রাজ কর্মচারীর অবান্তর কান্ড!
মোশারফ হোসেন নির্জন
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ৯ আগস্ট,সোমবার,২০২১ | আপডেট: ১০:৩২ এএম, ১৯ ডিসেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
বিট্রিশ ঔপনিবেশিক আমল থেকে খেয়াল করলে দেখা যাবে চাটুকার দালালরা উপরে উঠে গেছেন তরতরিয়ে। আবার উচিত কথা বলে তলানিতে নেমেছেন অনেকে। যেন সাপ লুডু’র মতো এই চিরচেনা নীতি। যার ফলে সুস্থরাজনীতি চর্চায় বাধা হয়ে দাড়িয়েছে তৈল মর্দন নামের চাটুকারিতা।অভ্যেসে পরিণত হয়েছে যেচে পড়ে অন্যের গোলামী করা।
এবার মূল প্রসঙ্গে আসি, গতকাল ব্যারিস্টার সুমনকে যুবলীগের কেন্দ্রীয় আইন সম্পাদক পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। ওসি'র ‘জয় বাংলা’ স্লোগান নিয়ে কটাক্ষ করায় তাকে এই অব্যাহতি। এ ইস্যুতে কথা বলায় সুমন বিরোধী আওয়ামী সিন্ডিকেট প্রতিশোধ নিলো বলে এক পক্ষ অভিযোগ তুলেছে, যাকে বলে ঝুপ মেরে কূপ! ঘটনার অন্তারালে আছে দীর্ঘ দিন ধরেই কাজী সালাউদ্দিন (বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি) এর নিন্দা সহ দলীয় বিভিন্ন বিষয়ে যেচে পড়ে নাক গলনোর কান্ড কীর্তি। আর এতে যেন নিজ ঘরেই চক্ষুশূলে পরিনত হন সুমন ।
পাঠক আপনার মতে একজন ওসি কি দলীয় স্লোগান দিতে পারে? এটি যেমন দৃষ্টিকটু, তেমনি দলের ব্যানারে থাকা কোনো নেতা দলের বিপক্ষে কথা বলাও অতিউৎসাহী আচারণ ; অন্তত দেশীয় সংস্কৃতিতে এই চর্চা নেই। আর নেই বলে লাল কার্ড পেলেন এই আইনজীবী যুবলীগ নেতা। যাকে বলে উচিত কথার ভাত নাই! তবে এমনটা্ হওয়ার কথা নয়, সুবোধের চর্চা না থাকলে রাজনীতি কখনোই প্রজাবান্ধব হয় না। এখানে সরকারের কৌশলগত ভুল হচ্ছে কিনা সেটিও আলোচ্য বিষয়।
এদিকে সুমন সাহেব দেশপ্রেমে উদ্বেলিত হয়ে নাকি দলীয় সুনজরে আসার প্রয়াসে এমনটি করেন তা হয়তো হলফ করে বলা একটু কঠিন কিন্তু উদ্দেশ্য যা হোক কল্যান নিহিত এমন কাজে বাহবা দিতে কার্পন্যতা হয়তো সবাই করে না।তাই ভার্চুয়াল এক বিশাল অনুসারী নিয়ে দিব্যি লাইভ করে যাচ্ছেন এই ব্যারিস্টার। এতে কপাল পুড়েছে নিজদলের অনেক পুকুর চোরদের।
সুমন প্রসঙ্গে আরো গভীরে আলোকপাত করলে দেখা যাবে তিনি হয়তো আরো ওপরে চোখ রাখছেন, রাজনীতির ক্যরিয়ারে খুজে বেড়াচ্ছেন আরেকটি মই। হয়তো এভাবে নিজকে দলের অভিবাবকদের একজন ভাবতে শুরু করেছেন। তাই চোখে আঙুল দিয়ে বুঝাতে চেয়েছেন, রাজ কর্মচারীর এই চর্চা অবান্তর, অর্থাৎ মায়ের চেয়ে মাসির দরদ বেশি হওয়া সমীচীন নয়। আর তাতেই কাল হলো, খোয়ালেন নিজের পদ।
এখানে সুমনকে বুঝতে হতো লাইভে এসে এই বিষয়ে কথা বললে কোথাকার জল কোথায় গিয়ে গড়ায়। কারণ স্লোগান ইস্যুতো সোচ্চার দলটির নীতিনির্ধারকরা। অর্থাৎ বিষয়টি অত্যন্ত সংবেদনশীল। কিন্তু এটিও সত্য স্লোগানকে ঘিরে যেন ব্যবসা না হয়, অতিরঞ্জিত না হয়। তাই ওসি সাহেবকেও উপলব্ধি করতে হতো তার সীমাবদ্ধতা কোথায়, তিনি কিভাবে জনগনের সাথে একসুতোয় গাথা।
যাহোক, অন্যায়ের প্রতিবাদ করে বেশ সাহসী ভূমিকাই রেখেছেন ব্যারিস্টার সুমন।
তাই দলীয় বিবেচনায় তাকে এই অজুহাতে অব্যাহতি দেওয়া আদৌ ঠিক হবে কি না তা এখন ক্ষমতাসীনদের ভাবার বিষয়।
উল্লেখ্য,এর আগে এমপি নমিনেশন চেয়ে ব্যর্থ হয়েছিলেন ব্যারিস্টার সুমন , তুপের মুখে পড়েছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এক ইসলামিক বক্তার জানাজা নিয়ে সমালোচনা করে।নিচে পরে থাকা টিম্বার রাস্তায় এনে লাইভ করে পেয়েছিলেন তিরস্কার। এত কিছুর মাঝে তার ভালো কাজের সংখ্যা নেহায়েত কম নয়। তাই সুমনের লাইভ প্রোগ্রাম এ বাহবা দেওয়াা অনুসারীরা চায়, তিনি নিজেকে যেনো ঢেলে সাজান, মনে ময়লা থাকলে ঝেড়ে ফেলেন এবং লাইভ-টপিক সিলেক্ট করতে হন আরো সাবধানী। তবে, বেঁচে থাকুক অন্যায়ের প্রতিবাদ, বিনষ্ট হোক চাটুকারিতা, জাগ্রত হোক সুবোধ।
লেখক: অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী সাংবাদিক ।