নির্মূল কমিটির আন্তর্জাতিক ওয়েবিনারে বক্তাদের অভিমত
নিরাপত্তার স্বার্থে তালেবানদের স্বীকৃতি দেয়া উচিত হবে না
সংবাদ বিজ্ঞপ্তি
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ২৭ আগস্ট,শুক্রবার,২০২১ | আপডেট: ০৯:০৪ এএম, ১৯ ডিসেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
২১ আগস্ট (২০২১) বিকেল ৩টায় ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলার ১৭তম বার্ষিকী উপলক্ষে ‘একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি’র অস্ট্রেলিয়া শাখার উদ্যোগে ‘বাংলাদেশ এবং দক্ষিণ এশিয়ায় মৌলবাদের উখান এবং আমাদের করণীয়’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক ওয়েবিনারের আয়োজন করা হয়।
ওয়েবিনারে নির্মূল কমিটির অস্ট্রেলিয়া শাখার সভাপতি ডাঃ একরাম চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও অস্ট্রেলিয়া শাখার সাধারণ সম্পাদক জুয়েল তালুকদারের সঞ্চালনায় প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নির্মূল কমিটির সভাপতি লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় সহসভাপতি শহীদজায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী, নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আবদুর রশীদ (অবঃ), বীরমুক্তিযোদ্ধা কামরুল আহসান খান ও ২১শে পদকপ্রাপ্ত আলোকচিত্র শিল্পী পাভেল রহমান। অন্যান্যদের ভেতর সভায় বক্তব্য প্রদান করেন নির্মূল কমিটির সর্ব ইউরোপীয় শাখার সভাপতি সমাজকর্মী তরুণ কান্তি চৌধুরী, অস্ট্রেলিয়ার বিশিষ্ট পরিবেশবিদ পল অবোহভ, নির্মূল কমিটির সর্বইউরোপীয় শাখার সাধারণ সম্পাদক সমাজকর্মী আনসার আহমদ উল্লাহ, তুরস্ক শাখার সাধারণ সম্পাদক লেখক চলচ্চিত্রনির্মাতা শাকিল রেজা ইফতি, জাগরণের হিন্দ বিভাগের সম্পাদক তাপস দাস, নির্মূল কমিটির অস্ট্রেলিয়া শাখার সাংস্কৃতিক সম্পাদক আশফাক কে রহমান, অস্ট্রেলিয়া আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হারুনূর রশিদ, নির্মূল কমিটি অস্ট্রেলিয়া শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তানভীর কেনেডি, নির্মূল কমিটি সহসভাপতি হাসান ফারুক শিমুল রবিন ও সাজ্জাদ সিদ্দিকী, অস্ট্রেলিয়া আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমান রিতু, অস্ট্রেলিয়া আওয়ামী লীগের সভাপতি ডা. সামস রহমান, বঙ্গবন্ধু পরিষদ অস্ট্রেলিয়া শাখার সভাপতি ডঃ রতন কুন্ডু, চট্টগ্রাম ইসলামিয়া কলেজ প্রাক্তন ছাত্রনেতা ভিপি ইফতেখার উদ্দিন ইফতু, মেলবোর্ন বঙ্গবন্ধু পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শুভজিৎ রায় ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ পরিবেশ উপকমিটির সদস্য মির্জা খালেদ আল আব্বাস ।
প্রধান বক্তার ভাষণে ২১ আগস্টের নৃশংস গ্রেণেড বোমা হামলায় নিহত ও আহতদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও সহমর্মিতা জ্ঞাপন করে নির্মূল কমিটির সভাপতি লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নৃশংস হত্যাকাণ্ড এবং ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেণেড বোমা হামলা ও হত্যাকাণ্ড একই রাজনীতির অন্তর্গত। এদেশের পাকিস্তানপন্থী মৌলবাদী ঘাতক এবং তাদের সহযোগীরা ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু এবং তার প্রধান সহযোগী মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বপ্রদানকারী চার জাতীয় নেতাকে হত্যা করে ’৭১-এর শোচনীয় পরাজয়ের প্রতিশোধ নেয়ার পাশাপাশি বাংলাদেশে পাকিস্তানের মতো ইসলামী হুকুমত প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিল। ২১ আগস্টের গ্রেণেড বোমা হামলার জন্য দায়ী পাকিস্তানপ্রেমী বিএনপি-জামায়াত-ফ্রিডম পার্টি গং হামলার আগে বলেছিল শেখ হাসিনাকে বাঁচিয়ে রেখে বাংলাদেশে তাদের ইসলাম কায়েম করা যাবে না। তাদের ইসলাম হচ্ছে মওদুদিবাদী, সালাফিবাদী কট্টর রাজনৈতিক ইসলাম, যার সঙ্গে দক্ষিণ এশিয়ায় সুফিসাধকদের দ্বারা প্রচারিত শান্তি সমন্বয় ও সহমর্মিতার ইসলামের কোনও সম্পর্ক নেই। বাংলাদেশে ধর্মের নামে এই পাকিস্তানপন্থী সন্ত্রাসী রাজনীতি বিভিন্নভাবে বিকশিত হচ্ছে। উপমহাদেশের মৌলবাদী রাজনৈতিক ইসলামের জন্মদাতা জামায়াতে ইসলামী।’
