avertisements 2

বিজয়ের উষালগ্নে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট

মেজর নাসির উদ্দিন আহাম্মেদ (অবঃ) পি এইচ ডি
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ১৬ ডিসেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২১ | আপডেট: ০২:৫০ এএম, ২৪ এপ্রিল, বুধবার,২০২৪

Text

পৃথক জাতিসত্তার অহংকার নিয়ে পৃথিবীর বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার ক্ষেত্রে সেই জাতির নামে পরিচিত সেনাবাহিনীর একটি পৃথক অংশ বা রেজিমেন্ট থাকার প্রচলন বহু পুরানো। উদাহরণ হিসাবে বলা যায় ১৭৫৭ সালে বাংলা-বিহার উড়িষ্যার ক্ষমতা নবাব সিরাজ উদ দৌলার হাত থেকে বৃটিশদের হাতে চলে যাওয়ার ৪ বছর পর অর্থাৎ ১৭৬১ সালে ভারতের পাঞ্জাবদের নিয়ে বৃটিশ আর্মিতে গড়া হয় পাঞ্জাব রেজিমেন্ট। একই ভাবে ১৭৭৮ সালে রাজপুতদের দিয়ে গড়ে উঠে রাজপুত রেজিমেন্ট। ১৮১৫ সালে নেপালের গুর্খাদের নিয়ে গড়া গুর্খা রেজিমেন্ট আজও টিকে আছে খোদ বৃটিশ ভূখন্ডে।১৯৪৭ সালে বৃটিশ শাসনের অবসান হলে বর্তমান বাংলাদেশ পূর্ব পাকিস্তান নামে বৃহত্তর পাকিস্তানের একটি প্রদেশে পরিনত হয়। কিন্তু বাঙ্গালীদের পৃথক জাতি হিসাবে সম্মান করা তথা বাঙ্গালী জাতি সত্তাকে মেনে নেয়ার মন মানষিকতার চরম ঘাটতি ছিল পাকিস্তানিদের মাঝে। এমনি এক প্রেক্ষাপটে কুমিল্লার কৃতিসন্তান বৃটিশ সেনাবাহিনীর তৎকালিন মেজর আব্দুল গণি বাঙ্গালী সৈন্যদের প্রাধন্যে দিয়ে “ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট” নামে পৃথক স্বাতন্ত্রে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একটি আংশ গড়ার সংগ্রাম শুরু করেন। ১৯৪৮ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারি তাঁর সংগ্রাম সাফল্যের মূখ দেখে “ফাস্ট ব্যাটালিয়ান দি ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট” জন্ম নেওয়ার মধ্য দিয়ে। ঢাকার কূর্মিটোলার একটি পেয়ারা বাগানে এই ব্যাটালিয়ান বা ইউনিট গড়ে উঠে, যেখানে ৭০০ থেকে ৮০০ সৈন্য থাকার কথা। ১৯৪৮ থেকে ১৯৭১, এই ২৩ বছর একই ধারাবাহিকতায় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের মোট ৯টি ইউনিট জন্ম নেয়। সংক্ষেপে ইউনিটগুলো ফাস্ট বেঙ্গল, নাইন বেঙ্গল এ ধরনের সংক্ষিপ্ত নামে বেশি পরিচিত ও সমাদৃত ছিল। ১৯৭১ সালের ২৬ শে মার্চ মুক্তিযোদ্ধার শুরুর সময় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ফাইভ, সিক্স ও সেভেন বেঙ্গল পশ্চিম পাকিস্তানের বিভিন্ন সেনানিবাসে অবস্থান করছিল। যারা পরবর্তীতে বন্দী বা আটক ছিল। অন্য ইউনিটগুলোর মধ্যে ফাস্ট বেঙ্গল যশোর সেনানিবাস, সেকেন্ড বেঙ্গল জয়দেবপুর, থার্ড বেঙ্গল সৈয়দপুর সেনানিবাস এবং চতুর্থ বেঙ্গল সিলেট ও বাক্ষ্মণবাড়ীয়ায় অবস্থান করছিল। অপর দিকে এইট বেঙ্গল একটি অংশ পশ্চিম পাকিস্তানে এবং অপর অংশ পশ্চিশ পাকিস্তানে যাওয়ার অপেক্ষায় চট্টগ্রাম শহরের ষোল শহরে অবস্থান করছিল। ষোল শহরের অনতিদূরে চট্টগ্রাম সেনানিবাসের দি ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টাল সেন্টারে (ই বি আর সি) নবগঠিত নবম ইস্ট বেঙ্গলের