avertisements 2

শিক্ষা সনদে কাগজের মান বাড়ানো প্রয়োজন

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ৮ মার্চ, বুধবার,২০২৩ | আপডেট: ০৩:০৬ এএম, ২২ ডিসেম্বর,রবিবার,২০২৪

Text

শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড। একজন ছেলেমেয়ে শিশুকালে পারিবারিক শিক্ষা অর্জনের পর ভর্তি হয় প্রাথমিকে। প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক,মাধ্যমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিকসহ সর্বোচ্চ পর্যায়ে।
পড়াশোনার প্রতি তাদের চাপ ও দায়িত্ব আরও বেড়ে যায়। মনযোগ দিয়ে পড়াশোনার চেষ্টা করে। মনে পুষে অনেক বড় বড় স্বপ্ন। কেউ হতে চায় ডাক্তার,ইঞ্জিনিয়ার,উকিল,লেখক,সাংবাদিক ইত্যাদি। তাদের চিন্তা চেতনা তখন অনেকাংশে বেড়ে যায়। কেউ কেউ মেধাবী হয়ে দেশের সেবাও করতে চায়।
বর্তমান সময়ে বাংলাদেশে প্রমাণ ছাড়া কিছু হয় না। মুখের কথার জুড়ে মানুষ একজনকে মূল্য দেয় না। একজন কবি বা লেখকের প্রমাণ হলো পত্র-পত্রিকা বা বইপুস্তকে প্রকাশিত লেখা। মুখে যদি কেউ বলে আমি কবি,আমি লেখালেখি করি- তা অধিকাংশ মানুষ বিশ্বাস করবে না। কারণ কবিতা লেখা বা সাহিত্য রচনা করা অতি মূল্যবান ও সাধনার ফল। এই ফল কেউ চেষ্টা না করে এমনিতেই পাবে না,আর প্রমাণ ছাড়া এই ফলের কোনো মূল্য থাকে না। বর্তমান বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বে কাজের পাশাপাশি তার যোগ্যতা ও প্রমানকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। আমরা শিক্ষক, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, উকিল যাই হই না কেন পড়াশোনা শেষ করে প্রয়োজন যোগ্যতার প্রমাণ। 

২০২২ এর বন্যায় ঘটে যাওয়া বাস্তব ঘটনা থেকে বলি। আমি সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা। ছোটবেলা থেকেই লেখালেখির সাথে জড়িত। পেশাগত কাজের পাশাপাশি ' জামালগঞ্জ সরকারি কলেজ' এ পড়াশোনাও করি। আমার প্রকাশিত লেখার সংখ্যা সহস্রাধিক। বেশিরভাগ প্রকাশিত হয়েছে জাতীয়, স্থানীয় দৈনিক এবং ম্যাগাজিনে। পত্রিকা ও ম্যাগাজিনগুলো ছিল আলমারির নিচের বড় বড় ড্রয়ারে। একরাতে পানি বেড় যাবে কেউ কল্পনা করেনি। রাতারাতি ঘরের মধ্যে কোমড় পানি হয়ে যায় ! পাশের অন্য ড্রয়ারে ছিল মূল্যবান অনেক কাগজপত্র। ছিল পিএসসি, জেএসসি, এসএসসি ও এইচএসসি পাশের সনদপত্র, মার্কশীটসহ বিভিন্ন প্রশিক্ষণের সনদপত্র। ছিল সাংবাদিকতা প্রশিক্ষণের সনদপত্র, দ্য লন্ডন টাইমস্'র নিয়োগপত্র,কারিগরি শিক্ষাসহ বিভিন্ন সনদপত্র। যা আজ সব বন্যার পানিতে ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে! সনদপত্রের লেখাগুলোও দেখা যায় না। কাগজপত্রের মানও তেমন ভালো না। এমন হালকা গড়নের কাগজের সনদপত্র হলেতো পানিতে ভেজার সাথে সাথেই নষ্ট হয়ে যাবে। আমারও তাই হলো। এই ঘটনা শুধু আমার ক্ষেত্রে হয়েছে বললে ভুল হবে। বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার যে অঞ্চলগুলোতে বন্যা হয়েছে সেই অঞ্চলের শিক্ষার্থীরা এমন পরিস্থিতির স্বীকার হয়েছে। সনদপত্র নষ্ট হওয়ায় অন্ধকার হয়ে গেছে তাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যত। ভেঙে গেছে তাদের অনেক স্বপ্ন। সাধারণত নিন্মাঅঞ্চের শিক্ষার্থীরা এমন ঘটনার স্বীকার হয় বেশি। 

আজ যদি সনদের কাগজের মান ভালো থাকতো সনদপত্র এতোটা নষ্ট হতো না কিংবা নষ্ট হতে সময় লাগতো। এখন আমার কোনো প্রমাণ নেই যে আমি লেখালেখি করি বা পড়াশোনা করি। পড়াশোনার ক্ষেত্রে প্রমাণ এটাই যে কলেজে আসা যাওয়া করবো,ফাইনাল পরীক্ষার পর আরেকটা সনদপত্র পাবো। এর আগপর্যন্ত আমি নিরক্ষর ছাড়া কিছুই না। যা বাস্তব আমাকে তাই বলতে হবে। বর্তমান সময়ে বাস্তবকে গুরুত্ব দিতে হয়।  নইলে শিক্ষার্থীদের মনে পুষে রাখা আলোকিত ভবিষ্যত দিনদিন নষ্ট হতে থাকবে। মানসিক অশান্তিতে ভোগে একসময় পড়াশোনা ছেড়ে দিবে৷ না পারবে কোনো একটা চাকরী করতে না পারবে বসে থাকতে। কিছু করতে না পেরে অবশেষে বসেই থাকবে৷
এমনভাবে চলতে থাকলে একসময় বাংলাদেশে প্রকৃত শিক্ষার হার দিনদিন কমা থেকে শুরু করে বেকারত্বের উপর চাপ সৃষ্টি করবে। 

শিক্ষা বোর্ডসহ অন্যন্য উর্ধতন কর্তপক্ষের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা দরকার। নইলে বছরের পর বছর এমন অবস্থা হতে পারে। 
তাদের প্রয়োজন সনদপত্র তৈরিতে যে কাগজপত্র লাগে তা যেনো আরও টেকসই ও মানসম্মত করা৷ তাহলে বাঁচবে শিক্ষার্থীদের প্রমাণ, আশা আকাঙ্ক্ষার ফসল। সুতরাং যাই করা হোক,ভেবে চিন্তে করা হলে বাংলাদেশের শিক্ষা অঙ্গনের জন্য মঙ্গল। 

পঙ্কজ শীল 

লেখক: কবি,শিশুসাহিত্যিক ও সাহিত্য সম্পাদক, দ্য লন্ডন টাইমস্ 
 

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2