শাহরিয়ার কবির তার ভাষণে আরও বলেন, ‘সম্প্রতি আফগানিস্তানে যে মৌলবাদী সন্ত্রাসী তালেবান অবৈধভাবে ক্ষমতাদখল করেছে তাদের রাজনীতি এবং বাংলাদেশে বিএনপি-জামায়াত-হেফাজত এবং তাদের তল্পিবাহকরা একই রাজনীতি অনুসরণ করে। ধর্মের নামে তারা ভিন্নধর্ম, ভিন্নমত, ভিন্ন জীবনধারার অনুসারীÑ বিশেষভাবে নারীসমাজের উপর কী ভয়ঙ্কর নির্যাতন চালিয়েছে, কিভাবে নির্বিচারে হত্যাকাণ্ড ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করে আমরা ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধকালে বাংলাদেশে দেখেছি এবং আফগানিস্তানে তালেবানদের প্রথম শাসনামলে দেখেছি। ধর্মের নামে সন্ত্রাসের রাজনীতি নিষিদ্ধ না হলে বাংলাদেশ সহ দক্ষিণ এশিয়ার সকল দেশ জঙ্গী জিহাদিদের অভয়ারণ্যে পরিণত হবে। ‘গাজওয়ায়ে হিন্দ’-এর কথা বলে তালেবান, আল-কায়দা-আইএসআইএস-এর জঙ্গী সন্ত্রাসীরা ইতিমধ্যে দক্ষিণ এশিয়ায় তাদের সাংগঠনিক নেটওয়ার্ক বিস্তৃত করেছে, যার প্রধান মদদদাতা হচ্ছে পাকিস্তান। বাংলাদেশের জামায়াতে ইসলামী ও আফগানিস্তান তালেবানদের মূল ঘাঁটি পাকিস্তানে। দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক নিরাপত্তার স্বার্থে তালেবানদের অবৈধ ক্ষমতাদখলকে স্বীকৃতি দেয়া কোনও শান্তি ও গণতন্ত্রকামী দেশের পক্ষে উচিত হবে না।’
নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আবদুর রশীদ (অবঃ) বলেন, ‘২১ শে আগস্ট ২০২১ একটি রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড, একটা সন্ত্রাস বিরোধী সমবেশে সন্ত্রাসী হামলা। আমরা এও দেখলাম প্রশাসনের সহায়তায় কিভাবে সন্ত্রাসীদের পলায়ন করে। ১৯৭৫-এ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব প্রদানকারী শীর্ষ নেতাদের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ধারাবাহিকতায় ঘটেছে ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের গ্রেণেড-বোমা হামলা ও হত্যাকাণ্ড। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা যখন বিরোধী দলের নেতা, ক্ষমতায় যখন বিএনপি-জামায়াতের মৌলবাদী, সাম্প্রদায়িক ও ’৭১-এর যুদ্ধাপরাধীদের জোট, তখন এই জোটের শীর্ষ নেতারা আওয়ামী লীগের সমাবেশে দলের সভাপতি শেখ হাসিনাসহ শীর্ষ নেতাদের নিশ্চিহ্ন করার জন্য এক নজিরবিহীন গ্রেণেড-বোমা হামলা করেছিল। সেই সময় জঙ্গী মৌলবাদীরা যাবতীয় গ্রেণেড-বোমা হামলার দায় আওয়ামী লীগ ও ভারত উপর চালানোর চেষ্টা চলছিল। এই জঙ্গী মৌলবাদীদের নেটওয়ার্ক সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ায় বিস্তৃত রয়েছে।’
নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় সহসভাপতি শহীদজায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী বলেন, ‘মৌলবাদীদের উত্থান ও কার্যক্রম রোধে করণীয় মৌলবাদের উৎস নির্মূল করা। ওদের অর্থ-সম্পদের সরবরাহ বন্ধ করা। একমুখী শিক্ষাব্যবস্থা চালু করা। শিক্ষাক্ষেত্রে কোন ধরনের বৈষম্য থাকবে না এবং কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরকারের আওতামুক্ত থাকবে না। জামায়াত ইসলামী পরিচালিত সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করতে হবে অথবা ওদের চালু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বোর্ডের অধীনে আনতে হবে। যে সব ‘পিস’ স্কুল নাম ও ঠিকানা বদলে আগের মতোই জিহাদি তৈরি করছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। যে সব পরিবারের জঙ্গী ধরা পড়বে তাদের চিহ্নিত করে নাগরিক সুবিধা খর্ব করতে হবে। উপরন্তু উচ্চ হারে তাদের জরিমানা দিতে হবে। আগেই তা ঘোষণা করতে হবে। কোন আটক জঙ্গীকে জামিন দেয়া যাবে না। জেলখানায় আটক জঙ্গীদের একত্রে বৈঠক বা মেলামেশা করতে দেয়া যাবে না। পাকিস্তানে যাতায়াতকারীদের সর্বদা গোয়েন্দা নজরদারিতে রাখতে হবে।’