প্রবীন ও কিছু প্রধান সেনারা মূলত প্রশিক্ষনে নিয়োজিত ছিল। এমনি এক প্রেক্ষাপটে ২৫ মে মার্চের কালোরাতে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সেনাদের হত্যার এক জঘন্য প্রচেষ্টা শুরু হয়। প্রাথমিকভাবে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হলেও ঘুরে দাঁড়ায় বেঙ্গল রেজিমনেন্ট। শুরু হয় পাল্টা পাল্টি যুদ্ধ। গুলির বিনিময়ে গুলি। যার ফলে তড়ান্বিত হয় আমাদের সূবর্ণ বিজয়। 
    ৩০ মার্চ ১৯৭১ তারিখে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমনেন্টের প্রথম ইউনিট বা ফাস্ট বেঙ্গলের খুমন্ড সেনাদের রাতের আধারে যশোর সেনানিবস্থ ব্যারাকের চারদিক থেকে ঘিরে ফেলে মেশিনগানের অনবরত গুলি আর দূর থেকে বোমাবর্ষন করে আক্রমণ করে পশ্চিম পাকিস্তানের ২৫ বেলুচ ও ৩ ফ্রন্টিয়ার ফোর্সের সৈন্যরা। তৎকালিন বাঙ্গালী অফিসার ক্যাপ্টেন হাফিজের ( পরে মেজর ও বি এন পি নেতা) নেতৃত্বে তখন আক্রমণ প্রতিহত করে ও সেনানিবাস ছেড়ে পাশের খিতিব দিয়া গ্রামে পৌছার সংগ্রাম শুরু করে ফাস্ট বেঙ্গলের সেনারা। এই প্রচেষ্টায় অনেকে প্রাণ হারায় ও আহত হয়। অবশিষ্টরা চৌগাছা, মাছলিয়া বি ও পি, যশোর ও বেনাপোলে পাকিস্তানীদের প্রতিহত ও পাল্টা আক্রমণ করেতে থাকে। পরে ভারতের অভ্যন্তরে পূর্নগঠিত হয়ে এবং নতুন সৈন্য সংগ্রহ করে চূড়ান্ত আক্রমণ চালায় পাকিস্তানীদের উপর। 
    ২১শে নভেম্বর ১৯৭১ তারিখে বিভিন্ন খন্ড যুদ্ধের পর চূড়ান্ত আঘাত হানার উদ্দেশ্যে সুরমা নদী অতিক্রম করে সিলেট দখলের সংগ্রাম শুরু করে ফাস্ট বেঙ্গল। প্রথম টার্গেট আসে চারগ্রামের একটি শত্রু অবস্থান। ২১ শে নভেম্বর দিবাগত রাতেই তা দখল করে ফার্স্ট বেঙ্গলের সেনারা। পরবর্তী ৭ দিনের মধ্যে ইউনিট সুরমা নদীর পাড়ে গৌরিপুরে প্রতিরক্ষা অবস্থান নেয়। ২৮ নভেম্বর খুব ভোরে পাকিস্তানের ৩১ পাঞ্জাব ব্যাটালিয়ান আক্রমণ চালায় ফাস্ট বেঙ্গলের অবস্থানের দিকে। দৃঢ়তার সাথে সেই আক্রমণ প্রতিহত করে দেশীয় সৈন্যরা। এ যুদ্ধে শহীদ হন ক্যাপ্টেন মাহাবুর। এরপর সিলেট শহর দখলের উদ্দেশ্যে কানাইঘাট চুরখাই হয়ে হাওরের ভিতর দিয়ে সিলেট দরবশত সড়কের দিকে যাত্রা করে ফাস্ট বেঙ্গল ও মুক্তিবাহিনীর প্রায় ১১০০ সৈন্য। দিনে ঝোপ জঙ্গলে লুকিয়ে থাকা ও রাতে এগিয়ে চলার কৌশল অবলম্বন করে তারা। ১০ ডিসেম্বর তারা সিলেট দরবশত সড়কের কাছে একটি গ্রামে পৌছায়। তারপর টানা তিনদিন চা বাগানের মধ্যদিয়ে হেটে ১৩ ডিসেম্বর গভীর রাতে সিলেটের এম সি কলেজের কাছে অবস্থান নেয় ফাস্ট্র বেঙ্গল। ১৪ ডিসেম্বর সকালের আলো ফুটতেই মাত্র ২০০ গজ দূরেই পাকিস্তানীরা সেনাদের দেখা মিলে। কাল বিলম্ব না করে পাকিস্তানীরা আক্রমণ চালায়। প্রতিহত করে বাঙ্গালী সেনারা। এ দিন ৭ জন বাঙ্গালী সেনা শহীদ হলেও পাকিস্তানীদের ক্ষতি হয় অনেক বেশি। ১৫ ডিসেম্বর এম সি কলেজের পাশে অবস্থান করলেও ১৬ ডিসেম্বর, বীরের বেশে সিলেটে প্রবেশ করে “সিনিয়ার টাইগার্স” খ্যাত ফাস্ট্র বেঙ্গল। 
( তথ্য সূত্রঃ মেজর হাফিজ উদ্দিন আহমদ বীর বিক্রম রচিত গ্রন্থ “রক্তে ভেজা একাত্তর”)
    দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট একাত্তরের মার্চে দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা  রক্ষার নামে বিশেষত টুঙ্গী শিল্পা লের নিরাপত্তার অজুহাতে সেনানিবাসের বাইরে রাখা হয়। তাদের ছোট ছোট দল বা উপদলে বিভক্ত করে গাজীপুর জয়দেবপুরসহ বৃহত্তর টাঙ্গাইল ও ময়মনসিংহ এলাকার বিভিন্ন স্থানের রাখা হয়। পাকিস্তানীদের মূল উদ্দেশ্য ছিল তাদের পৃথক পৃথক স্থানে আক্রমণ ও ধ্বংশ করা। তবে দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গলের (সংক্ষেপে সেকেন্ড বেঙ্গল) সেনারা বিভিন্নভাবে পাকিস্তানীদের এই হীন চক্রান্ত বুঝতে পারে এবং কৌশলে পাকিস্তানীদের কমান্ড বা নিয়ন্ত্রণ থেকে বেরিয়ে তৎকালিন মেজর কে এম সফি উল্লাহর (পরবর্তী সেনাবাহিনী প্রধান) সংগঠিত হয় ও সশস্ত্র সংগ্রামে ঝাপিয়ে পড়ে। পাকিস্তানীদের আক্রমণের মূখে তারা বিদ্রোহ করে এবং ২৯ শে মার্চ ৭১ এ ময়মনসিংহ এ পূর্নগঠিত হয়। এরপর এপ্রিলের ৪ তারিখে চা বাগান বেষ্টিত হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর তেলিয়াপাড়ায় সদর দপ্তর স্থাপন করে বৃহত্তর সিলেট, ব্রাক্ষ্মণবাড়ীয়া, কুমিল্লা ও ফৈনীতে বিভিন্ন অভিযান পরিচালনা করে। এই মাধবপুরে ঢাকা সিলেট সড়ক ও রেলপথকে কার্য্যত মরন ফাঁদে পরিনত করে সেকেন্ড বেঙ্গল। মে মাসেও এই সড়ক ও রেলপথের দখল ও পাল্টা দখল নিয়ে সংগ্রাম চলতে থাকে। এভাবে খন্ড খন্ড যুদ্ধের মধ্য দিয়ে বছর শেষে অর্থাৎ ডিসেম্বরে পৌছে পঞ্জিকার পাতা ডিসেম্বরে  ১ থেকে ৪ তারিখ পর্যন্ত আজমপুর, সিংগার বির, মকুন্দপুর ও আখাউড়ায় তুমুল যুদ্ধ সংগঠিত হয়। তবে মূল যুদ্ধ হয় আখাউড়া দখলকে কেন্দ্র করে, যা ছিল একদিকে ভারত থেকে মিত্র বাহিনী প্রবেশের সহজ পথ আরার অন্যদিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেললাইনের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় অধিপত্য বজায় রাখার জন্য স্পর্শকাতর স্থাপনা। ডিসেম্বরে শুরুতেই মুক্তিবাহিনী সেকেন্ড বেঙ্গলের তত্ত্বাবধানে আখাউড়ার আশে পাশে অবস্থান নেয়। টের পেয়ে পাকিস্তান বাহিনী কামান ও বিমান থেকে গোলা বর্ষণ করতে থাকে। এরপরও মাটি কামড়ে পড়ে থাকে সেকেন্ড বেঙ্গলের সেনারা। আর সুযোগ পেলেই পাল্টা হামলা চালায়। টানা পাঁচদিনের রক্তক্ষয়ি যুদ্ধের পর পিছু হটে পাকিস্তান বাহিনী। এ যুদ্ধে শহীদ হন তরুন লেফটেন্যান্ট বদিউজ্জামান বীরপ্রতিক। আখাউড়া দখলের পর সেকেন্ড বেঙ্গল এস ফোর্সের অংশ হিসাবে মিত্র বাহিনীর পরিকল্পনায় অবরুদ্ধ ঢাকার পথে অগ্রসর হওয়ার আদেশ পায়। ডিসেম্বরের ৮ তারিখে সেকেন্ড বেঙ্গল তিতাস নদী অতিক্রম করে নিজেরা বাক্ষ্মণবাড়ীয়া নিয়ন্ত্রণ নেয় এবং মিত্র বাহিনীকে বাক্ষ্মণবাড়ীয়া পৌছাতে সাহায্য করে। মিত্রবাহিনী কর্তৃক আশুগঞ্জ ও ভৈরব দখলেও কার্য্যকর ভূমিকা রাখে তারা। পাকিস্তানীরা ভৈরব ছাড়ার পূর্বে ভৈরব ব্রীজের একটি অংশ ধ্বংশ করে। ফলে মিত্র বাহিনী দেশীয় নৌকা ও হেলিকপ্টারে মেঘনা নদী অতিক্রম করে নরসিংদিতে অবস্থান নেয়। সেকেন্ড বেঙ্গল ১২ ই ডিসেম্বর রায়পুরা হয়ে নরসিংদিতে মিত্র বাহিনীর সাথে মিলিত হয়। এরপর শীতলক্ষা ও বালু নদী অতিক্রম করে ঢাকা সেনানিবাস দখলের উদ্দেশ্যে বাসাবো ও খিলগাঁও পর্যন্ত এগিয়ে যায়। ১৪ ডিসেম্বর রাতে বাসাবো এলাকায় সেকেন্ড বেঙ্গলের সাথে পাকিস্তানীদের এক ভয়াবহ যুদ্ধ হয়। ঢাকা থেকে নতুন সৈন্য আসা সত্বেও পাকিস্তানীরা পরাজয় মানতে বাধ্য হয় । পরদিন সকালেই ঢাকা আত্নসর্ম্পণের আলোচনা শুরু হয়। 
