে মানবদেহে ক্যান্সার, ফসলি জমি নষ্ট হওয়া, এমনকি গাছপালা মরে যাওয়ার মতো প্রচলিত ধারণা আছে সাধারণ মানুষের মধ্যে। তবে এগুলোকে সমর্থনযোগ্য কোনো গবেষণা নেই। গ্রামীণফোনের নেটওয়ার্ক সেবা বিভাগের প্রধান এ কে এম আল-আমিন বলেন, রেডিয়েশন মূলত দুই ধরনের, আয়োনাইজিং এবং নন-আয়োনাইজিং। দুটি একে অন্যের চেয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন। মানবদেহে কোষের গঠন ভাঙার সক্ষমতা রয়েছে আয়োনাইজিং রেডিয়েশনের, যা মানুষের জন্য ক্ষতিকর। এক্স-রে, গামা রশ্মি এবং ডায়াগনস্টিক রেডিয়েশন হলো আয়োনাইজিং রেডিয়েশনের উদাহরণ। অন্যদিকে, রেডিও তরঙ্গ, মাইক্রোওয়েভ, মোবাইল যোগাযোগ, ইনফ্রারেড আলো এবং দৃশ্যমান আলো থেকে নির্গত রেডিয়েশন হলো নন-আয়োনাইজিং, যার শক্তির মাত্রা অনেক কম। এটি মানবদেহের কোষের কাঠামো ভাঙতে অক্ষম। মোবাইল টাওয়ার থেকে ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ফিল্ড রেডিয়েশন (ইএমএফ) নির্গত হয়, যা একটি নন-আয়োনাইজিং রেডিয়েশন। সুতরাং টাওয়ার থেকে নির্গত রেডিয়েশনে মানবদেহের ক্ষতি হয় এ কথা ভিত্তিহীন।
ডব্লিউএইচও ২০২০ সালে এক বিবৃতিতে জানায়, সে সময় পর্যন্ত অনেক গবেষণার পরও তারবিহীন প্রযুক্তির সংস্পর্শে মানবদেহে কোনো নেতিবাচক প্রভাব পাওয়া যায়নি। সংস্থাটি আরও বলছে, রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি মানবদেহে ক্ষতিকর প্রভাব রাখলে সবার প্রথমে ত্বকের টিস্যুর তাপমাত্রা বাড়বে। কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে, নন-আয়োনাইজিং রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি ত্বকের তাপমাত্রা যতটুকু বাড়ায় সেটি ধর্তব্যের বাইরে।
এদিকে, গত বছরের অক্টোবরে রংপুর ও গাইবান্ধা জেলায় বিটিআরসি পরিচালিত বিকিরণ পরীক্ষা বিশ্লেষণে দেখা যায়, রংপুর সিটি করপোরেশন এবং তৎসংলগ্ন এলাকায় প্রতি বর্গমিটারে বিকিরণের মাত্রা ছিল ০ দশমিক ০০৫৮ ওয়াট; যা নিরাপদ সীমার ০ দশমিক ২৮ শতাংশ)। সর্বোচ্চ বিকিরণ পাওয়া যায় জাহাজ কোম্পানি মোড় এলাকায়; প্রতি বর্গমিটারে ০ দশমিক ০৭৭ ওয়াট, যা নির্ধারিত সীমার মাত্র ৩ দশমিক ৬৫ শতাংশ।
রবি আজিয়াটা লিমিটেডের চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার সাহেদ আলম কালবেলাকে বলেন, এ মুহূর্তে ঢাকাতেই রবির অন্তত ৩০০ টাওয়ার দরকার, কিন্তু পর্যাপ্ত স্থান পাচ্ছি না। ঢাকা ও চট্টগ্রামের বাইরের এলাকাগুলোতে কিছু স্থান পাচ্ছি। মহানগরীগুলোতে দালানের সংখ্যা বেশি, আর সেগুলোতে এখন ফ্ল্যাটভিত্তিক মালিকানা রয়েছে। একটা ভবনে ১০ জন ফ্ল্যাট মালিকের মধ্যে চারজন হয়তো টাওয়ার বসানোর পক্ষে থাকেন, বাকিরা দ্বিমত করেন। আবার বাংলাদেশে ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে বিল্ডিং কোডে কোথাও টাওয়ার সহায়ক কোনো বিধান নেই। বিশ্বের উন্নত দেশে ভবন নির্মাণে টাওয়ারের জন্য স্থান রাখতে হয়।
মোবাইল অপারেটরদের সংগঠন অ্যামটব বলছে, স্থানভেদে ৫০০টি টাওয়ারের চাহিদা থাকলেও স্থাপন করা যায় ৩০টি। সংগঠনটির মহাসচিব লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) মোহাম্মদ জুলফিকার বলেন, টাওয়ারের সংখ্যা নির্ভর করে গ্রাহক চাহিদা, নতুন প্রযুক্তির অবমুক্তি, ব্যবসা সম্প্রসারণের প্রয়োজনীয়তাসহ অন্যান্য বিবেচনার ওপর। যদি ফাইভজি প্রযুক্তিতে যাই তাহলে এখনকার চেয়ে বহুগুণ বেশি সাইট বা টাওয়ারের প্রয়োজনীয়তা থাকবে। তিনি বলেন, মোবাইল টাওয়ারের রেডিয়েশন নিয়ে কিছু মানুষের অমূলক ভীতি রয়েছে।
টাওয়ারের রেডিয়েশন নিয়ে ভ্রান্ত ধারণা পরিহারের আহ্বান জানিয়ে বিটিআরসির কমিশনার (স্পেকট্রাম) প্রকৌশলী শেখ রিয়াজ আহমেদ বলেন, মোবাইল টাওয়ারের রেডিয়েশনের ক্ষতিকারক দিক নেই। বিভিন্ন সময় পরীক্ষা করে কখনো ক্ষতিকর মাত্রার বিকিরণ পাওয়া যায়নি। ভবিষ্যতেও বিষয়টি তদারকির মধ্যে থাকবে।