সত্যিই বারো রকম মানুষ আমরা
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ৩ এপ্রিল,শুক্রবার,২০২০ | আপডেট: ০৫:৫৭ এএম, ১৯ ডিসেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
আরিফুর রহমান খাদেম: আমি দেশের প্রথমসারির জাতীয় দৈনিকে গত দুই যুগে দেশের রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজ ও শিক্ষানীতির উপর প্রায় ৩০০ এর মত আর্টিকেল লিখেছি। তবে কোনো ব্যক্তি বিশেষকে নিয়ে লিখিনি। আজ একজনকে নিয়ে লিখতে বসে বারবারই ভাবছি কোথা থেকে শুরু করব। তিনি সিডনির বাংলাদেশি কমিউনিটির অতি পরিচিত মুখ, সদা হাস্যোজ্জল, প্রাণ-চঞ্চল সিডনির জনপ্রিয় কাউন্সিল ক্যান্টাবেরি ও ব্যাঙ্কস্টাউন থেকে বর্তমান লিবারেল দলের ব্যানারে কাউন্সিলর হিসেবে সদ্য পদত্যাগ করা, আমাদের সকলের প্রিয় মোহাম্মদ শাহ্ জামান টিটু ভাই।
তিনি শুধু ইউনিয়ন পর্যায়ে লড়েই ক্ষান্ত হননি। বিরোধী দল লেবার পার্টির প্রথমসারীর নেতা, সাবেক ইমিগ্রেশন মিনিস্টার টনি বার্কের মত জাঁদরেল নেতার বিপরীতে ফেডারেল নির্বাচনেও লড়েছেন এবং প্রবাসে আমাদের মুখ উজ্জ্বল করেছেন। নিরহঙ্কার এ মানুষটির সবচেয়ে বড় দুটি গুণাগুণ হচ্ছে তাকে কিছু জিজ্ঞাসা করলে বাঁ চাইলে ""না"" শব্দটি শুনিনি। অর্থাৎ সর্বদাই ""হ্যাঁ""। তিনি লাকেম্বায় ক্ষুদ্র এক ব্যবসায়ের সাথে জড়িত। তার দোকানে আমি বেশ অনিয়মিত হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশে নির্মিত আমার ইউটিউব চ্যানেলের দুই পাতার ক্যালেন্ডার ঝুলাতে বিন্দুমাত্রও কার্পণ্য করেন নি।
একই সাথে কিছু স্টিকারও। সে এটাও জানে যে ভৌগলিক অবস্থানের কারণে প্রবল ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও তাকে আমার বাঁ আমার পরিবারের ভোট দেয়ার সৌভাগ্য পর্যন্ত হয়নি। দ্বিতীয়ত, দলমত নির্বিশেষে সিডনির যেকোনো অনুষ্ঠানেই তার নিয়মিত উপস্থিতি সবসময়ই লক্ষণীয়। তার মত পরিশ্রমী স্বেচ্ছাসেবক সিডনিতে কয়জন আছে আমার জানা নেই। আমার জানা মতে সিডনির বহু অনুষ্ঠান সফল করার পেছনে টিটু ভাইয়ের অবদান অনস্বীকার্য। তন্মধ্যে, ভেন্যু নিশ্চিত করণ, স্পন্সরশীপ, বিজ্ঞাপন, এমপি-মন্ত্রী বাঁ ভিআইপিদের উপস্থিতি নিশ্চিত করণ, এমনকি বিভিন্ন উৎস থেকে অর্থনৈতিক যোগান দেয়ার মাধ্যমেও অনুষ্ঠান কর্তৃপক্ষের পাশে রয়েছেন।
মানুষ মাত্রই যেমন ভুল, তেমনি মানুষের জীবনে উত্থান-পতন থাকবে এটাই চিরন্তন, আমরা যে যেখানেই থাকিনা কেন। অস্ট্রেলিয়া অর্থনৈতিক ভাবে অন্যতম শক্তিশালী রাষ্ট্র হলেও আমরা কেহই এ অশুভ চক্রের বাহিরে নই। অনেকেই বহু বছর অস্ট্রেলিয়ায় থেকেও চাকরি হারিয়েছেন বহুবার। দেড়-দুই যুগ এ দেশে থেকেও একখণ্ড ভূমি পর্যন্ত জুটেনি অনেকের কপালে। টিটু ভাই যেভাবে নিজের ব্যবসাকে উপেক্ষা করে কমিউনিটির পেছনে একজন সমাজকর্মী হিসেবে দৌড়াদৌড়ি করেছেন, অর্থনৈতিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়াটা বেশ স্বাভাবিক ব্যাপার। কারণ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ে ব্যবসায়ীর সরাসরি উপস্থিতি না থাকলে সফল হওয়া বেশ কঠিন তা প্রায় সবারই জানা আছে।