(তথ্য সূত্রঃ মেজর জেনারেল কে এম শফি উল্লাহ, বীর উত্তম রচিত গ্রন্থ “মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ”)
    সৈয়দপুরের ছোট সেনানিবাসে অবস্থানের কথা থাকলেও ভারতীয় বাহিনীর সম্ভাব্য আক্রমণের খোঁড়া যুক্তি দেখিয়ে তৃতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট (সংক্ষেপে থার্ড বেঙ্গল) কে সৈয়দপুর, রংপুর, পার্বতীপুর ও দিনাজপুরে বিচ্ছিন্নভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখা হয়। উদ্দেশ্য ছিল ক্রমান্বয়ে তাদের ধ্বংশ করা। সেই প্রচেষ্টাও চলে ২৫ শে মার্চ থেকে ৩০ শে মার্চ পর্যন্ত। ৩১ শে মার্চ সৈয়দপুর সেনানিবাসে থার্ড বেঙ্গলকে আক্রমণ করে পাকিস্তানীরা। এরপর যথারীতি বিদ্রোহ করে থার্ড বেঙ্গল এবং এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে ছড়িয়ে থাকা সব দল -উপদল দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে একত্রিক হয়ে মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ে। এপ্রিল জুড়ে পার্বতীপুর, বদরগঞ্জ, খোলাহাটি, ফুলবাড়ীয়া ও হিলিতে যুদ্ধ করে থার্ড বেঙ্গল ভারতের কামারপাড়া হয়ে তেলে ঢালায় মেজর শাফাত জামিলের নেতৃত্বে পুনগঠিত হয়। এই তেলে ঢালাতেই পরবর্তীতে ১ম, ৩য় ও ৮ম ফাস্ট বেঙ্গলের সমন্বয়ে জেড ফোর্স গঠিত হয় তেলে ঢালায় প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ, জনবল বৃদ্ধি এবং সমন্বয় শেষে আবারও দেশে ঢোকে থার্ড বেঙ্গল। আগষ্ট থেকে মধ্য নভেম্বর পর্যন্ত সাড়ে তিন মাসের থার্ড বেঙ্গল বাহাদুরাবাদ ঘাট, দেওয়ানগঞ্জ, রৌমারীা, ছাতক, গোয়াইন ঘট, রাধা নগর, লুনি গ্রাম ও ছাত্তার গাঁও এ হামলা চালায় এবং পাকিস্থানী বাহিনীর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করে। এর মধ্যে সিলেটের পশ্চিমে বাধানগর ও ছোটখেল এলাকায় পাকিস্তানীদের ২০ থেকে ২৪ শে নভেম্বর অবরুদ্ধ করে রাখে থার্ড বেঙ্গল। এই অবস্থানের উপর প্রথম বারের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হলেও ২৮ শে নভেম্বর মিত্র বাহিনীর গুর্খা রেজিমেন্ট ও থার্ড বেঙ্গলের আক্রমণ সফল হয় । গোয়াইন ঘাটে ৪ ডিসেম্বর ভোরে আক্রমণ চালায় থার্ড বেঙ্গল। পরাজিত পাক সেনারা পিছু হঁটে যেতে বাধ্য হয় । এরপর একে একে দখলে আসে বাইতা বাড়ি, জলুর পাড়, বেতুর কুল, সালুটিকর প্রভৃতি এলাকা। নিকটবর্তী বিমান ঘাটি  এবং সিলেট শহরের প্রবেশ দ¦ার নিজ আয়ত্তে রাখার লক্ষে বার বার প্রতি আক্রমণ করে পাক বাহিনী। কিন্তু থার্ড বেঙ্গল এসব প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দেয়। ১৪ ও ১৫ ই ডিসেম্বর যুদ্ধ হয় গোবিন্দগঞ্জে। মিত্র বাহিনীর সহয়তায় এখানেও সাফল্য পায় তারা । সত্যিকার অর্থে ১৬ ডিসেম্বর গভীর রাত পর্যন্ত থার্ড বেঙ্গলকে যুদ্ধ করতে হয়, যার ফলে পরদিন ১৭ ডিসেম্বর সিলেটে প্রবেশ করে মিত্র বাহিনী।
