সিডনিতে অনুষ্ঠিত হলো প্রভাত ফেরী কবিতা বিকেল বাংলা সংস্কৃতি উৎসব
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ৫ নভেম্বর,মঙ্গলবার,২০১৯ | আপডেট: ০৮:১৬ পিএম, ২১ ডিসেম্বর,শনিবার,২০২৪
প্রবাসের নতুন প্রজন্মের কাছে বাংলা সংস্কৃতির হাজার বছরের ঐতিহ্য তুলে ধরতে সিডনিতে অনুষ্ঠিত হলো ‘প্রভাত ফেরী – কবিতা বিকেল বাংলা সংস্কৃতি উৎসব । গত ২ নভেম্বর শনিবার দুপুর ৪টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত সিডনির ওয়ালি পার্কের এরেনা মঞ্চ ছিলো এই আয়োজন। উৎসবে লোকনাটক, শিশুদের গান ও আবৃত্তি, চিত্র প্রদর্শনী, সঙ্গীত,উপস্থাপন করা হয়। এসবের পাশাপাশি ছিল জিএমবি আকাশের চিত্র প্রদর্শনী।
শুরুতেই মঞ্চে স্থাপিত এলইডি স্কিনে প্রদর্শন করা হয় দেবাশিষ দাসের ছবি ""নিঠুর বোনে বিধুর নিরুপম"" । এরপর পরিবেশন করা হয় তামিমা শাহ্রীনের গ্রন্থনা ও পরিচালনায়, কবিতা বিকেল : পরম্পরার শিশুদের গান ও আবৃত্তির কোলাজ টোনা টুনির দেশে। তারপর মঞ্চে আসেন বুশ পোয়েটস ক্যাথি এডওার্ডস ও মারে এডওার্ডস।
কবিতা বিকেল সদস্যদের সম্মিলিত পরিবেশনা প্রলয় নতুন সৃজন বেদনর পর সভাপতি মাহমুদা রুণুর অনুরোধে একে একে মঞ্চে আসেন প্রভাত ফেরী পত্রিকার প্রকাশক, অস্ট্রেলেশিয়ান ইন্টারন্যাশনাল একাডেমীর পরিচালক সোলায়মান দেওয়ান, প্রভাত ফেরী প্রধান সম্পাদক, অস্ট্রেলেশিয়ান ইন্টারন্যাশনাল একাডেমীর পরিচালক শ্রাবন্তী কাজী আশরাফী, বাংলাদেশ মেডিকেল সোসাইটি অস্ট্রেলিয়ার সভাপতি ডাঃ আয়াজ চৌধুরী, মাল্টিকালচারাল নিউসাউথ ওয়েলসের প্রতিনিধি শবনম তাভাকল, নিউ সাউথ ওয়েলস সংসদের অ্যাসিস্ট্যান্ট স্পিকার মার্ক কুরি এমপি, অস্ট্রেলিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাই কমিশনার মোহাম্মদ সুফিউর রহমান, নিউ সাউথ ওয়েলস সংসদের হোলসওর্দির সংসদ মেলানিয়া গিবনস।
এই সময় আয়োজকদের পক্ষ থেকে তাদেরকে ফুলেল শুভেচ্ছা দেওয়া হয়। তারা অনুষ্ঠানটির ভূয়সী প্রংশসা করে আয়োজক সহ সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানান। প্রভাত ফেরী প্রধান সম্পাদক শ্রাবন্তী কাজী আশরাফী তার বক্তব্যে বলেন, আমি একজন সাহিত্যিক ও মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান, আমার বাবা মা দুজনেই সাহিত্যের সাথে ওতোপ্রতোভাবে জড়িত, আমার বাবা কাজী জাকির হাসান ছিলেন বিশিষ্ট নাট্যকার ও সাহসী মুক্তিযোদ্ধা, পাকিস্তানীদের সাথে সম্মুখ যুদ্ধে মাইন বিস্ফোরনে তিনি একটি পা হারান।
তারপরও তিনি সারা জীবন দেশের জন্য সুস্থ সাংস্কৃতিক চর্চা করে গেছেন। তার পরিচলিত ও প্রযোজিত প্রায় ৪৫০ বেতার নাটক রয়েছে এবং প্রচুর গবেষনামূলক বই রয়েছে যা বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়ানো হয়। তার কজের স্বীকৃতি স্বরপ বাংলাদেশ সরকার তাকে দেশের সর্বোচ্চ সম্মান স্বাধীনতা পদকে ভূষিত করে। বাবার অসমাপ্ত কাজগুলো শেষ করা আমার জীবনের অন্যতম লক্ষ্য। আর এর জন্যই প্রভাত ফেরীর প্রকাশ। পত্রিকাটি জন্মলগ্ন থেকে প্রবাসে বেড়ে ওটা প্রজন্মের কাছে দেশীয় সংস্কৃতি তুলে ধরতে কাজ করে যাচ্ছে।
আমি অস্ট্রেলেশিয়ান ইন্টারন্যাশনাল একাডেমীর পরিচালক হিসাবে দীর্ঘ দিন কাজ করে যাচ্ছি এবং আমাদের প্রতিষ্ঠানের ৩টি ক্যাম্পাসে বিশ্বের প্রায় ৩৫ টি দেশের ২০০০ শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে। কবিতা বিকেল বাংলা সংস্কৃতি উৎসবে প্রভাত ফেরী ও অস্ট্রেলেশিয়ান ইন্টারন্যাশনাল একাডেমী পৃষ্ঠপোষকতা করে গর্ববোধ করছে। গতবারের মতো এবারের উৎসবে একজন গুণীজনকে সংবর্ধনা দেয়া হয়। এবার সম্মাননা দেওয়া হয় সিডনির একুশের বইমেলার অন্যতম উদোক্তা নেহাল নিয়ামুল বারীকে। অতিথিদের বক্তব্যে ও গুণীজন সংবর্ধনার পর পরিবেশিত হয় কবিতা বিকেলের নতুন প্রযোজনা হাড়েরও ঘরখানি। সন্ধ্যা পর পরিবেশন করা হয় আঙ্গিক থিয়েটারের নাটক ""দেবী সর্পযস্তা।""
এরপর ছিল অস্ট্রেলিয়ান শিল্পী জন প্রভুদান এবং তাঁর বন্ধুদের সংগীত। আর সবশেষের মঞ্চে আসেন ভারতের প্রখ্যাত বাঙালি সংগীতশিল্পী, গীতিকার ও সুরকার মৌসুমী ভৌমিক। গান পরিবেশনের মাঝে অস্ট্রেলিয়া সহ বিশ্বের সমকালীন নানা বিষয়ে কথা বলেন মানতাবাদী এই গুনী শিল্পী, তুলে ধরনের আদিবাসী, শরনার্থী সহ বিভিন্ন ইস্যূ। তার গান চলে রাত দশটা পর্যন্ত। শেষ করেন তার বিখ্যাত গান আমি শুনেছি সেদিন তুমি সাগরের ঢেউ-এ চেপে নীলজল দিগন্ত ছুঁয়ে এসেছ............... দিয়ে। শিল্পীর সাথে মাঠ ভর্তি দর্শকরাও গলা মেলান। সবশেষে সম্মিলিত ভাবে জাতীয় সংগীত গাওয়ার মাধ্যমে সমাপ্তি হয় ব্যাতিক্রমধর্মী এই সংস্কৃতি উৎসবের।