অন্যান্য দেশের মত অস্ট্রেলিয়ার আইন অনুসারেও যে কেউ অর্থনৈতিক ভাবে নিজেকে দেউলিয়া ঘোষণা করতে পারে। এতে লজ্জার কিছুই নেই। ফলে একজন পাবলিক সার্ভেন্ট দেউলিয়া হয়ে ওই পদে বহাল থাকতে পারেন না। এটাই নিয়ম। এটাই স্বাভাবিক ব্যাপার। টিটু ভাই কাউন্সিলর পদ থেকে সরে গিয়ে সততার পরিচয় দিয়েছেন, আইনের প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়েছেন। আমাদের কমিউনিটির জন্য যার এত নিঃস্বার্থ অবদান, যার পেছনে কাউকে কখনো বদনাম করতে শুনিনি, সুযোগ পেয়ে আমাদের কমিউনিটিরই কিছু বিপথগামী মানুষ টিটু ভাইয়ের স্বেচ্ছায় কাউন্সিলর পদ থেকে অপসারণের বিষয়টিকে পুঁজি করে তথাকথিত দেশীয় নোংরা রাজনীতিতে লিপ্ত হয়েছেন। দুঃখজনক হলেও সত্য যে আমাদের দেশীয় রাজনীতিতে স্বেচ্ছায় কোনো মন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে দেখা যায় না, সেটা যেকোনো দলের ব্যানারেই হোক। যতক্ষণ না পর্যন্ত একজন মন্ত্রী পরবর্তী নির্বাচনের মাধ্যমে অনির্বাচিত না হয় বাঁ দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত হয়ে ধরাশায়ী হয়, সে তার স্বীয় পদে বহাল থাকে।
কিন্তু অস্ট্রেলিয়া সহ পৃথিবীর বিভিন্ন উন্নত দেশে দেখা যায় এর উল্টো চিত্র। দুর্নীতি দূরের কথা, নিজ মন্ত্রণালয়ে ব্যর্থ হবার আশঙ্কা থাকলে বাঁ ব্যর্থ হলে অথবা ব্যক্তিগত সমস্যা থাকলে অনেকেই পদ থেকে স্বেচ্ছায় সরে দাঁড়ান। কারণ তাকে জবাবদিহি করতে হবে। তাছাড়া তারা সবাই আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। প্রিয় টিটু ভাই তার পদ থেকে স্বেচ্ছায় সরে গিয়ে এরই এক নজীর রেখেছেন, যা থেকে অনেকেরই অনেক কিছু শেখার আছে। আমাদের অনেকেই একজনের জীবদ্দশায় তার প্রশংসা করতে জানিনা। তাকে হারানোর পর তার জন্য মোহাব্বতে বুক ফেটে যায়। হুইচ ইস ঠু লেইট।
এ অসুস্থ চিন্তা-চেতনায় পরিবর্তন আনা দরকার। প্রশংসা করতে না পারলে মুখ বন্ধ রাখব। আর যদি তার বিরুদ্ধে বলতেই হয় জেনে শুনে প্রমাণ হাতে নিয়ে তারপরে বলব যাতে নিজের থুতু পরে নিজের উপরেই এসে আবার না পড়ে। আমি সবসময়ই একটা বিষয় বেশ গর্ব করে বলি যে দুনিয়ার প্রায় সোয়া এক কোটি প্রবাসী বাংলাদেশীর মধ্যে সম্ভবত অস্ট্রেলিয়া অন্যতম দেশ হবে যে দেশে বসবাসরত ৯০% বাংলাদেশীরা উচ্চশিক্ষিত। কিন্তু অপ্রিয় হলেও সত্য যে এ উচ্চশিক্ষিত সমাজেরই কেউ কেউ অন্যের ভালটা যেমন দেখতে পারে না, তেমনি অন্যরা সুখে-শান্তিতে থাকলে তাদের রাতের ঘুম পর্যন্ত হারাম হয়ে যায়। টিটু ভাইয়ের বিষয় আরেকটা উদাহরণমাত্র। এ হিংসাই তাদের একদিন ধ্বংস করবে। এটাই চিরন্তন।