(তথ্য সূত্রঃ লেঃ কর্ণেল মোঃ তৌফিক ই এলাহি পি এস সি সংকলিত গ্রন্থ “মাইনর টায়গার্স ও বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ”)
     মার্চ মাসে চতুর্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টকে বিভিন্ন উপদলে বিভক্ত করে অভ্যন্তরিন শান্তি-শৃঙ্খলার নামে কুমিল্লা সেনানিবাস, বাক্ষ্মণবাড়ীয়া ও শমসের নগরে মোতায়েন করে পাকিস্তানের হাই কমান্ড। মূল উদ্দেশ্য ছিল টার্গেট ছোট করে সমূলে ধ্বংশ করা। এ সময়ে চতুর্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের (সংক্ষেপে ফোর বেঙ্গল) উপ-অধিনায়ক ছিলেন তৎকালিন মেজর খালেদ মোশারফ। তিনি দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গলের উপ-অধিনায়ক মেজর শফি উল্লাহর সাথে সমন্বয় করে বৃহত্তর ব্রাক্ষ্মণবাড়ীয়া, চাঁদপুরও কুমিল্লায় চতুর্থ ইস্ট বেঙ্গলকে নিয়জিত করেন এবং নানাভাবে পাকিস্তানী বাহিনীর ক্ষয়ক্ষতি করতে থাকেন। পরবর্তীতে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের কোনাবনে পুনর্গঠিত হয়ে আবার বৃহত্তর কুমিল্লা অ লে অবস্থান নেয় পাকিস্তান বাহিনীর উপর চরম আগাত হানার লক্ষ্যে। পাকিস্তানী সেনারা ত্রিপুরা থেকে মিত্র বাহিনীর আক্রমন প্রতিহত করতে শালদা নদী তীরবর্তী বিভিন্ন স্থানে শক্তিশালী প্রতিরক্ষ ব্যবস্থা গড়ে তুলেছিল।  চতুর্থ ইস্ট বেঙ্গল একাত্তরের অক্টোবর ও নভেম্বর, মাসে কাইমপুর, চত্তরা, কামালপুর, মইনপুর, লক্ষীপুর ফেরীঘাট (শলদা নদী) ও নয়নপুরসহ বৃহত্তর ব্রাক্ষ্মণবাড়ীয়ায় পাকিস্তানী ঘাটি সমূহে একের পর এক সফল আঘাত হানতে থাকে। এক পর্যায়ে তারা শালদা গুদামঘর এলাকয় শক্তিশালী পাকিস্তানী অবস্থানের ঠিক মাঝে অবস্থান নেয় এবং সাঁড়াশী আক্রমন চালায়। ফলে পাকিস্তানীরা পালিয়ে যায় এবং ব্রাক্ষ্মণবাড়ীও কুমিল্লার মধ্যবর্তী বিরাট এলাকা ফোর বেঙ্গলের দখলে থাকে। ১৬ নভেম্বর ৭১ দিবাগত রাত ২ টা ১৫ মিনিটে পাকিস্তানী সৈন্যরা সুসংগটিত হয়ে ফোর বেঙ্গলের অবস্থান অক্রমণ করে। পাকিস্তানীদের বোমার আঘাতে প্রকম্পিত হয় শালদা এলাকা। তবে বিচলিত না হয়ে সমান তালে পাল্টা আক্রমন চালায় ফোর বেঙ্গল। ২১ শে নভেম্বর ফোর বেঙ্গলের প্রায় অর্ধেক সেনা (এ ও বি কোম্পানি) মঙ্গলপুর ও কাইমপুরে অবস্থানরত পাকিস্তানীদের উপর অর্তকিত হামলা চালায় এবং পিছু হটতে বাধ্য করে। প্রতিউত্তরে ২৩ নভেম্বর ফোর বেঙ্গলের উপর আক্রমণ করে পাকিস্তানী বাহিনী। মন্দভাগে এ সময় প্রচন্ড যুদ্ধ হয়। এভাবে ক্রমেই এগিয়ে আসে ডিসেম্বর। ফোর বেঙ্গলকে এবার দায়িত্ব দেওয়া হয় বিলুনিয়া তথা ফেনী দখল করার। ফোর বেঙ্গল এবং খালেদ মোশাররফের অধীনস্থকে  ফোর্সের অন্যান্য সৈন্যরা তখন বেলুনিয়া আক্রমণ ও ফেনী  পার হয়ে চট্টগ্রামের দিকে কবের হাট দখল করে। চট্টগ্রাম দখলের জন্য ফেনী - চট্টগ্রাম সড়কে এগুতে থাকে নবগঠিত ১০ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট। আর ৭ ই ডিসেম্বরের রাতের আঁধারে ফোর বেঙ্গল করের হাঁট, হিয়াক, ফটিকছড়ি ও নাজির হাট হয়ে চট্টগ্রামের দিকে অগ্রসর হতে শুরু করে। পথে হিয়াকু ও নারায়ণপুরে পাকিস্তানীদের দুইটি অবস্থান দখল করে ফোর বেঙ্গল। ১০ ও ১১ ডিসেম্বর প্রচন্ড যুদ্ধের পর তারা ফটিকছড়ি শত্রু মুক্ত করে । এ সময় রামগড় থেকে মানিকছড়ির পথ ধরে ফটিক ছড়ির দিকে এগুতে থাকা পাকিস্তানীদের আরেকটি দল ফোর বেঙ্গলের এম্বুশে ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে পালিয়ে যায়। পরদিন ১২ ডিসেম্বর ফটিকছড়ি থেকে চট্টগ্রামের দিকে অগ্রসর হতে থাকে ফোর বেঙ্গল ১৩ ডিসেম্বর নাজিরহাট নদীপাড়ে শক্তিশালী পাকিস্তানী প্রতিরক্ষা অবস্থান আবিষ্কৃত হয়। ১৪ ডিসেম্বর রাতে চা বাগানের দিক থেকে এই অবস্থানের উপর আঘাত হানা হয় এবং সে রাতেই শত্রুমুক্ত হয় নাজির হাট। পরদিন ১৫ ডিসেম্বর ১৯৭১ পাকিস্তানী বাহিনী আত্মসর্ম্পন করবে বলে জানা জানি হয় এবং চূড়ান্ত বিজয় ঘনিয়ে আসে।
(তথ্য সূত্রঃ ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফ রচিত ও মুহাম্মদ লৎফুল হক সম্পাদিত গ্রন্থ “মক্তিযুদ্ধে ২ নম্বর সেক্টর এবং কে ফোর্স”) 
    একাত্তরের মার্চে চট্টগ্রামের ষোল শহরে অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমন্টের (সংক্ষেপে এইট বেঙ্গল) প্রায় অর্ধেক জনবল মূলত পশ্চিম পাকিস্তানে গমনের প্রস্ততি নিচ্ছিল। পরে তাদের শহরে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা এবং জাহাজে চট্টগ্রাম বন্দরে আসা অস্ত্র খালাস করে নিরাপদে সেনানিবাসে আনার দায়িত্ব দেয়া হয়। তবে ২৫ শে মার্চ, ৭১ এর কালো রাতেই এইট বেঙ্গল উপলব্ধি করে যে সাধারণ বাঙ্গালীদেরমতো তাদেরও হত্যাকরা পাকিস্তানীদের মূল উদ্দেশ্য। ফলে সে রাতেই মেজর জিয়াউর রহমানের (পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি) নেতৃত্বে বিদ্রোহ ও মুক্তিযুদ্ধ শুরু করে এইট বেঙ্গল। ২৫ মার্চ থেকে মধ্য এপ্রিল পর্যন্ত মূলত কালুরঘাট থেকেই তারা প্রতিরোধ যুদ্ধ চালিয়ে যায়। পরবর্তীতে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ে শুভপুর, কক্সবাজারসহ বিভিন্ন স্থানে। দিন গড়ানোর সাথে সাথে ফেনী, কুমিল্লা ও পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সমগ্র চট্টগ্রাম বিভাগেই এইট বেঙ্গল যুদ্ধ করতে থাকে। আগষ্ট মাসে জামালপুরের নকশী বি ও পি আক্রমণ এবং উলিপুরে রেইড পরিচালনা করে এইট বেঙ্গল বেশ চা ল্য সৃষ্টি করে। এছাড়াও অক্টোবরে মৌলভিবাজারের দক্ষিণগুল চা বাগান আক্রমণ এইট বেঙ্গলকে নতুন প্রেরনা দেয়। নভেম্বরেও বৃহত্তর সিলেটের জুড়িলাতু রেলসড়ক, দিলখুশা, সোনারূপা চা বাগানসহ দেশের পূর্বা লে ক্রমাগত আক্রমণ করে এইট বেঙ্গল। ২৫ নভেম্বর দিবাগত রাতে এইট বেঙ্গলের দুইটি কোম্পানী পৃথকভাবে মৌলভীবাজার সীমান্তে এলাকায় এবং বড়লেখা থানায় আক্রমণ করে। নভেম্বরের শেষাংশ মিত্র বাহিনী ও জেড ফোর্সের সাথে মিলিত হয়ে এইট বেঙ্গল শমসেরনগর-মৌলভীবাজার-সিলেট অভিমূখে যাত্রা শুরু করে। পথিমধ্যে চাতলাপুরে পাকিস্তানী অবস্থানের উপর আক্রমণ করে তা ধ্বংশ করে এবং অগ্রাভিযান অব্যহত রাখে। ডিসেম্বরের ২ তারিখে শমসের নগর এবং ৫ তারিখে মুন্সিবাজার দখলে মিত্র বাহিনীর সাথে সমানতালে লড়াই করে এইট বেঙ্গল। অন্যদিকে এইট বেঙ্গলের আরেকটি দল ডিসেম্বরের ১ তারিখে আলীনগর চা বাগান ও ৭ তারিখে ভানুগাছা দখল করে শ্রীমঙ্গলের দিকে ধাবিত হয়। একই দল পরদিন ৮ ডিসেম্বরে শ্রীমঙ্গল দখল করে। এইট বেঙ্গলের সমর্থন নিয়ে মিত্রবাহিনী এ সময় মৌলভীবাজারও শত্রুমুক্ত করে। মৌলভীবাজার পতনের পর যৌথ বাহিনীর পরিকল্পনায় এইট বেঙ্গল রেলপথ ধরে ফে ুগঞ্জের দিকে এগুতে থাকে। তবে এইট বেঙ্গল ও মিত্র বাহিনী ১০ ডিসেম্বর ফে ুগঞ্জ আক্রমণের প্রস্তুতি নিলেও পাকিস্তানী বাহিনী ভয়ে তাদের অবস্থান ছেড়ে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে দ্রুতই চূড়ান্ত বিজয়ে অর্জিত হয় । (তথ্য সূত্রঃ মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রকাশিত গ্রন্থ “বাংলাদেশ স্বাধীনতা য্দ্ধুঃ ব্রিগেড ভিত্তিক ইতিহাস”)। 
    নবগঠিত নবম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট (সংক্ষেপে নাইন বেঙ্গল) ২৫ শে মার্চ ৭১ এ চট্টগ্রাম সেনানিবাসের ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টাল সেন্টারে পাকিস্তানী বর্বরতার স্বীকার হয়ে এক প্রকার ধ্বংশ হয়ে যায়। রাতের আঁধারে তাদের হত্যা করা হয়। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তৎকালীন প্রধান সেনাপতি জেনারেল এম এ জি ওসামনি ও অন্যান্য জেষ্ঠ সেনাকর্মকর্তাদের পরিকল্পনায় ১০ অক্টোবর ৭১ তারিখে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের মনতলায় নতুন করে নবম ইস্ট বেঙ্গল প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠার ১৪ দিনের মধ্যে অর্থাৎ ২৩ অক্টোবর ১৯৭১ তারিখে এই ইউনিট কসবায় অবস্থিত পাকিস্তানী শক্তিশালী প্রতিরক্ষা অবস্থানে আক্রমণ করে ও কসবা দখল করে। কসবার পর নিকটবর্তী চন্দ্রপুর ও লাতুমরাতে পাকিস্তানীদের দুইটি শক্তিশালী অবস্থানে  ২২ শে নভেম্বর একযোগে আক্রমণ চালায় নাইন বেঙ্গল ও ভারতীয় ৪ পাঞ্জাব রেজিমেন্ট। এই যুদ্ধেও পরাজিত হয় পাকবাহিনী।  ৪ ডিসেম্বর থেকে নাইন বেঙ্গল মূলত কুমিল্লা শত্রুমুক্ত করার অভিযান শুরু করে এবং দ্রুতই সাফল্য লাভ করে। (তথ্য সূত্রঃ সেনাসদর প্রকাশিত গ্রন্থ “বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইতিহাস-তৃতীয় খন্ড”)।
১০ অক্টোবর ১৯৭০ তারিখে পা াব, বেলুচও ফ্রন্টিয়ার ফোর্সের সেনাদের নিয়ে ঢাকায় ন্যাশনাল সার্ভিসের ব্যাটালিয়ান বা ক্যাডেট ব্যাটালিয়ান হিসাবে দশম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট (সংক্ষেপে টেন বেঙ্গল) যাত্রা শুরু করে। ২৫ মার্চ কালো রাতেই এই ব্যাটালিয়ানের বিলুপ্তি ঘটে। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে হাই কমান্ডের নির্দেশে ১০ অক্টোবর ১৯৭১ তারিখে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের রাজনগরে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট, ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস ও মুক্তি বাহিনীর সদস্যদের সমন্বয়ে নতুন করে প্রতিষ্ঠিত হয় দশম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট। রনকৌশলগত কারণে গুরুত্বপূর্ন ফেনীর বিলোনিয়ায় পাকিস্তান বাহিনীকে ক্রমাগত চাপে রেখে দুইবার আক্রমণের মাধ্যমে তাদের সুরক্ষিত অবস্থান ধ্বংশ এবং ৭ নভেম্বর বিলুনিয়া শক্রমুক্ত করে। বলা যায় ৭ ই নভেম্বর বাংলাদেশের স্বাধীন ভূখন্ড বিবেচিত হয় টেন বেঙ্গল অধীকৃত বিলোনিয়া।
(তথ্য সূত্রঃ মেজর জেনারেল ইমামুজ্জামান বীর প্রতিক রচিত গ্রন্থ “ বাংলাদেশ ওয়ার অব লিবারেশান”)

    মুক্তিযুদ্ধরত দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গলের ১০৩ জন সৈনিক ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলসের সদস্য এবং মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্য থেকে যোগ্যদের নিয়ে ১৯৭১ সালের ০১ সেপ্টেম্বর এগারতম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট (সংক্ষেপে ইলেভেন বেঙ্গল) নতুন উদ্যমে যুদ্ধ শুরু করে। দেশকে শত্রু মুক্ত করার আকুতি নিয়ে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও সমন্বয় শেষে ১৯৭১ সালের ২৮ নভেম্বর ভারত ছেড়ে বাংলাদেশে প্রবশ করে এই ইউনিট । বৃহত্তর সিলেট ও ব্রাক্ষ্মণবাড়ীয়ার আখাউড়া, তেলিয়াপাড়া, ধর্মনগর, মনতলা, মাধবপুরসহ বিস্তীর্ণ এলাকা শত্রু মুক্ত করতে শুরু থেকেই তৎপর থাকে এই ইউনিট। ব্রাক্ষ্মণবাড়ীয়া অভিমূখে অভিযান চলাকালে ৬ই ডিসেম্বর পাকিস্তানিদের সাথে চান্দুরা এলাকায় এক রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়। এতে ক্ষয়ক্ষতি সত্বেও বিজয় হয় ইলেভেন বেঙ্গলের। ডিসেম্বরের ৮ তারিখের মধ্যে ব্রাক্ষ্মনবাড়ীয়া শক্রমুক্ত করতে বিশেষ ভূমিকা রাখে এই ইউনিট। পরিবর্তী তিনদিন অর্থাৎ ৯,১০ ও ১১ ডিসেম্বরে আশুগঞ্জ ও ভৈরবে তুমুল যুদ্ধে যৌথ বাহিনীর সাথে সমান তালে লড়াই করে ইলেভেন বেঙ্গল যা দেশরে স¦াধীনতা তড়ান্বিত করে।
(তথ্য সূত্রঃ সেনাসদর কর্তৃক প্রকাশিত গ্রন্থ “বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইতিহাস”)
    প ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট পশ্চিম পাকিস্তানের থাকেলেও তাদের পশ্চিম পাকিস্তা-ভারত সীমান্তে প্রতিরক্ষা অবস্থানে রাখা হয়। দেশপ্রেমিক একদল বাঙ্গালী সোনা এ সময় ভারতীয় সীমান্তরক্ষীদের সাথে কৌশলে যোগাযোগ স্থাপন করে এবং ভারত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। তারা সংগবদ্ধ হয়ে বৃহত্তর যশোর, কুষ্টিয়া ও ফরিদপরে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়। ১৯৭১ সালের ১৫ ই ডিসেম্বর যশোর শহরের বেজপাড়ায় বারতম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট (সংক্ষেপে টুয়েলভ বেঙ্গল) প্রতিষ্ঠিত হয়।
(তথ্য সূত্রঃ সেনাসদর কর্তৃক প্রকাশিত গ্রন্থ “বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইতিহাস”)
আজ চূড়ান্ত বিজয়ের সূবর্ণ জয়ন্তীতে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমন্টসহ সকল বীর  মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা।
              লেখকঃ গবেষক, কলামিস্ট ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক


 

বিষয়: বিজয়

আরও পড়ুন

avertisements 2